নেক্সট লজিক্যাল স্টেপ

প্রতীকী ছবি

‘আপনাদের এই সমস্যার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছি না,’ সিআইএ এজেন্ট বললেন। ‘আর সত্যি বলতে কী, এই মুহূর্তে আমার হাতে এরচেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।’

জেনারেল লেরয়ের দিকে তাকালেন মিস্টার ফোর্ড। জেনারেলের মুখে তখনও সেই প্রশ্নবোধক অভিব্যক্তি, যার অর্থ তিনি কিছু বলতে চাইছেন।

‘আপনাকে বরং প্রথমে সমস্যাটা দেখাই, কী বলেন?’ জেনারেল বললেন।

সিআইএ এজেন্ট নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকালেন। ‘আশা করি খুব বেশি সময় লাগবে না। ইতিমধ্যে আমার যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে।’

‘বেশি সময় লাগবে না। তাই না, মিস্টার ফোর্ড?’ জেনারেল তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।

‘খুব বেশি সময় লাগবে না,’ মিস্টার ফোর্ডও তাল মেলালেন। ‘চলুন এগোই।’

সিআইএ এজেন্ট ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে করতে জেনারেলের অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন। অন্ধকার নির্জন হলওয়ের নিচে গিয়ে তাদের পদধ্বনি ফাঁপা শব্দ করতে লাগল।

‘সমস্যাটা আমি মোটেও বাড়িয়ে বলছি না।’ জেনারেল লেরয় সিআইএ এজেন্টকে বললেন। ‘কম্পিউটারের সঙ্গে মাত্র একটা সেশন কাটানোর পর এখন পর্যন্ত আটজন জেনারেল পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা হয় বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছে, নয়তো ভর্তি হয়েছে মানসিক হাসপাতালে।’

সিআইএ এজেন্ট মুচকি হেসে বললেন, ‘এই জায়গাটা নিরাপদ তো?’

জেনারেল লেরয়ের মুখ লাল হয়ে গেল। ‘জনাব, এই পুরো বিল্ডিংটা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মতোই সুরক্ষিত। আর এটা এখন সম্পূর্ণ খালি। এই মুহূর্তে এখানে আমরাই একমাত্র জলজ্যান্ত প্রাণী। আমি কোনো ঝুঁকি নিচ্ছি না।’

‘শুধু নিশ্চিত হতে চাইছিলাম।’

‘আচ্ছা, আমি বরং কম্পিউটারটার সম্পর্কে আরেকটু ব্যাখ্যা করি,’ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে মিস্টার ফোর্ড বললেন, ‘আশা করি আপনার মনের সব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবেন।’

‘বেশ, বলুন তাহলে।’ সিআইএ এজেন্ট বললেন।

‘ইতিমধ্যেই আমরা আপনাকে জানিয়েছি, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক, সবচেয়ে জটিল ও সূক্ষ্ম কম্পিউটার... এর আগে আর কোথাও এমন কম্পিউটার বানানোর চেষ্টাও করা হয়নি।’

‘হ্যাঁ, আমি জানি।’ সিআইএ এজেন্টও সম্মত হলেন।

‘আশা করি আপনি এটাও জানেন যে কম্পিউটারটা বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতি সিমুলেট করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আমরা এখানে এই কম্পিউটার দিয়ে যুদ্ধ করি... ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও রাসায়নিক গ্যাস দিয়ে। বাস্তব যুদ্ধ—সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাস্তব যুদ্ধ সম্পন্ন করা হয়। প্রতিটা ক্ষেপণাস্ত্র, প্রতিটা শহর, প্রতিটা মানুষের সঙ্গে আসলে কী ঘটবে, কম্পিউটার আমাদের জানিয়ে দেয়... কারা মারা যাবে, কয়টা ফাইটার প্লেন ভূপাতিত হবে, যুদ্ধে কে জিতবে, কে হারবে…’

