সমাধান: হরিণ পোষেন কোন দেশের মানুষ?

গতকাল বিজ্ঞানচিন্তা ডট কমে প্রকাশিত হয়েছিল একটি বুদ্ধির ব্যায়াম—হরিণ পোষেন কোন দেশের মানুষ। এটি আইনস্টাইনের ধাঁধার মতো একটি ধাঁধা। বলা হয়, আইনস্টাইনের ধাঁধা নাকি শতকরা ৯৮ শতাংশ মানুষই ভুল করেন। আজকে উত্তর দেখে মিলিয়ে নিন, আপনি বাকি ২ শতাংশের একজন কি না।

বলা ছিল, এ ধাঁধায় রয়েছে পরপর পাঁচটি বাড়ি। প্রতিটি বাড়ির রং আলাদা। প্রত্যেক বাড়ির মানুষগুলো ভিন্ন জাতির এবং তাঁরা সবাই আলাদা আলাদা পেশার মানুষ। তাঁদের পোষা প্রাণীগুলোও আলাদা। এ সম্পর্কিত ১৫টি তথ্য দেওয়া হয়েছিল আপনাকে সমস্যাটি সমাধানের জন্য। এই তথ্যগুলো পড়ে আপনাকে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বলা হয়। চলুন, তথ্যগুলো আবার দেখে নিই।

১. ইংরেজ ভদ্রলোক লাল বাড়িতে বাস করেন।

২. স্পেনের ভদ্রলোকের পোষা প্রাণী কুকুর।

৩. সবুজ বাড়ির ভদ্রলোকটি কফি খেতে পছন্দ করেন।

৪. ইউক্রেনের ভদ্রলোকের পছন্দ চা।

৫. সবুজ বাড়িটির ঠিক ডান পাশের বাড়িটি সাদা রঙের।

৬. কাঠমিস্ত্রির পোষা প্রাণী বিড়াল।

৭. শিক্ষক বাস করেন হলুদ বাড়িতে।

৮. ঠিক মাঝের বাড়ির মালিক দুধ খেতে পছন্দ করেন।

৯. প্রথম বাড়িতে বাস করেন নরওয়েজিয়ান ভদ্রলোক।

১০. যে বাড়ির মালিক শেয়াল পোষেন, তাঁর পাশের বাড়িতে থাকেন একজন মালি।

১১. যে বাড়ির মালিক ঘোড়া পোষেন, তাঁর আগের বাসায় থাকেন শিক্ষক।

১২. ডাক্তারের পছন্দ জুস।

১৩. রুটিওয়ালা জাপানি।   

১৪. নীল রঙের বাড়ির আগের বাড়িতে বাস করেন নরওয়েজিয়ান ভদ্রলোক।

১৫. যাঁর পানি পছন্দ, তাঁর পাশের বাড়ির মালিক একজন মালি।

প্রশ্ন হলো, কোন বাড়ির মালিক হরিণ পোষেন? 

এই ছকটি পূরণ করেই বের করা যাবে সমাধান!

এবারে চলুন, ওপরের তথ্যগুলো যাচাই করে উত্তর খুঁজি। প্রথমে দেখতে হবে, সরাসরি কোনো উত্তর পাওয়া যায় কি না। মানে ধরুন, বলা আছে ডাক্তারের পছন্দ জুস। তাহলে ডাক্তারের পছন্দের পানীয় হিসেবে জুসের নাম লিখব। এভাবে সবগুলো তথ্য দিয়ে ধাঁধার সঙ্গে দেওয়া ঘরটি পূরণ করলেই আমরা সমাধানে পৌঁছে যাব।

প্রথমে ৯ নং তথ্য দেখুন।প্রথম বাড়িতে বাস করেন নরওয়েজিয়ান ভদ্রলোক।তাহলে প্রথম বাড়ির জায়গায় লিখতে পারি নরওয়েজিয়ান।এবার ৮ নং তথ্য দেখুন।একদম মাঝের বাড়ির ভদ্রলোকের প্রিয় খাবার দুধ।এবার ১৪ নং তথ্য দেখুন।নীল রঙের বাড়ির আগের বাড়িতে যেহেতু নরওয়েজিয়ান ভদ্রলোকটি বাস করেন, তার মানে দ্বিতীয় বাড়ির রং নীল।ছকে এগুলো বসিয়ে ফেলি।

