নিকোলা টেসলা: আধুনিক যুগের প্রমিথিউস

নিকোলা টেসলা ছিলেন অন্তর্মুখী মানুষ। তিনি এ বিশ্বে আধুনিক যুগ তৈরি করে গেছেন, কিন্তু নিজে কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। তাঁর আবিষ্কারগুলো কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করে গেছে এবং শত শত মিলিয়নিয়ার তৈরি করে গেছে। অথচ তিনি নিজে মারা গেছেন একাকী কপর্দকহীন অবস্থায়, সবার অগোচরে একটি সাধারণ হোটেলের নির্জন কক্ষে।

ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে তাঁর খ্যাতি উল্কার মতোই ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি উদ্ভাবক, প্রকৌশলী ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে সুধীসমাজে পরিচিত হয়ে ওঠেন। মানুষ যখন বিদ্যুৎকে একটি রহস্য মনে করে ভয় পেত, তখন তিনি বিদ্যুৎকে হাতের তালুর মতো নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।

পৃথিবীতে তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন সহজলভ্য বিদ্যুৎশক্তির যুগ, যাঁর উদ্ভাবিত এসি জেনারেটর ও মোটরের শক্তি দিয়ে শুরু হয় ব্যাপক শিল্পোৎপাদন। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছে রোবট ও অটোমেশনের যুগ, যা মানুষের কায়িক শ্রম হ্রাস করে যন্ত্রকে মানুষের দাসে পরিণত করেছে। মার্কনির বেতার প্রযুক্তি আবিষ্কারের কয়েক বছর আগেই তিনি পৃথিবীকে একই প্রযুক্তি উপহার দিয়েছেন। তিনি আমাদের দিয়েছেন নিয়ন ও অন্যান্য গ্যাসের টিউবলাইট, ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব, হাই ফ্রিকোয়েন্সি বিদ্যুৎ। ফলে সম্ভব হয়েছে শিল্প ও চিকিৎসাজগতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের ব্যবহার। সময়ের অনেক আগেই জন্ম নেওয়া সুপারম্যান নিকোলা টেসলা, যাঁর সব আবিষ্কার ধারণ করতে কিংবা সঠিক মূল্যায়ন করতে তখনকার পৃথিবী তৈরি ছিল না।

২.

টেসলা জন্মেছিলেন ১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই। তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে, স্মিলিয়ানে। বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার স্মিলিয়ান শহরে। অবশ্য টেসলার কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হয়ে কেউ কেউ বলতেন, টেসলা হচ্ছেন এলিয়েন শিশু—মানে পৃথিবী নয় ভিন্ন কোন গ্রহের মানুষ। তাঁকে এলিয়েনরা ক্রোয়েশিয়ায় একটি পাহাড়ি গ্রামে ফেলে রেখে গিয়েছিল বলে এসব মানুষদের ধারণা।

যাইহোক, নিকোলার বাবা মিলুতিন টেসলা ছিলেন পাদরি। মা ডুকা মানদিস ছিলেন গৃহিণী। তবে নানা ধরনের গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি তৈরিতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে টেসলা ছিলেন চতুর্থ। টেসলা জন্মস্থান স্মিলিয়ানে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি জার্মান ও স্লাভিক ভাষা, গণিত, ধর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে পড়ার সময় বিদ্যুৎশক্তি নিয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন বিজ্ঞান শিক্ষকের অনুপ্রেরণায়। পরে কার্লোভাক শহরে হাইস্কুলে ভর্তি হন টেসলা। স্কুলেই গণিতে তাঁর প্রতিভার ঝলক দেখা যায়। মুখে-মুখেই তিনি ইন্ট্রিগ্র্যাল ক্যালকুলাস করতে পারতেন। অবশ্য তাঁর শিক্ষকেরা এ বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাঁরা মনে করতেন, টেসলা বোধ হয় ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন।

টেসলার বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে তাঁরই মতো পাদরি হোক। কিন্তু টেসলা চেয়েছিলেন প্রকৌশলী হতে। এ লক্ষ্যেই শহরে অস্ট্রিয়ান পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম বছরের পরই খুব ভালো ফল করেন। পলিটেকনিক স্কুলেই টেসলা বিরামহীন কাজের অভ্যাস গড়ে তোলেন। ভোর তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করতেন। এমনকি তা রোববার ও অন্যান্য ছুটিছাটার দিনেও।

