রেক্টিফায়ার ডায়োড যেভাবে কাজ করে

সাইকেল চালানো শিখতে হলে কেবল তত্ত্ব শিখলেই হয় না, সত্যিকারে চালিয়েই শিখতে হয়। একইভাবে ইলেকট্রনিকস শিখতে হলে তত্ত্বের পাশাপাশি হাতে-কলমে সার্কিট তৈরি করতে হয়। সার্কিটের বিভিন্ন বিন্দুতে পরিমাপ করে তত্ত্বের সঙ্গে তার মিল-অমিলের কারণ চিন্তা করে খুঁজে বের করতে হয়। আবার কেবল সার্কিট তৈরিই নয়, কীভাবে তাকে খোলসবন্দী করে অন্য সবার ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, তা-ও শিখতে হয়। নইলে ওই সার্কিট কোনো কাজে আসবে না। এই পাঠশালায় তাই কিছু কাজের সার্কিট বানানো শেখানো হবে। সেই সঙ্গে তার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় তত্ত্বও ধাপে ধাপে আলোচনা করা হবে। তাতে একসঙ্গে সব কটি দিকই শেখা হয়ে যাবে

রেক্টিফায়ার ডায়োড কীভাবে কাজ করে?

গত সংখ্যার পর

আগের পর্বে খাদমিশ্রিত n-টাইপ ও p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি আমরা। এ দুটোকে বিভিন্নভাবে জোড়া দিয়ে নানা ধর্মের ডিভাইস তৈরি করে আধুনিক ইলেকট্রনিকসের অকল্পনীয় সব কর্মযজ্ঞ হয়ে চলেছে। এ দুটিকে মিলিয়েই তৈরি করা হয় রেক্টিফায়ার ডায়োড, যা কেবল একদিকে কারেন্ট চলতে দেয়, উল্টো দিকে দেয় না। এ ছাড়া জেনার ডায়োড, লাইট এমিটিং ডায়োড, ফটোডায়োড, সোলার সেল—এসবই একই পরিবারের কেব্ল তৈরির প্রক্রিয়া ও সেমিকন্ডাক্টর বস্তুটির পরিবর্তন করা হয়। আজকে আমরা রেক্টিফায়ার ডায়োড কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে আলোচনা করব।

১ নম্বর ছবিতে একটি n-টাইপ ও একটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে ‘-’ চিহ্ন দিয়ে মুক্ত ইলেকট্রন ও ‘+’ চিহ্ন দিয়ে মুক্ত হোলের উপস্থিতির ধারণা দেওয়া হয়েছে। n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা অনেক বেশি—যেটি হচ্ছে মেজরিটি ক্যারিয়ার। আর মুক্ত হোলের সংখ্যা অনেক কম। তাই সেটি হচ্ছে মাইনরিটি ক্যারিয়ার। একটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে ব্যাপারটি ঠিক এর উল্টো। সেখানে মুক্ত হোল হচ্ছে মেজরিটি ক্যারিয়ার আর মুক্ত ইলেকট্রন হচ্ছে মাইনরিটি ক্যারিয়ার। অবশ্য ছবিতে সংখ্যার সঠিক ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। আগের পর্বে আমরা বলেছি যে মাইনরিটি ক্যারিয়ারের সংখ্যা থেকে মেজরিটি ক্যারিয়ারের সংখ্যা কোটি কোটি গুণ বেশি। তবে ছবিটি দেখে কেউ যেন ভাববেন না যে n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে নেগেটিভ চার্জ বেশি আছে এবং p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে পজিটিভ চার্জ বেশি আছে। কারণ এ ছবিতে ফসফরাস, বোরন বা সিলিকনের যেসব পরমাণু ইলেকট্রন বেশি বা কমের ফলে চার্জিত অবস্থায় আছে, তাদের দেখানো হয়নি। সেগুলো আর মুক্ত ক্যারিয়ার মিলে কোনো চার্জই বেশি বা কম থাকে না। বাইরের কোনো সংযোগ যদি না থাকে, তবে প্রতিটি সেমিকন্ডাক্টর টুকরোর মধ্যে যতটুকু পজিটিভ চার্জ থাকবে, ঠিক ততটুকুই নেগেটিভ চার্জ থাকবে—হোক সে বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টর, n-টাইপ বা p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর। তাই এদের নিট চার্জ হলো শূন্য। অন্যভাবে বলা হয় যে আলাদাভাবে থাকা এসব টুকরো হচ্ছে চার্জ নিরপেক্ষ বা চার্জ নিউট্রাল (Charge neutral)।

এখন দেখা যাক একটি n-টাইপ ও একটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর একত্রে জোড়া লাগালে কী ঘটনা ঘটে। ২ নম্বর ছবিতে একটি সিলিকনের জন্য তা দেখানো হয়েছে। দুটির জোড়া দেওয়া স্থানকে আমরা জাংশন বলে থাকি। n-টাইপে মুক্ত ইলেকট্রন অনেক বেশি, কিন্তু পাশের p-টাইপে তেমন নেই। তাই n-টাইপ সিলিকন থেকে কিছু মুক্ত ইলেকট্রন পাশের p-টাইপে একটু ঢুকে পড়ে। ভিড়ের চাপে পাশে খালি জায়গা পেলে সেদিকে আমরা যেমন সরে যাই, ঠিক তেমনি। আগের পর্বে আমরা দেখেছি, p-টাইপ সিলিকনে রয়েছে কিছু বোরন পরমাণু, যাদের বাইরের কক্ষপথে ৩টি ইলেকট্রন রয়েছে এবং এ অবস্থাতেই সে চার্জ নিউট্রাল। কিন্তু সিলিকনের কেলাসে কো-ভ্যালেন্ট বন্ড পূর্ণ করে টিকে থাকার জন্য তার দরকার ৪টি ইলেকট্রন, যেটি সে আগে আশপাশের সিলিকন পরমাণুর কাছ থেকে কিছু সময়ের জন্য ভাগাভাগি করে নিত। এখন পাশের n-টাইপ থেকে আসা বাড়তি মুক্ত ইলেকট্রনগুলো পেয়ে যাওয়ায় সে মহা খুশি। তাদের স্থায়ীভাবে নিজের কক্ষপথে আটকিয়ে নিয়ে তার চারদিকের কো-ভ্যালেন্ট বন্ড পূর্ণ করে নেয় সে। ফলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো বন্দী হয়ে গেল। আর একটি বেশি ইলেকট্রন বাইরের কক্ষপথে থাকায় বোরন পরমাণুটি আর চার্জ নিউট্রাল থাকল না, সে হয়ে গেল একটি নেগেটিভ চার্জবিশিষ্ট ‘আয়ন’ (Negative ion)। আবার যেহেতু বোরন পরমাণুটি সিলিকনের কেলাসের মধ্যে গেঁথে আছে, তাই সে মুক্ত ক্যারিয়ারের মতো নড়তে পারে না। এ জন্য এর চার্জটি হলো স্থির চার্জ (Fixed charge)। এটিকে মুক্ত ইলেকট্রন থেকে আলাদা করে দেখার জন্য ছবিতে চিহ্নের চারদিকে একটি বৃত্ত এঁকে দেওয়া হয়।

pn জাংশন ডায়োড

এবার উল্টো দিকের n-টাইপ সিলিকনের দিকে নজর দেওয়া যাক। এখানে মুক্ত হোলের ভিড় নেই। তাই পাশের p-টাইপ সিলিকন থেকে অনেক মুক্ত হোল যখন এর মধ্যে ঢুকে পড়ে, সেগুলো অনেক সিলিকন পরমাণুর একটি করে ইলেকট্রন কেড়ে নেয়। অর্থাত্ এদের কো-ভ্যালেন্ট বন্ডে একটি করে ইলেকট্রনের ঘাটতি বা মুক্ত হোল তৈরি হয়। এদিকে n-টাইপ সিলিকনে রয়েছে ভ্যালেন্স কক্ষপথে ৫টি ইলেকট্রনওয়ালা কিছু ফসফরাস পরমাণু। এ অবস্থায় সে চার্জ নিউট্রাল। আগেই বলেছি সিলিকনের কেলাসে টিকে থাকার জন্য এ পঞ্চম ইলেকট্রনটির কোনো প্রয়োজন নেই, বরং এ ছিল বাড়তি। তাই সে মুক্ত ইলেকট্রন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এখন সিলিকনের কেলাসের এসব মুক্ত হোল বা ‘গর্তে’ ফসফরাসের পঞ্চম ইলেকট্রনগুলো টুপ করে ঢুকে পড়ে স্থায়ী জায়গা করে নেয়। এর ফলে ফসফরাস পরমাণুগুলো স্থায়ীভাবে একটি করে ইলেকট্রন হারিয়ে পজিটিভ চার্জযুক্ত আয়ন হয়ে যায়।

