সুপারস্টার মিনটেন

অলংকরণ: আরাফাত করিম
দর্শকদের ভেতর হতাশা। আগের কণ্ঠটায় বলতে থাকে—যদি তুমি আসল হও, তাহলে ঘেমে দেখাও…অন্তত কেঁদে দেখাও!

এইটিন জোনে আজ বেশ সাজ সাজ রব।

গতকালই জোনটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল ভাসমান রঙিলা আলোয়। কখনো সেগুলো লাল-হলুদ-নীল আলো ছড়াচ্ছে তো কখনো সেগুলো বদলে যাচ্ছে মিনটেনের চেহারায়।

মিনটেন! আহ্‌ মিনটেন!

এই শতকের সবচেয়ে আনন্দজাগানিয়া অভিনেতা। কী করেনি সে! সিনেমায় এলিয়েনদের হাত থেকে পৃথিবী বাঁচিয়েছে যতবার, ততবারই গ্রহটির সব মানুষ হামলে পড়ে দেখেছে তাকে। ছুটে বেড়িয়েছে এই গ্রহ থেকে ওই গ্রহে। ধরায় থাকা মানুষকে দেখিয়েছে অধরা সব জগৎ। মিনটেনের তাকানো, হাসি, ছুড়ে দেওয়া চুম্বন—সবই তাই এই গ্রহে সাড়া ফেলে দেয়। সুপারস্টার যদি কেউ থেকে থাকে এই পৃথিবীতে, তাহলে সে মিনটেন! আর কেউ নয়!

কিন্তু একটা ব্যাপার সবাই জানে, যে মিনটেনকে তারা সিনেমায় দেখে, সেই মিনটেন আসল কেউ নয়; বরং গ্রাফিক্যালি তৈরি তার শরীর। সেলুলয়েডে দেখা যায় শুধু সেই শরীরটাই। অবশ্য তার পেছনে থাকে মিনটেনের ৭০০ সত্যিকারের ভঙ্গি। যেগুলো সে স্টুডিওর কাছে বিক্রি করে রেখেছে। আর তার কণ্ঠ—তার হাসি...তার কান্না!

না না! কান্না নয়! মিনটেন কখনো কাঁদেনি সিনেমায়। সুপারস্টার কাঁদে নাকি কখনো? সুপারহিরোদের কাঁদতে আছে নাকি?

সে অধরা অদেখা সুপারস্টার মিনটেন আজ এইটিন জোনে আসছে। একেবারে সরাসরি দেখা যাবে তাকে। সামনাসামনি। এইটিন জোনে একটি থিয়েটার তৈরি হয়েছে কিছুদিন আগেই। চারদিকে জলঘেরা আবরণের ঠিক মধ্যখানে থিয়েটারটি। শূন্যে ভাসমান। দর্শকেরা সেখানে ঢুকে গেলে মাটি থেকে উঠে যায় কয়েক ফুট ওপরে। সেই অপূর্ব নিকেতনে আজ মিনটেন আসবে। এইটিন জোনের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশির দিন আজ।

আহা, মিনটেন!

‘তুমিও তো যন্ত্র! যে তোমাকে সিনেমায় সবাই দেখে, সেটিও তো বানানো। তোমার আকার আর অনুভূতি নিয়ে বানানো সাদাসিধে একটা যন্ত্র।’

এইটিন জোনে যখন এমন খুশির হুল্লোড় চলছে, মিনটেন তখন তার বহুতল ভবনের অতিকায় একটি কক্ষে। অনেক অনেক দিন পর এই কক্ষে ঢুকেছে সে। কক্ষের বৈশিষ্ট্য হলো, এর ১০ দিকে আয়না। আয়নায় মিনটেন নিজেকে দেখছে। দেখছে কি অনেক দিন পর?

‘তাহলে তুমি সত্যি যাবে মানুষের সামনে?’

কণ্ঠটা নারীর, সুরেলা কিন্তু কর্কশ। রোবটটির নাম নি। মিনটেন নির হলদে চোখের দিকে তাকায়। অতিবিস্মিত হলে সে চোখের রং পাল্টে এমন করে। মিনটেন শ্রাগ করে একটা। বলে, তোমার চোখের রংটা বিচ্ছিরি লাগছে। পাল্টাও তো এটাকে!