কিন্তু সময়মতো পরীক্ষা দিতে পারায় গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে ব্যর্থ হন টেসলা। এ সময় নিজের শহর ছেড়ে তিনি অন্য শহরে আসেন। একটা কাজও জুটিয়ে নেন। কাজের শেষে অবসর সময়টা তাস খেলে কাটাতেন রাস্তার ছেলেদের সঙ্গে। এ সময় তাঁর একবার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। বাবা চেয়েছিলেন তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু টেসলা রাজি হননি। কিছুদিনের মধ্যে নিকোলার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এরপর আবার পড়াশোনায় মনযোগী হন টেসলা। ভর্তি হন প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় দর্শন। কিন্তু এবারও পড়াশোনায় মন বসাতে ব্যর্থ হন। দেশ ছেড়ে চলে যান হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। সেখানকার টেলিফোন এক্সচেঞ্জে প্রধান ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় টেসলা তাঁর প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি মেরামতির পাশাপাশি সেগুলোকে আরও উন্নত করে তোলেন।

এরপর তাঁর ঠিকানা ফ্রান্সে। রাজধানী প্যারিসের কন্টিনেন্টাল এডিসন কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন। সেখানেই হাতে–কলমে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ পান বিদ্যুৎ আর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নিয়ে। সেখানকার কর্তৃপক্ষ প্রকৌশল ও ব্যবহারিক কাজে টেসলার জ্ঞান দেখে অবাক হয় এবং তাঁকে তাদের কোম্পানির ডায়নামো ও মোটরের ডিজাইন উন্নতকরণের কাজ করার সুযোগ দেন। জার্মানি ও ফ্রান্সে এডিসন কোম্পানির অন্যান্য প্ল্যান্টের নানা টেকনিক্যাল সমস্যা দূর করতে তাঁকে পাঠানো হয় এবং তিনি সেগুলো সম্পাদন করেন। প্যারিসে এডিসন কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা চার্লস ব্যাচেলরের একটি চিঠি নিয়ে ১৮৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। এরপর নিউইয়র্কে কোম্পানির হেড অফিসে এসে স্বয়ং টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে দেখা করেন নিকোলা টেসলা।

নিউইয়র্কে শুরুতে এডিসনের ম্যানহাটান শাখায় কাজ শুরু করেন টেসলা। তবে এডিসন এডিসনের কপটতায় বিরক্ত হয়েই তাঁকে ছেড়ে যান। তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, এডিসন তাঁর ডিসি কারেন্টের জেনারেটর উন্নত করতে টেসলাকে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কঠোর পরিশ্রম করে সেই কাজ সফলভাবে সম্পাদন করেন টেসলা। কিন্তু প্রতিশ্রুত অর্থ দাবি করতেই এডিসন তাঁকে বলেন, ‘মি. টেসলা, তুমি এখনো আমাদের আমেরিকান ঠাট্টা বুঝে উঠতে শেখোনি।’ টেসলা এতে অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ন হন। তাঁর ডায়েরিতে ৭ ডিসেম্বর ১৮৮৪ থেকে ৪ জানুয়ারি ১৮৮৫ পর্যন্ত সময়টিতে শুধু একটি কথাই লেখা ছিল, ‘এডিসন মেশিন ওয়ার্কসকে বিদায়’।

৩.

এডিসন কোম্পানিকে ছেড়ে গেলেও সারা জীবন টেসলা ও তাঁর আবিষ্কৃত এসি জেনারেটরের বিদ্যুতের বিরোধিতা করে গেছেন টমাস এডিসন। নানাভাবে টেসলাকে জব্দও করতে চেয়েছেন। এডিসন কোম্পানি থেকে চাকরি ছাড়ার পর বেশ কিছু জায়গায় তিনি কাজ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু নানা কারণে কোথাও স্থির হতে পারেননি। এ সময়ে তাঁকে দৈনিক মজুরির বিনিময়ে দৈহিক পরিশ্রমের কাজও করতে হয়। একবার নিউইয়র্কের রাস্তায় মজুরেরা গর্ত খোঁড়ার কাজ করছেন দেখে টেসলা তাদের সুপারভাইজারকে বলেন, তিনিও এ কাজ করতে চান। দীর্ঘদেহী টেসলার নির্মেদ শরীর আপাদমস্তক দেখে ওই সুপারভাইজার ভ্রু কুঁচকে বলেন, ‘তাহলে যাও। হাতে থুতু দিয়ে কোদাল হাতে নেমে পড়ো। দিন শেষে নগদ দুই ডলার করে পাবে।’

