ভিনগ্রহের ক্রিকেটার - পর্ব ৩

টিফিনের পর আজও আর ক্লাস হলো না। মিজানরা সবাই চলে এল মাঠে। মিজানের দায়িত্ব আজও মাঠের বাইরে। হঠাৎ যদি বল বাইরে চলে আসে, তাহলে সেটা কুড়িয়ে ফেরত দেওয়া। এ কাজও সে ভালো করে পারে না। বল কোন দিকে যাচ্ছে না যাচ্ছে, বুঝতে বুঝতেই সময় পেরিয়ে যায়। অন্য কোনো চৌকস ছেলে বল কুড়িয়ে নিয়ে ছুড়ে মারে ভেতরে। আজ অবশ্য সে তার পাশে পেয়েছে ফার্স্ট বয় স্বাধীনকে। স্বাধীন ইতিমধ্যেই টিম থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। মিজান এখনো বাদ পড়েনি। কারণ, তার বোলিং-ব্যাটিংয়ের টেস্ট এখনো হয়নি।

স্বাধীন বলল, এই সব খেলার কোনো মানে হয় না। এতে বুদ্ধির কোনো ব্যাপার নাই। ভালো খেলা হলো দাবা। স্কুলে যে কেন দাবা কম্পিটিশন হয় না!

মিজান বলল, দাবা হলে কী হতো? তুমি ফার্স্ট হতে?

স্বাধীন বলল, শিওর।

তা তুমি তো এমনিতেই ফার্স্ট হচ্ছ। সবাই জানে তুমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়। স্বাধীন বিষণ্ন হাসি দিয়ে বলল, সে তো পড়াশোনায়। খেলাধুলায় না! আজকালকার দুনিয়াটা খুব ফালতু হয়ে গেছে তো। পড়াশোনার চেয়ে এ দুনিয়ায় খেলাধুলার দাম বেশি! ধর, অমর্ত্য সেন, উনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, কজন তাঁর নাম জানে। অথচ শচীন টেন্ডুলকারের নাম সবাই জানে।

মিজান বলল, তুমি পড়াশোনায় ভালো তো, তাই তোমার খেলাধুলাতেও ভালো করতে ইচ্ছা করছে। আর আমার দিকে দেখো, আমি কেমন পড়াশোনাতেও গাড্ডা মারি, আবার খেলাধুলাতেও খারাপ করি।

স্বাধীন বলল, তবে একটা ব্যাপারে তুমি কিন্তু সবার সেরা। তোমার আচার-ব্যবহার। তুমি কিন্তু কোনো অন্যায় করো না, কোনো অন্যায় সহ্যও করো না। অবশ্য এ জন্য তোমাকে বিপদে পড়তে হয় মাঝেমধ্যে। এই যেমন সোহান আর আবীর ক্লাসে দুষ্টুমি করে, তুমি তাদের নাম স্যারকে বলে দিলে আর সে জন্য তোমার নাম হয়ে গেল গাধা আর বাঁদর।

ইশ্‌। এই মা-ই তাকে আগে কত আদর করতেন। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মা তাকে রোজ রোজ ভাত মেখে নিজ হাতে খাইয়েছেন। সে কত বড় হয়েও মার গলা ধরে ঘুমিয়েছে

মিজান চুপ করে রইল। তার কেমন যেন অসহায় লাগছে। এই পৃথিবীতে সবারই কিছু কিছু গুণ আছে। কেউ লেখাপড়ায় ভালো, কেউ খেলাধুলায়, কেউ ছবি আঁকায়, কেউ গানে, শুধু মিজানের কোনো গুণ নেই। সে সবচেয়ে কম নম্বর পেয়ে ক্লাসে সিক্স থেকে সেভেনে প্রমোশন পেয়েছে। তবে ফেল যে করেনি, সেটা তার ভাগ্য। সে অবশ্য কখনো ফেল করে না। ৪০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে সব বছরই পাস করে। তাকে নিয়ে স্যাররাও মুশকিলে আছেন। এ ছেলে যদি ফেল করত, তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া যেত। কিন্তু তা–ও তো সে করে না।

