পদার্থবিজ্ঞানের জনক ও বিজ্ঞানের সূচনা

পদার্থবিজ্ঞানকে বলা হয় প্রকৃতিকে বোঝার বিজ্ঞান। অতিক্ষুদ্র পরমাণু বা আরও ছোট উপপারমাণবিক কণা থেকে বিশাল মহাবিশ্ব—সবই পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এখানেই শেষ নয়। আমরা খালি চোখে যেসব তরঙ্গ (পড়ুন, আলো) দেখতে পাই না, সেসবও বিজ্ঞানের এই শাখাটির আলোচনার বিষয়। মানব সভ্যতার বেশির ভাগ উন্নতির পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান নামে বিজ্ঞানের এই শাখাটি কীভাবে গড়ে উঠল? কার হাত ধরে সূচনা হলো এই বিজ্ঞানের? এর জনক কে?

এসব প্রশ্ন লিখে গুগলে সার্চ করলে কমপক্ষে তিনটি নাম পাবেন। ইতালির পদার্থবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২), ব্রিটিশ পদার্থবিদ আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭) ও জার্মান পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৮৯-১৯৫৫)। যদিও তাঁরা এক সময়ের মানুষ নন, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের জনকের স্বীকৃতিটি তাঁদেরই দেওয়া হয়েছে।

গ্যালিলিও গ্যালিলি

কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান বা সামগ্রিকভাবে বিজ্ঞানের সূচনার কথা বলতে গেলে আমাদের আরও অনেকটা পেছনে ফিরে যেতে হবে। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে প্রশ্ন করতে শুরু করে। মাথা তুলে তাকায় আকাশে, খুঁজে চলে মহাবিশ্বে নিজেদের অবস্থান। জানতে চায়, এই মহাবিশ্বের গঠন-প্রকৃতি কেমন। এরকম প্রশ্নগুলোর মাধ্যমেই, বলা চলে, ধীরে ধীরে গঠে ওঠে সে কালের বিজ্ঞান। যদিও একে ঠিক বিজ্ঞান বলা চলে না। সে কালে বলা হতো ন্যাচারাল ফিলোসফি বা প্রাকৃতিক দর্শন। একই সঙ্গে উন্নত হতে থাকে প্রযুক্তিও—গুহাচিত্রে আমরা যার প্রমাণ পাই। দেখি মানুষ বর্শা বা শিকারের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে, আবিষ্কার করেছে আগুন বা চাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার উপকরণ। ফলে এককথায় গ্যালিলিও, নিউটন বা আইনস্টাইনকে সরাসরি পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলার উপায় নেই। বরং প্রাকৃতিক দর্শনের হিসেবে, বিজ্ঞানের ইতিহাসে, পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী বলা চলে অ্যারিস্টটলকে। যিনি একাধারে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের নানা শাখায় অবদান রেখেছেন। যদিও তখনও প্রাকৃতিক দর্শন থেকে বিজ্ঞানে উত্তরণের সময় আসেনি। এই সময়টা কখন এল? সেটা বুঝতে আমরা একটু এগিয়ে যাই।

অ্যারিস্টটল

ইতিহাসে দেখা যায়, ইউরোপে অন্ধকার যুগের পর নতুন যে জাগরণ শুরু হয়, সেখানে গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রথম কাঠামোবদ্ধ বা পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। বলা বাহুল্য, তাঁর আগে অ্যারিস্টটটলের মতো অনেকে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন। এই পর্যায়ে একটু থেমে এও বলা উচিৎ যে ইউরোপে যখন বিজ্ঞানের অন্ধকার যুগ চলছে, তখন আরবে উন্মেষ ঘটছে বিজ্ঞান চর্চার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলহাজেন (তাঁর পুরো নাম আবু আল হাসান ইবনে আল হাইথাম। তবে ইউরোপে তিনি আলহাজেন নামে পরিচিত। তাঁর কথায় আমরা একটু পরে আসছি)।

বস্তুর গতি নিয়ে গ্যালিলিও বিস্তর গবেষণা করেছেন। একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু যে নির্দিষ্ট সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে, তা তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন।

