নতুন অতিপারমাণবিক কণা শনাক্ত

প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি গ্লুবলের বাস্তব প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি দল। চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত বেস ৩ কোলাবোরেশনের ওই বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি ২ মে, বৃহস্পতিবার ফিজিক্যাল জার্নাল লেটার-এ প্রকাশিত হয়। তাঁরা মূলত কণা ত্বরক যন্ত্রে কণার ভাঙন বিশ্লেষণ করে এ আবিষ্কার করেন। অর্থাৎ গ্লুবলের প্রমাণ সংগ্রহ করেন।

গ্লুয়ন কণার মধ্যে ঘটা একধরনের তাত্ত্বিক মিথস্ক্রিয়াকে বলে গ্লুবল। অন্তত এতদিন তা-ই জানা ছিল। আর গ্লুয়ন কণা হলো শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলের বাহক। এই গবেষণার আগ পর্যন্ত গ্লুবলের তত্ত্ব সত্য ছিল কি না, তা জানার উপায় ছিল না।

সাবঅ্যাটমিক বা অতিপারমাণবিক কণা গ্লুয়ন। কোয়ার্ককে একসঙ্গে আঁটকে রাখতে এটি কাজ করে। কোয়ার্ক নিজেও অতিপারমাণবিক কণা। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটনের জন্ম হয় এই কোয়ার্ক থেকে। একইভাবে জন্ম হয় মেসন কণাও। বিশেষ করে একটি কোয়ার্ক ও একটি অ্যান্টি কোয়ার্ক থেকে তৈরি হয় মেসন। কারণ গ্লুয়ন শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলের বাহক। এরা কোয়ার্ক এবং অন্যান্য গ্লুয়নের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়াতে পারে। এ কারণে গবেষকদের ধারণা ছিল, গ্লুয়নগুলো কোয়ার্কের সাহায্য ছাড়াই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে আরও একধরনের কণা তৈরি করে। এটাকেই বলা হচ্ছে গ্লুবল।

গত এক দশকে গবেষকেরা এ ধরনের প্রায় প্রায় ১,০০০ কোটি নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। তাতেই অদ্ভুত এক কণার অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।

ধারণাটি হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখা হয় এই নতুন গবেষণায়। বাস্তবে গ্লুবল আছে কি না, তার প্রমাণ খোঁজাই ছিল পরীক্ষণের উদ্দেশ্য। এ জন্য বেইজিং ইলেকট্রন-পজিট্রন কোলাইডারে উচ্চগতিসম্পন্ন মেসন কণার সংঘর্ষ ঘটানো হয়।  প্রতিষ্ঠানটি চীনের ইনস্টিটিউট অব হাই এনার্জি ফিজিকস ইন বেইজিংয়ে অবস্থিত।

আরও ভালোভাবে বলতে গেলে, সেখানে তাঁরা প্রোটন ও অ্যান্টিপ্রোটনের বিরল অনুপাত পরিমাপ করেন। একই কণাত্বরক যন্ত্রে আগের বেশকিছু গবেষণায় গ্লুবলের আভাস মিলেছিল।

গত এক দশকে গবেষকেরা এ ধরনের প্রায় প্রায় ১,০০০ কোটি নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। তাতেই অদ্ভুত এক কণার অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। এসব কণার গড় ভর প্রায় ২.৩৯৫ GeV/c2। যা গ্লুবলের তত্ত্বের সঙ্গে মিলে যায়।

বর্তমানে কণাটির নাম দেওয়া হয়েছে পার্টিকেল এক্স(২৩৭০)। পর্যবেক্ষণ করা মূল কণাটির ভরের সঙ্গে মিল রেখে এই নাম। অবশ্য এই গবেষণার মাধ্যমে গ্লুবলের অস্তিত্ব নিখুঁতভাবে প্রমাণিত হয় না। সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বিষয়টি সম্পর্ক জানেন। একে বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আরও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। গবেষক দলটি মনে করেন, পর্যবেক্ষণের এমন ফলাফলের পিছনে অন্য কারণও থাকতে পারে। তাই এ নিয়ে পৃথিবীতে আরও বেশি গবেষণা হওয়া উচিত। তাহলে হয়ত মৌলিক কণা হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড মডেলে জায়গা করে নিতে পারবে গ্লুবল।

লেখা: শিক্ষার্থী, অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র: ফিজিকস ডট ওআরজি