‘এটা সম্পূর্ণ ট্রানজিস্টরাইজড এবং সাবমিনিয়েচারাইজড,’ মিস্টার ফোর্ড ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। ‘এই পদ্ধতিতে আমরা বিল্ডিংয়ের ভেতরেই এত জটিল একটা কম্পিউটার বানিয়ে ফেলেছি।’ ‘একটা বিল্ডিংয়ের ভেতর? ’
আরও পড়ুন

জেনারেল লেরয় বাধা দিয়ে বললেন, ‘কম্পিউটার উভয়পক্ষের জন্য বিশ্লেষণ চালায়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে কী ঘটবে, তাও আমরা দেখতে পারি।’

সিআইএ এজেন্ট অধৈর্য হয়ে উঠলেন। ‘যুদ্ধে সিমুলেশনের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। আপনারা তো অনেক বছর ধরে এগুলো নিয়ে কাজ করছেন।’

‘হ্যাঁ, কিন্তু এই কম্পিউটারটা একেবারে ভিন্ন,’ মিস্টার ফোর্ড জানালেন। ‘এটা শুধু যুদ্ধের নিখুঁত বিবরণ দেয় না, পাশাপাশি এটা মেশিন-সিমুলেটেড যুদ্ধ বিকাশের পরবর্তী পদক্ষেপ।’ নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করলেন তিনি।

‘এটা আসলে কী?’

‘আমরা এটাতে ইলেকট্রো-এনসেফালোগ্রাফের একটা ভ্যারিয়েশন যুক্ত করেছি…’

সিআইএ এজেন্ট হাঁটা থামালেন। ‘ইলেকট্রো... কী?’

‘ইলেকট্রো-এনসেফালোগ্রাফ—এমন একটা রেকর্ডিং যন্ত্র, যা আপনার মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক্যাল প্যাটার্ন পড়তে পারে। অনেকটা ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাফের মতো।’

‘আচ্ছা।’

‘তবে আমরা ইলেকট্রো-এনসেফালোগ্রাফকে উল্টো করে সাজিয়েছি। এমন একটা মেশিন তৈরি করেছি, যা মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক প্যাটার্ন রেকর্ড করার পরিবর্তে কম্পিউটারে সেট করে রাখা ইলেকট্রিক প্যাটার্নগুলোকে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেবে।’

‘বুঝতে পারলাম না।’

জেনারেল লেরয় বলা শুরু করলেন, ‘আপনি কম্পিউটারের কন্ট্রোল কনসোলে বসুন। আপনার মাথায় একটা হেলমেট পরানো হবে। কম্পিউটারটা চালু হলেই আপনি ফলাফল দেখতে পাবেন।’

‘হ্যাঁ,’ মিস্টার ফোর্ড এগিয়ে এলেন। ‘কম্পিউটারের প্রিন্টার থেকে বের হওয়া আজগুবি রিপোর্ট পড়ার চেয়ে... আপনি বরং আসল যুদ্ধক্ষেত্র দেখে আসুন। সম্পূর্ণ ভিজ্যুয়াল ও অডিটরি হ্যালুসিনেশন। যুদ্ধকৌশল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের অগ্রগতি ও ফলাফলও নিজ চোখে দেখতে পাবেন।’

প্রতীকী ছবি

জেনারেল লেরয় বললেন, ‘কম্পিউটারটা মূলত জেনারেল স্টাফদের সহজে কৌশলগত পরিস্থিতি দৃশ্যমান করে তোলার জন্য বানানো হয়েছিল।’

‘কিন্তু যারা কম্পিউটারটা একবার ব্যবহার করেছে, তারা হয় বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছে বা একেবারে পাগল হয়ে গেছে।’ মিস্টার ফোর্ড যোগ করলেন।

সিআইএ এজেন্ট জেনারেল লেরয়ের দিকে চোখ রাখলেন। ‘আপনিও কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘আর আপনি পদত্যাগও করেননি, পাগলও হননি।’

জেনারেল লেরয় মাথা নাড়লেন। ‘আমিই আপনাকে এখানে ডেকেছি।’

সিআইএ এজেন্ট কিছু বলার আগে মিস্টার ফোর্ড বললেন, ‘এই ডোরওয়ের পাশের কম্পিউটারটা রয়েছে। পুরো বিল্ডিংটা যেহেতু খালি, চলুন এখনই সেখানে যাওয়া যাক।’

