অঙ্কের খেলা – পর্ব ৬

মাথা খাটাতে কে না পছন্দ করে! আর গল্পোচ্ছলে মজার বুদ্ধির ব্যায়াম হলে তো কথাই নেই। এরকমই একটি বই ‘অঙ্কের খেলা’। এটি রুশ গণিতবিদ ইয়াকভ পেরেলমানের নামকরা বই ‘ফিগারস ফর ফান: স্টোরিজ, পাজলস অ্যান্ড কোনান্ড্রামস’-এর বাংলা অনুবাদ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বিমলেন্দু সেনগুপ্তের অনুবাদে। সম্পাদক ছিলেন নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা।

অঙ্কের মজার সব হেঁয়ালি, বুদ্ধির খেলাসহ মাথা খাটানোর মতো দারুণ সব ধাঁধা নিয়ে বইটি। মগজে শান দিতে যা অতুলনীয়। এ বই পড়ে দেশের অনেকে এককালে গণিতে আগ্রহী হয়েছে, সমস্যা সমাধান শিখেছে, মুগ্ধ হয়েছে, প্রেমে পড়েছে গণিতের। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

খেলা ও অঙ্ক

গত পর্বের পরে

 ১৪. ২৮ ঘুঁটির সারি

ডোমিনো খেলার সব নিয়মকানুন মেনে ২৮টি ঘুঁটিকে টানা সারিতে সাজাতে পারবেন?

 ১৫. এক সারির দুই মাথা

ডোমিনোর ২৮ ঘুঁটির সারি শুরু হচ্ছে পাঁচ ফোঁটার ঘুঁটি দিয়ে। তাহলে শেষ হবে কত ফোঁটা ঘুঁটিতে?

সমাধান

১৪. ধাঁধাটাকে একটু সহজ করে নেওয়ার জন্য সাতটা ডবল ঘুঁটিকে আলাদা করে রাখা যাক: ০-০, ১-১, ২-২ ইত্যাদি। ২১টটি ঘুঁটি থাকবে, তার ভেতরে প্রতিটি সংখ্যা আসছে ছয়বার করে। উদাহরণ দিচ্ছি, এই ৬টি ঘুঁটিতে চারটে করে ফোঁটা (প্রতি ঘুঁটির অর্ধেকটায়) থাকবে:

৪-০, ৪-১, ৪-২, ৪-৩, ৪-৫, ৪-৬

তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক সংখ্যার পুনরাবৃত্তি ঘটছে জোড়া জোড়া করে। এটা তাহলে পরিষ্কার যে এই ঘুঁটিগুলোকে পরপর সাজানো যেতে পারে। এটা করা হয়ে গেলে, অর্থাৎ ২১টা ঘুঁটি একটা টানা মালার মতো করে সাজানো হয়ে গেলে আগের সাতটা ডবল ঘুঁটিকে একই সংখ্যার ফোঁটায় শেষ হয়েছে, এমন ঘুঁটিগুলোর ভেতর ঢুকিয়ে দেব। যেমন এটা হবে দুটি ০, দুটি ১, দুটি ২ ইত্যাদির ভেতর। তারপরে খেলার নিয়ম মতো ২৮টা ঘুঁটিই একটা মালার আকারে সাজানো হয়ে যাবে।

১৫. ২৮ ঘুঁটির সারি যত ফোঁটাতে শুরু হয়েছে, ঠিক তত ফোঁটাতেই যে শেষ হবে, তা প্রমাণ করা সোজা। আসলে তা যদি না হয়, তবে সারির শেষ মাথায় যত ফোঁটা আছে, তার পুনরাবৃত্তি হবে বিজোড় সংখ্যায় (সারির ভেতরে সংখ্যাগুলো সবসময়েই জোড়া থাকবে)। যাই হোক, আমরা জানি যে একটা সম্পূর্ণ সেটে প্রতিসংখ্যার পুনরাবৃত্তি হয় আটবার, অর্থাৎ জোড়া সংখ্যায়।

সুতরাং, সারির শেষ মাথাগুলোতে অসমান সংখ্যার ফোঁটা হতে পারে বলে আমরা যদি মনে করে নিই, তা ভুল হবে। ফোঁটার সংখ্যা সমানই হবে। (গণিতে এ ধরনের যুক্তি-বিচারকে বলে ‘বিপরীত দিক থেকে প্রতিপাদন’।)

ঘটনাক্রমে সারির এই প্রকৃতির ভেতর আরও একটা মজার ব্যাপার আছে: সেটা হলো এই যে ২৮ ঘুঁটির সারির মাথাগুলোকে মিলিয়ে সবসময়ই একটা মালার আকার দেওয়া চলে। তাহলে একটা পুরো ডোমিনো সেটকে খেলার নিয়ম অনুসারে, খোলা প্রান্তওয়ালা সারি বা মালার মতো দুই রকম করেই সাজানো যেতে পারে।

পাঠকদের কৌতূহল হতে পারে যে এই মালা বা সারি কতভাবে তৈরি করা যেতে পারে? হিসেব-নিকেশের পরিশ্রমের ভেতর না গিয়ে আমরা বলতে পারি, যত উপায় আছে, সব মিলিয়ে তা একটা বিরাট সংখ্যা হবে। ঠিকঠাক বলা যায় যে ৭৯,৫৯,২২,৯৯,৩১,৫২০ রকম উপায় আছে। (অর্থাৎ ২১৩ × ৩ × ৫ × ৭ × ৪২৩১ -এর সমান)।

(চলবে...)