রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট গুণ

২০-এর চেয়ে ছোট গুণ নিয়ে আমাদের আজকের কারবার। আসলে গুণের ক্ষেত্রে রেফারেন্স নাম্বারের ভূমিকা অনেক। রেফারেন্স নাম্বার কত ধরলে গুণ করতে সুবিধা হবে, সেটা তোমাকে জানতে হবে

এর আগের দুটি পর্বে রেফারেন্স নাম্বার ব্যবহার করে গুণ করার কৌশল শিখিয়েছিলাম। আজকের পর্বেও একই গুণ করব। তবে ২০-এর চেয়ে ছোট গুণ নিয়ে আমাদের আজকের কারবার। আসলে গুণের ক্ষেত্রে রেফারেন্স নাম্বারের ভূমিকা অনেক। রেফারেন্স নাম্বার কত ধরলে গুণ করতে সুবিধা হবে, সেটা তোমাকে জানতে হবে। এ বিষয়ে আগে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তোমার জানা না থাকলে আগের লেখাগুলো দেখে নিতে পারো। একদম নিচে সবগুলো পর্বের লিংক দেওয়া আছে।

২০-এর কম সংখ্যার জন্যও আমরা রেফারেন্স নাম্বার ২০ ধরব। তবে ১০-এর কাছাকাছি সংখ্যা হলে রেফারেন্স নাম্বার ধরতে হবে ১০। তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে যে রেফারেন্স নাম্বার কত ধরবে। যে দুটি সংখ্যা গুণ করবে, তার আশপাশের সংখ্যাই রেফারেন্স নাম্বার হিসেবে ধরা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। প্রথমে হিসেব করতে হবে সংখ্যা দুটি রেফারেন্স নাম্বার থেকে বড় নাকি ছোট। বড় হলে হিসেব করতে হবে, কত বড়? আর ছোট হলে কত ছোট, তা হিসেব করতে হবে। আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। রেফারেন্স নাম্বার থেকে বড় হলে সংখ্যা বা অঙ্কগুলো লিখতে হবে ওপরের দিকে। আর ছোট হলে নিচের দিকে।

চলো শুরুতে ১৮ ও ১৭-এর গুণটা করে দেখি। যেহেতু দুটি সংখ্যাই ২০-এর কাছাকাছি, তাই রেফারেন্স নাম্বার ধরব ২০।

আমাদের সংখ্যা দুটি রেফারেন্স নাম্বার থেকে ছোট।  তাই আমাদের করতে হবে বিয়োগ। ২০ থেকে ১৮ বিয়োগ করলে হয় ২, আর ১৭ বিয়োগ করলে ৩। সংখ্যা দুটি যথাক্রমে নিচের বৃত্ত দুটিতে বসিয়ে দিলাম।

এখন আমাদের বিয়োগ করার পালা। কোনাকুনি বিয়োগ। ১৮ থেকে ৩ বা ১৭ থেকে ২ বিয়োগ করলে উত্তর পাব ১৫। এই বিয়োগফল, অর্থাৎ ১৫-কে গুণ করতে হবে ২০ দিয়ে। ভয় নেই। এই গুণ করারও কৌশল আছে।

প্রথমে ১৫-কে গুণ করতে হবে ২ দিয়ে। নিশ্চয়ই হিসেব করে বের করেছ ৩০। এবার এই ৩০-এর সঙ্গে গুণ হবে ১০। মানে ৩০-এর ডান পাশে বসাতে হবে একটি শূন্য। অর্থাৎ, ৩০০।

এবার বৃত্তের সংখ্যা দুটি গুণ করতে হবে। বৃত্তের ভেতরে ছিল ২ ও ৩। গুণফল ৬। আগের ৩০০-এর সঙ্গে এই ৬ যোগ করতে হবে। তাহলে উত্তর পেয়ে যাব। অর্থাৎ, ১৭ ও ১৮ গুণ করলে উত্তর হবে ৩০৬।

এ গুণটা কিন্তু রেফারেন্স নাম্বার ১০ ধরেও করা যায়। চলো, সেটাও একটু দেখা যাক। এতে তুমি নিজের পছন্দমতো রেফারেন্স নাম্বার বাছাই করে গুণের সমাধান করতে পারবে। আগের গুণটাই করা যাক। অর্থাৎ, ১৮ ও ১৭ গুণ করব।

এবারের সংখ্যা দুটি রেফারেন্স নাম্বার থেকে বড়। তাই বৃত্ত বসছে ওপরে। আর রেফারেন্স নাম্বার ১০ থেকে ১৮ ও ১৭ যথাক্রমে ৮ ও ৭ বড়। বৃত্তে তাই লেখা হয়েছে। এরপর কোনাকুনি যোগ করতে হবে।

১৮ + ৭ = ২৫ বা ১৭ + ৮ = ২৫

এই ২৫-কে রেফারেন্স নাম্বার ১০ দিয়ে গুণ করতে হবে। ১০ দিয়ে গুণ করা খুবই সহজ। যে সংখ্যাকে ১০ দিয়ে গুণ করতে হবে, সে সংখ্যার ডানে শুধু একটি শূন্য বসালেই হবে। তাহলে ২৫-কে ১০ দিয়ে গুণ করলে হবে ২৫০।

বাকি রইল বৃত্তের অঙ্ক দুটি গুণ করা। বৃত্তের ভেতর ছিল ৮ ও ৭। গুণফল ৫৬। সুতরাং, ২৫০-এর সঙ্গে যোগ করতে হবে ৫৬। এই যোগটাও করা যায় কৌশলে। প্রথমে ২৫০-এর সঙ্গে যোগ করবে ৫০। তাহলে হবে ৩০০। এরপর বাকি ৬ এই ৩০০-এর সঙ্গে যোগ করলে হবে ৩০৬।

এ ধরনের গুণের জন্য রেফারেন্স নাম্বার নিজের পছন্দমতো বেছে নেওয়া যায়। থিয়ার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। আমার ভাইয়ের মেয়ে। ও প্রথমে ভয় পেত গুণ করতে। রেফারেন্স নাম্বারের কথা শুনে আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ওর সব ভয় দূর হয়ে গেছে। কারণ, ও নিয়মিত এ ধরনের গুণের চর্চা করে। যেকোনো সংখ্যা দিলেই কয়েক সেকেন্ড পরে নির্ভুল উত্তর বলে দিতে পারে। ওর মতো চর্চা করলে তোমরাও খাতা-কলম ছাড়াই মাথার ভেতরে গুণ করে উত্তর বলে দিতে পারবে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ম্যাথ স্পিড ফর কিডস