পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুতই। বিজ্ঞানচিন্তায় প্রকাশিত ‘আট বিলিয়ন মানুষের পৃথিবী’ নিবন্ধের সূত্রে জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা আট বিলিয়নের বেশি। শেষ এক বিলিয়ন মানুষ পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে মাত্র ১২ বছরে। ২০১১ সাল বা কাছাকাছি সময় থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত।
জনসংখ্যা প্রথম বিলিয়ন হতে লেগেছিল তিন লাখ বিলিয়ন বছর। অষ্টম বিলিয়ন হতে সময় লাগল মাত্র ১২ বছর। ইতিমধ্যে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বরকে জাতিসংঘ ‘আট বিলিয়ন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, প্রশ্ন উঠতেই পারে, পৃথিবীতে সর্বোচ্চ কত মানুষ থাকতে পারবে একসঙ্গে? প্রশ্নটাকে আরেকটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। কালে কালে কোটি কোটি মানুষ পৃথিবীতে এসেছেন, তাঁরা মারাও গিয়েছেন। আমরা যখন বলছি পৃথিবীর জনসংখ্যা, তখন কিন্তু তাঁদের বোঝাচ্ছি না। বোঝাচ্ছি, এই মুহূর্তে পৃথিবীতে একসঙ্গে যত মানুষ বেঁচে আছেন, তাঁদের। সেই সংখ্যাটাই বর্তমানে আট বিলিয়ন বা ৮০০ কোটির বেশি। সে জন্যই ওই প্রশ্ন—একসঙ্গে পৃথিবীতে কত মানুষ থাকতে পারবেন? এর কি কোনো সীমা আছে?
পৃথিবী সূর্য থেকে এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ শক্তি পায়, গোটা এক বছরেও অত শক্তি মানবসভ্যতার দরকার পড়ে না।
২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওবায়োলজিস্ট বা সামাজিক জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড উইলসন এর একটা ধারণা দিয়েছেন। তাঁর মতে, পৃথিবীতে যে পরিমাণ বাসযোগ্য ও চাষ উপযোগী জমি আছে, তা সর্বোচ্চ ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি মানুষকে জায়গা দিতে পারবে, যোগান দিতে পারবে পর্যাপ্ত খাদ্যের। যেহেতু মার্কিন বিজ্ঞানী, সে হিসাবে তিনি আরেকটি ধারণার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, অন্য দেশগুলোর মানুষের খাদ্যাভাস যদি গড়পড়তা যেকোনো সাধারণ মার্কিন নাগরিকের মতো হয়, তাহলে সে পরিমাণ খাদ্যের যোগান দিতে চারটা পৃথিবী লাগবে! আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হবে খাবার পানি নিয়ে। কারণ, পৃথিবীর মোট পানির মাত্র তিন শতাংশ খাবারোপযোগী। তা ছাড়া বেশির ভাগ পানিই রয়েছে বরফ হিসেবে, বরফাঞ্চলগুলোতে। এ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক জায়গায় জমা পানি ব্যবহারোপযোগী নয়।
তাত্ত্বিকভাবে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। কারণ, পৃথিবী সূর্য থেকে এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ শক্তি পায়, গোটা এক বছরেও অত শক্তি মানবসভ্যতার দরকার পড়ে না। এই শক্তি যদি আমরা কোনোভাবে ধরতে পারি, ব্যবহারোপযোগী করতে পারি, তাহলে সমুদ্রের পানিকে লবণমুক্ত করে খাওয়া সম্ভব হতে পারে। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া ও শৈবালের মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে খাবার।
ইদানীং শিশুমৃত্যুর হার কমার পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধিও কমে এসেছে। কমে গেছে নতুন শিশুজন্মের হার। এর নানা কারণ রয়েছে।
সমস্যা হলো, জাতিসংঘ জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হিসাব করেছে, তাতে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১০ বিলিয়নও ছাড়িয়ে যাবে। ২০৫০ সালের দিকে এ সংখ্যা ৯.৭ বিলিয়নে পৌঁছে যাওয়ার কথা। ২১০০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা হতে পারে ১১.২ বিলিয়ন। তবে বিজ্ঞানীরা এ হিসাব সংশোধন করে বর্তমানে বলছেন, সংখ্যাটা ১০.৫ বিলিয়নের মতো হতে পারে। এ সংখ্যাও আসলে পৃথিবীর সক্ষমতার চেয়ে বেশি।
তবে ইদানীং শিশুমৃত্যুর হার কমার পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধিও কমে এসেছে। কমে গেছে নতুন শিশুজন্মের হার। এর নানা কারণ রয়েছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি, নারীদের শিক্ষিত হয়ে ওঠা, শিশুবিবাহ প্রতিরোধের পাশাপাশি অনেক দম্পতি, বিশেষ করে নারীরা সন্তান জন্মদানে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে হয়তো পৃথিবীর জনসংখ্যা ২১০০ সালে ১০ বিলিয়ন ছাড়াবে না। পৃথিবীর জনসংখ্যা সীমা হয়তো পৃথিবী নয়, মানুষের সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই নির্ধারণ করে দেবে শেষপর্যন্ত।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, উইকিপিডিয়া, বিজ্ঞানচিন্তা