অঙ্কের খেলা – পর্ব ৭

মাথা খাটাতে কে না পছন্দ করে! আর গল্পোচ্ছলে মজার বুদ্ধির ব্যায়াম হলে তো কথাই নেই। এরকমই একটি বই ‘অঙ্কের খেলা’। এটি রুশ গণিতবিদ ইয়াকভ পেরেলমানের নামকরা বই ‘ফিগারস ফর ফান: স্টোরিজ, পাজলস অ্যান্ড কোনান্ড্রামস’-এর বাংলা অনুবাদ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বিমলেন্দু সেনগুপ্তের অনুবাদে। সম্পাদক ছিলেন নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা।

অঙ্কের মজার সব হেঁয়ালি, বুদ্ধির খেলাসহ মাথা খাটানোর মতো দারুণ সব ধাঁধা নিয়ে বইটি। মগজে শান দিতে যা অতুলনীয়। এ বই পড়ে দেশের অনেকে এককালে গণিতে আগ্রহী হয়েছে, সমস্যা সমাধান শিখেছে, মুগ্ধ হয়েছে, প্রেমে পড়েছে গণিতের। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

খেলা ও অঙ্ক

গত পর্বের পরে

১৬. মজার খেলা ডোমিনো

তোমার বন্ধু ডোমিনোর একটা ঘুঁটি নিয়ে নিল, বাকি থাকল ২৭টা। এই ২৭টা দিয়েই সে তোমাকে একটা সারি সাজাতে বলল। ও তো বেশ জোর দিয়েই বলে গেল, যে ঘাটিটাই নেওয়া যাক না কেন সারি ঠিকই সাজানো যাবে। তারপর সে ঘর ছেড়ে চলে গেল।

তুমি ঘুঁটিগুলোকে সারিতে সাজিয়ে দেখলে যে, তোমার বন্ধু ঠিকই বলেছে। আরও অবাক কাণ্ড, তোমার বন্ধু সারিটা না দেখেই ওর দুই মাথার ঘুঁটিতে কটা করে ফোঁটা আছে বলে দিল।

কিভাবে জানল বলো তো? আর ২৭ ঘুঁটিতেও যে সারি তৈরি করা চলবে, তাতেই বা সে এত নিঃসন্দেহ হল কি করে?

১৭. একটি কাঠামো

নিচের ছবিতে ডোমিনো ঘুঁটি দিয়ে তৈরি একটা চৌকো কাঠামো আছে। খেলার নিয়মকানুন সবই মানা হয়েছে এতে। কাঠামোর চারটে বাহু লম্বায় সমান; ফোঁটাগুলোর মোট সংখ্যা কিন্তু সমান নয়। বাঁ দিকের বাহুতে আর মাথার দিকে মোট ৪৪টা করে ফোঁটা আছে। বাকি দুটোতে আছে ৫৯ আর ৩২টা।

এমন কোনো সমান বাহুওয়ালা চৌকো কাঠামো তৈরি করতে পার, যাতে প্রতি বাহুতেই ৪৪টা করে ফোঁটা থাকবে?

১৮. সাতটা বর্গক্ষেত্র

৪টা ডোমিনো ঘুঁটি দিয়ে এমন একটা বর্গ তৈরি করা যায়, যাতে চারপাশেই ফোঁটাগুলোর সংখ্যা সমান হয়। (নিচের ছবিতে এমনই একটা বর্গ দেখানো হয়েছে, তার প্রতি বাহুতে ১১ ফোঁটা আছে।)

২৮টা ডোমিনো ঘুঁটির সেট থেকে এইরকম সাতটা বর্গ তৈরি করতে পার? সাতটা বর্গের সব বাহুগুলোতেই যে সমান সংখ্যার ফোঁটা রাখতে হবে তার কোনো মানে নেই। প্রত্যেক বর্গের নিজেদের বাহুর ভেতর সমান ফোঁটা থাকলেই চলবে।

সমাধান

১৬. এ ধাঁধার সমাধানও অনেকটা আগের ধাঁধাটারই মতো। আমরা জানি যে ডোমিনোর ২৮টা ঘুঁটিকে সবসময়ই মালার আকারে সাজানো যায়। তাহলে, যদি একটা ঘুঁটি সরিয়ে নিই আমরা, তাহলে

(ক) বাকি ২৭টা ঘুঁটি দিয়ে সবসময়ই একটা টানা সারি তৈরি করা যাবে, যার মাথাদুটো খোলা থাকবে;

(খ) এই সারির খোলা মাথাদুটোয় ফোঁটার সংখ্যা হবে, যে ঘুঁটিটাকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে, তারই দুটো অংশে যে সংখ্যা দুটো আছে তার সমান।

তাই, একটা ডোমিনো ঘুঁটি লুকিয়ে রেখে, তুমি সবসময়ই আগে থেকে বলে দিতে পারবে যে সারির প্রান্তভাগে মোট কটা করে ফোঁটা আছে।

১৭. অজানা বর্গক্ষেত্রের চারটে বাহুতে মোট ফোঁটার সংখ্যা নিশ্চয়ই ৪৪ × ৪ = ১৭৬-এর সমান হবে, অর্থাৎ সমস্ত ডোমিনো ঘুঁটিতে মোট যত ফোঁটা আছে (১৬৮) তার চেয়ে ৮ বেশি হবে। এর কারণ হলো, বর্গক্ষেত্রের মাথার কোণগুলোতে যে সংখ্যা আছে তা দুই বার করে গোনা হয়েছে। এ থেকেই ঠিক করা যায় যে মাথার কোণগুলোতে মোট সংখ্যা থাকবে ৮, আর তা আমাদের দরকারী বিন্যাসটা পেতে সাহায্য করবে। যদিও ঠিকঠিক বিন্যাসটা বের করা বেশ বিরক্তিকরই থেকে যায়। সমাধানটা নিচের ছবিতে দেখান হয়েছে।

১৮. এই ধাঁধাটার অনেকগুলো সমাধানের ভেতর দুটো দেওয়া হল এখানে। প্রথমত নিচের ছবিতে আমরা পাচ্ছি:

১টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ৩

১টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ৬

১টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ৮

২টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ৯

১টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ১০

১টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ১৬

দ্বিতীয় ছবিতে আমরা পাচ্ছি:

২টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ৪

১টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ৮

২টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ১০

২টা বর্গক্ষেত্রে মোট সংখ্যা ১২