তিতি তাকে আরেকটা চেম্বারে নিয়ে গেল। এই চেম্বারে দুজন মহিলা কাজ করছেন। তিতি তাঁদের সাথে কী এক ভাষাতে কথা বলল। তারপর মিজানকে শুইয়ে দিল একটা বেঞ্চে। তার মাথার ওপরে নেমে এল একটা কাচের গম্বুজের মতন। মহিলা দুজন কম্পিউটারের স্ক্রিনে বসে সম্ভবত মিজানের সেনসেশন চেম্বার দেখছেন। তাঁরা কী যেন বলাবলি করছেন। তিতি বলল, মিজান, তোমার মনে তো অনেক দুঃখ। আমরা এক কাজ করছি, তোমার দুঃখগুলো একটু ডাইলুটেড করে দিচ্ছি। এতে তোমার বেশ উপশম হবে। কিন্তু তুমি যখন আবার তোমার বাসায় বা স্কুলে ফিরে যাবে, আবার যাতে তোমাকে দুঃখ পেতে না হয়, সে ব্যাপারে আমরা কিছু করতে পারি কি না, দেখি। ওপরের পারমিশন লাগবে। দেখি মেইল করে। ওপরের পারমিশন পাওয়া যায় কি না।
ততক্ষণে এসো তোমাকে যে খাওয়াতে চেয়েছিলাম, সেই প্রতিশ্রুতিটা রক্ষা করি। আমাদের এখানে একটা ক্যানটিন আছে। খুব ভালো কিছু যে পাওয়া যায়, তা নয়৷ দেখো, খেতে পারো কি না।
তিতি মিজানকে তাদের ক্যানটিনে নিয়ে গেল। বলল, তুমি তো দুধভাত খেতে পছন্দ করো। সেটা জোগাড় করতে লোক গেছে বাইরে। ততক্ষণে তুমি এক কাজ করো, তোমার পছন্দমতো তুমি খাও৷
মিজান তার সামনে সাজিয়ে রাখা খাবারগুলোর দিকে সন্দেহের দৃষ্টি ফেলল। এগুলো যে কী খাবার, সে ধরতে পারছে না। মিজান বলল, আচ্ছা, এসব খাবারে কি ডিমের কিছু আছে? আমি ডিমের যেকোনো খাবারই খেতে পারি।
যেমন?
যেমন ডিম পোচ, ডিম ভাজা, ডিম সেদ্ধ, ডিমের হালুয়া, ডিমের পুডিং, ডিমের ভত্তা।
তিতি বলল, না, ঠিক এসব খাবার আমাদের কাছে নাই। তবে যা আছে তা তোমার খারাপ লাগবে না।
কোনটা?
তিতি দেখালো। এই যে এই খাবারটা ডিমের
মিজান খাবারটা তুলে নিল পিরিচে। তারপর চামচ দিয়ে মুখে পুরল।
দারুণ।
তিতি বলল, এগুলো কিসের ডিম বুঝতে পেরেছ?
কিসের ডিম?
পিঁপড়ার।
বাটিতে হাত ডুবিয়ে ভাত তুলে মুখে তুলল মিজান। না, খেতে ভালো লাগছে না। মনে হয়, আঁখের গুড় নয়, খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ের গন্ধ আবার সে সহ্য করতে পারে না৷
এ ছি! পিঁপড়ার ডিম! এর আগে আমি কোনো দিনও পিঁপড়ার ডিম খাইনি। আমরা হাঁস আর মুরগির ডিম ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ডিমই খাই না। আমার মা অবশ্য হাঁসের ডিমও খান না। আমার বাবা ফার্মের মুরগির ডিমও খান না।
কেন? তোমরা বুঝি মাছের ডিম খাও না?
তা অবশ্য খাই। ইলিশ মাছের ডিম আমার খুব ভালো লাগে।
আমরা কিন্তু মাছের ডিম খাই না।
মাছের ডিম খান না? গাধা নাকি?
তিতি বলল, গাধারা কি মাছের ডিম খায় না নাকি?
