মার্চেন্ট

অলংকরণ: রাকিব

সোয়ানসন বোর্ডরুমে এসে ঢুকলেন। এক্সিকিউটিভ জগতে তাঁর নির্বিকার ভাব–দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়, এ ব্যাপারে তাঁর শত্রুরাও প্রশংসা করে। আজ দিনটা ভিন্ন, ইউনাইটেড হাবার্ডাসারি করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ব্যর্থতার জবাব দিতে হবে। কিন্তু সোয়াসন নির্বিকার দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছেন; তাঁর শত্রুপক্ষীয়রা জানে, এটা তাঁর মুখোশ, এর আড়ালেই শত্রুপক্ষীয়দের অস্থির জগতে নিয়ে যাওয়া তাঁর একটা কায়দামাত্র।

চেয়ারম্যান কোনো ভনিতা না করে সরাসরি সোলসের রিপোর্ট চাইলেন। রিপোর্টের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সবারই জানা আছে; ব্যক্তিগতভাবে সব সদস্যই বিষয়টা জানে। ব্যর্থতার রিপোর্ট দেওয়ার পর সোয়ানসনের চেহারার যে করুণ অবস্থা হবে, সেটা দেখার জন্য বোর্ড সদস্যরা উন্মুখ হয়ে আছে। অবশেষে সোয়ানসনের বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হলো।

‘ভদ্র মহোদয়গণ’, কম্পনহীন গলায় সোয়ানসন বললেন, ‘আমরা সকলেই জানি, যুদ্ধের সময় থেকে হাবার্ডাসারি ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল পরিমাণে রেভিন্যু লোকসান হয়েছে। তারপরও লোকসানটা আমাদের ভাবায়নি। কিন্তু যে ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো, সেলস প্রিডিকশনে যা বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বিক্রয় ক্রমে নিম্নমুখী হবে। ভদ্র মহোদয়গণ, আমি সেলস ডিপার্টমেন্টের নেতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণীকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমার বক্তব্য হলো, ভবিষ্যতে কোম্পানির বিক্রয় না কমে বৃদ্ধি পাবে।’

বোর্ডসভায় গুঞ্জন উঠল, বোর্ডরুমের লম্বাটে টেবিলের শেষ মাথায় বসে থাকা কেউ কেশে উঠল।

আরও পড়ুন
অলংকরণ: রাকিব
‘আপনি কি আরও স্পষ্ট করে বলবেন?’ সোয়ানসন বলে উঠলেন। ‘অবশ্যই বলব। আমি মিউটেশন নিয়ে কাজ করি ভদ্র মহোদয়গণ, মিউটেশনই হবে ভবিষ্যতে জন্মধারার নিয়ম। বর্তমানে আমাদের জন্মহারের ৬৫ ভাগ হলো মিউটেন্টে বার্থ এবং সময়ের সঙ্গে এই হার বৃদ্ধি পাবে।’

‘আমি জানি, আমার ভবিষ্যদ্বাণী আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে।’ সোয়ানসন বললেন, ‘আর সে জন্যই এই বোর্ডরুম ছেড়ে যাওয়ার আগে আমি আমার বক্তব্যের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে যাব। কিন্তু প্রথমে আপনারা একজন বিশেষ ব্যক্তির বিশেষ রিপোর্টটা শুনুন। রাঞ্চ এস্টউইলার হলেন আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব ইউজেনিকসের প্রফেসর।’

প্রেসিডেন্টের পাশে বসে থাকা ফ্যাকাশে চেহারার প্রফেসর উঠে দাঁড়ালেন। বোর্ডে উপস্থিত সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে বলতে শুরু করলেন:

মিস্টার সোয়ানসনের অনুরোধ করেছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু কথা বলি, ইতস্তত গলায় বললেন তিনি। ‘আমি হাবার্ডাসারি ব্যবসা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমার রিসার্চের ক্ষেত্র হলো ইউজেনিকস আর আমার বিশেষত্ব হলো রেডিয়েশন বায়োলজিতে...’

‘আপনি কি আরও স্পষ্ট করে বলবেন?’ সোয়ানসন বলে উঠলেন। ‘অবশ্যই বলব। আমি মিউটেশন নিয়ে কাজ করি ভদ্র মহোদয়গণ, মিউটেশনই হবে ভবিষ্যতে জন্মধারার নিয়ম। বর্তমানে আমাদের জন্মহারের ৬৫ ভাগ হলো মিউটেন্টে বার্থ এবং সময়ের সঙ্গে এই হার বৃদ্ধি পাবে।’

‘আমি বিষয়টা ঠিকমতো বুঝলাম না’, চেয়ারম্যান গর্জন করে বলে উঠলেন। ‘ওই সব মিউটেন্ট দিয়ে আমাদের কী সম্পর্ক?’

সোয়ানসন মৃদু হাসলেন। ‘বিষয়টা বেশ চমৎকার।’ তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর জ্যাকেটের ল্যাপেলের ভেতর দুই হাত ঢুকিয়ে দিয়ে উঁচু করে ধরলেন সবার সামনে। টেবিলের চারপাশে উৎসুক দৃষ্টি এবং অবাক করা মুখগুলো লক্ষ করলেন। ‘একটা বিষয় লক্ষ করে দেখুন ভদ্র মহোদয়গণ, আমরা দুটো করে টুপি বিক্রি করব। কারণ, তখন তো ওদের মাথাও থাকবে দুটো করে।’

 *লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার ২০২২ সালের জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন