দ্য আইজ হ্যাভ ইট

দুর্ঘটনাবশতই বলতে পারেন, আমি পৃথিবীতে অন্য গ্রহের জীবন ধারণের একটি আধিপত্য প্রথম লক্ষ করি। যদিও এখন পর্যন্ত আমি বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু করিনি। কিছু করার জন্য ভাবিওনি। আমি সরকারকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তারা আমাকে ফার্মহাউস মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে একটি পেম্‌ফলেট পাঠিয়ে দেয়। যা–ই হোক, পুরো বিষয়টাই জানা, এমন নয় যে আমিই প্রথম আবিষ্কার করেছি। এমনও হতে পারে, এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

আমি ইজিচেয়ারে বসে বাসে একজনের ফেলে যাওয়া একটি পেপারব্যাক বইয়ের পাতা ওলটাচ্ছিলাম। ওই বইয়ের রেফারেন্স পাতা থেকে আমি একটি সূত্র খুঁজে পেলাম। কয়েক মুহূর্ত আমি নীরব হয়ে রইলাম। পুরো বিষয়টির তাৎপর্য বুঝতে সময় লেগেছিল। পুরো বিষয়টা বোধগম্য হওয়ার পর আমার কাছে অদ্ভুত লাগল, আমি সহজ পথে কেন বুঝলাম না।

রেফারেন্সটিতে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে নন–হিউম্যান স্পিসিসের বৈশিষ্ট্যের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

একটি স্পিসিস, যাদের ব্যাপারে আমি বেশ উদ্বিগ্ন, তাদের সাধারণ মানুষের মতো মনে হয়। যাহোক, তাদের ছদ্মবেশ লেখকের পর্যবেক্ষণগুলো বিবেচনা করলে ছদ্মবেশের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে বিষয়টি নিশ্চিত করে যে লেখক সব জানেন। সব জানেন এবং তিনি গ্রহণযোগ্য একটি পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। লাইনটা ছিল (যা মনে করে এখনো আমি কেঁপে উঠি) এমন:

...তার চোখ ধীরগতিতে সারা ঘর ঘুরছিল।

একটি অস্পষ্ট শীতলতা আমার ভেতর জেঁকে বসল। আমি চোখগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম। ওগুলো কি ডাইমের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে পারে? প্যাসেজটি পড়ে তা মনে হলো না; মনে হলো ওগুলো বাতাসের মাধ্যমে ভেসে ভেসে যাতায়াত করে। দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে। এভাবেই আমার টনক নড়ে উঠল। এমনতর ভয়ানক বিষয়টির কোনো চিহ্ন দেখা গেল না। পরে ব্যাপারটা বড় আকার ধারণ করে।

...তার চোখগুলো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

চোখগুলো তার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো বিচরণ করছিল। আমার হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছিল আর শ্বাসনালিতে শ্বাস আটকে গিয়েছিল। দুর্ঘটনাবশত আমি অপরিচিত প্রজাতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছিলাম। অবশ্যই অপার্থিব। তারপরও বইয়ের চরিত্রগুলোর কাছে বিষয়টি প্রাকৃতিক ছিল, এর ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে তারাও একই প্রজাতির।

আর লেখক? আমার মনে সন্দেহ হলো। লেখক খুব সহজেই বিষয়টিকে শব্দে রূপান্তর করছিলেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল, তিনি বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছেন। তিনি তাঁর এই যাত্রার ব্যাপারটা কোনোভাবেই আড়াল করার চেষ্টা করেননি। গল্পটি এগিয়ে যাচ্ছে:

...এখন তার চোখ জুলিয়ার ওপর আটকে আছে।

জুলিয়া একজন মেয়ে, নিদেনপক্ষ রাগ দেখানোর কথা। জুলিয়া লজ্জায় লাল হলো এবং ভ্রুজোড়া রাগে ওপরের দিকে উঠে গেল। এতে আমি একটু স্বস্তি বোধ করলাম। তারা তাহলে সবাই অপার্থিব নয়। বর্ণনা চলতে থাকে:

...ধীরে ধীরে শান্তভাবে চোখগুলো জুলিয়ার প্রতিটি ইঞ্চি পর্যবেক্ষণ করল।

গ্রেট স্কট! তবে এবার মেয়েটি রাগ করে ঘুরে চলে গেল আর ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হয়ে গেল। আমি আমার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম, ভয়ে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস পড়ছিল। আমার স্ত্রী এবং আমার পরিবার এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাতে লাগল।

‘কী হয়েছে তোমার?’ আমার স্ত্রী জিজ্ঞাস করল।

গ্যারেজের ভেতর আমি বইটা পড়তে শুরু করলাম। সেখানে আরও লেখা ছিল। পরবর্তী প্যাসেজটা পড়ার পর আমি কাঁপতে লাগলাম।

আমি কিছুই বললাম না। অতিসাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে বিষয়টি বোধগম্য হবে না। বিষয়টি আমার ভেতরেই থাক। ‘তেমন কিছু না,’ তাই হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম। আমি লাফ দিয়ে উঠে বইটা হাতে নিয়ে রুমের দিকে দৌড়ে গেলাম।

গ্যারেজের ভেতর আমি বইটা পড়তে শুরু করলাম। সেখানে আরও লেখা ছিল। পরবর্তী প্যাসেজটা পড়ার পর আমি কাঁপতে লাগলাম।

...সে জুলিয়াকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। জুলিয়া তার কাছে জানতে চাইল হাত সরাবে কি না। সঙ্গে সঙ্গে সে হাত সরিয়ে নিল মুখে চওড়া হাসি নিয়ে।

এখানে লেখা নেই হাত সরিয়ে নেওয়ার পর সেই হাতের কী হলো।

হয়তো সেটা ডান দিকের কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল কিংবা ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার ক্ষেত্রে, পুরো বিষয়টা আমার কাছে স্পষ্ট। আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে ছিল। ভিনগ্রহীদের মধ্যে এটা যেন একটা প্রতিযোগিতা চলছিল, নিজ দেহের অঙ্গব্যবচ্ছেদে পটু তারা। চোখ, বাহু, হয়তো অন্য আরও অঙ্গ। বায়োলজি নিয়ে আমার জ্ঞান এবার কাজে লাগে। অবশ্যই ওরা ছিল সহজ–সরল সত্তা, এককোষী প্রাণী, একটি কোষ দিয়ে তৈরি প্রাচীন কোনো প্রাণী। স্টারফিশ থেকে উন্নত হবে না। আপনারা জানেন স্টারফিশ একই কাজ করতে পারে।

আমি পড়ে যেতে লাগলাম এবং একটি রহস্য উদ্‌ঘাটিত হলো, যা লেখক শান্তভাবে বর্ণনা করেছেন। অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা:

...মুভি থিয়েটারের বাইরে গিয়ে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। কিছু অংশ ভেতরে গেল আর কিছু অংশ বাইরে ক্যাফেতে গেল খাবার খেতে।

অবশ্যই দুই ভাগ হয়ে দুটি ভিন্ন ভিন্ন সত্তা। সম্ভবত নিচের অংশগুলো বাইরে চলে গিয়েছিল। কারণ, ক্যাফে একটু দূরে, ওপরের অংশ মুভি দেখতে গিয়েছিল। আমি পড়ছি আর হাত কাঁপছে। সত্যিই আমি এই পর্যায়ে এসে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছি। এই অংশটুকু পড়তে পড়তে আমার মনের ভেতর ওলট–পালট হচ্ছিল:

...বলতে বাধ্য হচ্ছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বেচারা বিবন তার মাথাটা আবার হারিয়েছে।

এরপর আরও লেখা রয়েছে:

...আর বব জানাল তার একেবারেই কোনো সাহস নেই।

আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। রাস্কেলটার হাতে এখন জুলিয়ার হাত, হৃৎপিণ্ডও। আমি শরীরে কাঁপুনি নিয়ে ভাবছি, এতক্ষণে যে ওগুলো দিয়ে কত কিছুই না করছে।

তারপরও বিবন পরের ব্যক্তিটির মতো ঘুরে বেড়াতে লাগল। এখানে পরের ব্যক্তিটিকে স্ট্রেঞ্জার হিসেবে দেখানো হয়েছে। লেখক তার বর্ণনা সঙ্গে সঙ্গে দিয়েছেন:

...সম্পূর্ণ মস্তিষ্কহীন।

পরবর্তী প্যাসেজের লেখা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জুলিয়া, যাকে আমি একজন সাধারণ মানুষ মনে করেছিলাম, সে নিজেকে ভিনগ্রহের প্রাণী হিসেবে প্রকাশ করেছে। বাকিরাও তা–ই:

...কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবে, জুলিয়া তার হৃদয় অল্পবয়সী যুবককে দিয়ে দিল।

সেই অঙ্গটির পরে কী হলো, তার কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি, আমার জানার কোনো আগ্রহ ছিল না। স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে জুলিয়া তার গতানুগতিক বৈশিষ্ট্যমতো আচরণ করেছিল, যেমনটা বইয়ের অন্যরা করেছিল।

হৃৎপিণ্ড, বাহু, চোখ, মগজ, নাড়িভুঁড়ি—সবই চাহিদামতো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। কোনো সংশয় রইল না:

...অবিলম্বে জুলিয়া তাকে নিজের হাত তুলে দিল।

আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। রাস্কেলটার হাতে এখন জুলিয়ার হাত, হৃৎপিণ্ডও। আমি শরীরে কাঁপুনি নিয়ে ভাবছি, এতক্ষণে যে ওগুলো দিয়ে কত কিছুই না করছে।

...সে তার বাহু নিল।

কোনো কিছুই আর অপেক্ষায় রইল না। সে জুলিয়ার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিজের মতো করে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করল। রাগে আমি ঠাস করে বইটা বন্ধ করে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু যত্নহীনভাবে অঙ্গব্যবচ্ছেদের শেষ প্রসঙ্গটা না পড়লে ঠিক হবে না, যার মাধ্যমে আসল ট্র্যাকটা আবিষ্কার করেছি:

...জুলিয়ার চোখ সারাটা রাস্তা এবং তৃণভূমিজুড়ে খুঁজে বেড়ায়।

আমি দ্রুত গ্যারেজ থেকে বের হয়ে বাড়িতে ঢুকলাম, যেন সেই অভিশপ্ত জিনিস আমার পিছু নিয়েছে। কিচেনে আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা মনোপলি খেলছিল। আমি প্রবল উদ্দীপনায় তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম, আমার ভ্রু কোঁচকানো এবং দাঁড়গুলো ঠক ঠক করে বাড়ি খাচ্ছিল।

অনেক সহ্য করেছি। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। ওদের আসতে দাও। পৃথিবী দখল নিয়ে নিক। আমি আর নিজেকে এর মধ্যে জড়াতে চাই না।

এটা হজম করার মতো পেট আমার নেই।