মিজান বলল, না, খায় না৷
এমন সময় একটা লোক একটা বাটিতে কী যেন নিয়ে ঢুকল। তিতি বলল, মিজান, তোমার দুধভাত এসে গেছে। আর এই যে গুড়। নাও মেখে খাও৷ মিজান খুব খুশি হলো। বলল, হাত ধোবো। পানি আছে?
না। পানি তো খুব দামি জিনিস। আমরা তাই হাত ধোওয়ার জন্য পানি ব্যবহার করি না। তোমাকে আমি লিকারড টিস্যু পেপার দিচ্ছি। সেটা দিয়ে হাতটা মুছে নাও৷
তাই করতে হলো মিজানকে। সে ভেজা ধরনের একটা টিস্যু পেপার দিয়ে হাত মুছে বসে পড়ল দুধভাত খেতে। তার মনটা একটু খারাপ। দুধভাত জিনিসটার সঙ্গে মার ভালো ব্যবহারের স্মৃতি যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার এত ভালো মা-টা যে কেন এ রকম হয়ে গেল!
বাটিতে হাত ডুবিয়ে ভাত তুলে মুখে তুলল মিজান। না, খেতে ভালো লাগছে না। মনে হয়, আঁখের গুড় নয়, খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ের গন্ধ আবার সে সহ্য করতে পারে না৷
তিতি মেইল করতে অন্য ঘরে গেছে। এ ঘরে মিজান একা। না, আর এই দুধভাত খাওয়া যাবে না। এটা ফেলে দেওয়া দরকার। কোথায় ফেলা যায়। একটা সিঙ্কের মতো দেখা যাচ্ছে। তাতে কিছু বাসনকোসন পড়ে আছে। মিজান সেখানে গিয়ে দুধভাতগুলো ফেলে দিতে না দিতেই লাল বাতি জ্বলে উঠে এলার্ম বেজে এক বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটে গেল। এসব জায়গায় তরল ফেলার নিয়ম নেই৷
দুজন মহিলা ছুটে এলেন এই প্রকোষ্ঠে। তাঁরা তাড়াতাড়ি করে সিঙ্কের নিচের পাইপের মুখটা দিলেন বন্ধ করে। মিজান খুবই লজ্জা পেল। সে যেখানে যায়, সেখানেই অঘটন ঘটে। এখানেও যে সে কী অপকর্ম করেছে, কে জানে!
তিতি অন্য ঘরে চলে গেল। মিজান বুঝছে না সে কী করবে! খানিকক্ষণ সে চুপচাপ বসে রইল। এমন সময় একটা ছোট্ট ছেলে একটা লাল টুকটুকে বল নিয়ে এসে তার সামনে লোফালুফি করতে লাগল।
তিতি এল খানিকক্ষণ পর। বলল, গুড নিউজ আছে। তোমার দুঃখ আমরা কিছু কমিয়ে দেব। আর তুমি তোমার বাসায় আর ঘরে গিয়ে যাতে বেশি বিপদে না পড়, সে জন্য তোমার মধ্যে আমরা একটা স্কিল ডেভেলপ করব। তুমি কোন ধরনের স্কিল চাও? পড়াশোনা, নাকি খেলাধুলা, নাকি শিল্পসংস্কৃতি !
মিজান বলল, আমি সব ধরনের স্কিলই যদি একটু একটু করে চাই?
না। আজকে একটার বেশি দেওয়াটা ঠিক হবে না। তাতে তোমারই অসুবিধা হবে। যেকোনো একটা দিক তোমাকে নিতে হবে। লেখাপড়ায় ভালো হতে চাও, নাকি গানবাজনা ছবি আঁকায় ভালো হতে চাও, নাকি খেলাধুলায়?
তাহলে এক কাজ করুন। আমাকে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার কায়দাটা শিখিয়ে দিন ।
ঠিক আছে। আমি একটু প্রোগ্রামটা রেডি করে নিই। তুমি ততক্ষণ কী করবে? একটুক্ষণ ভার্চ্যুয়াল ছেলেমেয়েদের সাথে খেলাধুলা করতে পারো। করবে?