তারা সেখানে পৌঁছালেন। মিস্টার ফোর্ড ও জেনারেল লেরয় সিআইএ এজেন্টকে বিশাল কনসোল রুমের রাস্তা দেখালেন।

‘এটা সম্পূর্ণ ট্রানজিস্টরাইজড এবং সাবমিনিয়েচারাইজড,’ মিস্টার ফোর্ড ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। ‘এই পদ্ধতিতে আমরা বিল্ডিংয়ের ভেতরেই এত জটিল একটা কম্পিউটার বানিয়ে ফেলেছি।’

‘একটা বিল্ডিংয়ের ভেতর? ’

‘ওহ হ্যাঁ, এটা তো শুধু নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এই বিল্ডিংয়ের বেশির ভাগজুড়ে সার্কিট, মেমোরি ব্যাংক ও বাকি অংশগুলো রয়েছে।’

‘হুম।’

আরও পড়ুন

তারা অবশেষে সিআইএ এজেন্টকে কন্ট্রোল বাটন আর ডায়াল দিয়ে জড়ানো একটা ছোট ডেস্ক দেখালেন। একমাত্র ডেস্কের ওপরে থাকা স্পটলাইটটাই অন্ধকার রুমটাকে আলোকিত করছে।

‘যেহেতু আপনি আগে কখনো কম্পিউটারটা চালাননি,’ মিস্টার ফোর্ড বললেন, ‘তাই জেনারেল লেরয় কন্ট্রোল সামলাবেন। আপনি শুধু বসে বসে দেখুন কী হয়।’

জেনারেল পাশের চেয়ারে বসে একটা অদ্ভুত হেডগিয়ার পরলেন, যেটা ডেস্কের সঙ্গে আধডজন তারের সঙ্গে সংযুক্ত। সিআইএ এজেন্টও ধীরে ধীরে চেয়ারে বসে পড়লেন।

যখন তারা সিআইএ এজেন্টের মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিলেন, তখন সিআইএ এজেন্ট তাদের দিকে তাকালেন ও বিড়বিড় করতে লাগলেন, ‘আমি কি… পারব? আচ্ছা, আমার কোনো ক্ষতি হবে না, তাই না? ’

‘না না, নিশ্চিন্ত থাকুন,’ ফোর্ড বলল। ‘মানসিক ক্ষতির কথা বলতে চাইছেন? না, অবশ্যই না।’

‘বেশ কিছু বেসামরিক লোক কোনো বিরূপ প্রভাব ছাড়াই কম্পিউটারটা ব্যবহার করেছে,’ জেনারেল লেরয় বললেন, ‘স্বয়ং মিস্টার ফোর্ড এটা বহুবার ব্যবহার করেছেন।’

সিআইএ এজেন্ট মাথা নাড়ালেন। তিনি পাশে বসা জেনারেল লেরয়কে একাধিক বাটন টিপতে দেখলেন, তারপর একটা ডায়াল চালু করে দিলেন।

সিআইএ এজেন্ট যুদ্ধের শুরুর পর্যায়গুলোর সঙ্গে পূর্বপরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিক্ষেপ করা প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটা ছিল শত্রুর দিকে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং বোমারু বিমানের পুরো বহর পাঠানোর সংকেত।

‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’ হেলমেট ভেদ করে জেনারেলের কণ্ঠস্বর আসতে লাগল।

‘হ্যাঁ,’ তিনি বললেন।

‘ঠিক আছে। এই নিন। আপনি কি সিচুয়েশন ওয়ান-টু-ওয়ান সম্পর্কে জানেন? এটাই আপনি এখন দেখতে চলেছেন।’

সিচুয়েশন ওয়ান-টু-ওয়ান একটা আদর্শ যুদ্ধক্ষেত্র। সিআইএ এজেন্ট এ সম্পর্কে ভালো করেই জানেন। তিনি জেনারেলকে একটা সুইচ চাপতে দেখলেন। তারপর বুকের ওপর হাত ভাঁজ করে বসে রইলেন। ডেস্ক কনসোলে আলোর সারি জ্বলছে-নিভছে। এক, দুই, তিন... সারির শেষ পর্যন্ত, জ্বলছে আর নিভছে। জ্বলছে, নিভছে...এবং তারপর, কীভাবে যেন তিনি দেখতে শুরু করলেন!

