আইনস্টাইনের ধাঁধা
গণিতের অধ্যাপক কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন: সমাধান ও বিজয়ী
গত ডিসেম্বর সংখ্যায় বিজ্ঞানচিন্তার প্রিন্ট ভার্সনে প্রকাশিত হয় ‘আইনস্টাইনের ধাঁধা: গণিতের অধ্যাপক কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন’। চলুন এ বুদ্ধির ব্যায়ামের সমাধান ও বিজয়ী কারা হলেন, তা জেনে নেওয়া যাক।
ধাঁধাটি ছিল এরকম: দেশের নামকরা চার বিজ্ঞানীকে নিয়ে আমাদের আজকের ধাঁধা। চারজন ভালো বন্ধু, পাশাপাশি বসে গল্প করছেন। তাঁদের বয়স ভিন্ন: ৩৫, ৪০, ৪৭ ও ৫২ বছর। গবেষণা করছেন দেশের নামকরা চার বিশ্ববিদ্যালয়ে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারও গবেষণার বিষয় রসায়ন, কারও পদার্থবিজ্ঞান। আবার কেউ গবেষণা করছেন গণিত বা প্রযুক্তি নিয়ে। তাঁদের পছন্দের খাবারের তালিকাও ভিন্ন। খাবারের তালিকায় রয়েছে কাবাব, খিচুড়ি, বার্গার ও চিকেন ফ্রাই। তাঁদের মধ্যে একজন উল্লিখিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের একটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। আমাদের এই গবেষককে খুঁজে বের করতে হবে। সে জন্য আপনার জন্য রইল ১১টি তথ্য। এগুলো ঘেঁটে উত্তর খুঁজে বের করতে পারেন কি না, দেখুন। তথ্যগুলো হলো:
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রয়েছেন শুরুতে (বাঁয়ে)।
২. যে গবেষকের বয়স ৪০ বছর, তিনি আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের বাঁয়ে কোথাও।
৩. যাঁর কাবাব পছন্দ, তিনি রয়েছেন তৃতীয় স্থানে।
৪. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের ঠিক বাঁয়ে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক।
৫. প্রযুক্তি নিয়ে যিনি গবেষণা করছেন, তিনি আছেন সবার শেষে (ডানে)।
৬. তৃতীয় স্থানের গবেষকের বয়স ৪৭ বছর।
৭. জ্যেষ্ঠ গবেষক রয়েছেন সবার শেষে।
৮. পদার্থবিজ্ঞানীর বাঁয়ে যিনি আছেন, তিনি মুরগি খেতে ভালোবাসেন।
৯. যিনি বার্গার খেতে পছন্দ করেন, তাঁর বাঁয়ে আছেন গণিতের অধ্যাপক, তবে তিনি সর্বকনিষ্ঠ নন।
১০. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের পরেই আছেন ৪০ বছর বয়সী গবেষক।
১১. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন।
এবার খুঁজে বের করুন তো, গণিতের অধ্যাপক কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন?
