মেঘ দেখে যায় চেনা

পৃথিবীজুড়ে শতাধিক রকম মেঘ দেখা যায় আকাশে। এসব মেঘকে ভাগ করা যায় ১০ ভাগে। অর্থাৎ, মেঘ দেখে আকাশের অবস্থা বোঝার জন্য মেঘের এই দশটি ধরন চেনা দরকার

মাথার ওপরে ঝকঝকে নীল আকাশ। বায়ুমণ্ডলে আলোর বিচ্ছুরণের কারণে এমন সুন্দর রং। তবে সবসময় এই নীল আকাশ দেখার সুযোগ নেই। কারণ, সময়ে-অসময়ে আকাশজুড়ে ভেসে বেড়ায় নানা ধরনের নানা বর্ণের মেঘ।

শরতের আকাশে যে তুলোর মতো শুভ্র মেঘ ভেসে বেড়ায়, গ্রীষ্মে সেসব দেখা যায় না। হঠাৎ করেই পরিষ্কার আকাশে কালো মেঘ এসে ছেয়ে যায়। মেঘের সঙ্গে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বর্ষায় আবার মেঘের আনাগোনায় আকাশ দেখাই ভার।

তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে এখন হাতের স্মার্টফোনেই আবহাওয়ার সব পূর্বাভাস পাওয়া যায় মূহুর্তে। কিন্তু সবসময় তো এমন ছিল না। কিছুদিন আগেও দিনের আবহাওয়া কেমন যাবে, সেটা মানুষ বুঝত মেঘ দেখে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিত। মেঘ দেখে দিনের আবহাওয়া বোঝার জন্য তারা কাজে লাগাত নিজেদের অতীত অভিজ্ঞতা। পরে বিশেষজ্ঞরা মেঘের রূপ ও আচরণের মধ্যকার সম্পর্ক বের করেছেন। এসব সম্পর্ক জানা থাকলে অভিজ্ঞতা ছাড়াও মেঘ দেখে আবহাওয়া আঁচ করা সম্ভব। পৃথিবীজুড়ে শতাধিক রকম মেঘ দেখা যায় আকাশে। এসব মেঘকে ভাগ করা যায় ১০ ভাগে। অর্থাৎ, মেঘ দেখে আকাশের অবস্থা বোঝার জন্য মেঘের এই দশটি ধরন চেনা দরকার।

সাইরাস (Cirrus)

লাতিন শব্দ সাইরাসের সহজ বাংলা কোঁকড়া। সাদা, পাতলা ও অস্পষ্ট এই মেঘ দেখতে অনেকটা কোঁকড়া চুলের মতো। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের আগে আকাশে এমন মেঘ দেখা যায়। অনেকটা ঝড়ের সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে সাইরাস মেঘ।

কিউমুলাস (Cumulus)

পেঁজা তুলোর মতো খণ্ডাকারে ভাসে এই মেঘ। রংটা মূলত সাদা। মাঝে মাঝে কালোর ছোঁয়াও থাকে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় মেঘের সিম্বল হিসেবে যে ওপরে ঢেউ খেলানো, নিচে সমান একধরনের সংকেত দেখি, সেটা কিন্তু এসেছে এই মেঘের আকার থেকেই। উজ্জ্বল রোদেলা দিনে এই মেঘ দেখা যায়। এমন মেঘে ঝড় বা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

 

স্ট্রাটাস (Stratus)

অনেকসময় আকাশে আলাদা করে মেঘ বোঝা যায় না। মনে হয়, পুরো আকাশটাই বুঝি মনখারাপ করে মুখ কালো করে রেখেছে। এরকম ঘটনা ঘটে আকাশে স্ট্রাটাস মেঘ থাকলে। ধুসর রঙের সমতল চাদরে ঢেকে যায় পুরো আকাশ। সাধারণত শুষ্ক ও আর্দ্রতাহীন দিনে এমন মেঘ দেখা যায়। কুয়াশা ও বৃষ্টিপাত হতে পারে এ মেঘের কারণে।

নানা রকম মেঘ
UCAR/L.S. Gardiner

স্ট্রাটোকিউমুলাস (Stratocumulus)

