রেফারেন্স নাম্বার ৫০ ধরে গুণ

১০ ও ২০ রেফারেন্স নাম্বার ধরে আগে আমরা গুণ করেছি। কখন রেফারেন্স নাম্বার কত ধরতে হবে, কীভাবে ধরতে হবে সে সব নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। তোমাদের জানা না থাকলে আগের পর্বগুলো পড়ে দেখতে পারো। এখন আমরা চেষ্টা করবো, কীভাবে গুণ আরও সহজে করা যায়। আসলে রেফারেন্স নাম্বার ১০ ধরেই সব গুণ করা যায়। সেক্ষেত্রে মাথা খাটাতে হয় বেশি। সময়ও লাগে অনেক। বড় বড় যোগ, বিয়োগ ও গুণ করতে হয়। যে দুটি সংখ্যার গুণ করবো, তার আশেপাশে রেফারেন্স নাম্বার ধরলে গুণ করতে সহজ হয়। সময় লাগে কম। এতদিন আমরা মোটামুটি ৩০-এর মধ্যের সংখ্যাগুলো গুণ করেছি। কিন্তু যদি আরও বড় সংখ্যার গুণ করতে হয়? যেমন, ৪৫ ও ৪৭ গুণ করতে হলে কীভাবে করবো?

প্রথমে একটু সম্ভাবনার কথা বলি। যেমন, রেফারেন্স নাম্বার ১০ ধরে করলে, বৃত্তের মধ্যে ৩৫ ও ৩৭ নিয়ে কাজ করতে হবে। মানে এক সময় অবশ্যই ৩৫ ও ৩৭ গুণ করতে হবে। কারণ, রেফারেন্স নাম্বার ১০ থেকে সংখ্যা দুটি যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৭ বেশি। আবার রেফারেন্স নাম্বার ২০ ধরে গুণটি করতে চাইলে বৃত্তের মধ্যে ২৫ ও ২৭ নিয়ে গুণ করতে হবে। এটাও মোটামুটি বড় গুণ। কিন্তু রেফারেন্স নাম্বার যদি ৫০ ধরি, তাহলে আমাদের বৃত্তের মধ্যে ৩ ও ৫ নিয়ে কাজ করলেই হবে।

আবার যে কোনো সংখ্যাকে ৫০ দিয়ে গুণ করাও সহজ। একটু কৌশলে গুণটি করতে হবে। যখন কোনো সংখ্যাকে ৫০ দিয়ে গুণ করতে বলবে, তখন আসলে আমরা গুণ করবো ১০০ দিয়ে। আর ১০০ দিয়ে গুণ করা তো খুবই সহজ। যে সংখ্যাকে ১০০ দিয়ে গুণ করতে হবে তার সামনে শুধু দুটি শূন্য বসিয়ে দিলেই ১০০ দিয়ে গুণ হয়ে যাবে। এরপর গুণফলকে ২ দিয়ে ভাগ করলেই হয়ে যাবে ৫০ দিয়ে গুণ। কারণ ১০০-এর অর্ধেক ৫০। বিষয়টি কঠিন লাগলেও ভয় পেয়ো না কিন্তু। একটু পরে যখন উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেব, তখন এই গুণ পানির মত সহজ মনে হবে।

এবার চলো রেফারেন্স নাম্বার ৫০ ধরে একটি গুণ করে দেখা যাক। প্রথমে ৪৫ ও ৪৭ গুণ করি। নিচের চিত্রটি দেখ। আরও ভাল বুঝতে পারবে।

খেয়াল করো, সংখ্যা দুটি রেফারেন্স নাম্বার ৫০ থেকে যথাক্রমে ৩ ও ৫ কম। তাই নিচের দুটি বৃত্তে বসাবো ৩ ও ৫। এবার আগের নিয়মানুসারে কোনাকুনি বিয়োগ করতে হবে। ৪৭ থেকে ৫ অথবা ৪৫ থেকে ৩ বিয়োগ করলে পাবো ৪২। আমরা সব সময় ছোট বা সহজটি বিয়োগ করবো। যেমন ৪৫ – ৩ = ৪২।

