মজার গণিত
অঙ্কের খেলা - পর্ব ৪
মাথা খাটাতে কে না পছন্দ করে! আর গল্পোচ্ছলে মজার বুদ্ধির ব্যায়াম হলে তো কথাই নেই। এরকমই একটি বই ‘অঙ্কের খেলা’। এটি রুশ গণিতবিদ ইয়াকভ পেরেলমানের নামকরা বই ‘ফিগারস ফর ফান: স্টোরিজ, পাজলস অ্যান্ড কোনান্ড্রামস’-এর বাংলা অনুবাদ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বিমলেন্দু সেনগুপ্তের অনুবাদে। সম্পাদক ছিলেন নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা।
অঙ্কের মজার সব হেঁয়ালি, বুদ্ধির খেলাসহ মাথা খাটানোর মতো দারুণ সব ধাঁধা নিয়ে বইটি। মগজে শান দিতে যা অতুলনীয়। এ বই পড়ে দেশের অনেকে এককালে গণিতে আগ্রহী হয়েছে, সমস্যা সমাধান শিখেছে, মুগ্ধ হয়েছে, প্রেমে পড়েছে গণিতের। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।
খাবার টেবিলে বুদ্ধির খেলা
গত পর্বের পরে
১০. ডিসেম্বরের ধাঁধা
পরের জন শুরু করল, ‘শোনো ভাই তোমরা। আমি অঙ্কটঙ্ক জানি না। আমি হচ্ছি ভাষাতত্ত্বের লোক। আমার কাছে অঙ্কের ধাঁধা শুনতে চেও না কিন্তু। আমি জিজ্ঞেস করব আরেক ধরনের প্রশ্ন। আমার কাজকর্মের সঙ্গেই তার সম্পর্ক। এটা হল ক্যালেন্ডারের ব্যাপার।’
‘বলো, বলো।’
‘ডিসেম্বর হল বছরের বারো নম্বরের মাস। ওই নামটার আসল অর্থ কি জানো? কথাটা আসছে গ্রিক ‘ডেকা’ শব্দ থেকে, যার অর্থ হল দশ। যেমন ‘ডেকালিটার’ শব্দের অর্থ দশ লিটার, ‘ডিকেড’ মানে হল দশ বছর, এ রকম। তাহলে ডিসেম্বরের হওয়া উচিৎ দশ নম্বরের মাস। কিন্তু তা তো নয়। কেন, তা বলতে পার বুঝিয়ে?’
১১. অঙ্কের খেলা
‘আমি তোমাদের দেখাবো একটা অঙ্কের ম্যাজিক। ব্যাখ্যা করে আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে এটা। তোমাদের মধ্যে একজন—আচ্ছা প্রফেসর, আপনিই একটা তিন সংখ্যাওয়ালা অঙ্ক লিখুন না। কী লিখলেন তা কিন্তু বলবেন না আমাকে।’
‘অঙ্কটার ভেতর শূন্য দেওয়া চলবে তো?’
‘কোনো আপত্তি নেই। তিন সংখ্যার যেকোন অঙ্ক লিখতে পারেন।’
‘বেশ, এই লিখলাম। এরপর কী করতে হবে?’
‘ওই সংখ্যাকেই আবার আপনার সংখ্যাটার পাশে বসান। তাহলে এবার একটা ছয় সংখ্যার অঙ্ক পেলেন, ঠিক?’
‘এবার কাগজটা আপনার পাশের ছেলেটিকে দিয়ে দিন। তাহলে ওটা আমার কাছ থেকে আরও দূরে চলে গেল। এবার ওকে ছয় সংখ্যার অঙ্কটাকে সাত দিয়ে ভাগ করতে বলুন।’
‘খুব তো বলছেন; যদি ভাগ না করা যায়?’
‘যাবে, যাবে, ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন?’
‘সংখ্যাটা না জেনেই এত নিশ্চিন্ত হয়ে কথা বলছেন কী করে?’
‘ভাগটা তো করে ফেল, তারপর কথা।’
‘ঠিক বলেছ, ভাগ মিলে গেছে।’
‘এখন অঙ্কের ফলটা পাশের ছেলেটিকে পৌঁছে দাও। আমাকে বোলো না কিন্তু। ও এটাকে ভাগ করুক ১১ দিয়ে।’
‘ভাবছ, এবারও আগের মতোই হবে?’
‘আরে, অঙ্কটা তো করো। দেখো কোন ভাগশেষই থাকবে না।’
‘এবারও ঠিকই বলেছ। এরপর?’
‘উত্তরটাকে আবার চালান করে দাও, এবার এটাকে ভাগ করা হোক...ধরো ১৩ দিয়ে।’
‘তোমার পছন্দটা ভাল হলো না। খুব কম সংখ্যাই আছে যাকে ১৩ দিয়ে ভাগ করা চলে। না, কপাল ভাল তোমার। এটা তো মিলে গেছে!’
‘এখন কাগজটা দাও আমাকে; হ্যাঁ, ভাঁজ করেই দাও যাতে দেখতে না পাই আমি।’
কাগজটাকে না খুলেই ছেলেটি এটা দিল অধ্যাপকের হাতে।
‘এই তো আপনার সেই সংখ্যাটা, ঠিক বলি নি!’
