সে কে?

মার্ক একজন বিজ্ঞানী। বর্তমানে জটিল সব সমীকরণ নিয়ে বেশ ব্যস্ত। বিজ্ঞানীদের কাজ মূলত গবেষণা করা। আর সেই গবেষণার ফল ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মের কাছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উপহার দেওয়া। কিন্তু মার্কের গবেষণার কারণ ভিন্ন। বছর চারেক আগে এক মহিলার প্রেমে পড়ে বিজ্ঞানী। প্রথম দেখাতেই পছন্দ করেছিল। তবে তার অতীত বা বর্তমান সম্পর্কে কিছুই জানত না মার্ক। দিন গড়িয়ে যাচ্ছে। মার্কের গবেষণার কাজও চলছে। হঠাৎ একদিন মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমন অসুখ তার শরীরে দানা বেঁধেছে যে বর্তমানের কোনো প্রযুক্তিই তাকে সুস্থ করতে পারবে না। তাহলে উপায়?

পাড়ি দিতে হবে ভবিষ্যতে। মানে টাইম ট্রাভেল করতে হবে। মার্ক জানে, ভবিষ্যতে পাড়ি দিতে হলে কোথায় যেতে হবে। মার্ক এক দূর্গের সামনে হাজির হয়। এই দূর্গের একদম ওপরের তলায় আছে ভবিষ্যতে যাওয়ার মেশিন। তবে দূর্গের ওপরের তলায় ওঠা মোটেও সহজ নয়। ১২ তলা এই দূর্গের নিচতলা ও সাততলায় আছে ভয়ঙ্কর সব বাধা। সহজে যাতে কেউ ভবিষ্যতে যেতে না পারে, তাই এসব বাধা।

দূর্গের নিচতলায় আছে এক অজানা বাধা। একটি ধাঁধার সমাধান করতে হবে মার্ককে। উত্তর ভুল হলে মরতে হবে। এ ছাড়া সাত তলায় আছে টেনসর ক্যালকুলাসের তৈরি এক বিশেষ সিংহ। যাহোক, প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার জন্য রয়েছে একটা সিঁড়ি। কোথাও কোনো বাধা না থাকায় সে একটু দ্বিধাগ্রস্থ হলো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠবে, হঠাৎ একটি অদৃশ্য দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উদয় হলো একটি কৃষ্ণগহ্বর। কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ বল তার বাঁ পায়ের দিক থেকে টেনে নিয়ে যেতে চায় ভেতরে।

হঠাৎ তার মাথায় এক বুদ্ধি এল। অনেকদিন আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় নিজের পা দুটো হারিয়েছে মার্ক। এখন সেখানে আছে বায়োনিক পা। বাটন টিপে বাঁ পা-টা সেটা খুলে ফেলল সে। এভাবে এ যাত্রায় কৃষ্ণগহ্বরের হাত থেকে বেঁচে গেল মার্ক।

যাহোক, অনেক কষ্টে গিয়ে পৌঁছায় দূর্গের সপ্তম তলায়। সেখানকার সিংহটি তখন ঘুমাচ্ছে। অতি সাবধানে সিংহটির পাশ কাটিয়ে পৌঁছে যায় টাইম মেশিনের কাছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। দুটি রাস্তা তার সামনে খোলা। হয় আলোর চেয়ে বেশি বেগে ছুটতে হবে, নয়তো প্রবেশ করতে হবে ওয়ার্মহোলে।

আলোর বেগ অর্জন করতে চাইলে হারাতে হবে সিংহটিকে। পঙ্গু বিজ্ঞানীর পক্ষে তা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া সময় লাগবে অনেক বেশি। এ সময়ের মধ্যে যদি মারা যায় তার প্রিয়তমা! না, আর ভাবতে পারছে না মার্ক। ওয়ার্মহোলে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় সে। তবে এখানেও আছে একটা সমস্যা। ওয়ার্মহোলের বিকিরণের কারণে মারা পড়তে পারে মার্ক। তাই বিকিরণ থেকে বাঁচতে চারটি মৌলিক বল একত্র করে একটা ফোর্স শিল্ড তৈরি করে। এরপর পাড়ি দেয় ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে। গিয়েই নিজের চিকিৎসা করায়।

কিন্তু ভবিষ্যতে গিয়ে মার্ক হতভম্ব হয়ে যায়। জানতে পারে, তার প্রিয়তমা একবার নিজের শরীরে প্লাস্টিক সার্জারি করেছিল। এমনকি সে পরিবর্তন করেছিল তার লিঙ্গও। এটা এ সময়ের স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেকেই এ কাজ করে এখন। কিন্তু অবাক হওয়ার এখনো বাকি। মেয়েটি আর কেউ নয়, সে নিজেই। বিজ্ঞানী মার্ক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ১০ম শ্রেণি, সীতানাথ মথুরানাথ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