পরমাণুতে সমান সংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকে কেন

ব্যাপারটা মনে হয় সবারই জানা। বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, সাধারণত তাদের প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সমান। যেমন সবচেয়ে হালকা মৌল হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে একটি প্রোটন থাকে, আর তাকে কেন্দ্র করে ঘোরে একটি মাত্র ইলেকট্রন। পর্যায় সারণির দ্বিতীয় মৌল হিলিয়ামে থাকে দুটি প্রোটন এবং দুটি ইলেকট্রন। আবার প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে ভারী মৌল ইউরেনিয়ামের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা ৯২টি, ইলেকট্রন সংখ্যাও তাই।

কোনো পরমাণুতে একই সংখ্যক প্রোটন এবং ইলেকট্রন কণা থাকা মানে পরমাণুর একই পরিমাণ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ থাকে। কারণটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আসলে প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক এবং ইলেকট্রনের ঋণাত্মক। প্রোটনের চার্জকে ধরা হয় +১। এটি আসলে +১.৬০২×১০-১৯ কুলম্ব। অন্যদিকে ইলেট্রনের চার্জ ধরা হয় -১। এর পরিমাণ -১.৬০২×১০-১৯ কুলম্ব। ফলে পরমাণুর মোট চার্জ সাধারণত শূন্য হয়। অর্থাৎ পরমাণুটি চার্জ নিরপেক্ষ থাকে। এভাবেই পরমাণুতে চার্জের ভারসাম্য বজায় থাকে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে পৃথিবীসহ মহাবিশ্বের অনেক কর্মকাণ্ডেই পরমাণুর চার্জের এই ভারসাম্য থাকা জরুরী। তা না থাকলে ঘটতে পারত অনেক বড় ধরনের বিপর্যয়। এ সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন: https://www.bigganchinta.com/physics/v1ahfesib4

সাধারণত যথেষ্ট শক্তিসম্পন্ন কোনো আলোর আঘাতে পরমাণুর ইলেকট্রন ছিটকে বেরিয়ে গেলে পরমাণুটি আয়নিত হয়। পরমাণুকে আয়োনিত করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি থাকে এক্স-রে এবং গামা-রে ফ্রিকোয়েন্সির আলোক তরঙ্গে।
আরও পড়ুন

কোনো কারণে পরমাণু যদি একটা ইলেকট্রন হারায় বা লাভ করে (পারমাণবিক বিক্রিয়ায় প্রোটনও হারাতে বা লাভ করতে পারে), তাহলে পরমাণুটির মোট চার্জের পরিমাণ বদলে যায়। পরমাণু ইলেকট্রন হারালে বা লাভ করলে তাকে বলা হয় আয়োনাইজড বা আয়নিত পরমাণু। পরমাণুটি তখন বৈদ্যুতিকভাবে চার্জিত অবস্থায় থাকে।

পরমাণুর এই চার্জ নিরপেক্ষ এবং আয়নিত অবস্থার মধ্যে বড় ধরনের কিছু তফাত আছে। চার্জ নিরপেক্ষ বা চার্জ শূন্য অবস্থায় একটা পরমাণু অন্য পরমাণুর প্রতি খুব সামান্যই বৈদ্যুতিক আকর্ষণ থাকে। এ অবস্থায় পরমাণুটির বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র থাকে দুর্বল, কিন্তু পুরোপুরি শূন্য থাকে না। এ সময় অন্য পরমাণু যদি ওই পরমাণু কাছে আসে, তাহলে দুজনে নিজেদের ইলেকট্রন শেয়ার বা ভাগাভাগি করতে পারে। একেই রাসায়নিক বিক্রিয়া বলা হয়। রাসায়নিকভাবে দুটো পরমাণুর ইলেকট্রন ভাগাভাগি করাকে বলা হয় বন্ধন গঠন করা।

অন্যদিকে চার্জ নিরপেক্ষ পরমাণুর বিপরীতে আয়নিত পরমাণুর বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র বেশ শক্তিশালী। এই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের কারণে আয়নিত পরমাণু অন্য পরমাণু বা অণুকে জোরালোভাবে আকর্ষণ করে। সে কারণেই আয়নিত পরমাণু রাসায়নিকভাবে অনেক বেশি বিক্রিয়াশীল হয়। আয়নিত পরমাণু ফ্রি র‍্যাডিকেল বা মুক্ত-মূলক হতে পারে। মানবদেহের জন্য এ ধরনের মুক্ত মূলকের পরিমাণ বেশি হলে তা বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এই আয়নগুলো ডিএনএর সঙ্গে বিক্রিয়া করে মিউটেশন ঘটাতে পারে। এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

প্রশ্ন আসতে পারে, পরমাণু আয়নিত হয় কীভাবে? সাধারণত যথেষ্ট শক্তিসম্পন্ন কোনো আলোর আঘাতে পরমাণুর ইলেকট্রন ছিটকে বেরিয়ে গেলে পরমাণুটি আয়নিত হয়। পরমাণুকে আয়োনিত করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি থাকে এক্স-রে এবং গামা-রে ফ্রিকোয়েন্সির আলোক তরঙ্গে। সে কারণেই এই ক্ষতিকর রশ্মিগুলোর প্রভাবে মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।

আরও পড়ুন

এখানে আরেকটা কথাও বলা দরকার। মানবদেহে স্বাভাবিক নিয়মেই মুক্ত-মুলক তৈরি হয়। সেগুলো সবসময় ক্ষতিকরও নয়। আসলে এদের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে গেলেই তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে  দাঁড়ায়। কারণ তখন এসব মুক্ত-মুলককে আমাদের দেহ আর সামলাতে পারে না।  

আবার মানবদেহে চার্জ নিরপেক্ষ পরমাণুর যেমন দরকারী, তেমনি আয়ন বা আয়নিত পরমাণুও গুরুত্বপূর্ণ। আয়ন আসলে সবক্ষেত্রে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকরও নয়। বরং মানবদেহের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য আয়নও গুরুত্বপূর্ণ। আয়নের চার্জিত ধর্মের কারণে মানবদেহ সেগুলো ব্যবহার করে স্নায়ুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠাতে পারে। আবার দেহের ফ্লুইড লেভেল ও রক্তচাপও নিয়ন্ত্রিত হয় এসব আয়ন ব্যবহার করে।

পরমাণু সাধারণত একটা স্থিতিশীল বা ভারসাম্য অবস্থায় থাকতে চায়। সে কারণে আয়নও ডিসচার্জ হয়ে ধীরে ধীরে একটা চার্জ নিরপেক্ষ অবস্থায় আসে।

 

সূত্র: টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া

আরও পড়ুন