‘তুমি মন পাল্টাও আগে। আমার চোখের রং এমনি পাল্টে যাবে!’

মিনটেন কিছু বলে না। নি রোবটটা সে উপহার পেয়েছিল। গ্রহান্তরে মিথ্যা মানব সিনেমার সাফল্যের পর; স্টুডিও ফাইভের পক্ষ থেকে। নি এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক রোবট। ফলে মানুষের সঙ্গে তর্কে–বিতর্কে লিপ্ত হতে পারে। সাফল্য মানুষকে কখনো কখনো বিপদ ধরিয়ে দেয়। নিকে মিনটেনের তেমনই বিপদ মনে হয় মাঝেমধে৵।

মিনটেন কোনো কথা বলে না। বলতে ইচ্ছা হয় না আসলে। সে কিছুটা উত্তেজিত। প্রায় ৯ বছর পর সে সাধারণ মানুষের সামনে যাবে। যেসব মানুষ তার সিনেমা দেখে দেখে তাকে সুপারস্টার বানিয়েছে।

‘তোমার মনের মধ্যে কী চলছে, তার সবই আমি বুঝতে পারছি!’

‘তুমি একটা যন্ত্র। আমার মনের কথা তুমি কোনো দিনও বুঝতে পারবে না।’

‘সবাই যন্ত্র। মানুষও।’

‘বাজে কথা বলো না। যাও। না হয় চুপ থাকো।’

‘মানুষের কাছে যাওয়া নিয়ে তুমি ভীষণ উত্তেজিত। কারণ, তুমি এর মধ্যেই ভুলে বসে আছ, মানুষের চেয়ে ভয়াবহ কিছু নেই।’

‘মানুষ ভয়াবহ হতে যাবে কোন দুঃখে?’

নি এবার শ্রাগ করে। মেজাজ খুবই খারাপ হয় মিনটেনের। একটু ধমকেই ওঠে—আমার মতো ঘাড় নাড়াবে না প্লিজ!

‘দুঃখিত, কিন্তু ভেবো না তোমাকে নকল করছি। মানুষ যে অকারণে রেগে যায়, এ জন্যই সে ভয়াবহ। গত শতকে পৃথিবীর মানুষ রেগে একে-ওকে মেরে ফেলেছিল। পৃথিবী শূন্য হতে বসেছিল। আমি তো ধারণা করেছিলাম, মানুষের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো ইতিহাস পড়ানো হয়!’

‘তুমি যাবে নাকি তোমার সুইচ অফ করে দেব?’

‘আমাকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা আছে, যেন জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত তোমাকে সচেতন করতে পারি।’

‘তুমি কি আমার সিনেমার সংলাপ আমাকেই বলছ?’

‘মানুষ ভয়াবহ। হাজার হাজার মানুষ আরও ভয়াবহ। এরা যখন একসঙ্গে থাকে এবং কোনো একটি বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে ওঠে, তখন তাদের আর ঠেকানো যায় না!’

‘ওরা সংঘবদ্ধভাবেই আমাকে সুপারস্টার বানিয়েছে। তুমি যন্ত্র, তুমি এসব বুঝবে না!’

‘তুমিও তো যন্ত্র! যে তোমাকে সিনেমায় সবাই দেখে, সেটিও তো বানানো। তোমার আকার আর অনুভূতি নিয়ে বানানো সাদাসিধে একটা যন্ত্র।’

‘ঠিক বলেছ, কিন্তু আমি আর যন্ত্র থাকতে চাই না। আমাকে যারা ভালোবাসে, এবার আমি তাদের সামনে যাব। নিজের চোখে দেখে আসব, তারা আমাকে দেখে কীভাবে উৎফুল্ল হয়।’

নি আরও কিছু বলতে যায়, কিন্তু মিনটেন তার আগেই রিমোট বাড়িয়ে তার সুইচটা অফ করে দেয়। ঘোঁৎ ধরনের একটা শব্দ তুলে নি বন্ধ হয়ে যায়। স্বস্তির শ্বাস ফেলে মিনটেন। তাকায় এবার নিজের দিকে। চারদিকে মিনটেন। আয়নাময়। এবার এই আয়না ভাঙার সময় হয়েছে…মনে মনে বলে নিজেই হেসে ওঠে মিনটেন। সিনেমার সংলাপই তো হয়ে যাচ্ছে কথাগুলো। আর সিনেমা না…যন্ত্র না…এবার আসল মিনটেনের দেখা পাবে তার ভক্তরা। প্রবল উত্তেজনার মধ্যে কোথাও একটা কিন্তু–তবু যেন মিনটেনের ভেতর কাজ করতে থাকে। অনেক আগে, পৃথিবীর মানুষেরা, এটাকেই সম্ভবত কু ডাকা বলত। নির দিকে তাকিয়ে নেয় একবার। বলে, শোনো, ইতিহাস আমি ঠিকই পড়েছি!

অলংকরণ: আরাফাত করিম
ধোঁয়ার ভেতর আলো। নীল আর লালচে। বুম করে একটি আওয়াজ হয়। যেন পৃথিবীটা ফেটে গেল। আর তখনই ধোঁয়ার আস্তরণ সরে গেল...আর তার মধ্যে...হ্যাঁ, ওই তো...মিনটেন!

গোল মঞ্চ ঘিরে সবার অধীর অপেক্ষা। নিজেদের মধ্যে গুঞ্জনও করে চলেছে দর্শকেরা। রু এদের মধ্যে সবচেয়ে উৎফুল্ল। মিনটেন ছাড়া ২৩ বছর বয়সী তরুণী রু কাউকে বোঝে না। মিনটেনকে তার মা ভালোবাসত…রুর ধারণা, তার মা যদি সামনাসামনি মিনটেনকে দেখতে পেত, তাহলে মরেই যেত। অবশ্য এমনিতেই মা তার মারা গেছে। মিনটেনকে দেখতে আসার আগে ভল্টে রাখা মায়ের ত্রিমাত্রিক শরীরের সঙ্গে কথা বলে আসতে পারলে ভালো হতো। তারিয়ে তারিয়ে বলত মিনটেনকে দেখতে যাওয়ার ব্যাপারটা। কিন্তু মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলতে অনেক ইউনিট খরচ হয়ে যাবে। রু ঠিক করেছে, বছরের শুরুর দিনটায় গিয়ে একেবারে ১০ মিনিট কথা বলবে মায়ের সঙ্গে। মায়ের নকল চেহারা নিশ্চয়ই তখন আসলের মতো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে। মায়ের হাতটা ধরে তখন কিছুক্ষণ বসে থাকবে রু।

মঞ্চে এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়—আর সাড়ে তিন মিনিটের মাথায় সবাইকে মাত করতে আসছে মিনটেন! ৯ বছর পর…প্রকাশ্যে।

হাতের তালু ঘামতে থাকে রুর। এই সাড়ে তিন মিনিটই যেন আর কাটছে না তার। মিনটেন… প্রিয় মিনটেন…হিস্টিরিয়ার মতো হয় রুর। মনে হয় বমি হয়ে যাবে। পাশের একজন ধপাস করে পড়ে যায়। জ্ঞান হারায়। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে রোবট নার্স। লোকটাকে টেনে নিয়ে যায়। ঘোষণা আসে সবাইকে শান্ত থাকার। কাউন্টডাউন শুরু হয়। আসছে…আসছে মিনটেন! রুর যেন পলক পড়ে না!

মঞ্চের একেবারে মধ্যখানে ঘূর্ণমান ধোঁয়া তৈরি হয়। ধোঁয়ার ভেতর আলো। নীল আর লালচে। বুম করে একটি আওয়াজ হয়। যেন পৃথিবীটা ফেটে গেল। আর তখনই ধোঁয়ার আস্তরণ সরে গেল...আর তার মধ্যে...হ্যাঁ, ওই তো...মিনটেন!

মিনটেন?

