সিসি বনাম হর্সপাওয়ার: কত ঘোড়ায় কত ইঞ্জিন

গাড়ি বা মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের শক্তি বা ক্ষমতা মাপতে গেলে ব্যবহৃত হয় হর্সপাওয়ার

গাড়ি বা মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের শক্তি বা ক্ষমতা মাপতে গেলে ব্যবহৃত হয় হর্সপাওয়ার। অনেকে বাংলা করে বলেন ‘ঘোড়ার শক্তি’। কিন্তু কেন? ইঞ্জিনের সঙ্গে ঘোড়ার সম্পর্কই-বা কী? বিষয়টা বুঝতে হর্সপাওয়ার নামকরণের ইতিহাস জানতে হবে সংক্ষেপে।

স্কটিশ প্রকৌশলী জেমস ওয়াট বাষ্পইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। যেহেতু তিনিই আবিষ্কারক, তাঁর আগে যে এই ইঞ্জিনের—বা সাধারণভাবে ইঞ্জিনের—ব্যবহার ছিল না, তা বলা বাহুল্য। তাহলে এই নতুন জিনিসটা কত শক্তিশালী, তা তিনি মানুষকে বোঝাবেন কেমন করে? ওয়াট ভাবলেন, মানুষের পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যাক।

জেমস ওয়াট

মানুষ সে কালে ঘোড়া দিয়ে কাজ করাত। কীরকম সেই কাজ? জেমস ওয়াট সেটা একদম হিসাব করে দেখেছিলেন। তিনি দেখলেন, একটা ঘোড়া ১ মিনিটে প্রায় ৩৩ হাজার পাউন্ড (অর্থাৎ প্রায় ১৪ হাজার ৯৬৮ কেজি) ওজন ১ ফুট ওপরে ওঠাতে পারে। এটাকে সংক্ষেপে বলা হয় ৩৩ হাজার ফুট-পাউন্ড/মিনিট। জেমস ওয়াট এর সঙ্গেই ইঞ্জিনের ক্ষমতা তুলনা করতে চাইলেন। এ জন্য ঘোড়ার এইটুকু ক্ষমতা—১ মিনিটে ৩৩ হাজার ফুট-পাউন্ডকে আদর্শ ধরে নিলেন। এরই নাম দেওয়া হলো হর্সপাওয়ার বা ঘোড়ার শক্তি! ধীরে ধীরে এটিই আদর্শ এককে পরিণত হয়। একে প্রকাশ করা হয় HP প্রতীক দিয়ে। ইঞ্জিনের ক্ষমতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এই একক। আধুনিক গাড়ির ইঞ্জিন সাধারণত ১০০ থেকে ৫০০ HP হয়। একেই বিজ্ঞাপনের রংচঙে ভাষায় বলা হয় ১০০-৫০০ ঘোড়ার শক্তি।

তবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ক্ষমতা বোঝাতে আরও একটি একক ব্যবহৃত হয়। এই এককটি স্বয়ং জেমস ওয়াটের নামে—ওয়াট (W)। দোকানে বাতি কিনতে গেলে এই ওয়াট এককেই আমরা এর ক্ষমতা মাপি। বলি, ‘আমাকে বিশ ওয়াটের একটা লাইট দেন।’ একদম সরল করে বললে, ১ হর্সপাওয়ারে প্রায় ৭৪৬ ওয়াট/সেকেন্ড।

মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন
১৯৯৩ সালে জীববিজ্ঞানী আর ডি স্টিভেনসন এবং আর জে ওয়াসারসাগ একটা পরীক্ষা করে দেখান, একটা ঘোড়ার ক্ষমতা ১ হর্সপাওয়ারেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁরা দেখান, ঘোড়া সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ওয়াট, অর্থাৎ সেকেন্ডে ২৪ হর্সপাওয়ারের সমান কাজ করতে পারে

এবারে একটা মজার কথা বলি। ১৯৯৩ সালে জীববিজ্ঞানী আর ডি স্টিভেনসন এবং আর জে ওয়াসারসাগ একটা পরীক্ষা করে দেখান, একটা ঘোড়ার ক্ষমতা ১ হর্সপাওয়ারেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁরা দেখান, ঘোড়া সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ওয়াট, অর্থাৎ সেকেন্ডে ২৪ হর্সপাওয়ারের সমান কাজ করতে পারে। ‘মাছের তেলে মাছ ভাজা’কে একটু বদলে নিয়ে একে আপনি চাইলে ‘ঘোড়ার তেলে ঘোড়া ভাজা’ বলতেই পারেন!

