বুলেট কত দ্রুত ছোটে

বুলেটের বেগ কত হবে, তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। বিষয়গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো অভ্যন্তরীণ ব্যালিস্টিক।

চলচ্চিত্রের পর্দায় সুপারম্যানকে দ্রুত গতির বুলেটের চেয়েও দ্রুত ছুটতে দেখা যায়। বাস্তবে সুপারম্যান নেই, তবে বুলেট আছে। আমাদের কথায়ও সেটা উঠে আসে। কোনো কিছু অনেক দ্রুত ছুটছে বোঝাতে আমরা বলি, 'বুলেটের গতিতে যাচ্ছে।' তাই কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আসলেই একটা বুলেটের বেগ কত। কত দ্রুত ছুটতে পারে একটি বুলেট?

বুলেটের বেগ কত হবে, তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। বিষয়গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো অভ্যন্তরীণ ব্যালিস্টিক। বন্দুকের প্রপেলেন্টের (এক্ষেত্রে বারুদ) ধরন, ওজন, বন্দুকের ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ও আকারসহ কিছু বিষয়কে বলা হয় অভ্যন্তরীণ ব্যালিস্টিক। আরেকটি ভাগ হলো বাহ্যিক ব্যালিস্টিক। তবে কথাটা বলে মূলত বায়ুর বাধা ভেদ করে বাতাসের মধ্য দিয়ে ছোটা বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণ ও বায়ুগতিবিদ্যা- দুটো বিষয়কেই বিবেচনায় নিতে হয়।

এই দুটি ভাগকে একসঙ্গে বলা হয় টার্মিনাল। এর সাহায্যে বুলেটের আচরণ বর্ণনা করা হয়।

সাধারণত রাইফেলে বড় ব্যারেল ব্যবহার করা হয়। ফলে রাইফেল থেকে বের হওয়া বুলেটের বেগ হয় সবচেয়ে বেশি। রাইফেল থেকে ছোড়া একটি বুলেট প্রায় ৩ দশমিক ২  কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।

বেশির ভাগ বুলেট তৈরি করা হয় সীসা, পিতল বা তামার মতো ভারী ধাতু দিয়ে। কারণ এসব ধাতুর তৈরি বুলেট ভরের কারণে গতি ধরে রাখতে পারে। সাধারণত বন্দুকের মধ্যে গানপাউডার বা বারুদ জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে তা খুব দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে বন্দুকের ভেতরে একটি গ্যাস তৈরি হয়। এ গ্যাসই বুলেটটিকে ব্যারেলের নিচের দিকে ঠেলে দেয়। বুলেটটি সামনের দিকে (বন্দুকের নলের দিকে) এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় ঘর্ষণ। আবার বন্দুকের ব্যারেলের আকার বড় হলে গতি বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির ফরেনসিক বিজ্ঞানী স্টেফানি ওয়ালকট। তিনি বলেন, ‘ব্যারেলে গতি কমানোই সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ  ব্যারেল যত বড় হবে, বন্দুকের ভেতরের গ্যাস বেগ তৈরি করতে হবে তত বেশি জায়গা পাবে। বুলেটও তত বেশি  দ্রুত ব্যারেল থেকে বেরিয়ে যাবে।’

সাধারণত রাইফেলে বড় ব্যারেল ব্যবহার করা হয়। ফলে রাইফেল থেকে বের হওয়া বুলেটের বেগ হয় সবচেয়ে বেশি। রাইফেল থেকে ছোড়া একটি বুলেট প্রায় ৩ দশমিক ২  কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। অবশ্য এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে বুলেটের ডিজাইনেরও প্রভাব আছে। রাইফেলের বুলেটগুলো অ্যারোডাইনামিকস বা বায়ুগতিবিদ্যা মেনে বানানো হয়। এগুলো পিস্তলের বুলেটের চেয়ে বড়, পাতলা এবং ভারী। অনেক সময় ব্যারেলের ভেতরে হ্যালিকাল রিজ ব্যবহার করা হয়। এতে ছুটে যাওয়ার সময় ঘুরতে থাকে বুলেট।

বন্দুকের নল থেকে বুলেট বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগ কমতে থাকে। কারণ নিউটনের প্রথম সূত্র।

ওপরের বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে রাইফেলের বুলেটের গতি অনেক বেশি হয়। রেমিংটন ২২৩ মডেলের রাইফেল ঘণ্টায় ৪ হাজার ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। আরেকটু সহজ করে বলি। ফুটবল মাঠ তো দেখেছেন, কত বড়! রাইফেল থেকে ছোড়া বুলেট এক সেকেন্ডে ১১টি ফুটবল মাঠ ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে একটি ৯ মিলিমিটার  লুগার হ্যান্ডগান থেকে বের হওয়া বুলেট ঘণ্টায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার গতিতে বের হয়। মানে রাইফেলের তুলনায় এর গতি প্রায় অর্ধেক।

বন্দুকের নল থেকে বুলেট বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগ কমতে থাকে। কারণ নিউটনের প্রথম সূত্র। সেই সূত্রানুসারে, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকে। গুলি বের হওয়ার পর বাতাস ও মধ্যাকর্ষণের কারণে বুলেটের গতি কমে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুলেটের বেগ হয় শূন্য। তখন বুলেটটি মাটিতে পড়ে যায়। তবে যে বুলেট লক্ষ্যভেদ করে, তা মাটিতে পড়ার সুযোগ পায় না৷ তার আগেই লক্ষ্যে আঘাত হানে নিশ্চিত ভাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সিটি কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস ও লাইভ সায়েন্স