পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ৭ স্থলচর প্রাণী

বিশাল এ পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণী আছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ প্রজাতির প্রাণীর খবর আছে। তবে তাঁদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রাণীর মোট প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৮৭ লাখ। অর্থাৎ বেশির ভাগই এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এত লাখ লাখ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে লম্বা বা উঁচু প্রাণী কোনগুলো?

সে প্রশ্নে যাওয়ার আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলা দরকার। এখানে আমরা শুধু উঁচু প্রাণীর তালিকা করছি। সবচেয়ে বড় বা দীর্ঘতম প্রাণী নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৮ ফুট। আকারেও বিশাল। কিন্তু এটা খুব বেশি উঁচু না। তা ছাড়া তিমি বাস করে পানিতে। তাই এটি এ তালিকায় আসবে না। আমরা শুধু স্থলচর ৭টি প্রাণী নিয়ে এখানে আলোচনা করব। 

জিরাফ

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী জিরাফ। প্রায় ১৯ ফুট উঁচু প্রাণীটি (এটা এ প্রাণীর গড় উচ্চতা)। মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে আরেকটু ভালো বোঝা যাবে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের গড় উচ্চতা মোটামুটি ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। অর্থাৎ একটা জিরাফের গড় উচ্চতা মানুষের ৩ গুণেরও বেশি। উচ্চতার দিক থেকে জিরাফের শুধু পা-ই মানুষের চেয়ে লম্বা। জিরাফের পায়ের গড় উচ্চতা ৬ ফুট। এদের দৃষ্টিশক্তিও বেশ ভালো। অতিরিক্ত লম্বা হওয়ায় দূর থেকে এরা শিকারিকে দেখতে পায়। জিরাফের লাথি অত্যন্ত মারাত্মক। তাই বাঘ বা চিতাও এদের ধারেকাছে ঘেঁষে না। এ জন্য জিরাফ মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম জিরাফা ক্যামেলোপারডালিস (Giraffa camelopardalis)। জিরাফের প্রধান খাবার গাছের পাতা।

আফ্রিকান হাতি

জিরাফের পরেই রয়েছে আফ্রিকান হাতি, বিশেষ করে আফ্রিকান বুশ এলিফ্যান্ট। এদের বৈজ্ঞানিক নাম লক্সোডন্টা আফ্রিকানা (Loxodonta africana)। এ প্রজাতির হাতির উচ্চতা প্রায় ১৩ ফুট। জিরাফের চেয়ে হাতি শিকার করা আরও বেশি কঠিন। আফ্রিকান পুরুষ হাতির ওজন প্রায় ৬ হাজার কেজি। আর মেয়ে হাতির ওজন প্রায় ৩ হাজার কেজি। এখন পর্যন্ত আমাদের জানা সবচেয়ে বড় আফ্রিকান হাতির ওজন প্রায় ১০ হাজার কেজি। ফলে বুঝতেই পারছেন, এই আকারের একটা জন্তুকে অন্য প্রাণীর পক্ষে শিকার করা প্রায় অসম্ভব। তাই এরা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর বাঁচে। তবে প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন আইইউসিএন আফ্রিকান হাতিকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে। এ জন্য দায়ী আসলে মানুষ। 

উটপাখি

উটপাখি প্রায় ১০ ফুট লম্বা হয়। পাখিদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে লম্বা। প্রায় ১৫০ কেজি ওজনের এ পাখি ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। এদের ডিমও সবচেয়ে বড়। ওজন প্রায় দেড় কেজি। ডিম পেড়ে বালির নিচে লুকিয়ে রাখে। দূর থেকে এই অবস্থায় উটপাখিকে দেখলে মনে হয়, বালির মধ্যে মাথা গুঁজে রয়েছে। তবে পাখি হলেও এরা উড়তে পারে না। আফ্রিকান ওয়াইল্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের মতে, উটপাখির দাঁত নেই। উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম স্ট্রুথিও ক্যামেলাস (Struthio camelus)।

বাদামি ভালুক

গায়ের রং বাদামি বলে এই ভালুকের নাম হয়েছে বাদামি ভালুক (অনেকে আবার মজা করে ভাল্লুকও বলেন)। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাণীটি দেখা যায়। তবে এ ভালুক সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ইউরোপে। পৃথিবীর বৃহত্তম মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে এ ভালুক অন্যতম। উচ্চতা ৭ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। চার পায়ে হাঁটার সময় উচ্চতা ৫ ফুটের বেশি হবে না। তবে এরা পেছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে মানুষের মতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন উচ্চতা হয় প্রায় ৯ ফুট। এদের ওজন প্রায় ২৩০ থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত হয়। বৈজ্ঞানিক নাম উরসাসআর্কটোস(Ursus arctos)।

আলাস্কান মুজ 

আলাস্কা ও কানাডায় দেখা যায় এ প্রাণী। এরা বেশির ভাগ সময় একাকী বাস করে। ওজন হতে পারে প্রায় ৬৩৫ কেজি। জন্মের সময় ওজন থাকে মাত্র ১৩ কেজির মতো। তবে পাঁচ মাসের মধ্যে তা বেড়ে হয় প্রায় ১২৭ কেজি। গড়ে প্রায় সাড়ে ৭ ফুট উঁচু হয় আলাস্কান মুজ। সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দৈনিক প্রায় ৩০ কেজি খাবার খেতে হয় এদের। উইলো গাছের পাতা এদের প্রিয় খাবার। তবে পর্যাপ্ত উইলো পাতা না পেলে ঘাসও খায়। এরা ভালো সাঁতারুও বটে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম (ট্রাইনোমিয়াল নেম) আলসেস আলসেস গিগাস (Alces alces gigas), তবে ‘গিগাস’ এদের উপপ্রজাতির নাম। 

উট

উট সম্ভবত উত্তর আমেরিকা থেকে ধীরে ধীরে এশিয়া ও আফ্রিকায় পৌঁছেছে। মরুভূমিতে বাস করে বলে এদের বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। বিভিন্ন প্রজাতির উট আছে। কোনোটার কুঁজ থাকে একটা, আবার কোনোটার দুটি। এই কুঁজে থাকে চর্বি। শক্তি উৎপাদনে এ চর্বি ব্যবহার করতে পারে উটেরা। সাধারণত ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুট লম্বা হয় এরা। উটের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলাস ড্রোমেডারিয়াস (Camelus dromedarius)। বর্তমানে উট গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়েছে।

ঘোড়া

আদিকাল থেকেই রাজারা ঘোড়া ব্যবহার করে আসছেন। কখনো যাতায়াতের জন্য, আবার কখনো মালামাল টানার কাজে। কিছু প্রজাতির ঘোড়া বেশ বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়। এদের উচ্চতা গড়ে সাড়ে ৫ ফুটের মতো হয়। ঘোড়া বেশ প্রাচীন প্রাণী। প্রায় ৫ কোটি বছর আগে ইওসিন যুগেও ঘোড়া ছিল। জীবাশ্ম থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে। ঘোড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ইকুয়াস ক্যাবালাস (Equus caballus)। ঘণ্টায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে এরা। 

সূত্র: ট্রি-হাগার ডটকম, উইকিপিডিয়া, বেকুয়েস্ট ডটকম