অঙ্কের খেলা - পর্ব ২

মাথা খাটাতে কে না পছন্দ করে! আর গল্পোচ্ছলে মজার বুদ্ধির ব্যায়াম হলে তো কথাই নেই। এরকমই একটি বই অঙ্কের খেলা। এটি রুশ গণিতবিদ ইয়াকভ পেরেলমানের নামকরা বই ফিগারস ফর ফান: স্টোরিজ, পাজলস অ্যান্ড কোনান্ড্রামস-এর বাংলা অনুবাদ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বিমলেন্দু সেনগুপ্তের অনুবাদে। সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন শর্মা।

অঙ্কের মজার সব হেঁয়ালি, বুদ্ধির খেলাসহ মাথা খাটানোর মতো দারুণ সব ধাঁধা নিয়ে বইটি। মগজে শান দিতে যা অতুলনীয়। এ বই পড়ে দেশের অনেকে এককালে গণিতে আগ্রহী হয়েছে, সমস্যা সমাধান শিখেছে, মুগ্ধ হয়েছে, প্রেমে পড়েছে গণিতের। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

অঙ্গসজ্জা: ভ করল্‌কোভ

১. খাবার টেবিলে বুদ্ধির খেলা

গত পর্বের পরে

৩. কে বেশি গুনেছিল?

‘দুজন লোক, একজন দাঁড়িয়েছিল তার বাড়ির দরজায়, অন্যজন পায়চারী করছিল সামনের রাস্তায়। তারা দুজনেই পুরো একঘণ্টা ধরে রাস্তার লোকদের গুনছিল। বলো তো, কে বেশি গুনেছিল?’

খাবার টেবিলের শেষ দিক থেকে উত্তর দিল একজন, ‘যে পায়চারী করছিল সে। এ তো খুবই সোজা।’

অধ্যাপক বললেন, ‘রাতে খাবার সময় উত্তরটা শুনব আমরা। পরের ধাঁধাটা বল এবার।’

8. নাতি ও ঠাকুর্দা

‘১৯৩২ সালে আমার বয়স ছিল আমার জন্মসালের শেষ দুই সংখ্যার সমান। এই অদ্ভুত ঘটনাটা ঠাকুর্দাকে শোনাতে তিনি আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বললেন, তাঁর নিজের বয়সেরও নাকি ওই একই হিসাব দাঁড়াচ্ছে। আমি ভেবে দেখলুম তা অসম্ভব...’

‘এক্কেবারে অসম্ভব’, কার যেন গলা শোনা গেল।

‘বিশ্বাস কর, এটা খুবই সম্ভব আর ঠাকুর্দা তা প্রমাণও করেছিলেন। তাহলে বলো তো, ১৯৩২ সালে আমাদের কার বয়স কত ছিল?’

৫. ট্রেনের টিকিট

এরপর শুরু করল একটি মেয়ে, ‘আমার কাজ রেলের টিকিট বিক্রি করা। সবাই ভাবে কাজটা বুঝি খুবই সোজা। একটা ছোট্ট স্টেশনেও যে কতগুলো টিকিট বিক্রি করতে হয়, বোধহয় সে সম্বন্ধে কোন ধারণাই নেই তাদের। আমাদের লাইনে আছে ২৫টা স্টেশন। আর আপ-ডাউন মিলিয়ে প্রতিটি জায়গার জন্য আছে আলাদা টিকিট। বলতে পারো, আমাদের লাইনের স্টেশনগুলোর জন্য কত ধরনের টিকিট আছে?’

একজন বিমানচালকের দিকে তাকিয়ে অধ্যাপক বললেন, ‘এরপর তোমার পালা।’

'অঙ্কের খেলা' বাংলা অনুবাদের প্রচ্ছদ

৬. হেলিকপ্টারের পাল্লা

‘লেনিনগ্রাদ থেকে একটা হেলিকপ্টার রওনা হল উত্তর দিকে। ৫০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর তা পূর্বদিকে ঘুরে উড়ে গেল আরও ৫০০ কিলোমিটার। তারপর গতি পরিবর্তন করল দক্ষিণ দিকে, এগিয়ে গেল ৫০০ কিলোমিটার। শেষে ৫০০ কিলোমিটার পশ্চিম গিয়ে নেমে পড়ল মাটিতে। প্রশ্নটা হলো, হেলিকপ্টারটা নামল কোথায়? লেনিনগ্রাদের পশ্চিমে, পূর্বে, উত্তরে নাকি দক্ষিণে?’

একজন বলে উঠল, ‘এ তো সোজা, ৫০০ পা সামনে, ৫০০ পা ডানে, পেছনদিকে ৫০০, তারপর বাঁয়ে আবার ৫০০। তার মানে যেখান থেকে রওনা হয়েছিলে সেখানেই এসে পৌঁছলে!’

‘খুব সোজা বুঝি! তাহলে আপনার মতে, কোথায় নামল হেলিকপ্টারটা?’

‘ঠিক লেনিনগ্রাদেই, তা ছাড়া আবার কোথায়?’

'উহু, হল না!’

‘তাহলে, বুঝতে পারছি না!’

‘ধাঁধাটায় কোথাও চালাকি আছে একটা’, বলল আরেকজন। ‘ওটা লেনিনগ্রাদে নামেনি বুঝি?’