কিছুদিন পর ১৮৮৬ সালের শেষ দিকে মি. ব্রাউন নামের এক ব্যাংকার এবং মি. পেক নামের এক অ্যাটর্নির সঙ্গে মিলে টেসলা ইলেকট্রিক কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন, যা পরের বছর এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল মোটর, জেনারেটর ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণা করা। এসব নিয়ে কাজ করতে করতেই কিছুদিন পর তিনি বিদ্যুৎ-চালিত ইনডাকশন মোটর আবিষ্কার করেন। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপের নানা দেশেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এডিসনের ডিসি কারেন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দূরে সরবরাহ করা যেত না, কিন্তু এসি কারেন্ট অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া যেত বলে তা সহজেই ব্যবহার করা যেত। এভাবেই টেসলার জেনারেটরের দিকে আকৃষ্ট হয় বিখ্যাত ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোং ওয়েস্টিং হাউস। তারা প্রচুর আর্থিক সুবিধা দিয়ে টেসলাকে তাদের সহযোগী করে নেয়। অচিরেই এডিসন, থম্পসন-হিউস্টন এবং ওয়েস্টিং হাউস—এ তিনটি বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ‘বিদ্যুৎ–যুদ্ধ’। টেসলা অবশ্য খুব বেশি দিন ওয়েস্টিং হাউসের সঙ্গে থাকেননি। তাঁর মাথায় খেলতে থাকা নানা চিন্তাভাবনাকে রূপ দিতে নিজেই গবেষণাগার বানিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৮৯১ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন তিনি।

পরবর্তী দু–তিন বছরের মধ্যেই টেসলা ৩০টির বেশি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেটেন্ট গ্রহণ করেন। যার মধ্যে রয়েছে টেসলা বৈদ্যুতিক অসিলেটর, বিদ্যুতের মিটার, উন্নত প্রযুক্তির নানা ধরনের ইলেকট্রিক বাল্ব, হাই ভোল্টেজ ট্রান্সফরমার ইত্যাদি যন্ত্র। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের শক্তি ব্যবহার করে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে টেসলা ১৮৯৩ সালে চুক্তিবন্ধ হন। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম আধুনিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।

নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ১৮৯৮ সালে রেডিও কন্ট্রোলচালিত একটি ছোট নৌকা চালিয়ে টেসলা সমবেত দর্শকদের অবাক করে দেন। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে তিনি নৌকাটি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু দর্শকদের তা বুঝতে না দিয়ে মুখে বলছিলেন, ‘ডানে ঘোরো, বাঁয়ে ঘোরো, সামনে চলো’ ইত্যাদি। দর্শকেরা টেসলার আসল কারসাজি বুঝতে না পেরে একে প্রেতজাদু ভাবছিলেন। টেসলা তাঁর আবিষ্কারটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মার্কিন সামরিক দপ্তরে তা বিক্রি করতে চান। কিন্তু তারা তাতে খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি। অবশ্য পরে অনেক দেশই এ প্রযুক্তি প্রথম মহাযুদ্ধের যুদ্ধকৌশলে ব্যবহার করে।

১৮৯০ থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত টেসলা তাঁর শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেন তারবিহীন বিদ্যুৎ দেওয়ার যন্ত্র তৈরিতে। যাতে তিনি সারা বিশ্বে সস্তায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেন। এ জন্য ১৮৯৯ সালে কলোরাডোয় তিনি একটি পরীক্ষাগার স্থাপন করেন। বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত বড় কোম্পানিগুলো নানাভাবে টেসলার এ কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ফলে টেসলা শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্প নিয়ে আর অগ্রসর হতে পারেননি। তিনি জে পি মর্গ্যানের সহযোগিতায় ১৯০১ সালে নিউইয়র্কের সোরহ্যামে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম ‘ওয়ার্ডেনক্লিক টাওয়ার’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটিও শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়। অনেক পরে, ১৯১৭ সালে একে পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়।

৪.