তিনি স্থির হয়ে রইলেন, ঝাপসা স্বপ্নের মতো দেখতে পেলেন। একসঙ্গে বেশ কয়েকটা দৃশ্য তার চোখে ভেসে উঠতে লাগল এবং অনেক মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। সব মিলিয়ে অদ্ভুতুড়ে অনুভূতি।

তিনি এত আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন যে তার হেলমেটটা ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছিল। এটা শুধু একটা বিভ্রম, স্নায়ুকে শান্ত করতে নিজেকে বোঝাতে লাগলেন। এ সবই মায়া।

কিন্তু সেগুলো অদ্ভুতরকম বাস্তব বলে মনে হচ্ছে।

তিনি মেক্সিকো উপসাগর দেখতে পেলেন। ডানদিকে ফ্লোরিডা এবং দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার আঁকাবাঁকা উপকূল। এমনকি তিনি রিও গ্র্যান্ডে নদীও দেখতে পেলেন।

সিআইএ এজেন্ট যুদ্ধের শুরুর পর্যায়গুলোর সঙ্গে পূর্বপরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিক্ষেপ করা প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটা ছিল শত্রুর দিকে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং বোমারু বিমানের পুরো বহর পাঠানোর সংকেত। একসঙ্গে পুরো পৃথিবীটা দেখতে সত্যিই বিভ্রান্তিকর; মাঝেমধ্যে তিনি বলতেও পারলেন না, ফায়ারবল এবং মাশরুম ক্লাউড কোন শহরের ওপরে দেখতে পেলেন। শিকাগো নাকি সাংহাই? নিউইয়র্ক নাকি নভোসিবিরস্ক? বাল্টিমোর নাকি বুদাপেস্ট? যদিও খুব একটা পার্থক্য নেই। লন্ডন আর মস্কো, ওয়াশিংটন আর পিকিং, ডেট্রয়েট আর দিল্লি এবং আরও অনেক শহর যুদ্ধের প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যে ধুলিস্যাৎ।

আরও পড়ুন
‘কিছু কিছু এরচেয়েও খারাপ,’ মিস্টার ফোর্ড বললেন। ‘আমরা আপনাকে সবচেয়ে সাধারণ যুদ্ধক্ষেত্রটা দেখিয়েছি। এমনকি কিছু যুদ্ধক্ষেত্র আছে, যেখানে সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’

সব দিকে ডিফেন্সিভ সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করলেও অ্যান্টিমিসাইল পর্যাপ্ত ছিল না। অ্যাটাক রকেটের তুলনায় ডিফেন্সিভ সিস্টেম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার চেয়ে প্রতিরোধ করাটাই তুলনামূলক সস্তা।

রেডিওতে কমান্ড এলে এক এক করে সাবমেরিন, মিলিটারি বেস, এয়ার বেস, যুদ্ধবিমান থেকে অসংখ্য মিসাইল ছোঁড়া শুরু হলো। ডিফেন্সিভ সিস্টেম চরম পর্যায়ে চলে গেল। বারুদ ফুরিয়ে গেলে মিসাইলগুলো তখন জীবাণু আর রাসায়নিক গ্যাস ছড়িয়ে দিতে শুরু করল। থামার কোনো লক্ষণই নেই। ছয় দিন, ছয় রাত। উড়ে আসছে, ছুটে যাচ্ছে, বিস্ফোরিত হচ্ছে… ফলাফল মৃত্যু।

সব শেষ হয়ে গেল, সিআইএ এজেন্ট ভাবলেন। সব মিসাইল শেষ হয়ে গেছে। সবগুলো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। সমরাস্ত্র তৈরি করা দেশগুলোর আজ কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি জানতেন, এখানেই যুদ্ধের শেষ।

