অঙ্কের খেলা – পর্ব ৮

মাথা খাটাতে কে না পছন্দ করে! আর গল্পোচ্ছলে মজার বুদ্ধির ব্যায়াম হলে তো কথাই নেই। এরকমই একটি বই ‘অঙ্কের খেলা’। এটি রুশ গণিতবিদ ইয়াকভ পেরেলমানের নামকরা বই ‘ফিগারস ফর ফান: স্টোরিজ, পাজলস অ্যান্ড কোনান্ড্রামস’-এর বাংলা অনুবাদ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বিমলেন্দু সেনগুপ্তের অনুবাদে। সম্পাদক ছিলেন নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা।

অঙ্কের মজার সব হেঁয়ালি, বুদ্ধির খেলাসহ মাথা খাটানোর মতো দারুণ সব ধাঁধা নিয়ে বইটি। মগজে শান দিতে যা অতুলনীয়। এ বই পড়ে দেশের অনেকে এককালে গণিতে আগ্রহী হয়েছে, সমস্যা সমাধান শিখেছে, মুগ্ধ হয়েছে, প্রেমে পড়েছে গণিতের। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

১৯. জাদু বর্গক্ষেত্র

৭ নং ছবিতে ১৮টা ডোমিনো ঘুঁটির একটা বর্গক্ষেত্র আছে। এর সবচেয়ে মজা হলো ওপর নীচে, পাশাপাশি বা কোনাকুনি, এর সব দিকের বাহুতেই ফোঁটা আছে ১৩টা। অনাদিকাল থেকে এই বর্গগুলোকে বলা হয় ‘জাদু-বর্গক্ষেত্র’।

৭ নং ছবি

১৮টা ঘুঁটি দিয়ে আরও কয়েকটা জাদু-বর্গক্ষেত্র তৈরি করো তো, অবশ্য ফোঁটার সংখ্যাগুলো আলাদা হবে। বাহুগুলোতে ফোঁটার যোগফল কমপক্ষে হতে পারে ১৩, আর সবচেয়ে বেশি হতে পারে ২৩। ২০. ছোট থেকে বড় করে ডোমিনো ঘুঁটি সাজানো

৮ নং ছবিতে খেলার নিয়মকানুন মেনে ছয়টা ডোমিনো ঘুঁটি সাজানো আছে। প্রতি ঘুঁটিতে ফোঁটার সংখ্যা এক এক করে বেড়ে গেছে। যেমন, প্রথমটায় আছে চারটে, দ্বিতীয়টায় পাঁচটা, তৃতীয়টায় ছয়টা, চতুর্থতে সাতটা, পঞ্চমটায় আটটা আর ষষ্ঠটায় আছে নয়টা।

৮ নং ছবি

এভাবে সমান সমান সংখ্যায় পরপর বেড়ে গেলে অথবা কমে গেলে সেই সংখ্যার সারিকে বলা হয় ‘পাটিগণিতের প্রগতি’। এখানে, প্রত্যেক সংখ্যা তার আগের সংখ্যা থেকে এক বেশি, কিন্তু এই ‘তফাতটা’ অন্যরকমও হতে পারে।

তোমাদের ছয়টা ঘুঁটি দিয়ে আরও কয়েকটা এই রকম সারি বানাতে হবে।

পনেরোর ধাঁধা

১ থেকে ১৫ পর্যন্ত ঘুঁটি সাজানো বিখ্যাত এক চ্যাপ্টা চৌকো বাক্সের গল্প খুবই চমৎকার লাগবে তোমাদের, যদিও খুব কম খেলোয়াড়ই জানে এটা। জার্মানির গণিতজ্ঞ আর কুশলী ছক খেলোয়াড় (ড্রাফট্ খেলোয়াড়) ডব্লিউ. আহ্‌রেনস এ সম্পর্কে লিখেছিলেন:

‘১৮৭০-এর দশকের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন ধরনের খেলা চালু হলো, তার নাম ‘পনেরোর ধাঁধা’। এর জনপ্রিয়তা এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে যে অল্পদিনেই সমাজের পক্ষে এটা একটা সত্যিকারের দুর্ঘটনার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল।

‘বাতিকটা ইউরোপেও পৌঁছে গেল। মানুষ সব জায়গাতেই ধাঁধাগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে লাগল। এমনকি যাত্রী-গাড়িতে বসে কেউ কেউ চেষ্টা করছে এমনও দেখা যেতে লাগল। অফিসের কর্মীরা, দোকানের বিক্রেতারা ধাঁধা সমাধান করার চেষ্টার এতই ডুবে থাকতে লাগল যে তাদের মালিকরা আর উপায় না দেখে কাজের সময় এই খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলো। ফিকিরবাজ লোকেরা এই উন্মত্ততার সুযোগ নিয়ে বিরাট বিরাট প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে ফেলল।

পনেরোর ধাঁধা

‘ধাঁধাটা জার্মানির রাইখ্‌স্টাগে পর্যন্ত এসে ঢুকল। বিখ্যাত ভৌগোলিক আর গণিতজ্ঞ সিগমন্ড গুন্‌থার এই সময় ছিলেন রাইখ্‌স্টাগের ডেপুটি। তাঁর পাকাচুল সহকর্মীদের তিনি এই সময় ছোট চৌকো বাক্সগুলোর ওপর চিন্তামগ্ন হয়ে ঝুঁকে বসে থাকতে দেখেছিলেন বলে স্মরণ করেন।

‘প্যারিসে এই খেলাটা হত বুলভারের ওপর খোলা জায়গায়। খেলাটা রাজধানী থেকে মফস্বলে ছড়িয়ে পড়ল খুব অল্প সময়ে। এই পাগলামিটাকে একজন ফরাসী লেখক বর্ণনা করেছিলেন এভাবে: ‘গ্রামগুলোতে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে এই খেলা মাকড়শার মতো জাল বিস্তার করে নি।’

‘১৮৮০ সালে বাতিকটা চরমে পৌঁছল। কিন্তু গণিতজ্ঞগণ অল্প সময়েই এই অত্যাচার ঠান্ডা করে দিলেন। তাঁরা প্রমাণ করলেন, যত ধাঁধা দেওয়া হয়ে থাকে তার অর্ধেকমাত্র সমাধান করা যেতে পারে। বাকিগুলোর সমাধানের কোনো সম্ভাবনাই নেই।

‘হাজার চেষ্টা করেও কতকগুলো ধাঁধা কিছুতেই কেন সমাধান করা যায় না বা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপকরা সমাধানের জন্য প্রচুর পুরস্কার ঘোষণা করতে কেন ভয় পায় না, গণিতজ্ঞরা তা একেবারে পরিষ্কার করে দিলেন। আর এ ব্যাপারে এই ধাঁধাটাকে যিনি আবিষ্কার করেছিলেন সেই স্যামুয়েল (স্যাম) লয়েড সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন। নিউ ইয়র্কের এক খবরের কাগজের মালিককে তিনি এই ঘোষণা করতে বললেন যে, পনেরো প্রহেলিকার একটি বিশেষ ধাঁধাকে যে সমাধান করতে পারবে তাকে ১ হজার ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে। কাগজের প্রকাশক একটু ইতস্তত করলে লয়েড বললেন, টাকাটা তিনি নিজেই দেবেন। লয়েড বিখ্যাত ছিলেন তাঁর হেঁয়ালী আর মাথাঘামানো কুট প্রশ্নের জন্য। আশ্চর্যের ব্যাপার, তাঁর এই হেঁয়ালীটাকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্ট করতে পারলেন না। আইন অনুসারে, এ জাতীয় কোনো কিছুর জন্য পেটেন্ট পেতে হলে একটা সমাধানের নিদর্শন দাখিল করতে হবে। পেটেন্ট অফিসে তাঁকে প্রশ্ন করা হল, ধাঁধাটা সমাধান করা চলে কি না? লয়েডকে তখন স্বীকার করতে হলো যে, অঙ্কের দিক থেকে সেটা সম্ভব নয়। পেটেন্ট অফিসের কর্মচারীরা তখন বললেন, সমাধানের নিদর্শন পাওয়া যখন সম্ভব নয়, তখন কোন পেটেন্টও হতে পারে না। লয়েড অবশ্য ব্যাপারটাকে সেখানেই ছেড়ে দিলেন। কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কার যে কি অস্বাভাবিক সাফল্য আনতে পারে তা আগে থেকে জানতে পারলে তিনি যে আরও বেশি নাছোড়বান্দা হয়ে ধরতেন, তাতে কোনই সন্দেহ নেই।’