মিজান কোনো উত্তর দিল না। সে এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে কী বলতে হয়, জানে না। তিতি তাকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। বলল, এই লাল বোতামটা টেপার পর তোমার সামনের পর্দায় নানা বন্ধুর ছবি ভেসে উঠবে। তোমার যাকে খুশি তাকে আনার জন্য এই জায়গায় আবার টিপ দিতে হবে। তাহলে সে চলে আসবে। খেলা বন্ধ করতে চাইলে এই জায়গাটায় চাপ দেবে। ভয় পেয়ো না। কোনো অসুবিধা হবে না। এরা সবাই তোমার বন্ধু। তোমার কোনো ক্ষতি তো করবেই না; বরং তোমার মন ওরা ভালো করে দেবে।
তিতি অন্য ঘরে চলে গেল। মিজান বুঝছে না সে কী করবে! খানিকক্ষণ সে চুপচাপ বসে রইল। এমন সময় একটা ছোট্ট ছেলে একটা লাল টুকটুকে বল নিয়ে এসে তার সামনে লোফালুফি করতে লাগল। এখন একজন ১২ বছরের ছেলের পক্ষে কতক্ষণ সম্ভব বলে লাথি না মেরে থাকা। মিজান উঠে পড়ল। বলে টোকা মারল নিজের অজান্তেই।
ছেলেটা হি হি হি করে হেসে তার সাথে খেলায় উঠল মেতে।
একটু পর তিতি এল। বলল, মিজান চলো। তোমার কেইস রেডি।
মিজানকে যেতে হলো আরেকটা চেম্বারে। সেখানে তাকে শোওয়ানো হলো চিৎ করে। আস্তে আস্তে সে চলে গেল ঘুমের রাজ্যে।
যখন ঘুম ভাঙল সে নিজেকে দেখতে পেল নদীর ধারে, বটগাছের গুঁড়িতে শোওয়া। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। বেশ শীত শীত লাগছে।
না স্যার। এই যে দেখেন, মারের দাগ। আর এই যে দেখেন, মা মেরে আমার শার্ট ছিঁড়ে দিয়েছেন।
মিজানের মনে পড়তে লাগল কখন কীভাবে কেন সে এই নদীর ধারে এসেছে। তার মা তাকে খুব মেরেছিল আর সে মন খারাপ করে চলে এসেছিল এখানে। তারপর ঘুমিয়ে পড়েছিল, সম্ভবত। আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে বোধ করি স্বপ্ন দেখছিল। তা না হলে এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব হবে পাহাড়ের ওই পারে যাওয়া আর ওইখানে, একটা কী হবে ওটা, একটা স্পেসশিপ মিজান নিজের মনেই খানিকটা হাসল। যাক, স্বপ্নটা সে বেশ ভালো দেখেছে। সুখস্বপ্ন না দেখে সে তো দুঃস্বপ্নও দেখতে পারত!
এখন সে কোথায় যাবে? মা তাকে তো বের করেই দিয়েছেন একেবারে। বাসায় ফিরে যাওয়াটা কি উচিত হবে? কিন্তু বাসায় না গিয়েই–বা সে যাবে কোথায়? তার তো কোনো বন্ধুবান্ধবও নেই। একটা কাজ করা যায়। স্কুলের হোস্টেলে সে যেতে পারে। সেখানে গিয়ে অন্তত একটা রাত থাকার ব্যবস্থা করা
যায়। তাই করতে হবে।
হাঁটতে হাঁটতে সে চলে এল স্কুল কম্পাউন্ডে।
স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে পেছনের দিকে একটা টিনে ছাওয়া একতলা দালানে ছাত্রদের হোস্টেল। এখানে জনা তিরিশেক ছাত্র থাকে। হোস্টেল সুপারিনটেন্ডেন্ট হলেন বাংলার স্যার সিরাজুদ্দিন। তবে তার নামটা সিরাজুদ্দিন না হয়ে সিরাজ উদ দৌলা হলে ভালো হতো। তিনি সব সময় নাটকের সংলাপের মতো করে কথা বলেন।
মিজান যখন হোস্টেলের বারান্দায় উঠল, তখন সিরাজ স্যার কী জানি কেন বারান্দা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। পেছনে দুটো হাত, গায়ে চাদর, তিনি একবার বারান্দার পূর্বে আরেকবার বারান্দার পশ্চিমে যাচ্ছেন। মিজানকে দেখে তিনি একটু দাঁড়ালেন। মিজান তাকে সালাম করল। তিনি তার জবাব না দিয়ে বললেন, কী সংবাদ, দূত?