পাশের p-টাইপ সিলিকনে বোরন পরমাণুর মতোই n-টাইপ সিলিকনে ফসফরাস পরমাণুগুলোও কেলাসের মধ্যে গেঁথে আছে। তাই এরাও নড়তে পারে না, তাই হয়ে যায় স্থির পজিটিভ চার্জ। ২ নম্বর ছবিতে ‘+’ চিহ্নের চারদিকে বৃত্ত এঁকে এদের দেখানো হয়েছে।

এভাবে জাংশনের দুই পাশে যে স্থির চার্জযুক্ত অঞ্চল দুটো তৈরি হলো, তাদের একসঙ্গে বলা হয় ডিপ্লিশন জোন (Depletion zone)। কেন? ইংরেজি Deplete কথাটির অর্থ হলো কোনো কিছুর সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা। ওপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে বোরন বা ফসফরাস থেকে আসা এ অঞ্চলের মুক্ত ক্যারিয়ারগুলো আর মুক্ত থাকেনি। অর্থাত্ মুক্ত ক্যারিয়ারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

তাই একে ডিপ্লিশন জোন বলা হয়। এ অঞ্চলের আরেকটি নাম হলো স্পেস চার্জ রিজিয়ন (Space charge region)। যেহেতু এ অঞ্চলে (space) স্থায়ীভাবে চার্জ থাকছে, অর্থাত্ এ অঞ্চল চার্জ নিউট্রাল নয়, তাই এ নামেও বলা হয়। বলা বাহুল্য, স্পেস চার্জ রিজিয়নের বাইরে, দুই পাশে n-টাইপ বা p-টাইপ অঞ্চলগুলো কিন্তু আগের মতোই চার্জ নিউট্রাল থাকছে।

এখন প্রশ্ন হলো, n-টাইপ বা p-টাইপ সিলিকন জোড়া দেওয়ার পর স্পেস চার্জ রিজিয়ন কি বাড়তেই থাকবে? না, তা হবে না। কেন, সেটিই এখন বলছি। ৩ নম্বর ছবিতে দেখানো হয়েছে যে একটি পজিটিভ চার্জ ও একটি নেগেটিভ চার্জ একটু দূরে আটকিয়ে রাখতে পারলে তাদের মাঝখানে একটি ইলেকট্রিক ফিল্ড বা বলক্ষেত্র (Electric field) তৈরি হয়। একটি পজিটিভ চার্জ এ ফিল্ডের মধ্যে এসে পড়লে সে তিরচিহ্নের দিকে চাপ অনুভব করবে। চার্জটি যদি মুক্ত হয়, তবে তা তিরের দিকে নড়তেও থাকবে। নেগেটিভ চার্জের জন্য ঠিক এর উল্টোটি হবে। অর্থাত্ একটি নেগেটিভ চার্জ এ ফিল্ডের মধ্যে এসে পড়লে সে তিরচিহ্নের বিপরীত দিকে চাপ অনুভব করবে। চার্জটি যদি মুক্ত হয় তবে তা তিরের বিপরীত দিকে নড়তেও থাকবে। এবার যদি ২ নম্বর ছবির দিকে তাকাই, সেখানে কতগুলো স্থির চার্জ সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো আটকিয়ে আছে, নড়তে পারছে না (বৃত্তের মধ্যে ‘+’ বা ‘-’ চিহ্ন দিয়ে দেখানো)।

এদের কারণে ওই অঞ্চলে একটি ইলেকট্রিক ফিল্ডের সৃষ্টি হবে। ৪ নম্বর ছবিতে এ ইলেকট্রিক ফিল্ডকে অনেক তিরচিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে, তবে স্থির চার্জগুলো দেখানো হয়নি।

৪ নম্বর ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ডান দিকের p-টাইপ অঞ্চলে অনেক মুক্ত হোল থাকলেও এদের ধর্ম যেহেতু পজিটিভ চার্জবিশিষ্ট কণার মতো, তাই এরা স্পেস চার্জ রিজিওনের ইলেকট্রিক ফিল্ডের কারণে বাঁ দিকে যেতে পারবে না। বাধা পাবে। একইভাবে বাঁ দিকের n-টাইপ অঞ্চলে অনেক মুক্ত ইলেকট্রন থাকলেও নেগেটিভ চার্জবিশিষ্ট হওয়ার কারণে এরা স্পেস চার্জ রিজিয়নের ইলেকট্রিক ফিল্ড অতিক্রম করে ডান দিকে যেতে পারবে না। তবে জোড়া লাগার সবচেয়ে প্রথম মুহূর্তে যেসব মুক্ত ইলেকট্রন বা মুক্ত হোল জাংশনটি পার হয়েছে, তাদের জন্য কিন্তু বাধাটি ছিল না, কারণ তখন কোনো স্থির চার্জ ছিল না। প্রথমে বাধাহীনভাবে জাংশন পার হওয়া মুক্ত ইলেকট্রন বা মুক্ত হোল যখন স্থির চার্জ তৈরি করেছে, তখন থেকে ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি করে তারাই নতুনদের জন্য বাধা সৃষ্টি করেছে। এ বাধা অতিক্রম করে পাড়ি দেওয়ার মতো শক্তি যেসব মুক্ত ক্যারিয়ারের আছে, এর পর কেবল তারাই অপর দিকে গিয়ে আরও স্থির চার্জ তৈরি করেছে। ফলে স্পেস চার্জ আরও প্রশস্ত হয়েছে, ইলেকট্রিক ফিল্ডের পরিমাণ বেড়ে বাধার পরিমাণ হয়েছে আরও বেশি।