ঝলমলে পোশাক পরে আছে মিনটেন। ঠিক যেমন সিনেমায় থাকে। চোখের চাহনিতেও একই তীক্ষ্ণতা এবং পাট করে আঁচড়ানো চুল। ঠিক যেমন সিনেমায় থাকে। রুর মধ্যে কেমন যেন এক অনুভূতি! সবকিছু তো ঠিক যেমন সিনেমায় দেখা যায়, তেমনই। দর্শকদের মধ্যে গুঞ্জন থেকে গেছে। পুরোনো সাহিত্যে যেমন লেখা থাকত, তেমনই পিনপতন নীরবতা!

মিনটেন বলে, হ্যাল্লো বন্ধুরা, কেমন আছ?

রুর মধ্যে আওয়াজটা যেন কেমন এক অদ্ভুত অবস্থা তৈরি করে! মিনটেনের কণ্ঠ…এ রকমই তাহলে? মানে, একেবারে ঠিক যেমন সিনেমায় শোনা যায়। একটুও বদল নেই, কিন্তু সিনেমায় না সব সময় মিনটেনের গ্রাফিক ব্যবহার করা হয়!

হঠাৎ করে দর্শকদের মধ্যে কেউ একজন বলে ওঠে, আসল নয়, আসল নয়! এটা সিনেমার মিনটেন! গ্রাফিকস মিনটেন! গ্রাফিকস!

মিনটেন সপাটে তাকায় সবার দিকে। ভ্রু কুঁচকে ফেলে। বলে, তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করছ? আমি মিনটেন। তোমাদের ভালোবাসা। সুপারস্টার। সুপারস্টাররা কখনো কাঁদে না!

দর্শকদের মনের মধ্যে বোধ হয় ওই কথাই চলছিল এতক্ষণ ধরে। কেউ একজন বলে ওঠায় তাদের খুব সুবিধা হলো। তারা কথাটা ধরে নিয়ে বলতে থাকল—ঠিক ঠিক! এইটা আসল না! এইটা গ্রাফিকের! হলোগ্রাফিক…হলোগ্রাফিক!

মিনটেন হেসে উঠল। দুই হাত ছড়িয়ে বলল, এই যে আমি। আসল আমি। এই যে দেখো তোমরা! দেখো ভালো করে!

দু–একজন যে ভালো করে দেখতে চাইল না, তা না! এগিয়েও গেল। হুমড়ি খেয়ে পড়ল মঞ্চের কাছে, কিন্তু বেশির ভাগের কণ্ঠেই অবিশ্বাস—না না! দেখছি তো! দেখছি! এটা আসলের মতো, কিন্তু আসল নয়!

সমবেত কণ্ঠের মধ্যেই একজন হঠাৎ করে বলে উঠল—যদি আসল হও…তাহলে ঘাম কই তোমার? ঘামো…ঘামো…

মিনটেনের মুখের হাসিটা মুছে গেছে, কিন্তু নিজেকে সামলানোর চেষ্টাও সে করছে। বলে ওঠে—মিনটেনের ঘাম দেখার জন্য এসেছ নাকি তোমরা? নাকি তোমরা নেবে মিনটেনের উড়ন্ত চুম্বন!

মিনটেন দুই হাতে চুম্বন ছুড়ে দিতে থাকে। একটু আগেও এই চুম্বন পেলে রু জাপটেই ধরত। কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে। তারও মনে হচ্ছে, এটা সিনেমার মিনটেন। আসল কিছু না। সত্যিই তো তার ঘাম কই?

দর্শকদের ভেতর হতাশা। আগের কণ্ঠটায় বলতে থাকে—যদি তুমি আসল হও তাহলে ঘেমে দেখাও…অন্তত কেঁদে দেখাও!

মিনটেন সপাটে তাকায় সবার দিকে। ভ্রু কুঁচকে ফেলে। বলে, তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করছ? আমি মিনটেন। তোমাদের ভালোবাসা। সুপারস্টার। সুপারস্টাররা কখনো কাঁদে না!