মিজান এর জবাবে কী বলতে হবে বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তোমার পরিচয় পেশ করো।
স্যার আমার নাম মো. মিজানুর রহমান। আমি স্যার ক্লাস সেভেনে পড়ি। তা কী মনে করে এ গরিবালয়ে তোমার আগমন?
মিজান এ কথার মানে বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
তিনি তখন একটা বেত বের করলেন একটা জানালার ভেতরে হাত বাড়িয়ে। তারপর বেতটাকে তরবারির মতো করে ধরে তিনি বললেন, জবাব দাও, নইলে তোমার গর্দান নেব।
মিজান ভ্যা করে কেঁদে ফেলল।
সিরাজ স্যার তখন পড়লেন মুশকিলে। আরে আরে বৎস তুমি কাঁদছ কেন? মিজান আরও জোরে কেঁদে উঠল।
সিরাজ স্যার চাদরের খুট দিয়ে তার চোখ মুছলেন। তুই এতটুকুন মানুষ আর তোর এত দুঃখ। নারে, আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো ভুল হয়ে যাচ্ছে। চল, তুই আমার সাথে চল।
স্যার তার কাছে গেলেন। তাকে কোলে তুলে নিলেন। হালকা-পাতলা মিজানকে কোলে নিতে তার মোটেও অসুবিধা হলো না। নিজের ঘরে গেলেন। বিছানায় বসালেন। একটা কৌটা থেকে বের করলেন একটা সন্দেশ। বললেন, মহারাজ, আপনার ভোগে এ মিষ্টান্ন নিবেদন করলুম। আপনি এটা ভক্ষণ করলে আমি কৃতার্থ হই।
মিজান কী করবে, বুঝছে না। স্যারের কথার মাথামুণ্ডু কিছু বোঝা যায় না। তখন স্যার স্বাভাবিক গলায় বললেন, এই হতভাগা, সন্দেশটা খা। তারপর বল, রাতের বেলা কার কাছে এসেছিস? কী বৃত্তান্ত।
মিজান বলল, স্যার, আমার থাকার জায়গা নাই স্যার। আমার মা আমাকে বের করে দিয়েছেন।
বলিস কীরে? নাকি তুই রাগ করে চলে এসেছিস?
না স্যার। এই যে দেখেন, মারের দাগ। আর এই যে দেখেন, মা মেরে আমার শার্ট ছিঁড়ে দিয়েছেন।
স্যার বললেন, প্রমাণ না হয় পেলাম। কিন্তু সাক্ষী কই। শুধু প্রমাণে হয় না৷ সাক্ষী লাগে। কোনো লোক লাগবে। সে এসে বলবে তোর কথা সত্যি। তোকে যে তোর মা বের করে দিয়েছেন, এটা আর কেউ দেখেছে?
হ্যাঁ। দাইমা বুড়ি।
তোর বাবা কোথায়?
বাবা কুলসুমপুর গেছেন। রোজ যান, রোজ ফেরেন। মা রোজ বাবাকে বলেন, একে হোস্টেলে দিয়ে দাও।
তা তোর বাবা তোকে হোস্টেলে দেয় না কেন?
বাবা আমাকে ভালোবাসেন। তিনি আমাকে তার কাছেই রাখতে চান। আর বাবার এত টাকা নাই।
সিরাজ স্যার চাদরের খুট দিয়ে তার চোখ মুছলেন। তুই এতটুকুন মানুষ আর তোর এত দুঃখ। নারে, আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো ভুল হয়ে যাচ্ছে। চল, তুই আমার সাথে চল। তোকে তোর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
মিজান কিছু বলল না। স্যার যদি তাকে তার বাসায় পৌঁছে দেন, মা হয়তো তাকে ঢুকতে দেবেন। আর এরই মধ্যে বাবা এসে তাকে দেখতে না পেয়ে কি মন খারাপ করেননি?
