সবুজ ছায়া

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

ঘুম থেকে উঠে একবার স্মার্ট ওয়াচের দিকে তাকালাম, সে জানান দিল সকাল ৬টা ৫৩ বাজে। এমন সময় কখনো আমার ঘুম ভাঙে না। আমি সাধারণত ঘুম থেকে উঠে দেখি ৬.০৬, ৭.০৭, ৮.০৮ । প্রকৃতি এ ধরনের ম্যাসেজ সবাইকে দেয় না। অবশ্য সংকেত দেওয়ার মতো বেশি মানুষ এখন পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই। আমাকে কেন দিচ্ছে, তারও একটা কারণ থাকা উচিত। আর এই কারণই আমাকে উদ্ধার করতে হবে।

রোবো কারকে ডিরেকশন বলে দিতেই আমার সামনে ভিজ্যুয়াল পেপার চলে আসে। আমার অবসাদ আসে মাঝেমধ্যে, ওদের আসে না।

‘গতরাতে শেষ মানব চালিত ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে’—ই–পেপারের হেডলাইন। এই ব্যাপারে বোর্ডের ইনভেস্টিগেশনের জন্যই তাদের আজ মিটিং। অথচ বোর্ডের ডিসিশনেই ট্রেন এখন শেষ মানবচালিত ট্রেনে নেমে এসেছে।

নিঃশব্দে গাড়ির দরজা খুলে যায়। করিডরে দাঁড়াতেই একটা–দুটো রোবোকপ চোখ দিয়ে স্ক্যান করে, কিচ্ছু বলে না।

আমরা কখনোই ভাবিনি। এই সাইটগুলো চালাচ্ছে অ্যান্টি হিউম্যানিজমে বিশ্বাসী কিছু রোবট। আমাদের আজকের বোর্ড মিটিংয়ের উদ্দেশ্য এই Anti humanism ধরনের রোবটের প্রোডাকশন হচ্ছে কোথায়, খুঁজে বের করা।

চেয়ারম্যান আলী সাহেবের রুমে ঢুকি। দরজায় সাউন্ড প্রুফ ডিক্টেটর লাগানো, সিসিটিভি অফ করা, কাউকে ডিভাইস নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। হুট করে এই তলবের যে একটা বিশেষ কারণ আছে, তা ঠিক বুঝতে পারছি।

‘আপনারা জানেন, একসময় এমন কিছু সাইট ছিল, যাতে ক্যাপচা সলভ করতে হতো “you are not a robot”। একদিন এমন সময় আসবে, যখন প্রমাণ করতে হবে, “you are not a human”—এটা আমরা কখনোই ভাবিনি। এই সাইটগুলো চালাচ্ছে অ্যান্টি হিউম্যানিজমে বিশ্বাসী কিছু রোবট। আমাদের আজকের বোর্ড মিটিংয়ের উদ্দেশ্য এই Anti humanism ধরনের রোবটের প্রোডাকশন হচ্ছে কোথায়, খুঁজে বের করা।’

আরও পড়ুন

আলী সাহেবের বেশির ভাগ বক্তব্যই কানে যাচ্ছে না আমার। বড় ঘড়ি ঘণ্টা বাজায় ১০.৪৫-এর। এখনো প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বন্ধন হারায়নি। এর সমাধান বের করতে হবে। কিন্তু সেই সমাধান ল্যাবে করা সম্ভব নয়। এর উপায় আছে এই প্রকৃতির ভেতরেই।

জানালা দিয়ে মাথা বের করার উপায় নেই, গাড়ির দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ। রাস্তায় সবুজ গাছের বদলে অক্সিজেনবট সারি সারি। এদের কাজ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ও অক্সিজেন ত্যাগ করা, আলী স্যারের সবচেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কার মনে করা হয় এটিকে।

আমার বাড়িতে সাধারণত কেউ আসে না। দরজা খুলে দেখলাম আলী স্যার। ‘কী ব্যাপার স্যার! এনার্জি ট্যাবলেট নিয়মিত সেবনের পরও আপনাকে হাঁপাতে দেখার সৌভাগ্য হলো!’

এই অক্সিবটের মধ্যে কে বা কারা অ্যান্টি হিউম্যানিজম প্রোগ্রাম করেছে, এরা অক্সিজেনের বদলে কার্বন ডাই–অক্সাইড ত্যাগ করছে। আর আমাদের বিভিন্ন সাইট এদের দখলে।

‘আপনি যখন প্রকৃতিবিরোধী অক্সিবটের বিরোধিতা করেছিলেন, তখন আপনাকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল,’ বলেই থামলেন আলী স্যার। ঠিক গাছের মতো! আপনিই পারেন এখন এর উপায় বের করতে, এই অক্সিবটের মধ্যে কে বা কারা অ্যান্টি হিউম্যানিজম প্রোগ্রাম করেছে, এরা অক্সিজেনের বদলে কার্বন ডাই–অক্সাইড ত্যাগ করছে। আর আমাদের বিভিন্ন সাইট এদের দখলে। কে বা কারা এই কাজ করছে, এটা বের করা জরুরি।’ ‘আপনার মনে হয় না, কারা এগুলো করছে—এটা বাদ দিয়ে এর সমাধান বের করা উচিত!’ বললাম আমি। ‘কিন্তু এর সমাধান কীভাবে সম্ভব! যদি সমস্যাকারীকেই ধরতে না পারি!’

‘আপনি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছেন, সমস্যা বের করা আর সমাধানের কাজ অনেক বছর ধরে যে করে আসছে, তার ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

গাড়িটার গ্লাস নামালাম। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে গাড়িটা। সারি সারি গাছ দাঁড়িয়ে আছে, মনে হলো অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। আমি ঘড়ি দেখলাম, বেলা ১১.১১।

*লেখাটি ২০১৯ সালে বিজ্ঞানচিন্তা ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন