আপডেট
বিজ্ঞান জগতের নতুন ঘটনা
প্রতিদিন বিজ্ঞানের জগতে ঘটছে নানা ঘটনা। প্রতিমুহূর্তে এগোচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন গবেষণাপত্র, জানা যাচ্ছে নতুন গবেষণার কথা। কিছু বিষয় এত সুদূরপ্রসারী যে এগুলোর প্রভাব বোঝা যাবে আরও অনেক পরে। এরকম নানা বিষয়, নানা ঘটনা দেখে নিন একনজরে, জেনে নিন সংক্ষেপে।
১. প্রথমবারের মতো ‘সুপারসলিড’ আলো
ইতালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের ন্যানোপ্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী এবং পদার্থবিদদের একটি দল প্রথমবারের মতো আলোকে সুপারসলিডে রূপান্তর করেছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি গত ৫ মার্চ নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সুপারসলিড হলো পদার্থের এমন এক অবস্থা যা কেবল কোয়ান্টাম জগতেই রয়েছে। এখন পর্যন্ত এগুলো সবই পরমাণু ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আগেও পরমাণু দিয়ে এমন সুপারসলিড তৈরি করেছেন গবেষণাগারে। তবে এবার প্রথমবারের মতো গবেষকেরা আলো ও পদার্থকে একীভূত করে সুপারসলিড তৈরি করেছেন। এই সম্পর্কের আরও বিস্তারিত পড়তে দেখুন: আলোর কণা দিয়ে তৈরি ‘সুপারসলিড’।
২. ২.৬ কোটি গ্যালাক্সির মানচিত্র উন্মোচন করল ইউক্লিড টেলিস্কোপ
সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা মহাবিশ্বের এক অসাধারণ ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিটি তোলা হয়েছে ইউক্লিড টেলিস্কোপের সাহায্যে। এ টেলিস্কোপ মহাকাশের বিশাল অংশ জুড়ে থাকা লাখ লাখ গ্যালাক্সির ছবি তুলেছে। সেই ছবিই আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে। ইউক্লিড টেলিস্কোপের পাঠানো প্রথম ছবিগুলো তিনটি ডিপ ফিল্ড বা গভীর মহাকাশের চিত্র প্রকাশ করেছে। জ্যোতির্বিদ্যায় ডিপ ফিল্ড বলতে বোঝানো হয়, মহাকাশের ছোট্ট একটি অংশের লং এক্সপোজার ইমেজ। সাধারণত অতি ম্লান ও দূরের কোনো বস্তু এবং আদিম মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণা করতে ডিপ ফিল্ড ব্যবহৃত হয়। সেখানে অনেক গ্যালাক্সি একসঙ্গে রয়েছে। এই ডিপ ফিল্ড তিনটি হলো ডিপ ফিল্ড সাউথ, ডিপ ফিল্ড ফোরনাক্স এবং ডিপ ফিল্ড নর্থ।
ইউক্লিড টেলিস্কোপ মাত্র একবার স্ক্যান করেই ২ কোটি ৬০ লাখ গ্যালাক্সি খুঁজে পেয়েছে! এর মধ্যে সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সিটি পৃথিবী থেকে ১,০৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এত বিপুল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করতে ইসা সাধারণ মানুষের সাহায্য নিয়েছে। সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদমও এই ডেটা বিশ্লেষণ করেছে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি গ্যালাক্সি শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এই ডেটাকে ইউক্লিড টেলিস্কোপের পাঠানো বিশাল ডেটার সামান্য অংশই বলা যায়। আগামী কয়েক বছরে, ইউক্লিড টেলিস্কোপ ১৫০ কোটি গ্যালাক্সির ছবি পাঠাবে ইসার কাছে। সেগুলো দিয়ে তৈরি হবে মহাবিশ্বের নতুন মানচিত্র। বিস্তারিত জানতে পড়ুন: ইউক্লিড টেলিস্কোপ উন্মোচন করল ২.৬ কোটি গ্যালাক্সির মানচিত্র।
৩. ৯ মাস পর পৃথিবীতে ফিরলেন দুই মার্কিন নভোচারী
দুই মার্কিন নভোচারী ব্যারি উইলমোর এবং সুনিতা উইলিয়ামস মাত্র ৮ দিনের মহাকাশ অভিযানে যান। ২০২৪ সালের ৫ জুন বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছান তাঁরা। অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা থাকলেও, স্টারলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় নয় মাস ধরে মহাকাশে আটকা পড়েন। চলতি বছর ১৮ মার্চ, মঙ্গলবার স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণ করেন তাঁরা। সঙ্গে আরও ছিলের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ফেরা নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের নভোচারী আলেকজান্ডার গর্বুনভ। এই সময় তাঁরা মহাকাশে ২৮৬ দিন আটকে থাকার জন্য কাউকে দায়ী করেননি। বরং, স্টারলাইনারে আবারও উড়বেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে উইলমোর বলেন, ‘হ্যাঁ, কেন নয়। আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, সেগুলো আমরা ঠিক করতে আবার যাব। যেহেতু বোয়িং ও নাসা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মহাকাশ মিশন নিয়ে, তাই এই অবস্থায় এক মুহূর্তও না ভেবে মহাকাশে আবার যেতে রাজি আছি।’
৪. অদ্ভুত এক ডাইনোসরের জীবাশ্মের সন্ধান