হোস্টেলের ছেলেরা টের পেয়ে গেছে যে গাধা মিজান এখানে। তারা উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। মিজান প্রমাদ গুনল। এখানে এই সব ভয়াবহ রকমের দুষ্টু ছেলের সাথে সে কি পেরে উঠবে?
স্যার, আপনি যদি আমার সাথে যান, তাহলে আমি বাসায় যাব। আর যদি না যান, তাহলে আমি আর বাসায় ফিরে যাব না। বাসায় গেলে মা আমাকে মেরেই ফেলবে। তার বদলে আমি এখানে থাকব।
থাকব বললেই তো হলো না রে মিজান। হোস্টেলে থাকার নিয়মকানুন আছে। দেখি, তোকে নিয়ে তোর বাসায় যাই। তোর বাবার মতটা শুনি।
তাই হলো। সিরাজ স্যার তার প্রিন্স সাইকেলটা বের করলেন। তারপর বললেন, নে রে মিজান, ওঠ সামনে। মিজানকে সামনের রডে বসিয়ে নিয়ে সিরাজ স্যার সাইকেল চালাতে আরম্ভ করলেন। বললেন, তোদের বাসা কোথায় রে?
খলিফাপাড়া স্যার।
আচ্ছা, আমি চিনব।
সিরাজ স্যার গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, আমি সিরাজুদ্দিন। সরকারি স্কুলের মাস্টার। হোস্টেল সুপারও। আপনাদের ব্যাপার কী ভাই?
বেশ অন্ধকার রাস্তাঘাট। মিউনিসিপ্যালিটির লাইটপোস্টগুলো আলোকশূন্য। সিরাজ স্যার বেশ কষ্টেসৃষ্টে সাইকেল চালাতে থাকেন।
বাসার সামনে এসে মিজানের ভয় ভয় লাগছে। কী জানি কী হয়! স্যার, এই বাসা। সে বাসার পাশে এসে বলল। স্যার সাইকেল থেকে নামলেন।
স্যার, আপনি আগে আগে যান স্যার। মিজান বলল সিরাজ স্যারকে। সিরাজ স্যার দেয়ালের সঙ্গে সাইকেলটা হেলান দিয়ে রেখে ওদের গেটের দরজায় গিয়ে ধাক্কা মারতে লাগলেন।
অনেকক্ষণ পর দরজা খুললেন দাইমা বুড়ি। সিরাজ স্যার বললেন, মিজানের আব্বা আছেন?
না।
কোথায় গেছেন? আমি মিজানের মাস্টার।
মিজানরে খুঁজতে গেছে।
এই সময় মিজানের বাবা এলেন। তাঁর হাতে একটা টর্চলাইট। মিজান দৌড়ে গেল : বাবা। সে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। বাবা দুহাতে টেনে নিলেন ছেলেকে, তারপর ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
সিরাজ স্যার গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, আমি সিরাজুদ্দিন। সরকারি স্কুলের মাস্টার। হোস্টেল সুপারও। আপনাদের ব্যাপার কী ভাই?
মিজানকে ছেড়ে দিয়ে বাবা বললেন, আমার কপাল স্যার। সব আমার কপাল৷
দাইমা বুড়ি বাবাকে সব বলেছে। মায়ের মারে ছেলে যে মরমর হয়ে পড়েছিল, আজকে তিনি সেখানে না থাকলে যে মিজান মরেই যেত, দাইমা সেটা বাবাকে আরও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বর্ণনা করেছেন। এরপরেই বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছেলেকে যদি ফেরত পাওয়া যায়, এই বাসায় আর নয়। ওকে হোস্টেলে দিয়ে দিতেই হবে।
বাবা বললেন, স্যার, আজ রাত থেকেই মিজান আপনার হোস্টেলে থাকুক। আমি ওর জিনিসপত্র নিয়ে আসছি। টাকাপয়সা যা লাগে, জমিজমা বেচে জোগাড় করব।
সে রাতেই মিজানের জায়গা হয়ে গেল হোস্টেলে।
চলবে…