পাই দিবসে পাই নিয়ে যা জানা দরকার

আজকের তারিখটা খেয়াল করুন, ৩/১৪। মানে মার্চের ১৪ তারিখ। পাইয়ের প্রথম তিনটি অঙ্ক ৩.১৪। তে কারণে সারা বিশ্বের গণিতপ্রেমীরা এই দিনটিকে পাই দিবস হিসেবে পালন করে। 

পাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচিত অমূলদ সংখ্যা। হাজার বছর ধরে গণিতবিদদের কৌতূহলের বিষয় ছিল এই সংখ্যাটি। কিন্তু এই আশ্চর্য সংখ্যাটি কীভাবে আবিষ্কৃত হলো? হাজার বছর ধরে গবেষণার পরও কি এর কোনো রহস্য বাকি আছে? চলুন, কিছু তথ্যের সাহায্যে জানার চেষ্টা করি।

১. পাইয়ের মান মনে রাখার রেকর্ড

পাইয়ের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অঙ্ক মুখস্থ করার রেকর্ডটি ভারতের ভেলোরের রাজবীর মীনার দখলে। ২০১৫ সালের ২১ মার্চ তিনি ১০ ঘণ্টা ধরে ৭০ হাজার সংখ্যা মুখস্ত বলেন। এই অসাধারণ কীর্তির জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

এর আগে, ২০০৫ সালে চীনের চাও লু ৬৭ হাজার ৮৯০ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান মুখস্থ বলেছিলেন। তবে অফিশিয়াল রেকর্ডের বাইরে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা অনুসারে, জাপানের আকিরা হারাগুচি ২০০৫ সালে ১ লাখ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাই মুখস্থ বলার ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন! পরে তিনি তা আরও বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ পর্যন্ত মুখস্থ করেছিলেন। 

আরও পড়ুন

২. পাই একটা ভাষা

পাই সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে পিলিশ নামে একটি ভাষা তৈরি হয়েছে। এই ভাষায় প্রতিটি শব্দের অক্ষর সংখ্যা পাইয়ের দশমিক সংখ্যা অনুসারে সাজানো হয়। লেখক মাইক কিথ নট আ ওয়েক বইটি এই ভাষায় লিখেছিলেন। এই ভাষার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক:

‘Now I fall, a tired suburbian in liquid under the trees, Drifting alongside forests simmering red in the twilight over Europe.’

এখানে ‘Now’ শব্দে ৩টি অক্ষর, ‘I’ শব্দে ১টি, ‘fall’ শব্দে ৪টি—এভাবে এটি পাইয়ের মান ৩.১৪১৫…।

সবাইকে পাই দিবসের শুভেচ্ছা!

৩. এখন পর্যন্ত গণনা করা পাইয়ের সর্বোচ্চ মান

২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা একটি সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে পাই গণনার আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেন। টানা ১০৮ দিন সুপারকম্পিউটার চালিয়ে তারা পাইয়ের ৬২.৮ ট্রিলিয়ন দশমিক পর্যন্ত মান নির্ণয় করেন, যা আগের রেকর্ডের চেয়ে ১২ ট্রিলিয়ন বেশি! কিন্তু আসলেই কি এত বিশদে পাইয়ের মান নির্ণয়ের দরকার আছে? 

আরও পড়ুন

৪. নাসা মাত্র ১৬ দশমিক পর্যন্ত পাইয়ের মান ব্যবহার করে

বিশ্বের জটিল সব হিসাব মেলাতে নাসা কত দশমিক পর্যন্ত পাইয়ের মান ব্যবহার করে? ভাবতে পারেন সংখ্যাটা হাজার হাজার। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, নাসা মাত্র ১৬ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান ব্যবহার করে। নাসার মতে, সৌরজগতের সুনির্দিষ্ট মান গণনার জন্য ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫৮৯৭৯৩ পর্যন্ত যথেষ্ট। এর বেশি মান ব্যবহার করলে খুব সামান্যই পার্থক্য তৈরি হয়, যা গুরুত্বহীন।

বিশ্ব পাই দিবস উপলক্ষে বৃহত্তম মানব পাই তৈরি করেছে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ছবিটি ২০২০ সালের ১৪ মার্চ দুপুরে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল মাঠে
ছবি: আনোয়ার হোসেন

৫. যেভাবে আবিষ্কার হলো পাই

প্রায় ৪ হাজার বছর আগেও প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা পাই সংখ্যা সম্পর্কে জানত। ১৯০০-১৬৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তৈরি একটি ব্যাবিলনীয় মাটির ফলকে পাইয়ের মান দেওয়া ছিল ৩.১২৫। ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের একটি প্যাপিরাসে পাইয়ের মান পাওয়া গেছে ৩.১৬০৫। 

এরপর গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস পাইয়ের মান আরও নিখুঁতভাবে নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। তিনি পিথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করে বৃত্তের ভেতর ও বাইরের বহুভুজের সাহায্যে পাইয়ের কাছাকাছি একটি মান বের করেন। এটি পাই গণনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও পড়ুন