তবু যুদ্ধ শেষ হয়নি। কম্পিউটার সেটা জানে। শত্রুকে শেষ করার আরও অনেক উপায় আছে। পরীক্ষিত কিছু উপায়। স্থল, আকাশ ও নৌপথে যুদ্ধরত চার মহাদেশে সেনাবাহিনী তখনও একে অপরকে শেষ করতে ব্যস্ত।

অবিশ্বাস্যভাবে তখনো যুদ্ধ চলতে লাগল। ট্যাঙ্কগুলোর জ্বালানি ফুরিয়ে এল, নিক্ষেপ করার মতো কোনো গোলা অবশিষ্ট রইল না, এমনকি বন্দুকে আর কোনো বুলেটও ছিল না। তবু যুদ্ধ চলতে লাগল বেয়নেট আর তলোয়ার দিয়ে।

সিআইএ এজেন্ট পৃথিবীকে নিশ্চিহ্ন হতে দেখছেন। চারদিকে শুধু মৃত্যু। অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে দেখলেন। বাতাসে তখন ছড়িয়ে পড়ল তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, রোগজীবাণু আর বিষাক্ত গ্যাস। আর অবশেষে সবচেয়ে কার্যকর ধ্বংসকারী জেঁকে বসল। ক্ষুধা!

যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পৃথিবীতে সাত বিলিয়ন মানুষ ছিল। এখন সভ্যতার এই অন্তিম সময়ে যারা যুদ্ধে নিহত হয়নি, তাদের বেশির ভাগই অনাহারে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করছে।

সবাই অবশ্য মারা যায়নি। জীবন তবু চলছে। কিছু ভাগ্যবান তখনও জীবিত।

এক দীর্ঘ অন্ধকার পৃথিবী ঢেকে ফেলল। জীবন চলল কয়েকজনের জন্য, সামান্য কয়েকজনের জন্য, অসভ্য কয়েকজনের জন্য। শহরগুলো হয়ে উঠল পোকামাড়ের বসতি। বইপুস্তক পুড়ে কয়লা। জ্ঞান-বিজ্ঞান চিরতরে হারিয়ে গেল। পৃথিবী থেকে সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে গেল একেবারে।

সিআইএ এজেন্ট মাথা থেকে ধীরে ধীরে হেলমেটটা খুলে ফেললেন। তিনি এত দুর্বল হয়ে গেছেন যে সামান্য নড়াচড়াও করতে পারছেন না। ক্রমাগত কাঁপছেন আর ঘামে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছেন।

‘সব তো নিজ চোখেই দেখলেন,’ মিস্টার ফোর্ড শান্তভাবে বললেন, ‘কেন সামরিক কর্মকর্তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়।’

জেনারেল লেরয়ের মুখটাও ফ্যাকাশে। ‘যুদ্ধের এ ভয়াবহ পরিণতি জানার পর কীভাবে একজন বিবেকসম্পন্ন মানুষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করার কথা ভাবতে পারে?’

সিআইএ এজেন্ট একটা সিগারেট ধরালেন। ‘সব যুদ্ধক্ষেত্রই কি... এমন?  এত ভয়াবহ?’

‘কিছু কিছু এরচেয়েও খারাপ,’ মিস্টার ফোর্ড বললেন। ‘আমরা আপনাকে সবচেয়ে সাধারণ যুদ্ধক্ষেত্রটা দেখিয়েছি। এমনকি কিছু যুদ্ধক্ষেত্র আছে, যেখানে সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’

‘তাহলে... আপনারা এখন কী করতে চান? আমাকে ডেকেছেন কেন? আমি আপনাদের কী সাহায্য করতে পারি?’

‘আপনি সিআইএর লোক,’ জেনারেল বললেন, ‘আপনারা দেশ-বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনা করেন, তাই না?’

‘হ্যাঁ, কিন্তু সিআইএর সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?’

জেনারেল তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘আমি চাই সিআইএ পরিচালকরাও এই কম্পিউটারটা অন্তত একবার করে ব্যবহার করে দেখুক... দ্রুতই!’

অনুবাদক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়