স্পেস চার্জ রিজিওন

এরপর আরও শক্তিশালীরাই বাধা অতিক্রম করতে পারবে, যাদের সংখ্যা তাড়াতাড়ি কমে আসবে। এভাবে চলতে চলতে একপর্যায়ে বাধা এত বেশি হয়ে যাবে যে আর কোনো নতুন মুক্ত ক্যারিয়ার বাধা অতিক্রম করে যেতে পারবে না। ফলে স্পেস চার্জ রিজিয়নটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়ানোর পর স্থির হয়ে যাবে, আর বাড়বে না। এ অবস্থায় স্পেস চার্জ রিজিয়নের ভেতরে যে ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হয়, তাকে বলা হয় বিল্ট-ইন (Built-in) ইলেকট্রিক ফিল্ড। আর স্পেস চার্জ রিজিয়নের দুই প্রান্তের মধ্যে একটি ভোল্টেজ পার্থক্য তৈরি হয়, একে বলা হয় বিল্ট-ইন পটেনশিয়াল (Built-in potential)। সাধারণ তাপমাত্রায় সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য তৈরি সিলিকনের ডায়োডের জন্য এ পটেনশিয়ালের পরিমাণ প্রায় ০.৭ ভোল্ট হয়ে থাকে, আর জার্মেনিয়ামের ডায়োডের জন্য হয় প্রায় ০.৩ ভোল্ট।

এখানে কিন্তু প্রকৃতির একটি বড় নিয়মের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। কোনো একটি স্থির অবস্থার পরিবর্তনের ফলে নতুন যাদের উত্পত্তি হয়, তারা মূল পরিবর্তনকে বন্ধ করতে সচেষ্ট থাকে। এটি না হয়ে যদি এর উল্টোটি হতো, অর্থাত্ উত্পত্তি হওয়া জিনিস বা শক্তিগুলো যদি পরিবর্তনকে বাড়িয়েই দিত, তবে কোনো উত্স ছাড়াই শক্তি তৈরি হতে থাকত। এটি প্রকৃতির নিয়মে সম্ভব নয়, কারণ তা শক্তির নিত্যতার সূত্রকে ভেঙে দিত। (বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কি আমরা এ ধরনের কিছু দেখতে পাই?)

ওপরের বর্ণনায় বিষয়টি এমনভাবে এসেছে, যেন আমরা একটি n-টাইপ সিলিকনের টুকরোকে আলাদা একটি p-টাইপ সিলিকনের টুকরোর সঙ্গে সংযুক্ত করার পর ঘটনাগুলো ঘটেছে। আসলে ভেতরের কার্যকারণ সহজে বোঝানোর জন্য এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, বাস্তবে এমনটি সম্ভব নয়। n-টাইপ ও p-টাইপ অঞ্চলগুলো একটি চলমান কেলাসের অংশ হতে হবে, তৈরি করার সময়েই তা করা হয়। পরে আলাদা টুকরো জোড়া দিয়ে তা করা যাবে না। কিন্তু চলমান একটি প্রক্রিয়ার শেষ অবস্থা এমনটিই হবে। n-টাইপ ও p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের এ সম্মিলিত গঠনকে বলা হয়, pn-জাংশন (pn-junction)।

এবার আসি এ ডায়োড কীভাবে একদিকে কারেন্ট চলতে দেয়, কিন্তু উল্টো দিকে দেয় না। ৫ নম্বর ছবিতে একটি ব্যাটারিকে pn-জাংশন ডায়োডের সঙ্গে এমনভাবে সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যেন ব্যাটারির পজিটিভ প্রান্ত p-টাইপের দিকে ও নেগেটিভ প্রান্ত n-টাইপের দিকে থাকে। এখানে ব্যাটারির ভোল্টেজও একটি ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি করে, যেটি pn-জাংশনের বিল্ট-ইন ইলেকট্রিক ফিল্ডের বিপরীত (p-টাইপ থেকে n-টাইপের দিকে)। ফলে মোট ইলেকট্রিক ফিল্ডের বাধা কমে যাবে। স্পেস চার্জ রিজিয়নের দুই প্রান্ত থেকে কিছু আটকানো চার্জ মুক্ত ক্যারিয়ার হিসেবে বের হয়ে স্পেস চার্জ রিজিয়নের প্রশস্ততাকে কমিয়ে দেবে।

ইলেকট্রিক ফিল্ড

ব্যাটারির ভোল্টেজ যথেষ্ট হলে বাধা এতটা কমে যাবে যে n-টাইপ থেকে মুক্ত ইলেকট্রন pn-জাংশনের ভেতর দিয়ে ডান দিকে (৫ নম্বর ছবিতে নীল তিরচিহ্ন), আর p-টাইপ থেকে মুক্ত হোল pn-জাংশনের ভেতর দিয়ে বাঁ দিকে (৫ নম্বর ছবিতে লাল তিরচিহ্ন) সহজে চলতে পারবে। ফলে ঢ়হ-জাংশন ডায়োডের রেজিস্ট্যান্স কমে যাবে ও ব্যাটারির সার্কিটে কারেন্ট চলতে পারবে। তবে মনে রাখা ভালো, সংযোগ দেওয়া বাইরের ধাতব তারে কেব্লমুক্ত ইলেকট্রন চলে, মুক্ত হোল বলে সেখানে কিছু নেই। আর ৫ নম্বর ছবির সার্কিটে আমরা প্রচলিত কারেন্টের দিক তিরচিহ্ন দিয়ে দেখিয়েছি, যা ইলেকট্রন প্রবাহের দিকের বিপরীত। pn-জাংশন ডায়োডে ব্যাটারির এ ধরনের সংযোগটিকে বলা হয় ফরোয়ার্ড বায়াস (Forward bias) বা সম্মুখ পক্ষপাতিত্ব।

এবার ব্যাটারির সংযোগটি ওল্টালে কী হয়, ৬ নম্বর ছবিতে দেখা যাক। এ ক্ষেত্রে ব্যাটারির জন্য তৈরি বাইরের ইলেকট্রিক ফিল্ড pn-জাংশনের বিল্ট-ইন ইলেকট্রিক ফিল্ডের একই দিকে কাজ করে। ফলে মোট ইলেকট্রিক ফিল্ডের পরিমাণ বেড়ে স্পেস চার্জ রিজিয়নের প্রশস্ততা আরও বেড়ে যাবে। ফলে pn-জাংশনের রেজিস্ট্যান্স আরও বেড়ে যাবে ও ব্যাটারির সার্কিটে কোনো কারেন্ট চলবে না। pn-জাংশন ডায়োডে ব্যাটারির এ ধরনের সংযোগটিকে বলা হয় রিভার্স বায়াস (Reverse bias) বা বিপরীত পক্ষপাতিত্ব।

তাই আমরা দেখলাম যে pn-জাংশনের ইলেকট্রিক ফিল্ডের পরিমাণকে বাইরের ইলেকট্রিক ফিল্ডের মাধ্যমে কমিয়ে বাড়িয়ে আমরা একদিকে কারেন্ট প্রবাহিত করতে পারি ও উল্টো দিকে বন্ধ করতে পারি। অর্থাৎ বাইরে থেকে এক দিকে ভোল্টেজ দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত করতে পারি ও উল্টো দিকে ভোল্টেজ দিয়ে কারেন্ট বন্ধ করতে পারি। এটিই হলো রেক্টিফায়ার ডায়োডের বৈশিষ্ট্য। এটি একটি একমুখী গেট ভালব বা একমুখী সুইচ হিসেবে কাজ করতে পারে।

আচ্ছা এখানে রেক্টিফায়ার শব্দটি কেন ব্যবহার করা হলো? রেক্টিফিকেশন মানে তো বিশুদ্ধকরণ। এখানে কে কাকে বিশুদ্ধ করছে? এ বিষয় নিয়ে আমরা পরবর্তী পর্বে আলাপ করব, সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাব ডায়োডের বহুল পরিচিত একটি ব্যবহার লাইনের অলটারনেটিং ভোল্টেজকে ব্যাটারির মতো ডাইরেক্ট ভোল্টেজে রূপান্তর করার কৌশল।

লেখক: অধ্যাপক, বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়