দর্শকেরা চুপ করে যায়। রুর এই চুপ করে যাওয়াটা ভালো লাগে না। মনে হতে থাকে, ভেতরে–ভেতরে কিছু একটা যেন হচ্ছে দর্শকদের। কী যেন একটা চাপা গুঞ্জনও তাদের ভেতর চলছে। হঠাৎ পাশের জন রুর হাত ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দেয়। রু দেখে, সব দর্শকের হাত একজনের সঙ্গে আরেকজনের আটকানো। তারা একটি দারুণ শিকল তৈরি করে ফেলেছে। রু বুঝতে পারে না কী হতে যাচ্ছে! কিন্তু আর সবার সঙ্গে রুও ছুটে যাচ্ছে মঞ্চের দিকে। আরও ভালো করে বললে, ঠিক মিনটেনের দিকে। মিনটেন হয়তো পালাতে পারত…কিন্তু ১০ দিক থেকে ছুটে আসা দর্শকদের মধ্য থেকে সে পালাবেই–বা কোন দিকে?

দর্শকেরা হামলে পড়ে মিনটেনের ওপর। তার চুল আর চেহারা, মাংস আর কাপড় ধরে টানাটানি করে। বুঝে উঠতে চায় জিনিসটা গ্রাফিকস নাকি আসল? কিন্তু বিজ্ঞান এত দূর এগিয়েছে যে কেবল এতটুকুতেই তো এখন গ্রাফিকস আর আসলের পার্থক্য করা যায় না! কেউ একজন বলে ওঠে—কাঁদে না, ঘামে না…মানে একটাই…এইটা একটা গ্রাফিকস! গ্রাফিকস! ধোঁকা দেওয়া হয়েছে…আমাদের ধোঁকা দেওয়া হয়েছে…

রু ততক্ষণে মিনটেনের বুকের কাছে চলে এসেছে। মিনটেনকে ছুঁয়েছে নাকি তার গ্রাফিকসকে, সে তা বুঝতে পারে না। কিন্তু ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রুর ভেতর একটি তরঙ্গ যেন প্রবাহিত হয়। মিনটেন রুর ছোঁয়াটাকে যেন আলাদাও করতে পারে। মিনটেন তাকায় রুর দিকে। ধস্তাধস্তির ভেতরেও মিনটেন কেমন যেন হাসে। সেই হাসিতে কিছুটা প্রশ্রয়ই যেন আছে। যেন বলছে...দেখো তো মেয়ে, ওরা কী বলে! আমি নাকি আসল না!

রু বুঝতে পারে, মিনটেন আসল। মিনটেনের বুকের কাছটা তো ধড়াস ধড়াস করছে। রু মিনটেনের হাতটা ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই মিনটেনকে কেউ একজন টান দেয়। রুর হাত থেকে ছুটে যায় মিনটেন। চোখের সামনে দেখে অদ্ভুত এক ঘটনা। একটা তরুণ মিনটেনের পেটের কাছটা কিছু দিয়ে চেপে ধরে...

তরুণটা হেসে ওঠে। বলে, দেখো… গ্রাফিক্স এটা… গ্রাফিক্স! কাটে না। রক্ত নাই কোনো!

ঠিক তখনই মিনটেনের পেট থেকে রক্ত বের হতে থাকে। সবাই স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। ছিটকে সরে যায় পেছনে। কিন্তু রু, অদ্ভুত কারণেই এগিয়ে যায় মিনটেনের কাছে। সে তো মিনটেনের হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনেছিল। ঠিক এ কারণেই কি না, কে জানে, মিনটেন তার হাতটা রুর দিকেই বাড়িয়ে দেয়। রু সেটা ধরে। মিনটেন হাসে তার ভেতরেই। বলে, সুপারস্টারদের ঘামতে নেই, কাঁদতেও নেই…জানো তো?

রু মাথা নাড়ায়। মিনটেন বলে, কিন্তু সুপারস্টাররা মরতে তো পারে!

ততক্ষণে আয়োজকদের অনেক রোবট ছুটে আসে। দর্শকেরাও খালি হতে থাকে। শুধু রু সুপারস্টার মিনটেনকে নিয়ে মধ্যমঞ্চে বসে থাকে। সুপারস্টার মিনটেনের রক্ত গড়িয়ে মঞ্চ থেকে ছাড়িয়ে যেতে থাকে আরও কোনো দূর গন্তব্যে।