অকৃতদার টেসলা ১৯০০ সাল থেকে ১৯২২ পর্যন্ত নিউইয়র্কের ওয়ালডর্ক এস্টোরিয়া হোটেলে বাস করেন। এরপর চলে যান সেন্ট রেজিস হোটেলে। আর্থিক অনটনে তিনি এ সময় তাঁর হোটেলভাড়াও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এরপর তিনি হোটেল নিউইয়র্কারে আসেন ১৯৩৪ সালে। তখন থেকে তাঁর সাবেক কোম্পানি ওয়েস্টিং হাউস তাঁর খরচ মেটাতে মাসে ১২৫ ডলার করে ভাতা মঞ্জুর করে। এ টাকা দান হিসেবে নিতে অস্বীকার করেন টেসলা। তারা টেসলাকে তাদের ‘পরামর্শ ভাতা’ হিসেবে মঞ্জুর করে। এই ভাতা তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

টেসলার ৭৫তম জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয় ১৯৩১ সালে। এতে আইনস্টাইনসহ ৭০ জন বরেণ্য বিজ্ঞানী অভিনন্দন জানান। টাইম সাময়িকীতে টেসলার ছবি ছাপা হয় ‘সারা পৃথিবীটাই তাঁর পাওয়ার হাউস’ শিরোনামে। টেসলা এতে বেশ মজা পেয়ে যান এবং এরপর থেকে প্রতিটি জন্মদিনে বন্ধুবান্ধব ও সাংবাদিকদের দাওয়াত করে তাঁর জন্মদিন নিয়মিত পালন ও অতীত কাজকর্মের বিবরণ পেশ করেন।

টেসলা প্রতিদিনই সময় করে পার্কে বেড়াতে যেতেন এবং সেখানে কবুতরদের খাবার দিতেন। কোনো আহত কবুতর পেলে তিনি তার চিকিৎসা ও সেবাযত্ন করতেন। একটি আহত সাদা স্ত্রী কবুতরের ডানা ভেঙে গিয়েছিল, তাকে চিকিৎসা ও সেবা সুস্থ করে করে তোলেন। এর ভাঙা ডানা সারাতে তিনি একটি যন্ত্রও তৈরি করেন।এ সময় টেসলা ভাবতেন যে কবুতরটি আছে বলেই তিনি বেঁচে থাকার কিছু মানে খুঁজে পান। ৮১ বছর বয়সী টেসলা ১৯৩৭ সালে গভীর রাতে পার্কে কবুতরদের খাবার দিতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হন এবং তাঁর কোমর ও পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। কিন্তু তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে অস্বীকার করেন, যেমনটা সারা জীবন ধরে করেছেন। এ আঘাত থেকে তিনি আর কখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি।

এ ঘটনার ছয় বছর পর ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি হোটেল নিউইয়র্কারের ৩৩২৭ নম্বর কক্ষে ৮৬ বছর বয়সী টেসলাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। টেসলার পরিচারিকা এলিস মোনাঘান কক্ষের বাইরে টাঙানো ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব’ সতর্কবাণী উপেক্ষা করেই ঘরে ঢোকেন এবং তাঁকে মৃত দেখতে পান। পরে চিকিৎসকেরা ধারণা করেন, টেসলার মৃত্যুর কারণ করোনারি থ্রম্বোসিস।

এভাবেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় শেষ হয় বিশ শতকের অন্যতম সেরা উদ্ভাবক—আধুনিক যুগের প্রমিথিউস জীবন।

লেখক: চিকিৎসক

সূত্র: মাই ইনভেনশন: দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব নিকোলা টেসলা; দ্য ম্যান হু ইনভেনটেড দ্য টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি: নিকোলা টেসলা/ রবার্ট লোম্যাস

উইকিপিডিয়া