রয়েল হোটেলের পরিচালক কে: সমাধান ও বিজয়ী

গত ১ জুলাই, সোমবার বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘বুদ্ধির ব্যায়াম: রয়েল হোটেল পরিচালনা করেন কে’। চলুন এ এ বুদ্ধির ব্যায়ামের সমাধান ও বিজয়ী কে হলেন, তা জেনে নেওয়া যাক।

অনুষ্ঠিত হলো ‘বুদ্ধির ব্যায়াম’-এর বিজয়ী বাছাই লটারি। ৭ জুলাই, রোববার বিজ্ঞানচিন্তা কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে একজন বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। এতে বিজয়ী হয়েছেন জিনাতুন নেসা। বিজয়ীর ঠিকানায় শিগগিরই পৌঁছে যাবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। লটারির সময় উপস্থিত ছিলেন কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত ও পাভেল মহিতুল আলম এবং সহসম্পাদক আহমাদ মুদ্দাসসের, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার, সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ ও সম্পাদনা দলের সদস্য কাজী আকাশসহ আরও অনেকে।

এর আগে, ১ জুলাই বিজ্ঞানচিন্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘বুদ্ধির ব্যায়াম: রয়েল হোটেল পরিচালনা করেন কে’। উত্তর পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ৫ জুলাই, শুক্রবার। প্রায় শতাধিক পাঠক উত্তর পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানচিন্তার ই-মেইলে। বেশির ভাগ পাঠক সঠিক উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী বাছাই করা হয়েছে।

চলুন, এবার সমাধান দেখে নেওয়া যাক।

প্রশ্নটি ছিল এরকম: ভিন্ন ভিন্ন রঙের পাঁচটি হোটেল একই সিরিয়ালে রয়েছে। হোটেলগুলোর রং নীল, সবুজ, বেগুনি, লাল ও সাদা। তবে কোনটার রং কী, তা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। এই হোটেলগুলোর প্রত্যেকটার আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। যেমন মির্জা হোটেল, প্যালেস হোটেল, রয়েল হোটেল, রেডিসন হোটেল ও ক্রাউন হোটেল। তবে হোটেলগুলোর মালিকদের কেউ বাংলাদেশি নয়। একজন ব্রিটিশ, একজন আমেরিকান, একজন ফরাসি, একজন জার্মান ও একজন ইতালিয়ান।

প্রতিটি হোটেলের রুম সংখ্যাও ভিন্ন ভিন্ন। কোনোটায় রুম ১০০টা, কোনোটায় আবার ১৫০, ২০০, ২৫০ ও ৩০০টা। হোটেলগুলো বানানো হয়েছিল আলাদা আলাদা সময়ে। যেমন একটা বানানো হয়েছে ১৯১০-এর দশকে। আবার একটা ১৯৫০-এর দশকে। এরকম আলাদা আলাদা পাঁচ দশকে পাঁচটি হোটেল তৈরি করা হয়েছে। এই পাঁচ হোটেলে পাঁচজন ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছেন মালিকরা। তাঁদের নামগুলো হলো কেলভিন, ডেরেক, ইয়ান, রজার ও ইথান।

এখন এই হোটেল এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় নিয়ে আপনাকে মোট ২১টি তথ্য দেওয়া হবে। সেই তথ্যগুলো ঘেঁটে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, রয়েল হোটেলের ম্যানেজারের নাম কী। প্রথমে তথ্যগুলো দেখা যাক।

১. প্যালেস হোটেল এবং ১৫০ রুম বিশিষ্ট হোটেলের মাঝে রয়েছে সবচেয়ে বড় হোটেলটি।

২. দ্বিতীয় স্থানে থাকা হোটেলটি তৈরি হয়েছে ১৯৩০-এর দশকে।

৩. সাদা রঙের হোটেলটি রয়েছে সবচেয়ে ছোট হোটেলটির বাঁয়ে।

৪. মাঝের হোটেলের মালিক জার্মানিতে বাস করেন।

৫. সাদা রঙের হোটেল ও ২৫০ রুম বিশিষ্ট হোটেলের মাঝে কোথাও রয়েছে আমেরিকান মালিকের হোটেলটি।

৬. লাল রঙের হোটেলটি সামলায় রজার।

৭. রেডিসন হোটেলের রুম সংখ্যা ৩০০টি।

৮. সবুজ হোটেলের ঠিক ডানে কোথাও রয়েছে ক্রাউন হোটেল।

৯. ইতালিয়ান মালিক তাঁর হোটেলটি তৈরি করেছেন ১৯৫০-এর দশকে।

১০. রজার যে হোটেলের ম্যানেজার, তার ঠিক বাঁয়ের হোটেলটির রুম সংখ্যা ২৫০টি।

১১. সবার শুরুতে থাকা হোটেলের মালিক প্যারিস শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন।

১২. সবুজ হোটেলের ডানে রয়েছে ২০০ রুম বিশিষ্ট হোটেলটি।

১৩. ইয়ান প্রথম হোটেলের দেখভাল করে।

১৪. ফরাসি মালিকের হোটেল ও মির্জা হোটেলের মাঝে কোনো এক জায়গায় রয়েছে রয়েল হোটেল।

১৫. চার নম্বর হোটেলটার মালিক একজন ইতালিয়ান।

১৬. রয়েল হোটেলের রং সাদা।

১৭. কেলভিন দেখভাল করে চার নম্বর হোটেল।

১৮. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরে যে হোটেলটি তৈরি হয়েছে, সেটি আছে সবুজ হোটেলের ডানে।

১৯. ১৯৩০-এর দশকে তৈরি হওয়া হোটেলটি রয়েছে সাদা হোটেলের বাঁয়ে।

২০. কেলভিন যে হোটেলের ম্যানেজার সেই হোটেলটি রয়েছে ক্রমান্বয়ে নীল হোটেল ও ডিরাকের দায়িত্বে থাকা হোটেলের মাঝে কোথাও।

২১. তৃতীয় স্থানে যে হোটেলটি রয়েছে, সেটি তৈরি হয়েছে ১৯২০-এর দশকে।

এখন খুঁজে বের করতে হবে, রয়েল হোটেলটির ম্যানেজার কে?

সমাধান

তথ্যগুলো যাচাই করে উত্তর খোঁজা যাক। ২ নং শর্তে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা হোটেলটি তৈরি হয়েছে ১৯৩০-এর দশকে। তাহলে দ্বিতীয় হোটেলের নিচে বসবে ১৯৩০-এর দশক। ৪ নং তথ্যানুযায়ী, মাঝখানের হোটেলের মালিক জার্মানিতে বাস করেন। তাহলে ৩ নং হোটেলের মালিকের ঘরে বসবে জার্মানি। এখন ১১ নং তথ্য খেয়াল করুন। সবার শুরুতে থাকা হোটেলের মালিক প্যারিস শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। মানে ১ নম্বর হোটেলের মালিক ফরাসি। কারণ, তার জন্ম হয়েছে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। আবার ১৩ নং তথ্যে বলা হয়েছে, ইয়ান প্রথম হোটেলের দেখভাল করে। মানে ওই হোটেলের ম্যানেজার ইয়ান। এরপর ১৫ নং তথ্য খেয়াল করুন। চার নম্বর হোটেলের মালিক ইতালিয়ান। এবং ১৭ নং তথ্যে বলা হয়েছে, কেলভিন এই চার নম্বর হোটেলটা দেখভাল করেন। ওপরে পাওয়া তথ্যগুলো এখন ছকে বসিয়ে দিই।

