শিশুরা কীভাবে গণিত শেখে

শিশুদের গণিতের হাতেখড়ি হয় স্কুলে

দুই বছরের একটা শিশুর পাঁচ-ছয়টা খেলনা থেকে একটা সরিয়ে ফেললে দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটি বুঝে ফেলে, তার একটা খেলনা কমে গেছে। শিশুরা এটা কীভাবে বুঝতে পারে?

অনেকের ধারণা, শিশুদের গণিতের হাতেখড়ি হয় স্কুলে। কিন্তু বাস্তবে তারা জন্মের পর থেকেই গণিতের ধারণা আত্মস্থ করতে শুরু করে। মূলত জন্মগতভাবে শিশুরা গণিত বোঝার ক্ষমতা রাখে। জন্মের পর থেকে সংখ্যা ও প্যাটার্ন বুঝতে পারে। দেখতে দেখতে ও শুনে পার্থক্য বুঝে নেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা খুব অল্প বয়সে সংখ্যা, আকৃতি এবং পরিমাণের ধারণা বোঝে। তারা যখন খেলনা সাজায়, এক জিনিসের সঙ্গে অন্য জিনিসের তুলনা করে কিংবা কোনো বস্তু গুণতে চেষ্টা করে, তখনই গণিতের প্রাথমিক ধারণা আয়ত্ত করে। যেমন, একটি শিশু যদি দুইটি আপেল ও তিনটি কলা দেখে, তাহলে সহজেই বুঝতে পারে যে কলার সংখ্যা বেশি। এভাবে ধীরেধীরে শিশুদের গণিতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।

শিশুরা যখন খেলাধুলা করে, জিনিসপত্র হিসাব করে বা সময়ের হিসাব রাখে, প্রকৃতপক্ষে তখনও শিশুটি গণিত শিখছে। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলোর মধ্য দিয়ে তারা গণিতের বিভিন্ন ধারণা রপ্ত করে। আবার পাজল বা ব্লক দিয়ে খেলার সময় ওরা বিভিন্ন আকৃতি তৈরি করে। এতেও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে। গণিত শেখার মাধ্যমে তারা বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিকাশ করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন এবং বাস্তব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শৈশবে যেসব শিশু গণনা, পাজল কিংবা ধাঁধা মেলায়, বড় হয়ে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিশ্লেষণ ও উদ্ভাবনে অন্যান্য শিশুদের থেকে এগিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন
গণিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ। গণিত সম্পর্কে কথা বলাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গণিত নয় বরং গণিতের ইতিহাস, গল্প সম্পর্কে শিশুদের জানানো উচিত। তাহলে ওদের গণিতভীতি দূর হবে।

শিশুদের গণিত শেখার এই প্রাকৃতিক প্রবণতাকে আরও উৎসাহিত করতে গণিতকে মজার উপায়ে উপস্থাপন করা যেতে পারে। গণিত শুধু যোগ-বিয়োগের সমীকরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কেবল পাঠ্যবইয়ের বিষয়ও নয়। আমরা প্রতিদিন সময় দেখা, বাজার করা, রান্নার উপাদান পরিমাপ করা, এমনকি রাস্তা পার হওয়ার সময়ও গণিত ব্যবহার করি। খেলতে খেলতে সংখ্যা গোনা, রাস্তার গাড়ির রং বা সংখ্যা দেখা, হাতের কাছের জিনিসপত্র গোনা—এসবের মাধ্যমে শিশুরা গণিত শিখতে শুরু করে।

গণিতভীতি দূর করতে শৈশব থেকে গণিতের প্রতি শিশুর ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, গণিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ। গণিত সম্পর্কে কথা বলাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গণিত নয় বরং গণিতের ইতিহাস, গল্প সম্পর্কে শিশুদের জানানো উচিত। তাহলে ওদের গণিতভীতি দূর হবে। এ ব্যাপারে বাবা-মায়েরও ইতিবাচক হওয়া দরকার। আমার সন্তান ‘গণিতে ভাল নয়’ বলার পরিবর্তে বলা উচিত ‘চলো সমস্যাটার সমাধান করার চেষ্টা করি’।

আরও পড়ুন
অভিভাবকদের মাথায় রাখতে হবে, গণিত মানে শুধু গাণিতিক সমীকরণ বা জটিল সূত্র মুখস্থ করা নয় বরং গল্প বলা, খেলা বা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গণিত শেখানো সম্ভব।
গণিত শেখার মাধ্যমে তারা বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিকাশ করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন এবং বাস্তব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

গণিত কঠিন মনে করার কারণে অনেকে ভয় পেতে শুরু করে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই যদি আনন্দদায়ক উপায়ে গণিত শেখানো হয়, তাহলে এই ভয় দূর করা সম্ভব। অভিভাবকদের মাথায় রাখতে হবে, গণিত মানে শুধু গাণিতিক সমীকরণ বা জটিল সূত্র মুখস্থ করা নয় বরং গল্প বলা, খেলা বা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গণিত শেখানো সম্ভব। এতে শিশুরা সহজে বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারে। এই ছোট ছোট প্রচেষ্টাই ভবিষ্যতে তাদের গণিতের প্রতি ভালোবাসার ও দক্ষতার ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল রিলেশনশিপ ডিপার্টমেন্ট, গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স ঢাকা

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য এডুকেশন অব ইয়ং চিলড্রেন ও নায়েক ডটঅর্গ

আরও পড়ুন