‘একেবারে ঠিক,’ আশ্চর্য হয়ে গেলেন অধ্যাপক, ‘এই সংখ্যাটাই তো লিখেছিলাম আমি’।
সবার পালাই শেষ হয়েছে তো, আর বৃষ্টিটাও থেমেছে। চলো তবে বেরিয়ে পড়া যাক। রাত্রিবেলাতেই খাবার পর সব উত্তর জানা যাবে। তোমাদের সকলের উত্তর লেখা কাগজের টুকরোগুলো আমাকে জমা দিতে পার।’
গত সংখ্যার সমাধান
৮. দেশলাই কাঠির ধাঁধার সমাধান
এ ধাঁধাটার সমাধান করতে হলে উল্টো দিক থেকে শুরু করতে হবে। দেশলাই কাঠিগুলোকে শেষবারের মতো চালান করে দেওয়ার পর সবকটা ভাগেই কাঠির সংখ্যা সমান সমান হয়েছিল। এখান থেকেই আমাদের হিসেব শুরু করতে হবে। এখন এই সাজানোর সময় দেশলাই কাঠির মোট সংখ্যা (৪৮) তো আর পরিবর্তন হয়নি। তাই প্রতিভাগে মোট ১৬টা করেই কাঠি ছিল। তাহলে সবশেষে আমরা যা পেয়েছিলাম তা হলো:
প্রথম ভাগ: ১৬
দ্বিতীয় ভাগ: ১৬
তৃতীয় ভাগ: ১৬
ঠিক এর আগেই প্রথম ভাগের সঙ্গে আমরা সমান সংখ্যার কাঠি যোগ করেছিলাম। তার মানেই হলো, প্রথম ভাগে কাঠি এনে নিঁখুত করার পর সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়েছে। তাহলে শেষবারের মতো সাজিয়ে রাখার আগে প্রথম ভাগে ছিল মাত্র ৮টা কাঠি। আর তৃতীয় ভাগে, যেখান থেকে এই ৮টা কাঠি নিয়েছিলাম, সেখানে ছিল: ১৬ + ৮ = ২৪টা কাঠি। এখন তাহলে ভাগগুলোর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে:
প্রথম ভাগ: ৮
দ্বিতীয় ভাগ: ১৬
তৃতীয় ভাগ: ২৪
আবার আমরা জানি যে তৃতীয় ভাগে যত কাঠি ছিল, দ্বিতীয় ভাগ থেকে সেই সংখ্যার কাঠি নিয়েছিলাম। তার মানে হলো, আগের সংখ্যাকে দ্বিগুণ করে ২৪ হয়েছে। তাহলে প্রথমবার সাজানোর পর আমাদের ভাগগুলোতে কতগুলো করে কাঠি ছিল, তা পাওয়া যাচ্ছে:
প্রথম ভাগ: ৮
দ্বিতীয় ভাগ: ১৬ + ১২ = ২৮
তৃতীয় ভাগ: ১২
এখন তো পরিষ্কার হয়ে গেল যে প্রথমবার সাজানোর আগে (অর্থাৎ প্রথম থাক থেকে দ্বিতীয় থাকের সমান সংখ্যার কাঠি নিয়ে তাতে যোগ করার আগে) প্রতি থাকে দেশলাই কাঠির যে সংখ্যাটা ছিল:
প্রথম ভাগ: ২২
দ্বিতীয় ভাগ: ১৪
তৃতীয় ভাগ: ১২
৯. অদ্ভুত এক গাছের গুঁড়ির সমাধান
এ ধাঁধাটাকেও উল্টো দিক থেকে সমাধান করা সহজ হবে। ব্যাপার হলো, যখন টাকাটাকে তৃতীয়বারের মতো দ্বিগুণ করা হলো, তখন থলেটায় ছিল ১ রুবল ২০ কোপেক (শেষবারে এই টাকাটা পেয়েছিল বুড়ো)। এর আগে তাহলে থলেটায় কত ছিল? ছিল ৬০ কোপেক। এই টাকাটাই তাহলে বুড়োকে দ্বিতীয় বারের রুবল আর ২০ কোপেক মিটিয়ে দেওয়ার পর ছিল কৃষকের কাছে। তাহলে টাকাটা দেওয়ার আগে ছিল: ১.২০ + ০.৬০ = ১.৮০।
আবার ১ রুবল ৮০ কোপেক দাঁড়িয়েছিল টাকাটাকে দ্বিতীয়বার দ্বিগুণ করার পর। তার আগে ছিল ৯০ কোপেক মাত্র। তার মানে বুড়োকে প্রথমবারের রুবল আর ২০ কোপেক মিটিয়ে দেওয়ার পর এই টাকাটাই অবশিষ্ট ছিল। তাহলে প্রথমবারে টাকা দেওয়ার আগে থলেটায় ছিল ০.৯০ + ১.২০ = ২.১০। আর এটা হলো প্রথমবার দ্বিগুণ করার পর। সবচেয়ে প্রথমে তাহলে ছিল এরও অর্ধেক অথবা ১ রুবল ৫ কোপেক। এই টাকাটা নিয়েই কৃষক তাড়াতাড়ি বড় লোক হবার নিষ্ফল কারবারে নেমেছিল। এখন উত্তরটাকে একটু মিলিয়ে দেখা যাক:
থলের ভেতর যে টাকাটা ছিল:
প্রথমবার দ্বিগুণ করার পর………………………১.০৫ × ২ = ২.১০
প্রথমবার মোট টাকা বের করার পর……………..২.১০ – ১.২০ = ০.৯০
দ্বিতীয়বার দ্বিগুণ করার পর………………………০.৯০ × ২ = ১.৮০
দ্বিতীয়বার মোট টাকা বের করার পর……………..১.৮০ – ১.২০ = ০.৬০
তৃতীয়বার দ্বিগুণ করার পর………………………০.৬০ × ২ = ১.২০
তৃতীয়বার মোট টাকা বের করার পর……………..১.২০ – ১.২০ = ০
আপনারাও ওপরের প্রশ্ন দুটির উত্তর ভাবুন। নিজে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। আর সমাধান দেখতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করলেই হবে।
(চলবে...)