বিড়াল কত ওপর থেকে লাফ দিয়ে বাঁচতে পারে

বিড়াল সাড়ে ৫ তলা থেকে লাফ দিয়ে পড়েও বেঁচে যায়ছবি: সংগৃহীত

বিড়ালকে লাফ দিতে দেখেছেন হয়তো। দৃশ্যটা বেশ মজার। শূন্যে থাকতেই শরীর বাঁকিয়ে কীভাবে যেন ঠিক ঠিক পা নিচের দিকে নিয়ে আসে। তারপর ঠিক পায়ে ভর দিয়ে মাটিতে নামে। অ্যাক্রোব্যাট হিসাবে তাই বিড়ালকে দারুণ দক্ষ বলা যায়।

মজার দৃশ্য, সেই সঙ্গে কৌতুহলোদ্দীপক। ডাকসাইটে গোয়েন্দা হলে গোঁফে একটু তা দিয়ে, কোণাটা মুচড়ে নিয়ে বলবেন, ভেরি ইন্টারেস্টিং! আসলেই তো, বিড়াল কীভাবে এ কাজ করে? কীভাবে অত ওপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে আসে নিরাপদে? সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হিসাবে মাথায় আসে, কত ওপর থেকে বিড়াল এরকম নিরাপদে লাফ দিয়ে নামতে পারে?

শেষ প্রশ্নটির জবাব শুনলে চমকে যেতে পারেন। সর্বোচ্চ ৩২ তলা ওপর থেকে লাফ দিয়েও একটা বিড়াল বেঁচে গেছে! সুপারম্যান ছাড়া আর কারো পক্ষে এমনটা সম্ভব? (হ্যাঁ, বিড়ালের পক্ষে সম্ভব।)

এক গবেষণায় ১৩২টি বিড়ালকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। দেখা গেছে, গড়ে এগুলো সাড়ে ৫ তলা থেকে লাফ দিয়ে পড়েও বেঁচে গেছে। তবে এগুলোর এক-তৃতীয়াংশকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করে বাঁচাতে হয়েছে। নাহয় মরেই যেত। মজার বিষয় হলো, গবেষণায় দেখা গেছে, গড়পড়তা ৭ তলা (২১ মিটার) বা এর চেয়ে উঁচু জায়গা থেকে লাফ দিলে বিড়াল কম আহত হয়। এর চেয়ে কম উচ্চতা থেকে লাফ দিলে আহত হয় বেশির ভাগ সময়। কেন?

বিড়াল সাড়ে ৫ তলা থেকে লাফ দিয়ে পড়েও বেঁচে যায়
ছবি: সংগৃহীত
গড়পড়তা কোনো বিড়াল যখন পড়তে শুরু, তখন তার টার্মিনাল ভেলোসিটি বা প্রান্ত বেগে পৌঁছাতে ২১ মিটারের মতো পথ অতিক্রম করতে হয়।

বুঝতে হলে এবারে একটুখানি পদার্থবিজ্ঞান জানতে হবে বৈকি!

গড়পড়তা কোনো বিড়াল যখন পড়তে শুরু, তখন তার টার্মিনাল ভেলোসিটি বা প্রান্ত বেগে পৌঁছাতে ২১ মিটারের মতো পথ অতিক্রম করতে হয়। প্রান্ত বেগ কী? কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে কোনো বস্তু যখন মুক্তভাবে পড়তে থাকে, তখন মাধ্যমের বাধার ফলে সে সর্বোচ্চ যত বেগে পৌঁছাতে পারে, সেটাই প্রান্ত বেগ। ওপর থেকে বাতাসের মধ্য দিয়ে পড়ে বিড়াল। বাতাসের বাধা পেরিয়ে প্রান্ত বেগে (সহজ ভাষায়, সর্বোচ্চ বেগে) পৌঁছাতে তার ২১ মিটারের মতো লাগে। এর আগেই যদি মাটিতে পৌঁছে যায়, তখন বিড়াল পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারে না। কারণ, তখনও প্রতিমুহূর্তে ত্বরণ হচ্ছে, তার বেগ বাড়ছে। সে জন্যই আহত হয় বেশি। ২১ মিটার পেরোনোর পর বিড়াল সর্বোচ্চ বেগ অর্জন করে ফেলে। তারপর সে প্রস্তুত হয়ে যায় নিচে পড়ার জন্য, এবং একই বেগে মাটিতে এসে নামে।

এবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কীভাবে এমনটা করে বিড়াল? আসলে, পড়ার সময়ই পদার্থবিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলো কাজে লাগায়।

সামনের পা দুটো গুটিয়ে দেহের কাছে নিয়ে আসে। ফলে বিড়ালের দেহের সামনের অংশে জড়তার ভ্রামক কমে যায়। জড়তার ভ্রামক কী? সহজভাবে বললে, সরলরেখা বরাবর চলার সময় বস্তুর ভর যে কাজ করে, কৌণিকভাবে গতিশীল বস্তুর জন্য একই কাজ করে জড়তার ভ্রামক। কী করে? ভর জড়তা তৈরি করে। অর্থাৎ যে বস্তুর ভর যত বেশি, বল প্রয়োগ করলেও সে তত ধীরে গতিশীল হয়। বিড়াল এই জড়তার ভ্রামক কমিয়ে আনে, ফলে দ্রুত গতিশীল হয় তার দেহের সামনের অংশ।

ওদিকে, পেছনের পা দুটো ছড়িয়ে দেয় বিড়াল। ফলে পেছনের অংশে জড়তার ভ্রামকের মান বেশি হয়। এভাবে সামনের অংশটা বড় একটা কোণ ঘুরে ঠিক অবস্থায় আসে, পেছনের অংশটা সে তুলনায় অল্প কিছুটা ঘোরে কৌণিকভাবে। দেহকে ইচ্ছেমতো বাঁকাতে পারে বিড়াল, কারণ তাদের মেরুদণ্ড খুব নমনীয়। এভাবে পুরো শরীর প্রয়োজনীয় অবস্থানে নিয়ে আসার পর বিড়াল সামনের পা দুটো লম্বা করে দেয়। উল্টোদিকে পেছনের পা নিয়ে আসে শরীরের কাছে। মাটিতে নামতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

শিগগিরই বাজারে আসছে বিজ্ঞানচিন্তার নভেম্বর সংখ্যা

অনলাইনে বিজ্ঞানচিন্তার নভেম্বর সংখ্যা অর্ডার করতে এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.prothoma.com/product/35548/bigganchinta-november-2023

আরও পড়ুন

এরপর চারপায়ে নামে, নেমে খানিকটা হলেও ছোটে গতি জড়তার কারণে।

বুঝতেই পারছেন, শুধু দক্ষ অ্যাক্রোবেট নয়, ভালো পদার্থবিজ্ঞানীও বটে! (না, সত্যি সত্যি বিড়াল পদার্থবিজ্ঞান জানে না।) সে জন্যই অত ওপর থেকেও লাফ দিয়ে দক্ষভাবে নেমে আসতে পারে মাটিতে।

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস