মনে মনে সংখ্যা ধরুন, বলে দেব গণিতের জাদুতে

আপনি একটি সংখ্যা কল্পনা করবেন। মনের ভুলেও আমাকে জানাবেন না। তবে না জানালেও সমস্যা নেই। আমি ঠিকই বুঝে নেব, আপনি কোন সংখ্যাটি কল্পনা করেছিলেন। এজন্য আপনাকে সহজ কিছু যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করতে হবে।

সংখ্যার খেলা মানে সংখ্যা নিয়ে মজা করা। গণিতের কাঠখোট্টা ব্যাপার নেই এতে। শুধু যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করেই এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। এ কারণে শিশু-কিশোর থেকে বয়স্কদের কাছেও এ ধরনের সংখ্যার খেলা বেশ জনপ্রিয়। 

আজকের জাদুর গণিতটি বেশ মজার। আপনি একটি সংখ্যা কল্পনা করবেন। মনের ভুলেও আমাকে জানাবেন না। তবে না জানালেও সমস্যা নেই। আমি ঠিকই বুঝে নেব, আপনি কোন সংখ্যাটি কল্পনা করেছিলেন। এজন্য আপনাকে সহজ কিছু যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করতে হবে। ব্যস, তারপর আমি আপনাকে উত্তর বলে দেব। শেষে প্রমাণ করে দেখাব, কীভাবে আপনার মনের কথা বুঝলাম। চলুন তবে শুরু করা যাক। 

আরও পড়ুন

যা যা করতে হবে

  • আপনার পছন্দমতো একটি সংখ্যা কল্পনা করুন

  • যে সংখ্যাটি কল্পনা করেছেন, তার সঙ্গে যোগ করুন ৩

  • যোগফলকে দ্বিগুণ করে নিন

  • এবার বিয়োগ করুন ৪

  • বিয়োগফলকে অর্ধেক করে ফেলুন, মানে ভাগ দিন ২ দিয়ে

  • এবার শুরুতে আপনি যে সংখ্যাটি কল্পনা করেছিলেন, তা বিয়োগ করুন। 

ব্যস। আপনার কাজ শেষ। এখন আমি বলে দিতে পারি আপনার উত্তর কত। উত্তর আসলে ১। না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। গণিতের খেলা মাত্র। কীভাবে আপনার উত্তর জানলাম, তা জানার আগে চলুন দেখা যাক আসলেই উত্তর ১ হয় কি না। ওপরের তথ্য অনুযায়ী শুরু করা যাক।   

  • একটা সংখ্যা কল্পনা করলাম—১০ 

  • এর সঙ্গে ৩ যোগ করলে হবে ১৩

  • যোগফল ১৩-কে দ্বিগুণ করলে হবে ২৬ 

  • এবার ২৬ থেকে ৪ বিয়োগ করলে হবে ২২

  • ২২-কে অর্ধেক করি বা ২ দিয়ে ভাগ করি, উত্তর হবে ১১

  • এখন, আমি যেহেতু ১০ কল্পনা করেছিলাম তাই ১১ থেকে ১০ বিয়োগ করলে বাকি থাকে ১। 

আরও পড়ুন

সুতরাং, উত্তর যে ১, তা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো দ্বিধা নেই। তবে আপনি যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে হয়তো ইতিমধ্যেই ধরে ফেলেছেন, উত্তর সবসময় ১-ই হবে। 

এখন চলুন জানা যাক, কেন উত্তর সবসময় ১ হয়। ধাপে ধাপে এগোনো যাক। 

  • প্রথমে আমি একটি সংখ্যা কল্পনা করতে বলেছি। আমি কিন্তু জানি না আপনি কোন সংখ্যাটি ধরেছেন। এ বিষয়টা সহজে বোঝার জন্য একটি ব্যাগ কল্পনা করতে পারেন। ধরে নিই, আপনার কাছে একটি ব্যাগ আছে। আর ওই ব্যাগে আপনাকে কয়েকটি মার্বেল রাখতে বললাম। আপনি মার্বেল রাখলেন। কিন্তু কয়টি রাখলেন, তা আমি জানি না। কারণ ব্যাগটি আপনি বন্ধ করে টাইট করে বেঁধে রেখেছেন। ব্যাগের ভেতরটা আমি দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি ঠিকই অনুমান করে বলে দেব, আপনি ব্যাগে কয়টা মার্বেল রেখেছিলেন আমাকে না জানিয়ে।

  • এবার আমি আপনাকে ৩টি মার্বেল দিলাম। অর্থাৎ, আমি বুঝতে পারছি আপনার কাছে অন্তত ৩টি মার্বেল আছে।

  • এরপর আপনি মার্বেল দ্বিগুণ করলেন। শুধু মার্বেল দ্বিগুণ করলেই হবে না। ব্যাগও হতে হবে ২টি। অর্থাৎ, আপনার কাছে এখন দুটি ব্যাগ আছে এবং ব্যাগ দুটিতে অন্তত ৩টি করে মার্বেল আছে। 

  • এবার আপনাকে বললাম ৪ বিয়োগ করতে। সুতরাং, আমি আপনার ব্যাগের যতগুলো মার্বেল সম্পর্কে ইতিমধ্যে জানি, সেখান থেকে ৪টি মার্বেল বাদ দিলাম। 

  • এরপর আপনাকে যখন আবার অর্ধেক, মানে ২ দিয়ে ভাগ করতে বলব, তখন আপনার কাছে থাকবে নিচের চিত্রের মতো শুধু একটি মার্বেল ও একটি ব্যাগ। 

  • এবার সর্বশেষ নিজের কল্পনা করা সংখ্যাটি বাদ দিতে হবে। মানে আপনার ব্যাগে যতটি মার্বেল ছিল, সবগুলো মার্বেলসহ ব্যাগটাকে বাদ দিতে হবে। তাহলে পড়ে থাকবে শুধু একটি মার্বেল। 

হয়তো আপনি চালাকিটা ইতিমধ্যেই ধরে ফেলেছেন। ধরতে পারলে আপনাকে স্বাগতম। না পারলেও সমস্যা নেই। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। আসলে আপনি আমাকে না দেখিয়ে ব্যাগে কতটি মার্বেল রাখলেন, তা আমার কখনোই জানার প্রয়োজন নেই। কারণ, এক সময় আপনি নিজেই নিজের কল্পিত সংখ্যাটি বিয়োগ করে দেবেন। আমি আপনাকে এতক্ষণ যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করে এমন জায়গায় নিয়ে এসেছি যে উত্তর সবসময় ১ হতে বাধ্য। চালাকিটা হলো, আমি আপনাকে যতগুলো মার্বেল দেব, তার থেকে একটি কম ফিরিয়ে নেব। যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করতে বলে বাকিগুলো বাদ দিতে বাধ্য করব। ফলে সব সময় উত্তর হবে ১। 

আশা করি এ কৌশল বুঝতে কারো সমস্যা হবে না। আনন্দ নিয়ে গণিত শিখুন। এতে গণিতভীতি দূর হবে। আগামী কোনো পর্বে আবার এরকম কোনো কৌশল নিয়ে হাজির হব। ততদিন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা 

সূত্র: এলিমেন্টারিম্যাথ অবলম্বনে