প্রথম দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে এটা পৃথিবীর কোনো ছবি নয়। কিন্তু না, এটা আসলে একটা ফুলের ছবি। পৃথিবীর বুকেই জন্মানো একটি ফুল। Hydnora africana উদ্ভিদের এই ফুল পাওয়া যায় দক্ষিণ আফ্রিকার মরুভূমিতে। এই উদ্ভিদের কিম্ভূত কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এর কোনো মূল নেই, পাতা নেই, এমনকি সারা দেহে কোনো ক্লোরোফিলও নেই। পুরো উদ্ভিদটি
সম্পূর্ণরূপে মাটির নিচে থাকে। শুধু ফুলটি মাটির ওপরে বের হয়ে আসে।
উদ্ভিদটির সারা দেহে অনেক চোষক রয়েছে। এসব চোষকের সাহায্যে সে তার শিকার উদ্ভিদের মূল থেকে রস সংগ্রহ করে। গুল্মজাতীয় Euphorbia maurtanica উদ্ভিদেরা এদের প্রধান শিকার। Hydnora-i এই চোষকের জন্য এদের মাটির নিচের ভ্যামপায়ার বলেও ডাকা হয়। উদ্ভিদটি চেনার একমাত্র উপায় হলো মাটির ওপরে এর ফুল দেখে। কুঁড়ি থেকে পূর্ণাঙ্গ ফুল হতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। পূর্ণাঙ্গ ফুল থেকে পচা মাংসের মতো তীব্র কটু গন্ধ বের হয়। এই গন্ধ থেকেই অনেক দূর থেকেও ফুলের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়।
ফুলের গোলাপি রং এবং কটু গন্ধ অনেক পতঙ্গকে আকর্ষণ করে। সেই আকর্ষণে কোনো পতঙ্গ ফুলের গহ্বরে ঢুকে গেলে আর বের হতে পারে না। ফুলের ভেতরে তৈলাক্ত মোমের স্তর আছে। তাই পতঙ্গ ফিরে আসার চেষ্টা করলেও সেই পথে পিছলে পড়ে যায় এবং ফুলের পরাগরেণু গায়ে মেখে ফেলে। এভাবেই পরাগায়ন ঘটে উদ্ভিদটির। তারপর ধীরে ধীরে ফুলের গহ্বর আবার অবমুক্ত হলে পতঙ্গরা মুক্তি পায়। এভাবেই বংশবিস্তার করে এই উদ্ভিদ ভ্যাম্পায়াররা।
*লেখাটি ২০১৮ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত