বিজ্ঞান স্যার ক্লাসে আজ সুন্দর করে বোঝালেন নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র। মনে হলো ছাত্ররাও বেশ ভালোই বুঝল। পরদিন স্যার নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ছাত্ররা কতটা মনে রেখেছে, তা বোঝার জন্য শেষ বেঞ্চের এক ছাত্রকে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, তুমি যদি একটা আপেল ওপরের দিকে ছুড়ে দাও, তাহলে কী ঘটবে?’
—স্যার, আপেলটা মাটিতে এসে পড়বে।
—ভেরি গুড। আচ্ছা, কেন পড়বে?
—স্যার, ওপরে আপেল খাওয়ার লোক নেই। স্যার হতভম্ব হয়ে গেলেন। এই ছেলে বলে কী! তাহলে কি তিনি বিজ্ঞান ওদের সঠিকভাবে বোঝাতে পারছেন না। প্রচণ্ড হতাশায় সেদিন তিনি ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন। পরদিন তিনি ঠিক করলেন, বিজ্ঞান অন্যভাবে বোঝাতে হবে। সেদিন তিনি ১০০ টন ওজনের লোহার তৈরি জাহাজ কীভাবে পানিতে ভাসে, এই নিয়ে ছাত্রদের চমৎকার করে বোঝালেন। তিনি নিজেও সন্তুষ্ট হলেন, এবার তিনি সঠিকভাবে বোঝাতে পেরেছেন। এবারও তিনি শেষ বেঞ্চের সেই ছেলেটিকে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা তুমি বলো তো, লোহার তৈরি জাহাজ পানিতে ভাসে, কিন্তু একটা লোহার টুকরা কেন পানিতে ডুবে যায়?’
—স্যার, জাহাজ চালানোর জন্য সারেং আছে, সে জাহাজ চালিয়ে জাহাজটাকে ভাসিয়ে রাখে। কিন্তু লোহার টুকরা চালানোর জন্য কোনো সারেং নেই...তাই লোহার টুকরা ডুবে যায়!
তার কান্নাকাটিতে দুই স্যারেরই মন আর্দ্র হলো। হেডস্যার বললেন, ‘বেশ, তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দেওয়া হবে। যদি সঠিক উত্তর দিতে পারো, তবে তোমাকে টিসি দেওয়া হবে না। আচ্ছা, পৃথিবী যে গোল, এটা কীভাবে প্রমাণ করবে?
বিজ্ঞান স্যার হতভম্ব হয়ে ছাত্রটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর দুই হাতে মাথা চেপে ধরে হনহন করে হেঁটে বের হয়ে গেলেন ক্লাস থেকে। সোজা গেলেন হেডস্যারের রুমে।
—স্যার, ক্লাস নাইনের ছাত্র মবিনকে (সেই ছাত্রটির নাম ধরা যাক মবিন) ইমিডিয়েট টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিতে হবে।
—কেন? হেডস্যার অবাক হলেন। তখন বিজ্ঞান স্যার সব খুলে বললেন। সব শুনে হেডস্যার চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন, ‘ঠিকই বলেছেন, এ রকম অবিজ্ঞানমনস্ক ছাত্রকে স্কুলে রাখা ঠিক হবে না।’
তখনই সেই ছাত্রকে ডেকে আনা হলো। তাকে বলা হলো, তার এই অবৈজ্ঞানিক মনস্কতার জন্য তাকে টিসি দেওয়া হবে। সব শুনে ছাত্রটি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। বলল, ‘স্যার, আমাকে আর একটা সুযোগ দিন।’
তার কান্নাকাটিতে দুই স্যারেরই মন আর্দ্র হলো। হেডস্যার বললেন, ‘বেশ, তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দেওয়া হবে। যদি সঠিক উত্তর দিতে পারো, তবে তোমাকে টিসি দেওয়া হবে না। আচ্ছা, পৃথিবী যে গোল, এটা কীভাবে প্রমাণ করবে?’
ছাত্রটি বলল, ‘স্যার, এ তো সোজা। এর উত্তর আপনার সামনেই রয়েছে।’
—মানে? হেডস্যার অবাক হলেন!
—স্যার, আপনার টেবিলের ওপর গ্লোবটি খেয়াল করুন।
সে যাত্রায় হেডস্যার মবিনকে আর টিসি দিলেন না। তবে বিজ্ঞান স্যার স্বেচ্ছায় স্কুল থেকে অবসর নিলেন।