কাল রাতে বাসায় ফেরার পর মা খুব রাগারাগি করেছেন। বাবাকে বলে দিয়েছেন, তাকে যেন হোস্টেলে দিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের ধারণা, সে ময়নাকে মেরেটেরে ফেলবে।

দিক, হোস্টেলে দিক। মিজানের বয়েই গেছে বাসায় থাকতে।

ইশ্‌। এই মা-ই তাকে আগে কত আদর করতেন। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মা তাকে রোজ রোজ ভাত মেখে নিজ হাতে খাইয়েছেন। সে কত বড় হয়েও মার গলা ধরে ঘুমিয়েছে। আর এখন মা তাকে দেখতেই পারেন না। সেটা কি শুধু ময়নার কারণে? এই ময়না না হলে কি তার মা আগের মতো থাকতেন! আর কাল দাইমা বুড়ি এটা কী বলল! সে নাকি কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে!

ইশ্‌। আবার কান্না আসছে মিজানের। সে তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছল। এত লোকের সামনে কেঁদে ফেলাটা ঠিক হবে না।

হইহই আওয়াজ। কী ব্যাপার? একটা বল তার দিকেই আসছে। ধর, মিজান ধর। সবাই চিৎকার করে বলছে। মিজান চোখ মুছে আকাশে তাকাল। হঠাৎ তার কী মনে হলো, সে প্রতিজ্ঞা করে বসল, এই বলটা তাকে ধরতেই হবে। সে বলের গতি লক্ষ করে যথাস্থানে দাঁড়িয়ে রইল আকাশের দিকে চোখ রেখে। বলটা ধরবে বলে হাত পাতল, কিন্তু বল এসে লাগল তার মুখে। অসহ্য ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল সে। মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, ঠোঁট কেটে গেছে, একটা দাঁত গেছে নড়ে। মিজান বসে পড়ল। চারদিকে মহা হইচই। গাধাটা মরেছে—এমন কথাও শোনা যেতে লাগল।

নিজের বিছানায় একা ঘরে শুয়ে মিজান ও বাবা গো ও মাগো বলে চেঁচাতে লাগল। বাবা এ ঘরে চলে এলেন। কী হয়েছে মিজান?

মিজান কিন্তু মনে মনে খুশি। কারণ তার ধারণা, সে মারা যাচ্ছে। আর মারা গেলেই তো এই ভবযন্ত্রণা তাকে আর সহ্য করতে হয় না। মায়ের গালিগালাজ, বন্ধুদের অবজ্ঞা, স্যারের পিটুনি। আর সবচেয়ে বড় কথা, দু–এক দিনের মধ্যেই তাকে সবার সামনে একবার বল আরেকবার ব্যাট করে দেখাতে হবে। সে তো একদমই পারে না। সে যদি বল করে, বল তো স্টাম্পের আশপাশে যাবে না। আর ব্যাট করলে? উফ, তার নাকি ব্যাট ধরাই হয় না।

কিন্তু সে তো আর ভাগ্যবান মিজান নয়, সে হলো গাধা মিজান। কেন তার মনোবাঞ্ছা পূরণ হবে! কাজেই তার মরার সাধ অপূর্ণ থেকে গেল।

স্যাররা, পিয়নরা, ছাত্ররা মিলে তাকে ধরে নিয়ে গেল টিউবওয়েলের কাছে। তার মাথায় পানি ঢালল। তাকে কুলি করাল। ব্যস, সে দিব্যি দাঁড়িয়ে পড়ল।

এখন আপাতত দাঁড়াতে পারল বটে, রাতের বেলা তার হলো মুশকিল। প্রচণ্ড দাঁতব্যথা শুরু হয়ে গেল। দাঁতের ব্যথা জিনিসটা যার হয়, কেবল সে–ই বোঝে! কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু দাঁতব্যথা দংশেনি যারে!