এশিয়ার বৃহত্তম মরুভূমি গোবির মঙ্গোলিয়া অংশে সম্প্রতি এক নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। ডাইনোসরটি থেরিজিনোসর পরিবারের সদস্য। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এরা তৃণভোজী ছিল। এছাড়া এরা ছিল লম্বা নখ বিশিষ্ট দুই পায়ের বিশাল ডাইনোসর। গত ২৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের আইসায়েন্স জার্নালে এ নিয়ে এক গবেষণাপত্রে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। থেরিজিনোসররা ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ দিকে, অর্থাৎ প্রায় ১০ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় বাস করত। এরা থেরোপড গোষ্ঠীর ডাইনোসর হলেও টি-রেক্সের মতো মাংস না খেয়ে গাছপালা খেত। এসব ডাইনোসর বিশাল বাঁকানো নখের জন্য বেশি পরিচিত। এদের কিছু প্রজাতির নখ ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতো বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। তবে এই দুই নখের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়াটা ছিল আশ্চর্যজনক। কারণ, এই প্রজাতির ডাইনোসরদের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য (তিন আঙুলের বদলে দুই আঙুল) একেবারেই স্বাভাবিক নয়। এটা আসলেই বিরল এক প্রজাতির জীবাশ্ম। ৫৭০ পাউন্ড ওজনের এই ডাইনোসরের খাবার জোগাড় করতে এসব নখ সাহায্য করত। গঠন অনেকটা স্লথের মতো হলেও এই ডাইনোসরগুলোর কিছু প্রজাতি ছিল ১৩ ফুটের বেশি লম্বা। এগুলোর কোনো কোনোটির ওজন ছিল পাঁচ টনের বেশি।
৫. বিশ্বের প্রথম রিচার্জেবল ইউরেনিয়াম ব্যাটারি
জাপান অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (JAEA) উদ্ভাবন করেছে বিশ্বের প্রথম ইউরেনিয়াম-নির্ভর রিচার্জেবল ব্যাটারি। এই রিচার্জেবল ইউরেনিয়াম ব্যাটারিতে ব্যবহার করা হয়েছে পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানি উৎপাদনের পর অবশিষ্ট থাকা ইউরেনিয়াম। প্রোটোটাইপ ব্যাটারিটির দৈর্ঘ্য ছিল ১০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৫ সেন্টিমিটার। এতে অ্যানোড হিসেবে ইউরেনিয়ামযুক্ত ইলেকট্রোলাইট ব্যবহৃত হয়েছে। আর ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে লোহা। ব্যাটারিটি ১০ বার চার্জ দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময় এটি ১.৩ ভোল্ট পাওয়া গেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাপান অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে, ‘ইউরেনিয়ামকে অ্যাকটিভ ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে আমরা একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি বানিয়েছি সফলভাবে।’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে এর পারফরম্যান্স ছিল স্থিতিশীল।
কেবল জাপানেই ডিপলেটেড ইউরেনিয়াম আছে প্রায় ১৬ হাজার টন। আর গোটা বিশ্বে রয়েছে ১.৬ মিলিয়ন বা ১৬ লাখ টন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, সব মিলিয়ে এই ব্যাটারি বাজারজার করতে পারলে ব্যাটারিপ্রযুক্তিতে বড় পরিবর্তন আসবে। কেননা এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একসঙ্গে নিউক্লিয়ার বর্জ্যব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে এবং কার্যকর শক্তি সংরক্ষণাগার হিসেবে নতুন সম্ভাবনার দরজার খুলে যাবে।
এই সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এখানে: বিশ্বের প্রথম রিচার্জেবল ইউরেনিয়াম ব্যাটারি।
৬. চাঁদে ব্লু ঘোস্টের সফল অবতরণ
চাঁদে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের ‘ব্লু ঘোস্ট মিশন ১’-এর মহাকাশযান সফলভাবে অবতরণ করেছে। এ ঘটনা শুধু মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেই নয় বরং বাণিজ্যিক উদ্যোগের মহাকাশ মিশনের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। গত ২ মার্চ মহাকাশযানটি চাঁদের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করে।
ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস তাদের ব্লু ঘোস্ট ল্যান্ডার চাঁদে অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর চাঁদের কিছু অবিশ্বাস্য ছবি প্রকাশ করেছে। ব্লু ঘোস্ট চাঁদের মের ক্রিসিয়াম (Mare Crisium) নামে গর্তের কাছে অবতরণ করে। অবতরণের আগে এটিকে দুটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি পার করতে হয়। অবশ্য সব বাধা পেরিয়ে চাঁদের মনস ল্যাট্রিল আগ্নেয়গিরির কাছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ১০০ মিটারের মধ্যে নিখুঁতভাবে অবতরণ করে। এই মিশনে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের সঙ্গে কাজ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইলন মাস্কের স্পেসএক্স।