বিড়ালের রাতে অবলীলায় বিচরণ করার দক্ষতা অসামান্য। কখনো হয়তো প্রশ্ন এসেছে: বিড়াল বুঝি অন্ধকারেও দেখতে পায়! আসলেই কি অন্ধকারে দেখতে পায় বিড়াল?
বিশেষজ্ঞদের বলেন, পুরো অন্ধকারে বিড়াল কিছুই দেখতে পায় না। তাহলে প্রশ্ন আসে, বিড়াল অন্ধকারে ঘরময় ঘুরে বেড়ায় কীভাবে? আসলে কোনো বাসা-ই পুরোপুরি অন্ধকার থাকে না। কোনো না কোনো উৎস থেকে সূক্ষ্ম আলো ঘরে ঢোকে। বিড়াল সেই অল্প আলোতেই বেশ ভালো দেখতে পায়।
আসলে কোনো প্রাণীর দেখতে পারার ক্ষমতা নির্ভর করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশে থাকা আলোর ওপর। সেটা মানুষের ক্ষেত্রে হোক বা বিড়াল। তবে মানুষের তুলনায় বিড়াল অল্প আলোতে ভালো দেখতে পায়। বিড়ালের চোখের বিবর্তনের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। অন্ধকারে মানুষের তুলনায় বিড়াল প্রায় ৮ গুণ ভালো দেখতে পায়।
এখানে বিশেষত্ব মূলত বিড়ালের রেটিনার। অল্প আলোয় দারুণ সংবেদনশীল! তা ছাড়া বিড়ালের ‘রড’ নামের আলোগ্রাহক কোষের ঘনত্ব মানুষের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ মানুষের তুলনায় বিড়ালের চোখ অন্ধকারে বা অল্প আলোতে বেশি আলোকসংবেদনশীল। বলে রাখা ভালো, চোখের রড কোষ অনুজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে। এই কোষের মাধ্যমে শুধু সাদা ও কালো রং দেখা যায়। রঙিন বস্তু দেখতে সাহায্য করে ‘কোন’ নামের আরেকটি কোষ।
এবারে হয়তো আপনার মাথায় আরেকটি প্রশ্ন উঁকি মারছে। বিড়ালের চোখ অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে কেন? কারণ, বিড়ালের চোখে ‘টেপিটাম লুসিডাম’ নামে এক ধরনের রঙিন কোষের স্তর থাকে। এই স্তরের ওপর আলো পড়লে তা প্রতিফলিত হয়। তাই বিড়ালের চোখ জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়।
এ ছাড়াও বিড়ালের চোখের কর্নিয়া ও পিউপিল মানুষের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বড়। ফলে বিড়ালের চোখে বেশি আলো ঢুকতে পারে। এই অতিরিক্ত আলোই তাদেরকে অন্ধকারে ভালোভাবে দেখতে সাহায্য করে। বিড়ালের পিউপিল সূর্যালোকে সংকুচিত এবং অন্ধকারে প্রসারিত হয়। আদুরে এই প্রাণীটির চোখের আকার এবং মণির নড়াচড়ার সক্ষমতার কারণে এদের দৃষ্টিশক্তি খুব শক্তিশালী।
এবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা নিয়ে কথা বলা যাক। বিড়ালের চোখ এরকম কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দৃষ্টির অভিযোজন যেকোনো প্রজাতির পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সরাসরি ফলাফল। বিড়াল মাংসাশী প্রাণী। অর্থাৎ সুস্থ থাকার জন্য বিড়ালকে অবশ্যই মাংস খেতে হয়। আর তাদের সম্ভব্য শিকারের অধিকাংশই রাতে কিংবা আবছা আলোতে জেগে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা দেখেছেন, বিড়ালসহ যে সব প্রাণীর পিউপিল চেরা, তারাই মূলত শিকারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। কারণ তাদের ওৎ পেতে থাকতে হয়। আর তাদের এ ধরনের পিউপিল ছোট শিকার কতটা দূরে আছে, তা অনুমান করতে সাহায্য করে। তবে বড় বিড়ালজাতীয় প্রাণী, যেমন বাঘ বা সিংহের অনুমানের প্রয়োজন হয় না। মানুষের চোখের তুলনায় বিড়ালের চোখ মুখমণ্ডলের অনেকটা সামনের দিকে অবস্থিত। এতে এক চোখের দৃষ্টি অন্য চোখের দৃষ্টিক্ষেত্রের ওপর প্রলম্বিত হয়। বাইনোকুলারের মতো এরকম দৃষ্টিক্ষমতাসম্পন্ন বিড়ালের পক্ষে ছোটাছুটি করা বা শিকারের সন্ধান পাওয়া সহজ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, হিলসপেট ডট কম