প্রকৃতির নানা ঘটনা এই বিজ্ঞানসাধক বা ন্যাচারাল ফিলোসফিস্টরা দেখতেন, পর্যবেক্ষণ করতেন। চিন্তার সাহায্যে তা বিশ্লেষণ করে ঘটনার ছন্দ মেলানোর চেষ্টা করতেন, এর মানে খুঁজতেন। তারপর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেন। কিন্তু গ্যালিলিও এই চক্র থেকে বেরিয়ে হাতে-কলমে পরীক্ষা শুরু করেন। নিজ হাতে পরীক্ষা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। পরীক্ষার ফলাফল পর্যবেক্ষণের সঙ্গে না মিললে আবার পর্যবেক্ষণ ও নিজের অনুমানগুলো পরীক্ষা করে যাচাই করতেন। তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল কথা এটিই—পরীক্ষা বা এক্সপেরিমেন্টের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বা ব্যাখ্যা মিলতে হবে। না মিললে তা বাতিল করে আবার যাচাই-বাছাই করে নির্ধারণ করতে হবে ব্যাখ্যাটা আসলে কী। এই হিসেবে গ্যালিলিওকে বলা উচিৎ পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানের জনক।

বস্তুর গতি নিয়ে গ্যালিলিও বিস্তর গবেষণা করেছেন। একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু যে নির্দিষ্ট সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে, তা তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন। কথিত আছে, ইতালির পিসা শহরের হেলানো দালানে উঠে হাতে-কলমে পরীক্ষাটি করার জন্য একটা পালক ও কয়েন নিচে ফেলেছিলেন। যদিও বাতাসের বাধায় পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। আবার অনেকে বলেন, এই পরীক্ষাটি গ্যালিলিও সত্যি সত্যি করেননি। এটি একটি কিংবদন্তী। তবে প্রায় একই ধরনের একটি পরীক্ষা তিনি করেছেন বলে জানা যায়। গতিবিদ্যার বাইরেও পর্যবেক্ষণনির্ভর জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবী থেকে আবিষ্কার করেন বৃহস্পতি ও এর চারটি উপগ্রহ। এগুলো এখন গ্যালিলিয়ান বা গ্যালিলিওর চাঁদ নামে পরিচিত।

আইজ্যাক নিউটন

এরপরে স্বাভাবিকভাবেই এসে যায় আইজ্যাক নিউটনের কথা। পদার্থবিজ্ঞানের বরপুত্র তিনি। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের, বলা চলে, গোটা ভিত্তিটুকু গড়ে দিয়েছেন নিউটন একা হাতে। পৃথিবীতে বসে মহাকর্ষ নিয়ে তিনি যে ব্যাখা দিয়েছিলেন, তা কাজে লাগিয়ে চাঁদে পাড়ি দিয়েছে মানুষ। এ ছাড়া আলোকবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর কাজগুলো আজও সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁর রচিত ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। (এখানে লক্ষ করুন, নিউটনও কিন্তু বইয়ের নামে বলছেন ন্যাচারাল ফিলোসফির কথা, অর্থাৎ প্রাকৃতিক দর্শন।) এ ছাড়া গটফ্রিড উইলিয়াম লিবনিজ ও তিনি একই সময়ে আলাদাভাবে আবিষ্কার করেন ক্যালকুলাস। এই ক্যালকুলাস ব্যবহৃত হয় পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা হিসেবে, বা বলা যায়, ভাষাগত ভিত্তি হিসেবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অবদান অনেক। তাই নিউটনকে পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলতে দ্বিধা করেননি ইতিহাসবিদরা।

পদার্থবিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক দর্শনের সত্যিকার কোনো জনক নেই। কারণ, মানুষ দীর্ঘকাল ধরেই বিজ্ঞান চর্চা করছে।

আলবার্ট আইনস্টাইনকে ঠিক পদার্থবিদ্যার জনক না বলে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলা যুক্তিযুক্ত। কয়েক শ বছরের প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের ধারাকে প্রশ্ন করেন বিশ শতকের এই বিজ্ঞানী। মহাকর্ষ ব্যাখ্যা করেন সম্পূর্ণ নতুনভাবে। সহজ করে বললে, পুরো মহাবিশ্বকে স্থান-কালের চাদর হিসেবে কল্পনা করে তিনি দেখান, মহাকর্ষ মূলত এই চাদরের বক্রতা ছাড়া আর কিছু নয়। পাশাপাশি অঙ্ক কষে দেখান, মহাবিশ্বের কোনো বস্তুই আলোর চেয়ে দ্রুত ছুটতে পারে না। মহাবিশ্বের ভর ও শক্তির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে খুলে দেন পদার্থবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত। এখানেই শেষ নয়, তাঁর আবিষ্কৃত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া বদলে দিয়েছে প্রযুক্তির জগৎ। পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অবদান এত বেশি যে একবাক্যে সবাই তাঁকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলে মেনে নেন। আজকের দিনের প্রায় সব প্রযুক্তি—আধুনিক টেলিস্কোপ, মহাকাশযান কিংবা জিপিএস বা আপনার হাতের মুঠোফোন—সবকিছুতেই রয়েছে তাঁর আবিষ্কারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান। পরমাণু বিদ্যুৎ বা পারমাণবিক বোমা—অর্থাৎ পারমাণবিক শক্তির দ্বারও খুলে গেছে তাঁর হাত ধরেই।

আলবার্ট আইনস্টাইন

এ থেকে পদার্থবিজ্ঞানের বিবর্তনের একটা রূপরেখা আমরা পাই। কিন্তু আসল প্রশ্নটাই এখনো করা হয়নি। কোনো শাখার জনক বলতে আসলে কী বোঝায়? পদার্থবিজ্ঞানের জনক কি প্রথম পদার্থবিজ্ঞান তৈরি করেছিলেন? তার আগে কি কেউ পদার্থবিজ্ঞান চর্চা করত না?

আমরা আগেই বলেছি, পদার্থবিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক দর্শনের সত্যিকার কোনো জনক নেই। কারণ, মানুষ দীর্ঘকাল ধরেই বিজ্ঞান চর্চা করছে। যেমনটা বলেছি, ইউরোপীয় অন্ধকার যুগে বিজ্ঞান নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন আরব বিজ্ঞানীরা। বলা চলে, বিজ্ঞান চর্চাকে সে সময় তাঁরাই এগিয়ে নেন। সে কালে ইরাকের পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ আল হাসান ইবনে আল হাইসাম (৯৬৫-১০৪০)—যাঁর আরেক নাম আলহাজেন—প্রথম বলেন, ‘বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো এসে আমাদের চোখে পড়লেই কেবল আমরা বস্তুকে দেখতে পাই। আলোক পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অবদান এত বেশি যে তাঁকে আলোক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তাঁরও আগে, অর্থাৎ খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক শতাব্দী আগে, আর্কিমিডিস পানির প্লবতা আবিষ্কার করে সোনার খাদ যাচাই করেন। সূর্যের আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে পুঞ্জিভূত করে পুড়িয়ে দেন শত্রুর নৌযান (যদিও অনেকে বলেন, এটি কিংবদন্তী)।

আল হাসান ইবনে আল হাইসাম

আর্কিমিডিসেরও আগে পিথাগোরাস ও অ্যারিস্টোটলের মতো দার্শনিকেরা পর্যবেক্ষণভিত্তিক বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন, যে কথা আগেও বলেছি। তারও আগে মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতির রহস্য বুঝে সে অনুযায়ী জীবনকে সহজ করার উপায় বের করে ধীরে ধীরে এগিয়েছে। কিন্তু এর সবটা বিবরণ আজ আর জানার উপায় নেই।

এবারে একটু বিজ্ঞানের ‘বিজ্ঞান’ হয়ে ওঠা বা দর্শন থেকে আলাদা হয়ে পথচলার বিষয়টা নিয়ে বলা যাক। বর্তমানে বিজ্ঞান বলতে আমরা যে পদ্ধতিগত জ্ঞানচর্চা বুঝি, তার সঙ্গে প্রাচীন জ্ঞানচর্চার বেশ কিছু পার্থক্য আছে। পরীক্ষাভিত্তিক জ্ঞানচর্চার বিপরীতে সে সময় প্রাধান্য পেত নৈতিক চিন্তা, সত্য অনুসন্ধান ও যুক্তিতর্ক নির্ভরতা। ফলে সেসব জ্ঞানচর্চাকে ঠিক বিজ্ঞান বলা যায় না। বরং দর্শন বললেই ভালো বোঝা যায়। দার্শনিক ও বিজ্ঞানী—দুজনের মূল উদ্দেশ্য সত্য খুঁজে বের করা হলেও দুটোর ধরন ও প্রয়োগের জায়গা ভিন্ন। সিদ্ধান্তে আসার পথও ভিন্ন।

দার্শনিক যুক্তির মাধ্যমে তাত্ত্বিকভাবে সত্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানী প্রকৃতিকে ব্যাখ্যার পাশাপাশি তা পরীক্ষা করে দেখেন, ব্যাখ্যা ঠিক আছে কি না। আরও বড় ব্যাপার, এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে তখন পর্যন্ত ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে কি না বা নতুন অনুমান করা যাচ্ছে কি না। পরীক্ষা বা এক্সপেরিমেন্টে পাশ করার সময় অনুমানের এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হয়। কারণ, বিজ্ঞান যদি নতুন অনুমান না করতে পারে—যেমন সূর্যগ্রহণ কবে হবে বা পৃথিবী থেকে চন্দ্রগামী মহাকাশযান যখন চাঁদে গিয়ে পৌঁছাবে, এতে কত সময় লাগবে ও সেই সময় পরে চাঁদ কোথায় থাকবে, তা জানা না গেলে আমরা আসলে বাস্তবে কিছু করতে পারব না। দৈনন্দিন জীবনে একটি বাড়ি কতটা ভার সইতে পারবে, বিমান বা গাড়ি কত বেগে চললে কত সময় পর কোথায় থাকবে—এসবই বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তা না হলে সভ্যতা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আজ এতদূর আসতে পারতে না।

মূলত জ্ঞানের কোনো একটি শাখা যাঁর হাত ধরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করে, যাঁর কাজের অনুপ্রেরণায় পরবর্তীতে মানুষ সেই জ্ঞানচর্চার ধারা অব্যাহত রাখে

তবে দর্শন ও বিজ্ঞান—দুটোর উদ্দেশ্য যেহেতু এক, তাই ইতিহাসে ফিরে ফিরে তাকালে দেখব, দার্শনিকেরা যেমন বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন, তেমনি বিজ্ঞানীরাও দর্শনের নানা দিক নিয়ে চিন্তা করেছেন। মধ্যযুগে মুসলিম চিন্তাবিদরা গ্রিকদের দর্শন ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে বর্তমান বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণার ভিত গড়ে দিয়েছেন। ইবনে হাইসাম বা আলহাজেনের কাজে সে প্রতিফলন পাওয়া যায়। এরপর, ইউরোপের নবজাগরণের পর বিজ্ঞানচর্চার পদ্ধতি আরও দৃঢ় হয়েছে ফ্রান্সিস বেকনের মতো দার্শনিকের হাত ধরে। আধুনিক যুগে এসে দার্শনিক ও বিজ্ঞানের পথ ভিন্ন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা কাজ করা শুরু করেন অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষণনির্ভর বিষয় নিয়ে। দার্শনিকরা মনোযোগ দেন বিমূর্ত চিন্তার দিকে।

এখান থেকেই মূলত জ্ঞানের নানা শাখায় জনকের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। মূলত জ্ঞানের কোনো একটি শাখা যাঁর হাত ধরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করে, যাঁর কাজের অনুপ্রেরণায় পরবর্তীতে মানুষ সেই জ্ঞানচর্চার ধারা অব্যাহত রাখে, সাধারণত সেই মানুষটিকে ওই শাখার জনক হিসেবে লিখে রাখে ইতিহাস। তবে লিখিত ইতিহাসই শেষ কথা নয়। কালের আবর্তে অনেক জ্ঞানই হারিয়ে গেছে, অনেক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে নির্দিষ্ট সভ্যতার মানুষের হাতে। যে কারণে আজও বিজ্ঞানের ইতিহাসে আরব বিজ্ঞানী, ভারত বা চীনের মতো এশিয়ান বিজ্ঞানীদের কথা খুব বেশি পাওয়া যায় না। অর্থাৎ হিসেবে যাঁরা স্বীকৃত, তাঁদের অবদানকে খাটো করার কোনো উপায় নেই। তবে কালে কালে যে সব মানুষ হারিয়ে গেছেন, যাঁদের কথা হয়তো সেভাবে উঠে আসেনি, তাঁদেরও আমাদের মনে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের জ্ঞান সামগ্রিক জ্ঞানচর্চার ফল। এটি কারো একার বা দু-তিনজনের হাতে গড়া নয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: উইকিপিডিয়া, হিস্ট্রি ডট কম, ব্রিটেনিকা, আনএকাডেমি