‘আর একবার বলবে, ধাঁধাটা?’

বিমানচালক ছেলেটি বলল আরেকবার। শুনে তো মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো সবাই।

‘ঠিক আছে, জবাব ভেবে বের করতে অনেকটা সময় পাওয়া যাবে। পরের ধাঁধাটা শোনা যাক তাহলে’, বললেন অধ্যাপক।

ইংরেজি অনুবাদ বইয়ের প্রচ্ছদ

৭. ছায়া

পরের ছেলেটি বলতে লাগল, ‘আমার ধাঁধাটাও একটা হেলিকপ্টার নিয়ে। বলো তো কোনটা বেশি লম্বা—একটা হেলিকপ্টার, না তার ছায়াটা?’

‘শুধু এই?’

‘হ্যাঁ, শুধু এই।’

চিত্র ১: মেঘের আড়াল থেকে ছড়িয়ে পড়া সূর্যের কিরণ
অঙ্গসজ্জা: ভ করল্‌কোভ

‘হেলিকপ্টার থেকে তার ছায়াটাই সাধারণত লম্বা! সূর্যের আলো তো পাখার মতোই ছড়িয়ে পড়ে, তাই না?’ সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিল একজন।

‘আমি কিন্তু তা বলব না’, বলে উঠল আর একজন। ‘সূর্যরশ্মি হলো সমান্তরাল, তার মানেই হেলিকপ্টার আর তার ছায়া সমান মাপেরই হবে।’

‘কি যে বলো! মেঘের পেছন থেকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়তে দেখেছ কখনো? তাহলে, দেখেছ বোধহয় কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে তারা। মেঘের ছায়াটা যেমন মেঘ থেকে বড় হয়, হেলিকপ্টারের ছায়াটাও তেমনি হেলিকপ্টারটা থেকে বেশ বড় হবে।’

‘তাহলে নাবিক, জ্যোতির্বিদ, এদের মতো লোকেরা সূর্যরশ্মিকে সমান্তরাল বলে কেন?’

অধ্যাপক আর একজনকে তাঁর ধাঁধাটা বলতে বলে তর্কটা থামিয়ে দিলেন।

আপনারাও উত্তরগুলো ভাবুন। নিজেরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। তারপর সমাধান দেখতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

(চলবে...)

গত সংখ্যার সমাধান

অঙ্কের খেলা - পর্ব ১

'স্কুলের চক্র' সমস্যার সমাধান

প্রথম প্রশ্নটার উত্তর খুব সহজেই দেওয়া যায়। প্রশ্ন ছিল, প্রথম তিন মাসে পাঁচটি চক্র মোট কতবার একই দিনে বৈঠক করেছিল (১ জানুয়ারি বাদে)। এটা বের করা যেতে পারে ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬-এর ল.সা.গু. বের করলে। এটা তো কঠিন কিছু নয়। ল.সা.গু ৬০। তাহলে পাঁচটি চক্রেরই আবার একসঙ্গে বৈঠক হবে ৬১তম দিনে। ফিটারের কাজ শেখার চক্রের অধিবেশন হলো তিরিশের দ্বিগুণ দিনের ব্যবধানে, কাঠের কাজ শেখার চক্রের বৈঠক বসল ২০টা তিনদিনের ব্যবধানে, ফটোগ্রাফি শেখার চক্রের ১৫টা চার দিন অন্তর, দাবা খেলোয়াড়রা ১২টা পাঁচ দিন পরপর, আর সমবেত সঙ্গীত শেখার চক্রের প্রতি ছয় দিনের দিন ১০ বার। তার মানে হলো, কেবল ৬০ দিনের মাথায় তারা সবাই একই দিনে বসতে পারছে। আর প্রথম তিন মাসে আছে ৯০ দিন, তাহলে তারা সবাই প্রথমবার ছাড়া আর একবারই মাত্র একসঙ্গে মিলতে পারছে।

দ্বিতীয় প্রশ্নটা এর চেয়ে একটু বেশি কঠিন। প্রথম তিন মাসে মোট কতদিন কোনো দলেরই কোনও বৈঠক হয়নি? এটা বের করতে হলে ১ থেকে ৯০ পর্যন্ত সবকটি সংখ্যা লিখতে হবে, তা থেকে ফিটারের কাজ শেখার চক্রের অধিবেশনের দিনগুলো কেটে বাদ দিতে হবে। যেমন ১, ৩, ৫, ৭, ৯... এইরকম। তারপর বাদ দিতে হবে কাঠের কাজ শেখার চক্রের বৈঠকের দিনগুলো। যেমন ৪, ১০ ইত্যাদি। ফটোগ্রাফি শেখার চক্র, দাবা খেলোয়াড়, সমবেত সঙ্গীত শেখার চক্রের মিলবার দিনগুলোও যখন বাদ দেওয়া হয়ে যাবে, তখন বাকি দিনগুলোই হবে সেই দিন, যাতে কোনো দলেরই বৈঠক হবে না।

এটা করলেই দেখা যাবে, জানুয়ারিতে আট দিন, যেমন ২, ৮,১২, ১৪, ১৮, ২০, ২৪ আর ৩০, ফেব্রুয়ারিতে সাত দিন আর মার্চে ৯ দিন, মোট হবে ২৪ দিন।