আজ বাসায় ফিরতেই থিয়া দৌড়ে পাশে এসে দাঁড়াল। মুখে হাসি নেই। বকবকও করছে না। বুঝলাম, ডাল মে কুচ কালা হে। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে মামনি? থিয়া জিজ্ঞেস করলো, ৪২-এর সঙ্গে ৮ গুণ করলে কত হবে? আমি ওকে প্রায় ৬ সেকেন্ড পরে জানালাম, ৩৩৬। চোখ বড় করে তাকাল আমার দিকে। ওর চোখের ভাষা বুঝে ফেললাম। ও জানতে চায়, কীভাবে করলাম এ গুণটা। ওকে জানালাম, এটা আরেকটা নতুন নিয়ম।
মুখ খুললো থিয়া। আমাকে শিখাওনি কেন? বললাম, ধীরে ধীরে তো তোমাকে শেখাচ্ছি। চিৎকার করে উঠলো। আগে কেন শিখালে না আমাকে? কেঁদে ফেললো থিয়া। বুঝলাম, হয়ত কেউ ওকে এ গুণটা জিজ্ঞেস করেছে। ও কোনো ভাবেই মিলাতে পারেনি। তাই এ অবস্থা।
যাহোক, থিয়াকে শিখিয়ে দিয়েছি নিয়মটা। তোমাদেরও শেখাব। সেজন্যই গত পর্বে ঘোষণা করেছিলাম, আজ শেখাব নতুন কিছু। এতদিন আমরা যে গুণগুলো করেছি, সেগুলো করেছি হয় দুটিই যোগ করে বা দুটোই বিয়োগ করে। কিন্তু এখন করবো যোগ ও বিয়োগ দুটোই ব্যবহার করে। অর্থাৎ, একই গুণে যোগও করব আবার বিয়োগও।
থিয়ার গুণটার কথাই ভাবো। ৮-এর সঙ্গে গুণ করতে হবে ৪২। রেফারেন্স ১০ ধরলে একটায় হয় -২ আর অন্যটায় +৩২। মানে ১০ থেকে ২ কম ৮ এবং ৪২ হলো ৩২ বেশি।
যেহেতু ৮ হলো ১০ থেকে দুই কম, তাই ২-এর বৃত্তটা নিচে। আবার ১০ থেকে ৪২ হলো ৩২ বেশি। তাই ৩২ বসেছে ওপরে। এবার কোনাকুনি যোগ করতে হবে। হয় ৪২ থেকে ২ বিয়োগ করতে হবে কিংবা ৮ -এর সঙ্গে ৩২ যোগ করতে হবে। কেন এমনটা হলো? ২ নিচে থাকায় বিয়োগ করতে হবে আর ৩২ ওপরে থাকায় করতে হবে যোগ। যাহোক, ৪২ থেকে ২ বিয়োগ করে পেলাম ৪০। এবার রেফারেন্স নাম্বার ১০ হওয়ায় ৪০-এর পাশে একটি শূন্য বসিয়ে পেলাম ৪০০।
এবার বৃত্তের সংখ্যা দুটি গুণ করতে হবে। ৩২ ও ২ গুণ করলে হবে ৬৪। তবে এখানে একটি কিন্তু আছে। ৩২ আছে ওপরে আর ২ নিচে। ২ নিচে থাকা মানে -২। তাহলে ৩২×(-২) = -৬৪। অর্থাৎ, ৪০০ থেকে বিয়োগ করতে হবে ৬৪।
এখন, ৪০০ থেকে ৬৪ বিয়োগ করার কৌশল কী? কয়েকভাবে করতে পার। প্রথম, খাতাকলমে ৪০০ থেকে ৬৪ বিয়োগ করে লিখতে পারো ৩৩৬। কিন্তু তাহলে তো আর কৌশল হলো না। তুমি প্রথমে ৪০০ থেকে ৬০ বিয়োগ করতে পারো। তাহলে ৩৪০। বাকি থাকলো আর ৪। এবার এই ৪ বিয়োগ করে দাও ৩৪০ থেকে। তাহলে, উত্তর হলো ৩৩৬। অথবা, তুমি প্রথমে ৪০০ থেকে ৭০ বিয়োগ করতে পারো। এরপর বিয়োগফল ৩৩০-এর সঙ্গে ৬ যোগ করলে হবে ৩৩৬।