হর্সপাওয়ার বনাম সিসি

আগ্রহী পাঠক হয়তো ভাবছেন, হর্সপাওয়ার কোথায়, মোটর সাইকেল বা অন্য যেকোনো গাড়ির ইঞ্জিনের শক্তি তো মাপা হয় সিসিতে। কথায় কথায় আমরা বলি, ১০০ সিসি ইঞ্জিন কিংবা ৮০০ সিসি ইঞ্জিন। আসলে সিসি ইঞ্জিনের ক্ষমতা মাপার জন্য ব্যবহৃত হয় না।

সিসির পূর্ণরূপ কিউবিক সেন্টিমিটার। শুনে হয়তো বুঝতে পারছেন, এটি ব্যবহৃত হয় ইঞ্জিনের আকার বা ধারণক্ষমতা বোঝাতে। ইঞ্জিনের ভেতরে থাকে সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডারগুলোর ভেতরে কতটা জ্বালানি ও বাতাসের মিশ্রণ পুড়ে শক্তি উৎপাদন করতে পারে, তা কীভাবে বোঝা যাবে? বোঝা যাবে সিলিন্ডারের আকার থেকে। অর্থাৎ ইঞ্জিনের ভেতরের সিলিন্ডারগুলো আকারে কতটা বড়—এবং আরও সরল করে বললে, ইঞ্জিন কতটা বড়—তা বোঝানো হয় সিসি (CC) দিয়ে।

হর্সপাওয়ার যেভাবে এল
সিসি সরাসরি কার্যক্ষমতা বোঝায় না। তবে বেশি সিসির ইঞ্জিন তথা বড় আকারে ইঞ্জিনের ক্ষমতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল
আরও পড়ুন

এখানে যে কথাটা অবশ্যই বলতে হবে, তা হলো, বড় ইঞ্জিন বা বেশি সিসির ইঞ্জিন মানেই কিন্তু তার শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা অথবা কার্যক্ষমতা বেশি হবে, তা নয়। বরং ইঞ্জিনের ডিজাইন, জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা এবং প্রযুক্তির মানের ওপর নির্ভর করে ইঞ্জিনের ক্ষমতা কতটা হবে। অর্থাৎ সিসি সরাসরি কার্যক্ষমতা বোঝায় না। তবে বেশি সিসির ইঞ্জিন তথা বড় আকারে ইঞ্জিনের ক্ষমতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আবার মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, ইঞ্জিনে জ্বালানির ব্যবহার বা এর স্থায়িত্ব ইত্যাদির সঙ্গে সিসির তথা ইঞ্জিনের আকারের সম্পর্ক আছে।

তাহলে এককথায় বিষয়টা কী দাঁড়াল? বিষয়টা হলো, বেশি সিসির ইঞ্জিন মানে বড় ইঞ্জিন। এতে বেশি জ্বালানি পোড়ে এবং সাধারণত শক্তিও বেশি পাওয়া যায়। আর হর্সপাওয়ার বেশি হলে গাড়ি বা বাইক বেশি গতিশীল বা শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ দুটো পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। শক্তি, গতি বা কার্যক্ষমতা বুঝতে দেখতে হয় হর্সপাওয়ার। আর ইঞ্জিনের আকার বা জ্বালানি খরচ কেমন হবে এবং ইঞ্জিন থেকে কতটা শক্তি পাওয়া যাবে, তা বুঝতে সিসির মান দেখতে হয়।

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, উইকিপিডিয়া