এখানে এই ধাঁধাটা সম্পর্কে কতকগুলো বিষয় বলা হচ্ছে। আবিষ্কারক নিজেই বলেছিলেন এগুলো:

‘ধাঁধা সম্পর্কে যারা উৎসাহী তাদের হয়তো বেশ মনে আছে, ১৮৭০ সালে পৃথিবীর মানুষকে কতগুলো চলনশীল ঘাঁটিওয়ালা বাক্স দিয়ে আমি তাদের মাথা কেমন ঘুলিয়ে দিয়েছিলাম। এর নাম হয়েছিল ‘পনেরোর ধাঁধা’ (১০ নং ছবি)। ঘুঁটিগুলোর ভেতর কেবল ১৪ আর ১৫, এই দুটি বাদে বাকি তেরোটা ঠিকঠিক সাজানো ছিল (১১ নং ছবি)। কাজটা ছিল প্রতিবারে একটা করে ঘুঁটি সরিয়ে ১৪ ও ১৫-কে ঠিক পরপর সাজাতে হবে।

১০ নং ছবি

‘প্রথম সঠিক সমাধানের জন্য যে ১ হাজার ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, কেউই তা পেল না। যদিও সবাই অক্লান্তভাবে চেষ্টা করে যেতে লাগল। এ সম্বন্ধে মজার মজার গল্প আছে। ব্যবসায়ীরা সমাধান করতে বসে এত মগ্ন হয়ে যেত যে তাদের দোকান খুলতে ভুলে যেত, সম্মানিত অফিসাররা ধাঁধাটা কোনো উপায়ে সমাধানের চেষ্টায় কাটাত রাতের পর রাত। সবাই ভাবত, সমাধান একটা আছেই। তাই তারা এতে লেগেই থাকত। নাবিকদের জাহাজ আটকে যেত চড়ায়, ইঞ্জিনের ড্রাইভাররা স্টেশনে গাড়ি থামাতে ভুলে যেত, আর চাষীরা লাঙল উঠিয়ে বসে থাকত।’

এই ধাঁধার মূল জিনিসটার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেব। সবশুদ্ধ ব্যাপারটা ভয়ানক জটিল, বীজগণিতের সুক্ষ্ণ জিনিসগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্ক। এ সম্পর্কে আহ্‌রেনস লিখেছিলেন:

‘কাজটা হলো, খালি জায়গাটা ব্যবহার করে ঘুঁটিগুলো এমনভাবে সরাতে হবে যে, শেষ পর্যন্ত ১৫টা ঘুঁটিকেই ঠিক পরপর সাজানো যায়, অর্থাৎ ১ম ঘুঁটিকে রাখতে হবে ওপরে বাঁদিকের কোণে, ২য় ঘুঁটিকে এর ঠিক ডানদিকে, তারপর ৩য় ঘুঁটি, ৪র্থ ঘুঁটি ওপরের ডানদিকের কোণে। ঠিক এভাবেই ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম ঘুঁটিকে সাজাতে হবে পরের সারিতে। এভাবে চলবে (১০ নং ছবি)।

‘ধরে নাও যে ঘুঁটিগুলো সব এলোমেলো করে সাজানো আছে। ১ম ঘুঁটিকে কয়েক বার চাল দিয়ে তার নিজের জায়গায় এনে ফেলা সবসময়েই সম্ভব।

