ভুতুড়ে কণা নিউট্রিনো শনাক্ত

প্রথমবারের মতো কণা ত্বরণ যন্ত্রের সাহায্য নিউট্রিনো তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডাইরের ফেসার (FASER) নিউট্রিনো ডিটেক্টরে কর্মরত একদল পদার্থবিজ্ঞানে বিজ্ঞানীরা।

অতিপারমাণবিক এই রহস্যময় কণা ছড়িয়ে আছে পুরো মহাবিশ্ব জুড়ে। তা সত্ত্বেও এ কণাকে এর আগে কখনো কণাত্বরক যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের কারণে একে অনেকে ঘোস্ট পার্টিকেল বা ভুতুড়ে কণা বলে ডাকেন। গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের এই সাফল্য কণাজ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর মাধ্যমে কণাটি কীভাবে গঠিত হয়, এদের বৈশিষ্ট্য কেমন এবং মহাবিশ্বের বিবর্তনে এদের ভূমিকা কি—তা আরও ভালোভাবে জানা যাবে।

ইতালিতে অনুষ্ঠিত ৫৭তম রেনকোন্ট্রিস ডি মরিওনড ইলেকট্রোউইক ইন্টার‍্যাকশন অ্যান্ড ইউনিফাইড থিওরি কনফারেন্সে গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছর ১৮-২৫ মার্চ পর্যন্ত চলে এ সম্মেলন।

আরও পড়ুন
অতিপারমাণবিক কণাগুলোর মধ্যে মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ফোটন। এর পরেই নিউট্রিনোর অবস্থান। অর্থাৎ মহাবিশ্বে নিউট্রিনো ছড়িয়ে আছে সবজায়গায়।

নিউট্রিনোর সন্ধান কী করে পাওয়া গেল—সে সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ইরভাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা পদার্থবিদ অধ্যাপক জোনাথন ফেঙ বলেন, আমরা কণাত্বরক যন্ত্রের মাঝে নিউট্রিনো তৈরি করার জন্য অতি উচ্চ শক্তির দুইটি কণা রশ্মির মাঝে সংঘর্ষ ঘটাই। এই সংঘর্ষের ফলে জন্ম নেয় নিউট্রিনো।

অতিপারমাণবিক কণাগুলোর মধ্যে মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ফোটন। এর পরেই নিউট্রিনোর অবস্থান। অর্থাৎ মহাবিশ্বে নিউট্রিনো ছড়িয়ে আছে সবজায়গায়। নিউট্রিনোর কোনো বৈদ্যুতিক চার্জ নেই। ভরও প্রায় শূন্য। অন্যসব কণার সঙ্গে এরা সাধারণত মিথস্ক্রিয়া করে না। প্রতিমুহূর্তে আমাদের দেহের মাঝ দিয়ে শত শত কোটি নিউট্রিনো প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা তা টেরও পাই না।

নক্ষত্রের বুকে ঘটা নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া বা সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিউট্রিনো তৈরি হয়। দৈনন্দিন জীবনে এই কণার দেখা বা এদের প্রভাব বুঝতে না পারি না আমরা। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভর প্রায় শূন্য হলেও মহাকর্ষে এদের প্রভাব আছে। বলা প্রয়োজন, নিউট্রিনো কোনো ডার্কম্যাটার নয়।

অন্য পদার্থের সঙ্গে এদের মিথস্ক্রিয়ার পরিমাণ অতি সামান্য। মহাজাগতিক নিউট্রিনো অন্যান্য কণার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে সেখান থেকে মৃদু আলো নির্গত হয়।

আরও পড়ুন
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডাইরের ফেসার (FASER) নিউট্রিনো ডিটেক্টরের নকশা

নিউট্রিনোর এ ধরনের সংঘর্ষ নির্ণয়ের জন্য তিনটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য বিকিরণ যেন সমস্যা তৈরি না করে সেজন্য এসব নিউট্রিনো শনাক্তকারী যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে মাটির নিচে। অ্যান্টার্কটিকায় আছে আইসকিউব, জাপানে সুপার-কিমিওকান্দে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন রাজ্যে অবস্থিত ফার্মিল্যাবের আছে মিনিবুন নামের এই তিনটি যন্ত্র।

এরপরও পদার্থবিজ্ঞানীরা কণা ত্বরক যন্ত্রের সাহায্যে নিউট্রিনোর অস্তিত্ব খুঁজছিলেন বহুদিন ধরে। তার কারণ, অল্প শক্তি নিউট্রিনো তৈরিতে কেন অতি উচ্চশক্তির বিস্ফোরণের প্রয়োজন হয়—সেটা ভালো করে বোঝা।

সার্নে কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানী জেমি বয়েড বলেন, এই কণাগুলো আমাদের ডিপ স্পেস (গভীর মহাবিশ্ব) সম্পর্কে এমন সব তথ্য দিতে সক্ষম, যা আমরা অন্য কোথাও পাই না। এলএইচসিতে তৈরি করা এই নিউট্রনগুলো কণাজ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য সব পর্যবেক্ষণের ফলাফল বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ফেসারে কর্মরত বিজ্ঞানীদের দলটি ডিটেক্টর থেকে প্রাপ্ত তথ্য এখনও বিশ্লেষণ করে চলছেন। আশা করছেন, আরও নিউট্রিনোর সন্ধান তারা পাবেন। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের রান থ্রি চালু থাকবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের মাঝে নিউট্রিনোকে ভালোভাবে বোঝানোর জন্য এই কণাত্বরক যন্ত্রকে ব্যবহার করা যাবে পুরোদমে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট