আলবার্ট আইনস্টাইন আমাদের মহাজাগতিক নায়ক। তাঁর হাত ধরে বদলে গেছে পদার্থবিজ্ঞান। তিনি অনুমান করেছিলেন, অতি ভারী দুটো মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষে স্থান-কালের মধ্য দিয়ে বয়ে যায় তরঙ্গের ঢেউ। এ তরঙ্গের নাম মহাকর্ষ তরঙ্গ। প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে এরকম দুটি অতি ভারী কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে সৃষ্ট মহাকর্ষ তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে স্থান-কালের মধ্য দিয়ে। আইনস্টাইনের অনুমানের প্রায় ১০০ বছর পর মানুষ যখন সেই তরঙ্গ শনাক্তের মতো যন্ত্র তৈরি করল, তখন বহু অতীতের সেই তরঙ্গ দোলা দিয়ে গেল লাইগো নামের বিশেষ সেই যন্ত্রে। মহাজাগতিক এক বিস্ময়কর আখ্যান...
ওদিকে স্থান-কালের সেই ঢেউ বহু ছায়াপথ আর নক্ষত্রকে মাড়িয়ে তখনো আগের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। একসময় আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের শেষ সীমা অতিক্রম করে ঢুকে পড়ল তার সর্পিল বাহুর ভেতরে। ক্রমেই মিল্কিওয়ের অরিয়ন নামের সর্পিল বাহুর দিকে এগিয়ে এল। আমাদের সৌরজগতের শেষ প্রান্তের বরফাচ্ছন্ন ধূমকেতুর মেঘকে ধাক্কা মেরে এগিয়ে আসতে লাগল আরও কেন্দ্রের দিকে। বামন গ্রহ প্লুটোকে ছুঁয়ে একে একে আলোড়ন তুলল গ্যাস জায়ান্ট গ্রহ শনি ও বৃহস্পতি এবং তাদের চাঁদে। তাদের ছাড়িয়ে এগিয়ে এল আরও সামনে, আমাদের...
বাস্তবতা হলো, আইনস্টাইন দেখলেন, মহাকর্ষ দুর্বল হলেই কেবল তার তত্ত্বে মহাকর্ষ তরঙ্গের দেখা মেলে। কিন্তু মহাকর্ষ শক্তিশালী হলে, সে তরঙ্গের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বিষয়টা একসময় তার কাছে মরীচিকার মতো...
অনেকে এমনও ভাবলেন, কেউ কি লাইগোর কম্পিউটার হ্যাক করে সেখানে সংকেতগুলো ঢুকিয়ে দিয়েছে কি না। এ রকম আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একসময় লাইগো টিম সিদ্ধান্তে এল, কোনো কম্পিউটার হ্যাকের ঘটনাও ঘটেনি সেদিন। কারণ, কোনো হ্যাকারের পক্ষে কাজটি সহজ নয়। লাইগোর কম্পিউটারের নিরাপত্তা ভেঙে সেখানে ফলস সিগন্যাল ঢুকিয়ে দেওয়ার পর হ্যাকার কোনো চিহ্ন যদি না রাখতে চায়, তাহলে তাকে অনেক জটিল সিস্টেম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখতে হবে। কাজেই হ্যাকারের জন্য মিশন ইম্পসিবল...
সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ লম্বা পালসটা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বছর ধরে ছুটে এসেছিল। অ্যাডভান্সড লাইগো যদি আর এক মাস পর চালু হতো, তাহলে সেটা মিস হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বলতেই হবে, লাইগো টিমের কপাল ভালো। তবে পদার্থবিদেরা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না। লাইগোর যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করার পরপরই ডিটেক্টরের জালে শিকার ধরা পড়ার অর্থ হতে পারে...