আজকের গুণের কৌশলে বৃত্তের গুণের ব্যাপারটা তোমাদের কাছে একটু জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু এটারও একটা সহজ কৌশল আছে। তুমি যখনই দেখবে একটা বৃত্ত ওপরে আর একটা বৃত্ত নিচে তখনই ওই বৃত্তের গুণফল বিয়োগ করতে হবে। আগে যেখানে যোগ করতে এখন সেখানে করবে বিয়োগ।
চলো আরেকটা গুণ করি। ২২-এর সঙ্গে ৭ গুণ করতে হবে।
এখানেও রেফারেন্স নাম্বার ১০। থিয়াকে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল। রেফারেন্স নাম্বার কখন ১০ ধরবো আর কোথায় ১০০? এটা তুমি নিজেই ঠিক করতে পারো। ৩৫ ও ৩৮ গুণ করতে হলে রেফারেন্স নাম্বার ১০ ধরতে পারো। কারণ, এই সংখ্যাদুটি ১০-এর কাছাকাছি। মানে রেফারেন্স নাম্বার ১০ ধরলে বৃত্তে বসবে যথাক্রমে ২৫ ও ২৮। কিন্তু রেফারেন্স নাম্বার ১০০ ধরলে বৃত্তে বসাতে হবে ৬৫ ও ৬২। সুতরাং, ৬৫ ও ৬২ গুণ বা যোগ-বিয়োগ করার চেয়ে ২৫ ও ২৮ গুণ বা যোগ-বিয়োগ করা সহজ। এভাবে হিসেব করে তোমরাই নিজেরাই রেফারেন্স নাম্বার ঠিক করতে পারবে।
এবার চলো, গুণটা শেষ করি। ১০-এর থেকে ৭ বিয়োগ করলে হবে ৩। তাই ৩ হবে নিচে। আবার ১০-এর চেয়ে ২২ হলো ১২ বেশি। তাই ১২ হবে বৃত্তের ওপরে।
এবার ২২ থেকে ৩ বিয়োগ বা ১২-এর সঙ্গে ৭ যোগ করলে হবে ১৯। ২২ থেকে ৩ বিয়োগ করাই সহজ। সুতরাং, বিয়োগফল পেলাম ১৯। রেফারেন্স নাম্বার ১০ হওয়ার ১৯-এর পাশে ০ বসিয়ে পেলাম ১৯০। আর ১২ ও ৩ গুণ করলে হবে ৩৬। তাহলে ১৯০ থেকে ৩৬ বিয়োগ করতে হবে। কেন বিয়োগ করতে হবে? সহজ নিয়ম, বৃত্ত ওপরে ও নিচে থাকলেই করতে হবে বিয়োগ।
এখন, বিয়োগ কীভাবে করবে? প্রথমে ১৯০ থেকে ৩০ বিয়োগ করো। বিয়োগফল হলো ১৬০। এবার বিয়োগফল থেকে বাকি ৬ বিয়োগ করলে হলো ১৫৪।
এভাবে চর্চা করতে থাকো। তোমরাও সহজেই মনেমনে করতে পারবে গুণ। আগামী পর্বে শেখাব বড় গুণ। এবার তোমরা নিজেরা একটু নিচের গুণগুলো বাসায় সমাধান করো। থিয়া কিন্তু সবগুলো উত্তর করেছে নির্ভূল এবং প্রায় প্রতিটি প্রায় ২০ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর করেছে।
নিজে চর্চা করো
ক. ৯ × ১৫ =
খ. ৮ × ২৩ =
গ. ৭ × ৩২ =
ঘ. ১৩ × ৬ =
ঙ. ২১ × ৫ =
সমাধান
ক. ১৩৫
খ. ১৮৪
গ. ২২৪
ঘ. ৭৮
ঙ. ১০৫
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: স্পিড ম্যাথ
দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল
চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল