ধরুন, আপনার শরীর গরম গরম লাগছে। জ্বর হলো কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। নিশ্চিত হতে মাপতে হবে শরীরের তাপমাত্রা। একটি থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা মাপলেন। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠিক বুঝতে পারছেন না, আসলেই এই তাপমাত্রাকে জ্বর বলা যায় কি না। কারণ আপনি শুনেছেন, তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রিতে উঠলে জ্বর হয়। কিন্তু সেটা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, সেলসিয়াস নয়। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সিদ্ধ হয়ে যায়। ফুটতে শুরু করে পানি। এ ভুল অবশ্য সবাই করেন না। ফারেনহাইট ও সেলসিয়াসের পার্থক্য বেশিরভাগ মানুষই জানেন।
তবে বাসাবাড়িতে আমরা যে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করি, সেগুলোর বেশিরভাগই সেলসিয়াসে তাপমাত্রা মাপে। ফলে সেলসিয়াস থেকে রূপান্তর করতে হয় ফারেনহাইটে। তাই সেলসিয়াস থেকে কীভাবে সহজে ফারেনহাইটে রূপান্তর করা যায়, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
মূল কথায় যাওয়ার আগে একটু অন্য আলোচনা করা দরকার। আমরা সাধারণত তাপমাত্রা পরিমাপের তিনটি স্কেলের সঙ্গে পরিচিতি। সেলসিয়াস, ফারেনহাইট ও কেলভিন। শেষেরটা আন্তর্জাতিক স্কেল। আমরা বেশিরভাগ সময় সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহার করি। তাই শুধু এ দুটি স্কেল নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
১৭২৪ সালে ডাচ পদার্থবিদ ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট উদ্ভাবন করেন ফারেনহাইট স্কেল। পারদের তৈরি থার্মোমিটারও তিনিই উদ্ভাবন করনে। তবে পিছিয়ে নেই সেলসিয়াস স্কেলও। ১৭৪২ সালে সেলসিয়াস স্কেল উদ্ভাবন করেন সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস। সেলসিয়াস প্রথমে একটু ভুল করেছিলেন। ০ ডিগ্রিকে পানির স্ফুটনাঙ্ক এবং ১০০ ডিগ্রিকে চিহ্নিত করেছিলেন পানির হিমাঙ্ক হিসেবে। তাঁর মৃত্যুর পরে আরেক সুইডিশ জীববিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ কার্ল লিনিয়াস সেলসিয়াস স্কেলকে আরও সহজ করার জন্য, স্কেলেও ওই মান সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ০ ডিগ্রিকে হিমাঙ্ক এবং ১০০ ডিগ্রিকে স্ফুটনাঙ্কে চিহ্নিত করেন।
এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরি। যেভাবে সহজে সেলসিয়াসকে রূপান্তরিত করবেন ফারেনহাইটে। এখানে শুরুতে বলে রাখি, এ কৌশলে আপনি পুরোপুরি সঠিক পরিমাপ পাবেন না। কাছাকাছি একটা মান পাবেন। কিন্তু কীভাবে পুরোপুরি সঠিক মান পাবেন, সেটাও দেখিয়ে দেব।
একদম সহজে সেলসিয়াসকে ফারেনহাইটে রুপান্তর করতে হলে সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে ২ দিয়ে গুণ করে যোগ করতে হবে ৩০। তাহলেই পেয়ে যাবেন ফারেনহাইটের মান। তাহলে সূত্রটি হলো, (সেলসিয়াস তাপমাত্রা × ২) + ৩০ = ফারেনহাইট তাপমাত্রা। যেমন, ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ফারেনহাইটে রূপান্তর করতে চান। সহজেই ৩০-কে গুণ করুন ২ দিয়ে। পেলেন ৬০। এরসঙ্গে আরও যোগ করুন ৩০। অর্থাৎ, ৬০ + ৩০ = ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
আবার ফারেনহাইট থেকে সহজে সেলসিয়াসে রূপান্তরিত করার কৌশল, (ফারেনহাইট তাপমাত্রা - ৩০) ÷ ২ = সেলসিয়াস তাপমাত্রা। ধরুন, ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটকে সেলসিয়াসে রূপান্তরিত করবেন। তাহলে (৮০ - ৩০) ÷ ২ = ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এবার আপনি যদি পুরোপুরি সঠিকভাবে সেলসিয়াস থেকে ফারেনহাইটে রূপান্তরিত করতে চান, তাহলে সূত্র হলো, (সেলসিয়াস তাপমাত্রা × ১.৮) + ৩২ = ফারেনহাইট তাপমাত্রা। অর্থাৎ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে (৩০ × ১.৮) + ৩২ = ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
আর ফারেনহাইটকে সেলসিয়াসে রূপান্তরিত করতে হলে (ফারেনহাইট তাপমাত্রা - ৩২) ÷ ১.৮ = সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অর্থাৎ ৮০ ডিগ্রি হবে (৮০ - ৩২) ÷ ১.৮ = ২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বেশিরভাগ দেশে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য সেলসিয়াস স্কেল ব্যবহার করলেও যুক্তরাষ্ট্র, পালাউ, বাহামা এবং লাইবেরিয়ার মতো কিছু দেশে এখনও ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহৃত হয়।