এবার ৫ নং সূত্র দেখুন। সবুজ বাড়ির ডানপাশে অবস্থিত সাদা বাড়ি। তাহলে সবুজ বাড়িটি নিশ্চয়ই প্রথম ও পঞ্চমটি হতে পারে না। কারণ ইতিমধ্যে জেনেছি, প্রথম বাড়ির পরেরটি নীল। আর পঞ্চম বাড়ির পরে তো আর বাড়ি নেই। তাহলে বাকি থাকল তৃতীয় ও চতুর্থ বাড়ি। আর ৮ নং থেকে জানলাম, তৃতীয় বাড়ির মালিকের পছন্দ দুধ। কিন্তু ৩ নং তথ্যে দেওয়া আছে, সবুজ বাড়ির মালিকের পছন্দের পানীয় কফি। সুতরাং, তৃতীয় বাড়িটি সবুজ হতে পারে না। নিশ্চয়ই চতুর্থ বাড়িটি সবুজ রঙের এবং পঞ্চম বাড়ির রং সাদা। আরও খেয়াল করুন, ইংরেজ থাকেন লাল বাড়িতে। এদিকে আমরা ১ ও ৩ নং বাড়ির রং জানি না। কিন্তু ১ নং বাড়িতে যেহেতু নরওজিয়ান থাকেন, তাহলে ৩ নং বাড়িটি ইংরেজ ভদ্রলোকের এবং লাল রঙের। বাকি থাকে শুধু প্রথম বাড়ির রং।  ৭ নং তথ্য দেখুন। শিক্ষক বাস করেন হলুদ বাড়িতে। আমরা বাকি ৪টি বাড়ির রং এখন জানি। তাই প্রথম বাড়িটির রং-ই নিশ্চয়ই হলুদ হবে। এ থেকে বুঝতে পারলাম, নরওজিয়ান ভদ্রলোক একজন শিক্ষক। চলুন, এই তথ্যগুলো ছকে লিখে রাখি।

এবারে ১১ নং তথ্যানুসারে বলতে পারি, দ্বিতীয় বাড়ির মালিক ঘোড়া পোষেন। ১২ নং তথ্য মতে, ডাক্তার জুস পছন্দ করেন। আবার ৪ নং তথ্য মতে, ইউক্রেনের ভদ্রলোক চা পছন্দ করেন। যেহেতু প্রথম বাড়ির মালিক একজন নরওয়েজিয়ান এবং পেশায় শিক্ষক, তাই তাঁর পছন্দের পানীয় জুস ও চা হতে পারে না। সুতরাং, তাঁর পছন্দের পানীয় পানি। এটিই শুধু বাকি আছে। এগুলো ছকে বসিয়ে নিই। 

১৫ নং তথ্য অনুসারে, দ্বিতীয় বাড়ির মালিক একজন মালি এবং ১০ নং তথ্যানুসারে প্রথম বাড়ির মালিক শেয়াল পোষেন। পানীয়র ক্ষেত্রে আমাদের আর দুটি ঘর ফাঁকা আছ। চা এবং জুস। ১২ নং তথ্যে বলা আছে, ডাক্তারের পছন্দ জুস। যেহেতু দ্বিতীয় বাড়ির মালিক একজন মালি, তাহলে তাঁর নিশ্চয়ই চা পছন্দ। আর ৪ নং তথ্য মতে তিনি ইউক্রেনের মানুষ। তাহলে পঞ্চম বাড়ির মানুষের নিশ্চয়ই জুস পছন্দ। এই তথ্যের ওপর নির্ভর করে বলা যায়, পঞ্চম বাড়ির মালিক একজন ডাক্তার (১২ নং তথ্যানুসারে)।

১৩ নং তথ্যানুসারে, রুটিওয়ালা জাপানি। আমাদের আর দুটি পেশা বাকি আছে। রুটিওয়ালা ও কাঠমিস্ত্রি। মানে তৃতীয় ও চতুর্থ বাড়ি ফাঁকা। তৃতীয় বাড়িতে যেহেতু ইংরেজ বাস করেন, তাহলে নিশ্চয়ই চতুর্থ বাড়ির মালিক জাপানি হবেন। বাকি রইল কাঠমিস্ত্রির পেশা। সেটা অবশ্যই তৃতীয় বাড়ির মালিকের হতে হবে।

জাতীয়তার ক্ষেত্রেও শুধু পঞ্চম বাড়িটি ফাঁকা।সেটা নিশ্চয়ই স্পেন হবে।কারণ, ২ নং তথ্যে স্পেনের একজনের কথা আছে। আবার এই ২ নং তথ্যানুসারে, তাঁর পোষা প্রাণী কুকুরও পেয়ে গেলাম।ওদিকে ৬ নং তথ্যানুসারে, কাঠমিস্ত্রী পোষেন বিড়াল।এগুলো বসিয়ে ফেলি।

তাহলে, আর বাকি রইল একটি ঘর। চতুর্থ বাড়ির পোষা প্রাণী। নিশ্চয়ই সে ফাঁকা ঘরে বসবে হরিণ। অর্থাৎ, রুটিওয়ালা পোষেন হরিণ। অথবা অন্যভাবেও বলা যায়, জাপানি মানুষটি হরিণ পোষেন।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ম্যাথ ইজ ফান ডট কম অবলম্বনে