নিজের বিছানায় একা ঘরে শুয়ে মিজান ও বাবা গো ও মাগো বলে চেঁচাতে লাগল। বাবা এ ঘরে চলে এলেন। কী হয়েছে মিজান?

দাঁতে ব্যথা...উ উ মরে গেলাম গো...

মিজানের কান্নায় ময়নার ঘুম গেল ভেঙে। মা গেলেন রেগে। এই বদমাশটা আমার ময়নাকে মেরে ফেলবে। দেখো, ও আমার ময়নাকে ঘুমুতে দেবে না। আর যন্ত্রণা, বাবা বললেন। তুমি চুপ করো তো মিজানের মা।

মিজানের মা? খবরদার তুমি আমাকে মিজানের মা বলবে না। আমি ওর মা না।

এ কথা শুনলে মিজান অন্য সময় হলে হয়তো কাঁদতে পারত, কিন্তু এখন দাঁতের ব্যথায় অন্য কোনো শোকে কান্নাকাটি করা মুশকিল।

বাবা বললেন, মিজান, কোনোমতে সহ্য কর। আমি দেখি কোনো ওষুধ পাই কি না।

বাবা ওষুধ আনতে গেছেন, তো গেছেনই। তার ফেরার আর কোনো নাম নেই।

মিজানের দাঁতের ব্যথাটা অসহ্য পর্যায়ে চলে গেছে। সে অনেক চেষ্টা করছে চুপ করে থাকার, কিন্তু পারছে না। সে তীব্র তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে উঠল। আউ...মা এসে সোজা তার ঘাড় ধরে তাকে বাড়ির বাইরে দিলেন বের করে। ভেতর থেকে দরজা দিলেন আটকে।

এবার উপায়? চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দূরে শিয়াল ডাকছে। রাস্তায় কোনো আলো নেই।

মিজান দাঁতের ব্যথা ভুলে গেল। তার বরং ভয় লাগছে। অন্ধকারের ভয়। অজানা ভয়। মনে হচ্ছে, এখনই কেউ এসে ঘাড়ে পড়বে। সে কুঁকড়ে যাচ্ছে। নিজের ভেতরে নিজে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।

ওই যে ওখানে, বসুদের টিনের চালে কী যেন নড়ে উঠল। ওরে বাবা, কার যেন দুটি চোখ জ্বলছে। মিজান মনে হচ্ছে প্যান্টের মধ্যেই পেশাব করে দেবে।

বাবা এলেন। মিজান তখন তাদের গেটের সামনে বসে আছে। বাবা বললেন, কে ওখানে। মিজান কথার উত্তর দিতে পারল না। তার গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না।

বাবা কাছে এসে ছেলের দুর্দশা দেখলেন। বললেন, বাবা, তুই এখানে কেন রে। ঠিক আছে, তোকে এই দোজখ থেকে আমি উদ্ধার করব। তোকে হোস্টেলে দিয়ে দেব। আয়, তোর জন্য ওষুধ এনেছি। ট্যাবলেট। তবে খালি পেটে খাওয়া যাবে না। ভরা পেটে খেতে হবে।

বাবা গেটে ধাক্কা দিতে লাগলেন। মিজানের মা, দরজা খোলো। মিজানের মা, দরজা খোলো। মা কিছুতেই দরজা খুলবেন না। বাবা বললেন, ময়নার মা, দরজা খোলো। তাতেও কোনো সাড়াশব্দ নেই । কী মুশকিল। তারা কি সারা রাত খোলা আকাশের নিচেই থাকবে?

আজ মিজানের ব্যাটিং টেস্ট।

জয়েন স্যার আর ড্রিল স্যারের হাতে খাতা। সেই খাতায় তাঁরা মার্কস দিচ্ছেন। ব্যাটিংয়ের মার্কস, বোলিংয়ের মার্কস। ফিল্ডিংয়ের মার্কস।

মিজান আজ আর ভয় পাচ্ছে না। সে জানে, সে খুবই খারাপ করবে। প্রথম বলেই আউট হয়ে যাবে। এটা নিয়ে এত সংকোচ করার কী আছে?

বল করছে আসাদ। সে যে ভালো বল করবে, এমন না। খেলাধুলায় আসাদের তেমন কোনো সুনাম নেই। মিজান প্যাডট্যাড পরে ক্রিজে গিয়ে দাঁড়াল। মাথায় হেলমেট। তবু তার ভয় লাগছে। কারণ, এর আগে সে কখনো কাঠের বলের সামনে ব্যাট হাতে দাঁড়ায়নি। তার ওপর মাত্র এক দিন আগেই বল লেগে তার একটা দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন বল জিনিসটা দেখলেই তার ভয় ভয় লাগে।

আসাদ দৌড়ে এসে বল করল। চোখ বন্ধ করে ব্যাট হাঁকাল মিজান, তারপর চোখ খুলল! কী হলো, বোঝার চেষ্টা করল। না, ব্যাটে বল লাগেনি। তাতে অবশ্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না। আসাদের বল ওয়াইড তো ওয়াইড, একেবারে দশ হাত দূর দিয়ে গেছে।

কিন্তু দর্শকেরা সবাই ‘মিজান গাধা’ বলে চিৎকার করছে। কারণ, যে বল তার আশপাশেই আসেনি, সেই বল মারার জন্য মিজান ইচ্ছেমতো ব্যাট ঘুরিয়েছে।

ড্রিল স্যার ধপাস করে পড়ে গেলেন। তারপর বলতে লাগলেন, ওরে, আমার বউ–বাচ্চাদের তোরা দেখিস। আমি চললাম

পরের বল। আসাদকে সবাই শিখিয়ে দিচ্ছে, তোর জোরে বল মারার দরকার নাই! তুই আস্তে করে বলটা স্টাম্প বরাবর পাঠিয়ে দে। তাহলেই হবে।

আসাদ তা–ই করল। খুব আস্তে করে বলটা ছুড়ে দিল মিজানের দিকে। মিজান ব্যাট হাতে প্রথমে চোখ বন্ধ করল। তারপর চোখ খুলে দেখতে পেল, বল আসছে। ধীরে ধীরে। এইবারে তরে পাইছি বলে মিজান ব্যাট তুলল ঘাড়ের ওপরে। গায়ের জোরে মারবে। যে কথা সেই কাজ। বল লক্ষ্য করে হাতে সমস্ত শক্তি জড়ো করে যেই না সে ব্যাটটা চালাল, অমনি হাত ফসকে ব্যাট গেল ছুটে। আর সেই ধাবন্ত ব্যাট গিয়ে লাগল লেগ আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়ানো ড্রিল স্যারের পিঠে। ধপ করে শব্দ হলো। এরপর সবকিছু নীরব। ড্রিল স্যার হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন, যেন তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন কী ঘটে গেল।

নীরবতা ভেঙে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। সবাই চিৎকার করে উঠল, মিজান গাধা, মিজান গাধা।

ড্রিল স্যার ধপাস করে পড়ে গেলেন। তারপর বলতে লাগলেন, ওরে, আমার বউ–বাচ্চাদের তোরা দেখিস। আমি চললাম।

ড্রিল স্যারের একটা মেয়ে আছে, রুবিনা, সে–ও ক্লাস সেভেনেই পড়ে। আবীর বলল, স্যার, আপনার মেয়েকে স্যার আমিই দেখে রাখব।

দেখবি? বাবা, দেখবি?