এবার ১৯ নং তথ্য দেখুন। ওখানে বলা আছে, ১৯৩০-এর দশকে তৈরি হোটেলটি রয়েছে সাদা হোটেলের বাঁয়ে। যেহেতু দ্বিতীয় হোটেলটি তৈরি হয়েছে ১৯৩০-এর দশকে, তাই তৃতীয় হোটেলটি হবে সাদা। ১৬ নং তথ্যে আবার বলা হয়েছে, রয়েল হোটেলের রং সাদা। যেহেতু তৃতীয় হোটেলটি সাদা, সুতরাং ওটাই রয়েল হোটেল। ৩ নং তথ্য বলছে, সাদা রঙের হোটেলটি রয়েছে সবচেয়ে ছোট হোটেলটির বাঁয়ে। তৃতীয় হোটেলটি যেহেতু সাদা, সেহেতু সবচেয়ে ছোট হোটেল হবে চতুর্থটি। আর এই হোটেলের রুম সংখ্যা হবে সবচেয়ে কম, অর্থাৎ ১০০টি। আবার ১০ নং তথ্যমতে, ইতালিয়ান মালিক তাঁর হোটেলটি তৈরি করেছেন ১৯৫০-এর দশকে। অর্থাৎ চতুর্থ হোটেলটি নির্মিত হয়েছে ১৯৫০-এর দশকে। ৫ নং তথ্যানুযায়ী, সাদা রঙের হোটেল ও ২৫০ রুম বিশিষ্ট হোটেলের মাঝে কোথাও রয়েছে আমেরিকান মালিকের হোটেলটি। এটা একটু ভালোভাবে খেয়াল করুন। সাদা হোটেল রয়েছে একদম মাঝে, মানে তৃতীয় স্থানে। তাহলে আমেরিকান হোটেলটি হয় ১ম ও ৩য় হোটেলের মাঝে হবে, অথবা ৩য় ও ৫ম হোটেলের মাঝে। কিন্তু এটা ৩য় ও ৫ম হোটেলের মাঝে হতে পারে না, কারণ ৪র্থ স্থানে ইতালীয় ব্যক্তির হোটেল রয়েছে। ফলে আমেরিকান ব্যক্তির হোটেল নিশ্চয়ই ২য় স্থানে বসবে। আর ২৫০ রুম বিশিষ্ট হোটেলটা হতে হবে ১ম হোটেলকে। এই তথ্যগুলো এখন ছকে বসিয়ে নিই।

খেয়াল করে দেখুন, হোটেলের প্রথম চারজন মালিক পাওয়া গেছে। তাহলে পঞ্চম হোটেলের মালিক নিশ্চয়ই বাকি জন, অর্থাৎ তিনি হবেন ব্রিটিশ। এবার দেখুন ১০ নং তথ্য। রজার যে হোটেলের ম্যানেজার, তার ঠিক বাঁয়ের হোটেলটির রুম সংখ্যা ২৫০। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, ১ম হোটেলের রুম সংখ্যা ২৫০টি। তাহলে রজার নিশ্চয়ই ২য় হোটেলের ম্যানেজার। ৬ নং তথ্যে বলা হয়েছে, লাল রঙের হোটেলটি সামলায় রজার। মানে ২য় হোটেলটি লাল। এবার সবশেষে থাকা ২১ নং তথ্যটা খেয়াল করুন। তৃতীয় স্থানে যে হোটেলটি রয়েছে, সেটি তৈরি হয়েছে ১৯২০-এর দশকে। তাহলে রয়েল হোটেলটি তৈরি হয়েছে ১৯২০-এর দশকে। ১৮ নং তথ্য বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরে যে হোটেলটি তৈরি হয়েছে, সেটি আছে সবুজ হোটেলের ডানে। এখানে জানতে হবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ১৯৪৫ সালে। তার ঠিক পরে যেহেতু হোটেলটি তৈরি হয়েছে, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই ১৯৪০-এর দশকে। ইতিমধ্যে দুটি হোটেল তৈরির দশক বা সময়কাল আমরা জানি। তাই ২য় ও ৩য় হোটেল এই সময় নির্মাণ হতে পারে না। প্রথমটিও পারে না, কারণ এটি রয়েছে সবার বাঁয়ে। ফলে এটি বিশ্বযুদ্ধের পরে নির্মাণ হলে এর আগে আর কোনো নীল হোটেল থাকে না। তাহলে রইল বাকি ২টি হোটেল। ৪র্থ ও ৫ম। যদি ধরে নিই, ৪র্থ হোটেলটি বিশ্বযুদ্ধের পরে শুরু হয়েছে, তাহলে ৩য় হোটেলটি হতে হবে নীল। কিন্ত দেখা যাচ্ছে, ৩য় হোটেলটি সাদা। অর্থাৎ এখন শুধু একটি সম্ভাবনা বাকি রইল। ৪র্থ হোটেলটি নীল এবং ৫ম হোটেলটি ১৯৪০-এর দশকে, অর্থাৎ ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে নির্মিত হয়েছে। তথ্যগুলো আবার ছকে বসাই।

এবার ১২ নং তথ্য দেখুন। সবুজ হোটেলের ডানে রয়েছে ২০০ রুম বিশিষ্ট হোটেলটি। অর্থাৎ ৫ম হোটেলের রুম সংখ্যা ২০০টি। ৭ নং তথ্যমতে, রেডিসন হোটেলের রুম সংখ্যা ৩০০টি। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, দুটি হোটেলের রুম সংখ্যা কত, তা আমরা জানি না। ২য় ও ৩য় হোটেল। কিন্তু ৩য় হোটেলের নাম জানি—রয়েল। ফলে এটার রুম ৩০০টি হতে পারে না। তাহলে নিশ্চয়ই ২য় হোটেলের রুম ৩০০টি এবং হোটেলের নাম রেডিসন। এখন তাহলে বাকি ৩য় হোটেলের রুম সংখ্যা, যা ১৫০টি হতেই হবে। এবার ৮ নং তথ্যটাও দেখুন। সবুজ হোটেলের ঠিক ডানে কোথাও রয়েছে ক্রাউন হোটেল। মানে ৫ম হোটেলটির নাম ক্রাউন হোটেল। তথ্যগুলো আবার সাজিয়ে নিই ছকে।

এবার ১ নং তথ্যটা খেয়াল করুন। প্যালেস হোটেল এবং ১৫০ রুম বিশিষ্ট হোটেলের মাঝে রয়েছে সবচেয়ে বড় হোটেলটি। সবচেয়ে বড় হোটেলের নাম রেডিসন, কারণ, এই হোটেলের রুম সংখ্যা ৩০০টি। তাহলে আমরা দেখছি, ১৫০ রুমবিশিষ্ট হোটেল ৩য়টি, মাঝে আছে সবচেয়ে বড় হোটেল। তাহলে প্যালেস হোটেল নিশ্চয়ই ১ম হোটেলটি। আর শুধু একটা হোটেলের নাম বাকি রইল, সেটার নাম নিশ্চিত মির্জা হোটেল। এর মধ্য দিয়ে ১৪ নং তথ্যও কিন্তু মিলে যাচ্ছে। ফরাসি মালিকের হোটেল ও মির্জা হোটেলের মাঝে কোনো এক জায়গায় রয়েছে রয়েল হোটেল। ৯ নং তথ্যানুযায়ী, ইতালিয়ান মালিক তাঁর হোটেলটি তৈরি করেছেন ১৯৫০-এর দশকে। মানে ৪র্থ হোটেলটি তৈরি হয়েছে ১৯৫০-এর দশকে। আর তাহলে শুধু ১ম হোটেলটি তৈরির দশক বাকি। সেটা হবে ১৯১০-এর দশক। আবার তথ্যগুলো ছকে বসানো যাক।     

এখন ছকটা খেয়াল করুন। চারটা ঘর এখনো ফাঁকা আছে। কিন্তু তথ্য বাকি মাত্র একটা। ২০ নং তথ্য বলছে, কেলভিন যে হোটেলের ম্যানেজার, সেই হোটেলটি রয়েছে ক্রমান্বয়ে নীল হোটেল ও ডিরাকের দায়িত্বে থাকা হোটেলের মাঝে কোথাও। কেলভিন রয়েছে ৪র্থ হোটেলে। তাহলে তার নীল হোটেলটা ১ম ও ৫ম যেকোনো জায়গায় হতে পারে। একইভাবে ইথান ৩য় ও ৫ম, যেকোনো হোটেলে কাজ করতে পারে। কিন্তু বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। ভালোভাবে ২০ নং তথ্যটা খেয়াল করলে দেখা যাবে, সেখানে ক্রমান্বয়ে শব্দটা আছে। মানে নীল হোটেলটা হতে হবে কেলভিনের বাঁয়ে আর ডিরাক হবে তার ডানের হোটেলের ম্যানেজার। তাহলে ১ম হোটেল নীল হলে শেষ হোটেলটার রং হবে বেগুনি। একইভাবে ৫ম হোটেলটা ডিরাক দেখভাল করলে বাকি তৃতীয় হোটেলটা দেখভাল করবে ইথান। অর্থাৎ ইথান রয়েল হোটেলের ম্যানেজার।