গণিতের টেলিপ্যাথি

অন্য মানুষের মন পড়তে পারা অনেক মজার, তাই না? একজন মানুষ আপনার সামনে বসে কী ভাবছেন, তা বুঝে নিজেই উত্তর দেওয়ার মধ্যে আলাদা একটা মজা আছে। মাঝেমধ্যে আমরা নিজের অজান্তেই অন্যের মনের কথা বুঝতে পারি। তখন তাঁকে সেটা জানিয়ে নিজেরা আনন্দ পাই। গণিতের সাহায্যে ঠিক এই কাজটাই করা যায়, যতবার ইচ্ছা ততবার। চলুন, গণিতের টেলিপ্যাথির ক্ষমতা একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক। এ জন্য আপনার দুটি জিনিস লাগবে। একটা কলম ও একটা কাগজ। চলুন, ধাপে ধাপে দেখা যাক। 

ধাপ ১

আপনার কোনো বন্ধু কিংবা একসঙ্গে অনেক মানুষের সঙ্গে এই টেলিপ্যাথির খেলা খেলতে পারেন। ধরে নিচ্ছি, আপনার বন্ধুর সঙ্গেই এই মজার খেলাটা খেলবেন। সে ক্ষেত্রে বন্ধুকে বলুন যেকোনো ৩ বা ৪ অঙ্কের সংখ্যা লিখতে। তবে একই অঙ্ক একাধিকবার লেখা যাবে না। যেমন, আপনার বন্ধুটি ২৬৮৪ লিখতে পারেন। কিন্তু ২২৬৮ লেখা যাবে না, কারণ এখানে ২ অঙ্কটা দুই বার আছে। 

ধাপ ২

এখন বন্ধু যে সংখ্যাটা লিখেছে, সেটা ০ ছাড়া যেকোনো অঙ্ক দিয়ে গুণ করতে হবে। ধরে নিচ্ছি, ৬ দিয়ে গুণ করেছেন আপনার বন্ধু। তাহলে হবে ২৬৮৪ × ৬ = ১৬,১০৪।

আরও পড়ুন

ধাপ ৩

একটু আগে যে গুণফলটা পাওয়া গেছে, সেটাকে আবারও কোনো একটি অঙ্ক দিয়ে গুণ করতে বলুন। আপনার বন্ধু হয়তো এবার ৩ দিয়ে গুণ করতে পারেন। তাহলে হবে ১৬,১০৪ × ৩ = ৪৮,৩১২। 

ধাপ ৪

এবার আপনার বন্ধুকে বলুন গুণফলকে যেকোনোভাবে ঘুরিয়ে লিখতে। মানে ৪৮৩১২-কে তিনি ঘুরিয়ে লিখতে পারেন ৮১৩২৪ বা ৪৮১২৩ বা ৩২১৮৪ বা ৩১২৪৮ ইত্যাদি। ধরে নিচ্ছি, তিনি ৮৩১২৪ লিখেছেন।

 

ধাপ ৫

এখন তিনি ঘুরিয়ে যে সংখ্যাটা লিখেছেন, তা থেকে বিয়োগ করতে হবে তৃতীয় ধাপের গুণফলটা। তৃতীয় ধাপে গুণফল ছিল ৪৮৩১২। সুতরাং, ৮৩১২৪ - ৪৮৩১২ = ৩৪৮১২।

ধাপ ৬

এখন আপনার বন্ধুর কাছে যে উত্তরটা আছে, সেখান থেকে ০ বাদ দিয়ে যেকোনো একটা অঙ্ককে গোল বৃত্ত দিয়ে আটকাতে বলুন। যেহেতু তার কাছে ৩৪৮১২ সংখ্যাটা আছে, ধরে নিচ্ছি এখান থেকে ‘৪’ অঙ্কটা তিনি বৃত্তের মধ্যে আটকে রাখলেন। 

ধাপ ৭

এখন আপনি বন্ধুকে বলুন, ‘আমি জানি না তুমি প্রথমে কোন সংখ্যাটা ধরেছ এবং কত গুণ করেছ। কোন অঙ্কের ওপর বৃত্ত বসিয়েছ, তাও আমি জানি না। তাই তুমি যে অঙ্কটির ওপর বৃত্ত বসিয়েছ, সেটি বাদ দিয়ে বাকি অঙ্কগুলো ধীরে ধীরে একটা একটা করে বলো।’

ধাপ ৮

এবার আপনার বন্ধু হয়তো আপনাকে অঙ্কগুলো ধীরে ধীরে বলবেন, ৩…১…৮…২। 

আরও পড়ুন

উত্তরটি শোনার পর আপনি এমন একটা ভাব করবেন, যেন অনেক হিসাব নিকাশ করে কিছু একটা ভাবছেন। মাথার মধ্যে অনেক কিছু সমাধান করছেন। তারপর বন্ধুকে জানাবেন, বৃত্তের মধ্যে যে অঙ্কটা ছিল, ওটা ‘৪’। সঙ্গে সঙ্গে আপনার বন্ধু অবাক হয়ে যাবে। ভাবতে শুরু করবে, আপনি সত্যিই অন্যের মনের কথা বুঝতে পারেন! 

কিন্তু কীভাবে বুঝবেন, উত্তর ৪? তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, উত্তর খুঁজে বের করবেন কীভাবে? সেটাই এখানে বলার চেষ্টা করব। তবে বলে রাখি, কোনো জাদুকর তার সিক্রেট বলতে চায় না। আমাদেরও বলেনি। তাই আমরা নিজেরাই খানিকটা বুদ্ধি খাটিয়ে সমাধানটা বের করার চেষ্টা করব। 

প্রথমে, আপনার বন্ধুর বলা শেষ ধাপের অঙ্কগুলো ভালো করে শুনুন। তারপর সেগুলো যোগ করতে থাকুন। যেমন আপনার বন্ধু বলেছে, ৩…১…৮…২। এই অঙ্কগুলো যোগ করলে হবে ৩ + ১ + ৮ + ২ = ১৪। যদি যোগফল ৯-এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ওই সংখ্যাটির অঙ্কগুলো আবার যোগ করতে হবে। যেমন এখানে হয়েছে ১৪, তাই ১ + ৪ = ৫ পাওয়া যাবে।

যে অঙ্কটি পাওয়া যাবে, ৯ থেকে শুধু সে অঙ্কটি বিয়োগ করলেই বৃত্তের ভেতরে থাকা অঙ্কটি বলে দিতে পারবেন। এখানে যেমন ৫ পেয়েছি। তাই বৃত্তের ভেতরে থাকা অঙ্কটি অনুমান করতে পারি, ৯ - ৫ = ৪। 

হলো না টেলিপ্যাথি?

সূত্র: হাউ টু বিকাম আ ম্যাথম্যাজিশিয়ান 

আরও পড়ুন