আণবিক কৃষ্ণগহ্বর!

কৃষ্ণগহ্বর। অতিমাত্রায় শক্তিশালী মহাকর্ষের এক ফলাফল। সাধারণত কৃষ্ণগহবরের উত্পত্তি ঘটতে পারে প্রাকৃতিক উপায়ে। কিন্তু মানুষ সব সময় প্রকৃতিকে জয় করতে চায়। কৃত্রিম উপগ্রহ, দেহের কৃত্রিম অঙ্গাণু ইত্যাদি মানুষের এ অভিলাষেরই প্রতিফলন। তাই বলে কৃষ্ণগহ্বর? হ্যাঁ, সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এক্স-রে লেজার বিম ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে ছোট্ট আণবীক্ষণীক কৃষ্ণগহ্বর। ২০১৭ সালের ৫ জুন নেচার সাময়িকীতে এ বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

কৃষ্ণগহ্বর হওয়ার মূল শর্ত হলো, বস্তুর ভরকে সংকুচিত করে এতটা ছোট বানিয়ে ফেলতে হবে যাতে এর মুক্তিবেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হয়। আর কৃষ্ণগহ্বরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আশেপাশের অঞ্চল থেকে সর্পিল পথে পদার্থ টেনে নেয়। এ ধরনের রূপক একটি কাজই করা হয়েছে সাম্প্রতিক পরীক্ষায়।

পরমাণু দিয়ে গড়া আমাদের পরিচিত বিভিন্ন বস্তুকে দেখতে শান্ত মনে হলেও আসলে পরমাণুর অভ্যন্তরে বিরাজ করছে এক তুমুল গতিময় অবস্থা। ওপরে উল্লিখিত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এক্স-রে লেজার বিম ব্যবহার করে আলোর উজ্জ্বল ও দ্রুতগামী ঝলক দিয়ে সেই গতিময় প্রক্রিয়ার পারমাণবিক স্তরের ছবি তোলা হয়েছে। এতে একটি পরমাণু থেকে অল্প কয়টি ছাড়া প্রায় সব ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে। সৃষ্টি হয় একটি শূন্যতা। যেটি অণুর বাকি অংশ থেকে ইলেকট্রনকে ভেতরের দিকে টানতে থাকে। ঠিক যেভাবে কৃষ্ণগহ্বর পেঁচিয়ে বস্তুকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এটাই রূপক কৃষ্ণগহ্বর।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী সেবাশ্চিয়ান বুটেট বলেন, ‘ব্যবহৃত এক্স-রে ঝলকের শক্তি এত বেশি যে পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত সম্পূর্ণ সূর্যরশ্মিকে বুড়ো আঙ্গুলের নখাগ্রে নিয়ে এলে যতটা তেজস্বী হবে, এটা তার চেয়েও একশ গুণ শক্তিশালী।’ এর ফলে ৩০ ফেমটোসেকেন্ডের (১ সেকেন্ডের এক লক্ষ বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ) মধ্যে অণুটি ৫০ টির বেশি ইলেকট্রন হারায়। আশা করা হচ্ছে এ কৌশল ব্যবহার করে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার আল্ট্রা-হাই রেজুলেশনের ছবি তোলা যাবে। তৈরি করা যাবে উন্নত ওষুধ। এর আগে আলোর পরিবর্তে শব্দকে নিয়ে এ ধরনের রূপক কৃষ্ণগহ্বর বানানো হয়েছিল।

লেখক: প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, পাবনা ক্যাডেট কলেজ

সূত্র: নেচার, আইএফএল সায়েন্স

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার জুলাই ২০১৭ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়