এই ৪২-কে গুণ করবো রেফারেন্স নাম্বার ৫০ দিয়ে। ৫০ দিয়ে গুণ করার সহজ কৌশল হলো আগে ১০০ দিয়ে গুণ করতে হবে। তাহলে ৪২ × ১০০ = ৪২০০। যে সংখ্যাকে ১০০ দিয়ে গুণ করতে হবে। মানে পাশে দুটি শূন্য বসিয়ে দিলেই ১০০ দিয়ে গুণ করা হয়ে যাবে। এবার গুণফলকে ২ দিয়ে ভাগ করতে হবে। মানে অর্ধেক করলেই ৫০ দিয়ে গুণ হবে। এখানেও একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারো। তোমরা ৪২০০-কে অর্ধেক করার চেয়ে শুধু ৪২-কে অর্ধেক করবে। এতে সংখ্যা ছোট মনে হবে। ভাগ করতে ভয় লাগবে না। তাহলে ৪২-এর অর্ধেক ২১। এর সঙ্গে বসিয়ে দাও ওই দুটি শূন্য। অর্থাৎ, ৪২০০-এর অর্ধেক হলো ২১০০।

এই কাজটি আরও সহজে করতে পারো। এত গুণ ভাগ না করে সরাসরি বিয়োগ করার পরে যে সংখ্যাটি পাবে তার অর্ধেক করবে। এর সঙ্গে বসিয়ে দেবে দুটি শূন্য। তাতেই হয়ে যাবে ৫০ দিয়ে গুণ। যেমন, এখানে আমরা বিয়োগ করার পরে পেয়েছি ৪২। তাহলে এর অর্ধেক ২১। আর ২১-এর সঙ্গে বসিয়ে দেবে দুটি শূন্য। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু ৫০ দিয়ে গুণ করার সময়ই খাটবে এ নিয়ম।

এরপর বাকি কাজ হলো বৃত্তের ভেতরের সংখ্যা দুটি গুণ করা। বৃত্তের ভেতরে ছিল ৩ ও ৫। গুণ করলে পাবো ১৫। ২১০০-এর সঙ্গে এই ১৫ যোগ করলে আমাদের উত্তর পেয়ে যাবো। অর্থাৎ, ২১০০ + ১৫ = ২১১৫। নিচের চিত্রটি দেখ। আরও সহজ লাগবে।

এখন কি সহজ মনে হচ্ছে না? আসলে মনে মনে গুণ করা কঠিন কিছু নয়। শুধু কয়েকদিন চর্চা করলে খুব সহজেই খাতা কলম ছাড়াই গুণ করা যায়। এতক্ষণ যে গুণ দেখলে, সেটা ৫০-এর চেয়ে ছোট সংখ্যার জন্য। কিন্তু সংখ্যা যদি ৫০-এর চেয়ে বড় হয়? তাতেও চিন্তার কিছু নেই। শুধু বৃত্ত দুটি হবে ওপরে। আর ওপরে বৃত্ত হওয়ার মানেই বিয়োগের পরিবর্তে যোগ করতে হবে। আগামী পর্বে দেখাবো সেই গুণ।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পিড ম্যাথ

আগের সব পর্বের লিংক

প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল

দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল

তৃতীয় পর্ব: বড় গুণের সহজ কৌশল

চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল

পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি

ষষ্ঠ পর্ব: যোগ করে গুণ করি

সপ্তম পর্ব: আরও যোগ আরও গুণ

অষ্টম পর্ব: যোগ ও বিয়োগ করে গুণ

নবম পর্ব: যোগ করে বড় গুণ

দশম পর্ব: কীভাবে বুঝবে তোমার গুণ সঠিক?

একাদশ পর্ব: বড় গুণ পরীক্ষার সহজ কৌশল

দ্বাদশ পর্ব: রেফারেন্সে নাম্বারের সাহায্যে গুণ

ত্রয়োদশ পর্ব: রেফারেন্সে নাম্বারের সাহায্যে আরও গুণ

চতুর্দশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট গুণ

পঞ্চদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট ও বড় গুণ