১৯৭০ সালের দিকে ঘটনা। ক্যালিফোর্নিয়াম-২৪৯ পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অক্সিজেন-১৮ আয়ন ছুড়ে দিলেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। তাঁরা দেখতে চান, এই সংঘর্ষে কী ঘটে? নতুন কোনো মৌল তৈরি হয় কি না? সংঘর্ষের পর পরীক্ষা করে দেখা গেল, সত্যি সত্যিই তৈরি হয়েছে একটি মৌল। এটি একেবার আনকোরা বলে ধারণা করলেন ওই বিজ্ঞানী দল।
সে সময় আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নতুন নতুন মৌল তৈরির হিরিক পড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে। দুই চির প্রতিদ্বন্দী। কিন্তু এই দুই পরমাণুর সংঘর্ষে যে মৌলটি পাওয়া গেল, তা ছিল পরিমাণে খুবই অল্প। তাই মৌলটি আসলেই নতুন নাকি পুরোনো কোনো মৌল, তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হলো না।
মার্কিন বিজ্ঞানী গ্লেন সিবর্গের সম্মানে এ নামের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু সিবর্গ তখনও জীবিত। আইনস্টাইন ছাড়া আর কোনো জীবিত বিজ্ঞানীর নামে কোনো মৌলের নামকরণের নজির নেই। তাই এ নাম নাকচ করে দেয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি (আইইউপিএসি)।
চার বছর পরের কথা। ১৯৭৪ সালের দিকে লেড-২০৮ ও লেড-২০৭ বা সীসার নিউক্লিয়াসে ক্রোমিয়াম-৫৪ ছুড়ে মারা হলো। এবারও পাওয়া গেল একই মৌল। পরীক্ষা করে দেখা গেল, এর পারমাণবিক সংখ্যা ১০৬। তার মানে, এবার আর সন্দেহ নেই, মৌলটি আসলেই নতুন। আগে কখনও দেখা যায়নি। তবে গোল বাঁধল এর আবিষ্কারক কে, তা নিয়ে। কারণ প্রায় একই সময়ে মৌলটি আবিষ্কারের দাবি করে বসল যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা।
রুশ বিজ্ঞানীরা এ মৌলের কোনো নাম প্রস্তাব না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলির বিজ্ঞানীরা শুরুতে নতুন মৌলটির নাম প্রস্তাব করলেন আলভারেজিয়াম। প্রস্তাবটা দিলেন মার্কিন আবিষ্কারক দলের প্রধান বিজ্ঞানী আলবার্টো ঘিওরসো। নিজ দেশের পদার্থবিদ লুইস ওয়াল্টার আলভারেজের সম্মানে আলভারেজিয়াম।
কিন্তু এ প্রস্তাবে বেঁকে বসলেন বার্কলি বিজ্ঞানী দলের অন্য সদস্যরা। বিজ্ঞানী ঘিওরসোর প্রস্তাব নাকচ করে সিবর্গিয়াম রাখার প্রস্তাব দিলেন তাঁরা। মার্কিন বিজ্ঞানী গ্লেন সিবর্গের সম্মানে এ নামের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু সিবর্গ তখনও জীবিত। আইনস্টাইন ছাড়া আর কোনো জীবিত বিজ্ঞানীর নামে কোনো মৌলের নামকরণের নজির নেই। তাই এ নাম নাকচ করে দেয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি (আইইউপিএসি)। আন্তজার্তিক এই প্রতিষ্ঠাটি রাদারফোর্ডিয়াম নাম রাখার প্রস্তাব দেয় (তখনও ১০৪ তম মৌলের নাম নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি)। তবে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি আইইউপিএসির সিদ্ধান্ত না মেনে এই নামই বহাল রাখে। বেশ কয়েক বছর মুলামুলির পর শেষপর্যন্ত নামটি মেনে নিতে বাধ্য হয় আইইউপিএসি।
এই সুপারহেভি ও সিন্থেটিক মৌলটি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। চরম তেজস্ক্রিয় সিবর্গিয়ামের সংকেত Sg। এর ১৩টি আইসোটোপের কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ সিবর্গিয়াম-২৬৯। এর অর্ধায়ু প্রায় ১৪ মিনিট।