সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যাটি কত বড়

প্রায় ২ হাজার বছর ধরে গণিতবিদেরা মৌলিক সংখ্যা খুঁজে চলেছেন। প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিডের যুগেও মানুষ মৌলিক সংখ্যা খুঁজেছে। পেয়েছেও অনেক। কিন্তু মৌলিক সংখ্যার তো আর শেষ নেই। তাই এখনও চলছে খোঁজ। খুঁজে পাওয়া মৌলিক সংখ্যারগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বড়? কীভাবেই-বা মৌলিক সংখ্যা খোঁজা হয়?

সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা খোঁজার আগে জানতে হবে, মৌলিক কী। যে সংখ্যাকে অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে নিঃশেষে বিভাজ্য হয় না, তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। সহজ করে বললে, যে সংখ্যাকে ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না, তাই মৌলিক সংখ্যা। যেমন ৭ একটি মৌলিক সংখ্যা। একে ১ ও ৭ ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। 

আসলে ১-এর চেয়ে বড় যেকোনো সংখ্যাই হয় মৌলিক সংখ্যা, নয়তো একাধিক মৌলিক সংখ্যার গুণফল। যেমন ১৮ একটি যৌগিক সংখ্যা। কিন্তু এর উৎপাদকগুলো সব মৌলিক। ২ × ৩ × ৩ = ১৮। উৎপাদক ২ ও ৩ মৌলিক সংখ্যা। সব সংখ্যার ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।

বর্তমানে সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যাটি হলো ২৮,২৫,৮৯,৯৩৩ - ১। দেখতে সহজ মনে হলেও সংখ্যাটি বের করা মোটেও সহজ নয়। কম্পিউটার ছাড়া তো অসম্ভব। চলুন, দেখে নিই সংখ্যাটি আসলে কত বড়! 

বিশাল এই মৌলিক সংখ্যাটির একটা নাম আছে। এম৮২৫৮৯৯৩৩। এটা একটা মার্সেন প্রাইম বা মার্সেন মৌলিক সংখ্যা।

তার আগে সংখ্যাটিকে কীভাবে বের করবেন, সেটা বলি। প্রথমে ২-কে ৮,২৫,৮৯,৯৩৩ বার গুণ করতে হবে। যেমন, ২ মানে ২ × ২ = ৪। আবার ২ মানে ২ × ২ × ২ = ৮। এই পদ্ধতিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা বের করতে হলে ২-কে ৮ কোটি ২৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯৩৩ বার গুণ করতে হবে। তারপর সেখান থেকে ১ বিয়োগ করলেই সংখ্যাটি উদ্ধার করা যাবে। উদ্ধারকৃত সংখ্যাটি হবে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৮ অঙ্কের। যা আগের সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যার চেয়ে ১৫ লাখ অঙ্ক বেশি। এখন নিশ্চয়ই সংখ্যাটা সহজ মনে হচ্ছে না। খাতা-কলমে বা ক্যালকুলেটরে সমাধান করার তো প্রশ্নই আসে না।

বিশাল এই মৌলিক সংখ্যাটির একটা নাম আছে। এম৮২৫৮৯৯৩৩। এটা একটা মার্সেন প্রাইম বা মার্সেন মৌলিক সংখ্যা। ২-এর মৌলিক ঘাত বা পাওয়ার বিশিষ্ট কোনো সংখ্যা থেকে ১ বিয়োগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, সেটি একটি মার্সেন প্রাইম। সংজ্ঞাটা বোধহয় একটু কঠিন হয়ে গেল। ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যাক। ৩১ একটি মৌলিক সংখ্যা। একে ২ - ১ আকারে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ ৩১ হলো ২ - ১ = ৩২ - ১ = ৩১। ২ = ২ × ২ × ২ × ২ × ২ = ৩২। তবে সব মৌলিক মার্সেন প্রাইম মৌলিক সংখ্যা হয় না। মার্সেন প্রাইম সম্পর্কে অন্য কোনো লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করব।

মৌলিক সংখ্যার আছে অনেক ব্যবহার। ইন্টারনেটে নিরাপদে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি। আর এই ক্রিপ্টোগ্রাফির ভিত্তি তৈরি করে মৌলিক সংখ্যা।

বছরের পর বছর মানুষ মার্সেন প্রাইমগুলো পরীক্ষা করে দেখেন, সেটি আসলেই মৌলিক সংখ্যা কি না। মৌলিক সংখ্যা বের করার সহজ কোনো পদ্ধতি নেই। তবে মার্সেন প্রাইমের সাহায্যে বের করা তুলনামূলক সহজ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত দ্য গ্রেট ইন্টারনেট মার্সেন প্রাইম সার্চ বা গিম্পস (GIMPS) ব্যবহার করে প্রতিবছর একটি নতুন মার্সেন প্রাইম আবিষ্কার করা হয়। বড় এই মৌলিক সংখ্যাটিও গিম্পস ব্যবহার করে একদল গণিতপ্রেমী আবিষ্কার করেছেন। পরে আরও তিন ব্যক্তি বিভিন্ন কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবহার একই মৌলিক সংখ্যা যাচাই করেন। এরপর থেকে আর নতুন কোনো মার্সেন প্রাইম পাওয়া যায়নি। আসলে আবার কত দিন পরে একটি মার্সেন প্রাইম পাওয়া যাবে, তা কেউ জানে না। 

কিন্তু প্রাইম নাম্বার খোঁজা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? মৌলিক সংখ্যার আছে অনেক ব্যবহার। ইন্টারনেটে নিরাপদে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি। আর এই ক্রিপ্টোগ্রাফির ভিত্তি তৈরি করে মৌলিক সংখ্যা। পাশাপাশি ডেটা স্ট্রাকচার ও সফটওয়্যার ডিজাইন করতেও মৌলিক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। গণিতে সংখ্যাতত্ত্বের জন্যও মৌলিক সংখ্যার ভূমিকা অপরিসীম। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানেও আছে মৌলিক সংখ্যার ব্যবহার। 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, স্মিথসোনিয়ানম্যাগ ডট কম