দেখতে অনেকটা কিউমুলাস মেঘের মতো। তবে এ মেঘের তেমন কোনো আকৃতি থাকে না। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে চমৎকার নীলাকাশ দেখা যায়। সাধারণত মেঘলা ও দুর্বল বায়ুপ্রবাহ আছে, এমন দিনে তৈরি হয় এ ধরনের মেঘ। কিউমুলাস মেঘের মতো এ থেকেও বৃষ্টির সম্ভাবনা তেমন নেই।

 

অল্টোকিউমুলাস (Altocumulus)

আকাশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ ধরনের মেঘ। সাদা বা ধূসর খণ্ডাকারে ভেসে বেড়ায়। অনেকটা মাছের আঁশের মতো। অল্টোকিউমুলাস মেঘ চেনার মজার একটা উপায় আছে। আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ দেখলে সেদিকে বুড়ো আঙুল উঁচু করে তাক করুন। মেঘের খণ্ডগুলো যদি বুড়ো আঙুলের মাথার পেছনে ঢাকা পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে এটাই অল্টোকিউমুলাস মেঘ। সাধারণ উষ্ণ ও আর্দ্র দিনের সকালেবেলা এমন মেঘ দেখা যায়। বড় ঝড়-বৃষ্টি না হলেও বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে এমন মেঘে।

 

সিরোকিউমুলাস (Cirrocumulus)

ছোট ছোট খণ্ড আকারে একসঙ্গে ভেসে বেড়ায় সিরোকিউমুলাস মেঘ। দেখতে সৈকতের বালুকাবেলার মতো ঢেউ খেলানো। ঠান্ডা ও নাতিশীতষ্ণ আবহাওয়ার সময় আকাশে দেখা যায় এ মেঘ। সিরোকিউমুলাস মেঘ খুবই কম দেখা যায়। সাধারণত শীতকালে এ ধরনের মেঘ দেখা যায় আকাশে।

 

নিমবোস্ট্রাটাস (Nimbostratus)

গাঢ় ধূসর রঙে আকাশকে ঢেকে দেয় নিমবোস্ট্রাটাস মেঘ। বায়ুমণ্ডলের নিচ থেকে মধ্যস্তর পর্যন্ত তৈরি হয়। সূর্যের আলো ঢেকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ পুরু। সাধারণত বর্ষাকালের আকাশে এই মেঘ দেখা যায়। এ ধরনের মেঘ বৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। তাই আকাশে এমন মেঘ দেখলে ছাতাসহ বেরোনো উচিত ঘর থেকে।

অল্টোস্ট্রাটাস (Altostratus)

পাতলা ধূসর বা নীলচে ধূসর রঙা মেঘ অল্টোস্ট্রাটাস। দেখতে অনেকটাই কুয়াশার মতো। পুরো আকাশ প্রায় ঢেকে রাখে। তবে সূর্যের আলো এই মেঘ ভেদ করে আসতে পারে। অল্টোস্ট্রাটাসের পেছনে সূর্যকে বেশ অনুজ্জ্বল লাগে।

 

সিরোস্ট্রাটাস (Cirrostratus)

বাতাসের আর্দ্রতা অনেক বেশি হলে আকাশে দেখা যায় স্বচ্ছ এই মেঘগুলো। বরফ কণা দিয়ে তৈরি সিরোস্ট্রাটাস মেঘ মূলত উষ্ণ আবহাওয়ার প্রতিনিধিত্ব করে।

 

কিউমুলোনিমবাস (Cumulonimbus)

এ ধরনের মেঘ দেখতে যেমন দানবীয়, কাজও তেমন ভয়ংকর। এদেরকে সাধারণত বজ্রমেঘ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আকাশে এদের দেখতে তুলো বা বরফের স্তুপের মতো মনে হয়। ওপরের অংশ উজ্জ্বল হলেও নিচের অংশটি হয় প্রায় অন্ধকার। কিউমুলোনিমবাস মেঘের কারণে দ্রুত পরিবেশ বদলে যেতে পারে। হতে পারে ভারী বৃষ্টি, শীলাবৃষ্টি, এমনকি ঘূর্ণিঝড়।

চিনে যেহেতু ফেলেছেন, আশা করি এখন থেকে মেঘ দেখে সহজেই বুঝতে পারবেন, কেমন হতে পারে আবহাওয়া। ঝড়-বৃষ্টির সময় তাই প্রস্তুতি নিয়ে বেরোতে ভুলবেন না যেন!

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউইটওয়ার্কস ম্যাগাজিন, থট কো