বেশি জানলেই বিপদ!

বিজ্ঞানীদের খামখেয়ালির যেন শেষ নেই। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোরের কথাই ধরা যাক। তিনি তখন ছাত্র। পদার্থবিজ্ঞানের এক পরীক্ষায় প্রশ্ন এল, ‘ব্যারোমিটারের সাহায্যে একটি ভবনের উচ্চতা তুমি কীভাবে মাপবে?’

তিনি উত্তরে লিখলেন, ‘ওই ভবনের ছাদে গিয়ে ব্যারোমিটারে দড়ি বেঁধে নিচে ছেড়ে দেব, তারপর ওই ব্যারোমিটার ভূমি স্পর্শ করলে ওই দড়ির দৈর্ঘ্য মেপে এর উচ্চতা বের করব।’ শিক্ষক জানতেন নীলস বোর খুব মেধাবী ছাত্র, তিনি তাঁকে আবার সুযোগ দিলেন। ওই একই প্রশ্ন।

এবার নীলস বোর লিখলেন, ‘আমি ওই ভবনের নিচে দারোয়ানকে বা অ্যাটেন্ডেন্টকে বলব, এই ভবনের সঠিক উচ্চতা বললে এই ব্যারোমিটারটা তাকে উপহার দেব। সে তখন ব্যারোমিটার নিয়ে আমাকে সঠিক উচ্চতাটি বলে দেবে।’

শিক্ষক এবার সত্যিই বিরক্ত হলেন। বললেন—

‘তুমি কি সত্যিই এর সঠিক উত্তরটি জানো না?’

‘জানি, স্যার।’

‘তাহলে সঠিক উত্তরটা লিখছ না কেন?’

‘স্যার, এর আসলে ১০০০টা উত্তর হয়। আমি কোনটা লিখব, সেটাই বুঝতে পারছি না...।’

বেশি জানলেই বিপদ। বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে সব সময় তাই হয়। তাঁরা ভাবেন, সবাই বোধহয় তাঁদের মতোই জ্ঞানী।

বেশি জানলেই বিপদ। বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে সব সময় তাই হয়।

তাঁরা ভাবেন, সবাই বোধহয় তাঁদের মতোই জ্ঞানী। রাশিয়ার এক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী একবার তাঁর এক সাধারণ বুলগেরিয়ান ফ্রেন্ডকে অনেকক্ষণ ধরে সদ্য আবিষ্কৃত নিজের একটি জটিল সমীকরণ বোঝালেন। তারপর আগ্রহ নিয়ে বললেন—

‘দেখলে, তোমাকে কত সহজ করে বুঝিয়ে দিলাম। বুঝেছ তো?’

বুলগেরিয়ান বন্ধু মাথা নাড়াল। তারপর এক সাংবাদিক সম্মেলনে যখন তাঁকে তাঁর বিখ্যাত সমীকরণটি ব্যাখ্যা করতে বলা হলো, তখন তিনি গর্বের সাথে বললেন, ‘আমার বলার দরকার নেই। আমার বুলগেরিয়ান বন্ধুই এটা ব্যাখ্যা করতে পারবে।’

বুলগেরিয়ান বন্ধু অবাক হয়ে বললেন—

‘আমি ব্যাখ্যা করব মানে? আমি কি বুঝেছি?’

‘বাহ। সেদিন তোমাকে যখন বোঝালাম, তুমি তো মাথা নাড়লে।’

বুলগেরিয়ান বন্ধু হেসে উঠল, ‘তুমি কি ভুলে গেছ, বুলগেরিয়ানরা “না” বলতে হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়ে।’

আরও পড়ুন
ক্ষুদে বিজ্ঞানী এবার আর কোনো মন্তব্য করল না; কিন্তু পরদিন ফের মা যখন তাঁকে ওই একই প্রশ্ন করলেন, তখন সে ব্যাগ থেকে খাতা বের করল।

সবশেষে বিজ্ঞানী নীলস বোরের আরেকটি ঘটনা। এটা তাঁর আরো ছেলেবেলার ঘটনা। স্কুলে তখন তাঁর বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। মা জিজ্ঞেস করলেন—

‘কী বাছা, পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?’

‘ভালো।’

‘কেমন ভালো?’

ক্ষুদে বিজ্ঞানী এবার আর কোনো মন্তব্য করল না; কিন্তু পরদিন ফের মা যখন তাঁকে ওই একই প্রশ্ন করলেন, তখন সে ব্যাগ থেকে খাতা বের করল।

‘এটা কী?’

‘পরীক্ষার খাতা।’

‘মানে?’

‘তুমি প্রতিদিন জানতে চাও পরীক্ষা কেমন হলো, তাই এবার খাতাই নিয়ে এসেছি।’

ক্ষুদে বিজ্ঞানীর মায়ের অবস্থাটা একবার ভাবুন।

আরও পড়ুন

মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে আমি এমন এক শিশুকে পেয়েছিলাম, যার মা তাকে প্রায়ই বলত, বাবা পরীক্ষা কেমন হলো? তো একদিন ছেলে বিরক্ত হয়ে নীলস বোরের মতো বাসায় খাতা নিয়ে হাজির।

‘ওটা কি?’

‘পরীক্ষার খাতা।’

‘পরীক্ষার খাতা বাসায় এনেছ?’

'বাহ, তুমিই না প্রতিদিন জানতে চাও পরীক্ষা কেমন হলো। তাই খাতা নিয়ে চলে এসেছি। ভয় নেই, স্যার দেখেনি!’

আমি অপেক্ষায় আছি, এই শিশুটি হয়তো নীলস বোরের মতোই বিখ্যাত বিজ্ঞানী হবে একদিন!