প্লেনের জানালা গোলাকার হয় কেন

প্লেনে ওঠার সৌভাগ্য সবার না হলেও নিশ্চয়ই প্লেন দেখেছেন। সরাসরি না দেখলে সিনেমার কল্যাণে দেখার কথা। সে যেভাবেই দেখেন না কেন, প্লেনের জানালা কখনো খেয়াল করেছেন? খেয়াল করলে দেখবেন, প্লেনের জানালার কাচ সবসময় গোলাকার হয়। আবার বাসের জানালা দেখবেন সাধারণত সবসময় বর্গাকার। কেন এমন হয়? প্লেনের জানালা কেন সবসময় গোলাকার হয়?  

আসলে ১৯৫০-এর দশকের আগে প্লেনের জানালাও চারকোনা ছিল। ১৯৫৩ ও ৫৪ সালে আকাশে তিনটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়। এতে মারা যান প্রায় ৫৬ জন মানুষ। গবেষকেরা প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলেন, সব সমস্যার মূলে ওই জানালা। মূলত প্লেনে যত বেশি কোণ থাকবে, ঝুঁকিও তত বাড়বে। বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে প্রতিকূল পরিস্থিতে কোণের ওপর চাপ বেশি পড়ে। ফলে জানালা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আর কোণ না থাকলে চাপ সবখানে ছড়িয়ে পড়ে সমানভাবে। কোনো একটা জায়গায় অনেক বেশি চাপ পড়ে না। এবার ভেবে দেখুন, জানালা চারকোনা হওয়া মানে, প্রতিটি জানালার জন্য চারটি কোণের সৃষ্টি হয়। কিন্তু জানালা যদি গোলাকার হয়, তাহলে কোনো কোণই তৈরি হয় না।

প্লেনে যত বেশি কোণ থাকবে, ঝুঁকিও তত বাড়বে।
ছবি: সংগৃহীত

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, জানালায় কোণ থাকলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কেন বাড়বে? আসলে প্লেন যখন ভূপৃষ্ঠে থাকে, তখন বায়ুর চাপ থাকে প্রায় ১০১ কিলোপ্যাসকেল। কিন্তু প্লেন যত ওপরে উঠতে থাকে, বাতাসের চাপ তত কমে। এদিকে প্লেনের সব জানালা-দরজা যেহেতু বন্ধ থাকে, প্লেন থেকে বাতাস বের হতে পারে না। ফলে প্লেনের ভেতরে ও বাইরে বাতাসের চাপের পার্থক্য দেখা যায়। এ কারণে প্লেনের জানালার ওপর চাপ পড়ে। এই চাপ এক জায়গায় বেশি, অন্য জায়গায় কম হলে সমস্যা। জানালা ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু সবদিকে সমানভাবে চাপ ছড়িয়ে পড়লে সমস্যা হয় না।

আরেকটি প্রশ্ন আপনার মনে উঁকি মারতে পারে। তাহলে বাসে চারকোনা জানালা থাকলে কোনো সমস্যা হয় না কেন? কারণ বাস চলাচলের সময় জানালা, দরজা সব খোলা থাকে। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, বাস কখনো ওপরের দিকে ওঠে না। ফলে বাসের ভেতরে ও বাইরের চাপও কম বেশি হয় না। এজন্য বাসের জানালা চারকোনা হোক বা ছয়কোনা হোক তাতে কিছু যায় আসে না।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস, রিডার ডাইজেস্ট