ভূতের মতো রহস্যময় বলেই নাম হয়েছে ভুতুড়ে কণা। বিজ্ঞানীরা ডাকেন নিউট্রিনো বলে। ভূতের ওজন মাপার মতোই কণাটির ওজন মাপাও অসম্ভব কঠিন কাজ। অথচ মহাবিশ্বে যেসব কণা অনেক বেশি পরিমাণ আছে তাদের মধ্যে নিউট্রিনো অন্যতম। তবে এর কোনো চার্জ বা আধান নেই। ভরও প্রায় নেই বললেই চলে। আর এ কারণে সাধারণ বস্তুর সঙ্গে এদের মিথস্ক্রিয়াও হয় না খুব একটা। প্রতিমুহূর্তে দেহের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে শত শত কোটি নিউট্রিনো কণা।
সহজে শনাক্তও করা যায় না। হ্যাঁ, শনাক্ত করার কিছু উপায় আছে। এই যেমন চেরেনকভ নিউট্রিনো ডিটেক্টর। তবে এরা কাজটি করে পরোক্ষ উপায়ে। নিউট্রিনো কোনো জায়গা দিয়ে চলে যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া প্রভাব দেখে। নিউট্রিনোরা এতে ঠিক শনাক্ত হয় না। আর এসব কারণেই এর নাম হয়েছে ভুতুড়ে কণা।
ভর অনেক কম (শূন্যের খুব কাছাকাছি) হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এদের ভর মাপাও কঠিন। তবে মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাচুর্যময় কণা নিউট্রিনোর ভর মাপার ক্ষেত্রে মহাবিশ্বকেই কাজে লাগানো সম্ভব। মহাবিশ্বের বিপুল পরিমাণ উপাত্তকে কণাত্বরকযন্ত্রে ফেলে ভর জানার ভালো একটি উপায় বের করে ফেলা সম্ভব। আর ঠিক এ উপায়েই এই প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনোর সবচেয়ে হালকা ধরনটির ভরের ঊর্ধ্বসীমা জানতে পেরেছেন।
ভূতের মতো রহস্যময় বলেই নাম হয়েছে ভুতুড়ে কণা। বিজ্ঞানীরা ডাকেন নিউট্রিনো বলে। ভূতের ওজন মাপার মতোই কণাটির ওজন মাপাও অসম্ভব কঠিন কাজ। অথচ মহাবিশ্বে যেসব কণা অনেক বেশি পরিমাণ আছে তাদের মধ্যে নিউট্রিনো অন্যতম।
নিউট্রিনোরা তিন রকম: ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউওন নিউট্রিনো ও টাউ নিউট্রিনো। তবে এই তিন প্রকার কণা একেবারে স্বাধীন নয়। এরা ক্ষণে ক্ষণে একটি থেকে অন্যটিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। একটি অন্যটিতে রূপান্তরিত হলে এদের ভর কেমন হয়, তা–ও এখনো রহস্য। অর্থাৎ প্রতিটি কণার আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট ভর নেই। এখানেও চলে আসে কোয়ান্টাম মেকানিকস। প্রতিটি নিউট্রিনো বিভিন্ন ভরের নিউট্রিনোর সমাবেশ নিয়ে গঠিত। বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না কোনটি সবচেয়ে হালকা বা ভারী।
তবে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে হালকা ভরের নিউট্রিনোর ঊর্ধ্বসীমা বের করতে পেরেছেন। কাজটি করতে তাঁরা কাজে লাগান ভূ ও মহাকাশকেন্দ্রিক টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের চোখে পর্যবেক্ষণ করেন মহাবিশ্বের সবচেয়ে আদিম আলোয়, যার নাম মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ। এ ছাড়া চোখ রাখেন বিস্ফোরণশীল নক্ষত্র, মহাবিশ্বে ছায়াপথদের সবচেয়ে বড় ত্রিমাত্রিক মানচিত্র, কণাত্বরকযন্ত্র, নিউক্লীয় রিয়েক্টর ইত্যাদিতে।
নিউট্রিনোরা প্রচুর সংখায় থাকলেও খুব পলায়নপর বলেই এত কিছুর আশ্রয় নেওয়া। মহাবিশ্বের উপাত্ত নির্ভরযোগ্য হওয়ার কারণ মহাবিশ্বের অনেকগুলো পর্যবেক্ষণকে নিউট্রিনোরা প্রভাবিত করতে পারে। যা–ই হোক, এ উপায়গুলো কাজে লাগিয়ে নিউট্রিনো ঘনত্ব বের করে সেটা থেকে নিউট্রিনোদের সামষ্টিক প্রভাব পরিমাপ করা যায়। তবে এখানে বিজ্ঞানীরা আরও এক ধাপ এগিয়ে কাজ করেছেন। সংগ্রহ করা উপাত্তকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা নিউট্রিনোর ভরের নমুনা তৈরি করেন। এরপর হিসাব–নিকাশের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার গ্রেসকে।
নিউট্রিনোরা প্রচুর সংখায় থাকলেও খুব পলায়নপর বলেই এত কিছুর আশ্রয় নেওয়া। মহাবিশ্বের উপাত্ত নির্ভরযোগ্য হওয়ার কারণ মহাবিশ্বের অনেকগুলো পর্যবেক্ষণকে নিউট্রিনোরা প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কসমোলজিস্ট আন্দ্রেই চুচিউ বলেন, ‘নিউট্রিনো বিশ্লেষণ করতে ৫০ লাখ ঘণ্টার বেশি সময় কম্পিউটার দিয়ে কাজ করা হয়েছে।’ কাজটি গ্রেস করেছেন সফলভাবেই। গ্রেসের হিসাব থেকে দেখা যায়, সবচেয়ে হালকা নিউট্রিনোর ভরের ঊর্ধ্বসীমা ০.০৮৬ ইলেকট্রন ভোল্ট, যা প্রায় ১.৫ x ১০-৩৭ কেজির সমান। এর আগেও নিউট্রিনোর ভরের ঊর্ধ্বসীমা পরিমাপ করা হয়েছে। তবে সেটা ছিল শুধুই সম্মিলিত ভরের পরিমাপ। এ গবেষণায়ও তিন নিউট্রিনোর সম্মিলিত ভরও মাপা হয়েছে। মান পাওয়া গেছে ০.২৬ ইলেকট্রন ভোল্ট। দুটি ফলই বের করা হয়েছে ৯৫ শতাংশ আস্থা ব্যাপ্তিতে। অতিহালকা কণা ইলেকট্রনের ভরও সে তুলনায় অনেক অনেক বেশি। ৫,১১,০০০ ইলেকট্রন ভোল্ট।
তবে অন্য দুই ভরের নিউট্রিনোর ভর সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া আবার এখনো মহাবিশ্বের প্রসারণ হারও সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিশাল বিশাল আকারের ছায়াপথগুচ্ছ কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে হালকা নিউট্রিনোর ভর জানা খুব দারুণ ব্যাপার। আরেকটি দারুণ ব্যাপার হলো এ পদ্ধতি মহাবিশ্বের অন্য এক জটিল প্রশ্নের উত্তর পেতেও কাজে লাগানো যাবে।