যোগের স্মার্ট কৌশল

বিয়োগের তুলনায় যোগ করা সহজ। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যোগ আরও সহজে কীভাবে করা যায়, এখানে সেই চেষ্টা করব। ভাবতে পারো, যোগের আবার সহজ নিয়ম কী? আছে, যোগেরও সহজ নিয়ম আছে। তোমরা এখন যে পদ্ধতিতে যোগ করো, তা আরও সহজে করা যায়। অবশ্যই খাতা-কলম ছাড়া। কীভাবে করতে হয়, চলো, সেটা জানার চেষ্টা করি।

কিছু সংখ্যা আছে, যেগুলো যোগ করা খুব সহজ। যেমন ১, ২, ১০, ২০, ১০০, ২০০, ১০০০ এবং ২০০০।

যেমন—

২৫ + ১ = ২৬

২৫ + ১০ = ৩৫

২৫ + ১০০ = ১২৫

২৫ + ২০০ = ২২৫

এ যোগগুলো করতে ১ সেকেন্ডও ভাবতে হয় না। চট করে মাথায় উত্তর চলে আসে। সব যোগ এমন চট করে মাথায় চলে এলে কেমন হয়? একটা উদাহরণ দিই। কোনো সংখ্যার সঙ্গে ৯০ যোগ করতে বললে শুরুতে ১০০ যোগ করবে। তারপর সেখান থেকে ১০ বিয়োগ করলেই ৯০ দিয়ে যোগ করা হবে।

ধরো, ৪৬-কে ৯০-এর সঙ্গে যোগ করবে। চট করে মাথায় উত্তর এল কি? যদি না আসে, কোনো সমস্যা নেই। বাকি লেখাটুকু পড়ো। দেখবে, চট করে মাথায় উত্তর চলে আসবে।

প্রথমে ৪৬-এর সঙ্গে যোগ করো ১০০। তাহলে পাবে ১৪৬। চট করেই এটা বলে দিতে পারবে তুমি। এবার এখান থেকে ১০ বিয়োগ করলে পেয়ে যাবে উত্তর। অর্থাৎ ১৪৬ - ১০ = ১৩৬। তাহলে আমরা যেভাবে সমাধান করলাম, তা একসঙ্গে লিখলে এমন হবে: ৪৬ + ৯০ = (৪৬ + ১০০) - ১০ = ১৪৬ - ১০ = ১৩৬

এবার যোগ করার কিছু শর্টকাট দেখে নাও। এই পদ্ধতিতে যোগ করলে দেখবে মূহূর্তেই তোমার মাথায় উত্তর চলে আসবে।

৯ যোগ করতে হলে প্রথমে ১০ যোগ করে, তারপর ১ বিয়োগ করতে হবে।

৮ যোগ করতে হলে প্রথমে ১০ যোগ করে, তারপর ২ বিয়োগ করতে হবে।

৯৫ যোগ করতে হলে প্রথমে ১০০ যোগ করে, তারপর ৫ বিয়োগ করতে হবে।

৮৫ যোগ করতে হলে প্রথমে ১০০ যোগ করে, তারপর ১৫ বিয়োগ করতে হবে।

৮০ যোগ করতে হলে প্রথমে ১০০ যোগ করে, পরে ২০ বিয়োগ করতে হবে।

৫২ যোগ করতে হলে প্রথমে ৫০ যোগ করে পরে আরও ২ যোগ করতে হবে।  

৪৮ যোগ করতে হলে প্রথমে ৫০ যোগ করে পরে ২ বিয়োগ করতে হবে।

এবারে এ ধরনের সমস্যাগুলো নিজের মাথায় সমাধান করার চেষ্টা করো। যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে। যেমন ৩৪ + ৯। এই যোগফলের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো, ৩৪-এর সঙ্গে প্রথমে ১০ যোগ করে পরে ১ বিয়োগ করা। কিন্তু তুমি উত্তর দেওয়ার সময় কীভাবে দেবে? ‘৪৪…এমমম…না ৪৩’।

না, এভাবে নয়। উত্তরে শুধু বলবে ৪৩। বাকিটা দ্রুত মনে মনে করে ফেলতে হবে। একইভাবে কোনো সংখ্যার সঙ্গে ৮ যোগ করতে বললে চট করে প্রথমে ১০ যোগ করে বিয়োগ করে দেবে ২। আর ৭ যোগ করতে বললে প্রথমে ১০ যোগ করে সেখান থেকে ৩ বিয়োগ করবে। এতে সহজে উত্তর বের করতে পারবে।

এবার একটু বড় সংখ্যার যোগ করা যাক। তোমাকে যদি কোনো সংখ্যার সঙ্গে ৩৮ যোগ করতে বলে, কীভাবে করবে? কিচ্ছু না ভেবে প্রথমে ৪০ যোগ করবে। তারপর সেখান থেকে বিয়োগ করবে ২। ব্যস, যোগফল পেয়ে যাবে।

এবার নিচের যোগগুলো কীভাবে করবে, চিন্তা করে দেখো।

ক) ২৩ + ৪৮ =

খ) ১২৬ + ৩৯ =

গ) ৪৭ + ৩৪ =

ঘ) ৪২৪ + ২৮ =

‘ক’-এর জন্য প্রথমে ২৩-এর সঙ্গে ৫০ যোগ করে পাবে ৭৩। সেখান থেকে ২ বিয়োগ করলে হবে ৭১।

‘খ’-এর জন্য ১২৬-এর সঙ্গে ৪০ যোগ করলে হবে ১৬৬। যোগফল থেকে ১ বিয়োগ করলে হবে ১৬৫।

‘গ’-এর জন্য প্রথমে ৩৪-এর সঙ্গে ৫০ যোগ করবে। এবার যোগফল ৮৪ থেকে ৩ বিয়োগ করলে পাবে ৮১।

‘ঘ’-এর জন্য ৪২৪-এর সঙ্গে ৩০ যোগ করে পাবে ৪৫৪। আর ২ বিয়োগ করলে হবে ৪৫২।

তুমি এ নিয়ম না জানলেও এই যোগগুলো করতে পারতে। তবে হয়তো এত দ্রুত সমাধান করতে পারতে না। সবাই যোগ করতে পারে। কিন্তু যে যত দ্রুত করতে পারে, সে তত স্মার্ট। সুতরাং স্মার্টভাবে অঙ্ক করতে চাইলে তোমাকে দ্রুত অঙ্ক করার কৌশল শিখতে হবে।

২৩৫১ + ৪৮৯ = কত? এই যোগটা তুমি কীভাবে করবে? খাতা-কলমের সাহায্য নেওয়া যাবে না কিন্তু! মাথার মধ্যেই এই যোগফল বের করা যায়। কীভাবে?

প্রথমে ২৩৫১-এর সঙ্গে ৪৮৯-এর পরিবর্তে যোগ করতে হবে ৫০০। তাহলে পাবে ২৮৫১। এবার এ থেকে ১১ বিয়োগ করো। তাহলে পেয়ে যাবে উত্তর: ২ হাজার ৮৪০ (২৮৫১ - ১১ = ২৮৪০)।

এ ধরনের বড় যোগ চাইলে তুমি খাতা-কলমে করতে পারো। সেভাবেই আমাদের স্কুলে সেখানো হয়। কিন্তু খাতা-কলম ছাড়া মাথার মধ্যে সমাধান করতে পারলে আরও ভালো হয় না! সময়ও লাগবে কম। উত্তর বলে দিতে পারবে চট করে।

নিজে চেষ্টা করো

ক. ৫৩১ + ২৯৭  =

খ. ৩৩৩ + ২৪৯ =

গ. ৪৫৩৭ + ৩৮৮ =

উত্তর

ক. ৮২৮ (২৯৭-এর পরিবর্তে ৩০০ যোগ করে ৩ বিয়োগ)

খ. ৫৮২ (২৪৯-এর পরিবর্তে প্রথমে ২০০ এবং পরে ৫০ যোগ করে ১ বিয়োগ করবে)

গ. ৪৯২৫ (৩৮৮-এর পরিবর্তে ৪০০ যোগ করে বিয়োগ করবে ১২)

আরও পড়ুন 

প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল

দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল

তৃতীয় পর্ব: বড় গুণের সহজ কৌশল

চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল

পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি

ষষ্ঠ পর্ব: যোগ করে গুণ করি

সপ্তম পর্ব: আরও যোগ আরও গুণ

অষ্টম পর্ব: যোগ ও বিয়োগ করে গুণ

নবম পর্ব: যোগ করে বড় গুণ

দশম পর্ব: কীভাবে বুঝবে তোমার গুণ সঠিক?

একাদশ পর্ব: বড় গুণ পরীক্ষার সহজ কৌশল

দ্বাদশ পর্ব: রেফারেন্সে নাম্বারের সাহায্যে গুণ

ত্রয়োদশ পর্ব: রেফারেন্সে নাম্বারের সাহায্যে আরও গুণ

চতুর্দশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট গুণ

পঞ্চদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট ও বড় গুণ

ষষ্ঠদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বার ৫০ ধরে গুণ

সপ্তদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বার ২০০ ধরে গুণ

অষ্টদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বার ৫০০ ধরে গুণ

উনবিংশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে দশমিকের গুণ

বিংশ পর্ব: দশমিক গুণের আরও কৌশল