‘এখন ১ম ঘুঁটিকে না ছুঁয়ে ২য় ঘুঁটিকে তার পরের খোপে এনে রাখাও তেমনভাবেই সম্ভব। তারপর ১ম ও ২য় ঘুঁটিকে না ছুঁয়ে ৩য় ও ৪র্থ ঘুঁটিকেও তাদের জায়গায় আনা চলবে। যদি এমন হয় যে তারা ওপর নীচে লম্বা শেষ দুটো সারিতে না থাকে তাহলেও তাদের সে জায়গায় সহজেই নিয়ে এসে ইচ্ছেমতো সাজানো যায়। ওপরের সারিতে ১ম, ২য়, ৩য় আর ৪র্থ ঘুঁটি এখন ঠিক জায়গা মতন আছে। এরপরের চালগুলোতে এই চারটে ঘুঁটিকে আমরা একেবারে আলাদা রেখে দেব। ঠিক একই ভাবে আমরা ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম আর ৮ম ঘুঁটিটাকে সাজাতে চেষ্টা করলে দেখব তাও সম্ভব। এরপর আবার দুটো সারিতে ৯ম ও ১৩শ ঘুঁটি দুটিকে ঠিক জায়গায় বসানো দরকার হবে। একবার ঠিক করে সাজানো হয়ে গেলে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১৩শ ঘুঁটিকে আর নড়ানো হবে না। এখন তাহলে থাকল ছয়টা খোপের মধ্যে একটা খালি, আর বাকিগুলোতে এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে ১০ম, ১১শ, ১২শ, ১৪শ আর ১৫শ ঘুঁটি। ১০ম, ১১শ, ১২শ দুটিকে বারবার চাল দিয়ে ঠিকমতো সাজানো সবসময়ই চলতে পারে। এটা করা হয়ে গেলে, ১৪শ আর ১৫শ ঘুঁটি দুটি নিচের সারিতে, হয় সঠিক জায়গায় আর না হলে অন্য জায়গায় থাকবে (১১ নং ছবি)। তোমরা নিজেরাই দেখতে পাবে যে, এভাবে আমরা এইরকম একটা অবস্থায় এসে পৌঁছেছি:

‘ঘুঁটিগুলোকে যেকোনভাবে সাজানো অবস্থা থেকে আমরা হয় ১০ নং ছবির মতন (১ম অবস্থা) বা ১১ নং ছবির মতন (২য় অবস্থা) অবস্থায় আনতে পারি।

১১ নং ছবি

‘কোন একটা বিশেষ ধরনের সাজানোকে যদি আমরা ছোট্ট করে নাম দিই ‘স’ আর এটাকে ১ম অবস্থায় এনে সাজানো যায়, তাহলে বেশ বোঝাই যাচ্ছে যে ওটাকে আমরা উল্টেও সাজাতে পারব; অর্থাৎ ১ম অবস্থা থেকে উল্টে ‘স’ ধরনে সাজাতে পারব। কেননা, সব চালই আবার ফেরানো যায়। উদাহরণ দিচ্ছি। ১ম অবস্থায় ১২ নং ঘুঁটিকে যদি আমরা খালি থোপে চালান করতে পারি তাহলে তাকে সেখান থেকে আগের জায়গায়ও আনতে পারি।

"তাহলে আমরা দু'ধরনের সাজানো সারি পেলাম: প্রথমটায় ঘাটিগুলোকে আমরা নিয়মিতভাবে সাজাতে পারি (১ম অবস্থা), আর দ্বিতীয়টায় আমরা ঘাঁটিগুলোকে সাজাতে পারি ২য় অবস্থায়। আবার উল্টে গিয়ে, নিয়মিত সারি থেকে আমরা প্রথম ধরনের বিন্যাসের যেকোন একটা ধাপে যেতে পারি, আর দ্বিতীয় অবস্থা থেকে দ্বিতীয় ধরনের বিন্যাসের যেকোন একটা ধাপে পৌঁছতে পারি। তাহলে শেষটা এই দাঁড়াচ্ছে যে, কোনো এক ধরনের বিন্যাসের এক ধাপ থেকে আর এক ধাপে চলে যাওয়া যায়।

‘১ম অবস্থা থেকে কি ২য় অবস্থায় যাওয়া সম্ভব? (খুঁটিনাটির ভেতর না গিয়ে) এটা সত্যিই প্রমাণ করা যায় যে অনবরত চাল দিলেও তা সম্ভব নয়। তাহলে, ঘুঁটিগুলোর এই বিরাট সংখ্যার বিন্যাসকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়: প্রথম ভাগ হলো যাতে ঘুঁটিগুলোকে স্বাভাবিক নিয়মে সাজানো যায়, অর্থাৎ সমাধানের যোগ্য; আর দ্বিতীয় ভাগে ঘুঁটিগুলোকে কখনই স্বাভাবিক নিয়মে সাজানো চলে না, অর্থাৎ সমাধানাতীত। এই দ্বিতীয় ভাগের বিন্যাসগুলো সমাধান করার জন্যই বিরাট বিরাট পুরস্কার ঘোষণা করা হতো।