ধাঁধাটা সমাধান করা খুব সহজ। একসঙ্গে একগাদা তথ্য পড়ে জটিল মনে করবেন না। নিচের ছকের মতো একটি ছক বানিয়ে নিলে সমাধান আরও সহজে করা যায়।
বয়স: ৩৫ বছর, ৪০ বছর, ৪৭ বছর ও ৫২ বছর
পছন্দের খাবার: চিকেন ফ্রাই, বার্গার, কাবাব ও খিচুড়ি
গবেষণা: গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও রসায়ন
বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সমাধান
৩নং তথ্যে বলা আছে, তৃতীয় স্থানের গবেষকের কাবাব পছন্দ। তাহলে ছকে ৩য় স্থানে প্রিয় খাবারের জায়গায় লিখব কাবাব। ৫নং তথ্যমতে, শেষে থাকা গবেষক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাহলে ৪র্থ স্থানের গবেষণার ক্ষেত্রের জায়গায় লিখব প্রযুক্তি। আবার ৮নং তথ্যানুসারে, জেষ্ঠ্য গবেষকের সবার আছেন। অর্থাৎ সবচেয়ে বয়স্ক গবেষক রয়েছেন ৪র্থ স্থানে। তাহলে তাঁর বয়স হবে ৫২ বছর। আবার ৬নং তথ্যমতে, তৃতীয় স্থানের গবেষকের বয়স ৪৭ বছর। এখন এসব তথ্য ছকে বসাই।
এবার ১নং তথ্য দেখুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আছেন ১ম স্থানে। আবার ১০নং তথ্যানুসারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের পরের জনের বয়স ৪০ বছর। মানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা গবেষক ৪০ বছর বয়সী। এবার ২নং তথ্য খেয়াল করুন। ৪০ বছর বয়েসী গবেষক রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঁয়ে কোথাও। তার মানে, ৪০ বছর বয়সী গবেষক যেহেতু ২য় স্থানে রয়েছেন, তাহলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৩য় বা ৪র্থ স্থানের কোথাও থাকবেন। ৪নং তথ্য খেয়াল করলই বুঝবেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক কোন স্থানে রয়েছে। যেহেতু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই ৪র্থ স্থানে থাকতে হবে। অর্থাৎ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ স্থানে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় স্থানে। এই তথ্যগুলো ছকে বসাই।
ছকটা খেয়াল করলে দেখবেন, বয়সের একটা ঘর ফাঁকা আছে। ওখানে নিশ্চয়ই ৩৫ বছর হবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়েরও একটা ঘর ফাঁকা আছে। তাহলে ওখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এবার ১১নং তথ্য দেখুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন। এখন আর ২টি সূত্র আছে। ৮নং তথ্যমতে, পদার্থবিজ্ঞাদ্যা গবেষকের বাঁয়ের গবেষকের পছন্দ চিকেন। অর্থাৎ প্রথম স্থানে থাকা গবেষক চিকেন পছন্দ করেন। এগুলো ছকে বসিয়ে নিই।
দেখুন খাবারের ও গবেষণার ক্ষেত্রের দুটি করে ঘর ফাঁকা। কিন্তু সূত্র আছে মাত্র একটি। সবশেষ ৯নং তথ্য বলেছে, যিনি বার্গার খেতে পছন্দ করেন তাঁর বাঁয়ে গণিতের অধ্যাপক কিন্তু তিনি সর্বকনিষ্ঠ নন। মানে গণিতের অধ্যাপক সবচেয়ে কম বয়েসী হবেন না। যদি ধরে নিই, ২য় স্থানের গবেষক বার্গার পছন্দ করেন, তাহলে তাঁর বাঁয়ে হবেন গণিতের অধ্যাপক। কিন্ত সেক্ষেত্রে গণিতের অধ্যাপকের বয়স হয়ে যায় ৩৫ বছর যা সবচেয়ে কম। তাই ২য় স্থানের গবেষকের পছন্দের খাবার বার্গার হতে পারে না। বরং ৪র্থ স্থানের গবেষকের পছন্দের খাবার হবে বার্গার এবং তাঁর বাঁয়ে অর্থাৎ ৩য় স্থানের গবেষক গণিতের অধ্যাপক। ইতিমধ্যে আমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। অর্থাৎ, গণিতের অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। তারপরেও দুটি ঘর ফাঁকা থাকে। ওখানে বাকি খাবার ও গবেষণার ক্ষেত্র বসবে। অর্থাৎ ২য় স্থানের গবেষকের প্রিয় খাবার খিচুড়ি ও ১ম স্থানের গবেষক রসায়ন নিয়ে গবেষণা করছেন।
ডিসেম্বর ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী
প্রত্যয় দে
উত্তর কাফরুল, ঢাকা
আফিফা আনজুম
রাইফেল ক্লাব, নড়াইল
আযকার মাশরুর
বয়লা, কিশোরগঞ্জ