জি স্যার। রুবিনাকে নিয়ে আপনি একদম ভাববেন না ।

কী? ড্রিল স্যার উঠে দাঁড়ালেন। তারপর হাত বাড়িয়ে ধরে ফেললেন আবীরের কান। ফাজলামো করিস।

জয়েন স্যার বললেন, করেন কী করেন কী, ড্রিল সাহেব, আমার প্লেয়ারকে ইনজুরড করবেন না।

ড্রিল স্যার বললেন, না, আমার হাত নিশপিশ করছে, কান না টানলে আমার চলবে না।

তাহলে আপনি এক কাজ করেন। আপনাকে দুটি কান দিচ্ছি। টানুন। ইচ্ছেমতো টানুন। গাধার কান। একটা দড়ির দুদিক থেকে টানছে দুদল ছেলে আপনি টানবেন গাধার লম্বা লম্বা কান...এই মিজান এদিকে আয়, এখন তুই যে ড্রিল স্যারকে খুন করেই ফেলেছিস প্রায়, এর শাস্তি কী? পুলিশ ডাকব? আয়, তোর কান দুটো নিয়ে আয়। স্যারকে দে। স্যার একটু টেনে হাতের সুখ মেটাক...

মিজান খুবই শরমিন্দা। সে যেন লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। তার নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। কেন তার হাত থেকে ব্যাটটা ছুটে গেল? এতজন খেলছে, কারও বেলাতে তো এ ঘটনা ঘটল না। কেবল তার বেলাতে কেন এটা ঘটতে গেল!

ড্রিল স্যার যেভাবে মাটিতে পড়ে আছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি মারাই যাবেন। স্যার মারা গেলে কী হবে? পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যাবে? নিয়ে যাক। তা–ই ভালো। নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দিয়ে দিক!

জয়েন স্যার মিজানকে ধরে ড্রিল স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। ড্রিল স্যার তাঁর হাতটা বাড়ালেন মিজানের কানের দিকে। মিজানও একটা কান এগিয়ে দিল স্যারের দিকে। হঠাৎ ড্রিল স্যার দিলেন হেসে। বললেন, আমি হলাম গিয়ে ড্রিল টিচার। খেলার মাঠে অ্যাকসিডেন্ট ঘটে গেলে সে জন্য মাঠের বাইরে গিয়ে প্লেয়ারকে মার দিই না। এটা কোনো খেলোয়াড়সুলভ আচরণ নয়। ক্রিকেট মাঠে নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই তো আমাদের দেশে খেলতে এসে রমন লাম্বা মাথায় বল লেগে মারা গেছেন। সে জন্য তো কেউ ব্যাটসমানকে দোষ দেয়নি, আমার কিছু হয়নি। ব্যাট ঠিক পিঠের মাঝে চ্যাপ্টা হয়ে লেগেছে। কোনাকুনি লাগলে কী হতো, আমি জানি না। তবে এ যাত্রা আমি বেঁচেই গেছি।

কিরে মিজান, তোর মন খারাপ নাকি! কেন রে, মন খারাপ কেন? ড্রিল স্যার উঠে দাঁড়িয়ে হাত-পা এদিক-ওদিক ছুড়ে আড়মোড়া ভাঙলেন। হাসিমুখে বলে চললেন, মন খারাপ করিস না। খেলায় কেউ ভালো করবে, কেউ খারাপ করবে, এটাই নিয়ম। আর সবাই সব খেলায় ভালো করবে নাকি! কেউ দাবায় ভালো করবে, কেউ সাঁতারে। কেউ ক্রিকেটে। কেউবা কোনো খেলাতেই ভালো করবে না। সে হয়তো ভালো বাঁশি বাজাবে। খেলাটা হলো আনন্দের জন্য। এটাতে অংশ নেওয়াই হলো আসল কথা।

মিজানের চোখ দুটো আবার ভিজে আসছে। সে এতটা ভালো ব্যবহার আশা করেনি। তার মনে হচ্ছে, সে ড্রিল স্যারের কাছে আজীবন ক্রীতদাস হয়ে থাকে।

(চলবে...)