‘ঘুঁটিগুলোর কোনো এক ধরনের অবস্থান কোন বিন্যাসের ভেতর পড়ে, তা বলার কি কোন উপায় আছে? আছে, তারই একটা উদাহরণ দেওয়া হলো। (১২ নং ছবি)।

১২ নং ছবি

‘১২ নং ছবির ঘুঁটিগুলোর অবস্থান পরীক্ষা করা যাক। প্রথম সারির ঘুঁটিগুলো ঠিকই আছে, দ্বিতীয় সারিও ঠিক আছে কেবল ১ম ঘুঁটি বাদে। ঘুঁটিটা আসলে ৮-এর জায়গাটা দখল করে আছে। তাহলে ৯ম ঘুঁটি রয়েছে ৮ম ঘুঁটির আগে। স্বাভাবিক নিয়মের এই ব্যতিক্রমকে বলা হয় 'অনিয়ম'। ৯ম ঘুঁটি সম্পর্কে আমরা বলব, এখানে একটা ‘অনিয়ম’। আরও পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে ১৪শ ঘুঁটি তার নিজের জায়গা থেকে তিন ধাপ আগে এসে গেছে, তার মানে ওটি ১১শ, ১২শ ও ১৩শ ঘুঁটির আগেই জায়গা নিয়েছে। এখানে আমরা তিনটে ‘অনিয়ম’ পাচ্ছি (১৪, ১২-র আগে; ১৪, ১৩-র আগে; ১৪, ১১-র আগে)। সব মিলিয়ে হলো ১ + ৩ = ৪টা ‘অনিয়ম’। আবার ১২শ ঘুঁটি এসেছে ১১শ ঘুঁটির আগে, যেমন ১৩শ ঘুঁটি এসেছে ১১শ ঘুঁটির আগে। এখানে আমরা পেলাম আরও দুটো ‘অনিয়ম’। সবশুদ্ধ 'অনিয়ম' হল ৬টা। প্রথমে নীচের ডানদিকের খোপটা বেশ খেয়াল করে খালি করে নেবে, তাহলে এভাবে প্রত্যেক বিন্যাসে 'অনিয়মের' সংখ্যা বের করা যায়। অনিয়মের মোট সংখ্যা যদি জোড় সংখ্যা হয়, যেমন এখানে হয়েছে, তাহলে ঘাঁটিগুলোকে নিয়মিতভাবে সাজানো চলবে, অর্থাৎ সে ধাঁধাটা সমাধানযোগ্য। অন্যদিকে, 'অনিয়মের' সংখ্যা যদি বিজোড় হয়, তাহলে ওই বিন্যাসটা পড়ছে দ্বিতীয় ভাগের ভেতরে, অর্থাৎ ধাঁধাটা সমাধানের অযোগ্য (শূন্য ‘অনিয়মকে’ জোড় হিসেবে ধরা হয়)।

‘এই ধাঁধার গাণিতিক ব্যাখ্যা সমাধান-বাতিকটাকে একেবারে মারণ-চোট হানল। গণিতে এই খেলার একটা পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব তৈরি হয়েছে, সন্দেহের কোন স্থান আর নেই তার ভেতর। অন্যান্য খেলার মতো এ খেলার সমাধান আন্দাজ বা উপস্থিত বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে না। এর সমাধান নির্ভর করে একেবারে গণিতের হিসেবের ওপর। এ দিয়ে ফলটা আগে থেকেই একেবারে ঠিকঠিক বের করে ফেলা যায়।’'

এবারে এইরকম কয়েকটা ধাঁধা নিয়ে দেখা যাক। নীচে সমাধান করা চলে এমন তিনটে ধাঁধা দেওয়া হলো। উদ্ভাবক নিজেই এগুলো তৈরি করেছিলেন।

২১. লয়েডের প্রথম ধাঁধা

১১ নং ছবিতে ওপরে বাঁদিকের খোপটা খালি রেখে ঘুঁটিগুলোকে স্বাভাবিক নিয়মে সাজাতে হবে (১৩ নং ছবিতে যেমন দেওয়া আছে)।

১৩ নং ছবি

২২. লয়েডের দ্বিতীয় ধাঁধা

১১ নং ছবিটা নিয়ে তাকে একটা কিনারার ওপর শোয়াও (অর্থাৎ চারভাগের একভাগ ঘোরাও) তারপর ঘুঁটি চেলে ১৪ নং ছবির মতন অবস্থায় নিয়ে এসো।

১৪ নং ছবি

২৩. লয়েডের তৃতীয় ধাঁধা

খেলার নিয়মমতো ঘুঁটি চেলে ১১ নং ছবিটাকে 'যাদু বর্গক্ষেত্রে' পরিণত কর, অর্থাৎ ঘাঁটিগুলোকে এমনভাবে সাজাতে হবে যে, সবদিক দিয়েই যোগফল হবে ৩০।

সমাধান

১৯. ১৮ নং ছবিতে একটা যাদু-বর্গক্ষেত্রের নমুনা আছে। এতে প্রতি সারিতে ১৮টা করে ফোঁটা আছে। 

১৮ নং ছবি

২০. এখানে ‘পাটিগণিত প্রগতির’ (ক্রমবর্ধমান) দুটো সারির নমুনা দেওয়া হলো। এতে সংখ্যাগুলোর তফাত হচ্ছে ২:

(ক) ০-০, ০-২, ০-৪, ০-৬, ৪-৪ (অথবা ৩-৫), ৫-৫ (অথবা ৪-৬)।

(খ) ০-১, ০-৩ (অথবা ১-২), ০-৫ (অথবা ২-৩), ১-৬ (অথবা ৩-৪), ৩-৬ (অথবা ৪-৫), ৫-৬।

এখানে ছয়টা করে ঘুঁটির মোট ২৩টা ক্রমবর্ধমান সারি আছে। যে ঘুঁটিগুলো দিয়ে শুরু করা হয়েছে, তা হলো:

(ক) ১ সংখ্যা করে বেড়ে গেছে এমন ক্রমবর্ধমান সারি:

০-০                         ১-১                          ২-১                          ২-২                          ৩-২

০-১                          ২-०                          ৩-০                         ৩-১                          ২-৪

১-০                          ০-৩                         ০-৪                         ১-৪                          ৩-৪

০-২                         ১-২                          ১-৩                          ২-৩                         ৩-৪

(খ) ২ সংখ্যা করে বেড়ে গেছে এমন ক্রমবর্ধমান সারি:

০-০                         ০-২                         ০-১

২১. এর সমাধান করা যায় নীচের মতো করে ৪৪টা চাল দিয়ে:

১৪, ১১, ১২, ৮, ৭, ৬, ১০, ১২, ৮, ৭, ৪, ৩, ৬, ৪, ৭, ১৪, ১১, ১৫, ১৩, ৯, ১২, ৮, ৪, ১০, ৮, ৪, ১৪, ১১, ১৫, ১৩, ৯, ১২, ৪, ৮, ৫, ৪, ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১০, ৬, ২, ১।

২২. এর সমাধান করা চলে নীচের মতো করে ৩৯টা চাল দিয়ে:

১৪, ১৫, ১০, ৬, ৭, ১১, ১৫, ১০, ১৩, ৯, ৫, ১, ২, ৩, ৪, ৮, ১২, ১৫, ১০, ১৩, ৯, ৫, ১, ২, ৩, ৪, ৮, ১২, ১৫, ১৪, ১৩, ৯, ৫, ১, ২, ৩, ৪, ৮, ১২।

২৩. মোট ৩০ সংখ্যাওয়ালা যাদু বর্গক্ষেত্র তৈরি করা যায় নীচের মতো চাল দিয়ে:

১২, ৮, ৪, ৩, ২, ৬, ১০, ৯, ১৩, ১৫, ১৪, ১২, ৮, ৪, ৭, ১০, ৯, ১৪, ১২, ৮, ৪, ৭, ১০, ৯, ৬, ২, ৩, ১০, ৯, ৬, ৫, ১, ২, ৩, ৬, ৫, ৩, ২, ১, ১৩, ১৪, ৩, ২, ১, ১৩, ১৪, ৩, ১২, ১৫, ৩।

আগের পর্বগুলো দেখুন