মাছের অজানা ৭

সেইলফিশ ঘণ্টায় ১০৯ কিলোমিটার বেগে লাফ দিয়ে পানির ওপরে উঠতে পারে। এই গতিতে গাড়ি (কার) চলে হাইওয়েতে। সেইলফিশ প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত মাছ এটি। এর ওজন হতে পারে ৯০ কেজি পর্যন্ত। টুনা মাছের মতো দেখতে এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ইস্টিওফরাস প্লাটিপ্টেরাস (Istiophorus platypterus)। 

কই ফিশ (Koi fish) প্রায় ২২৬ বছর বাঁচে। এটা কিন্তু কই মাছ না! বাংলায় এটা বুটিদার কার্প নামে পরিচিত। সাধারণত অ্যাকুরিয়াম, বাগানের টব বা পুকুরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এ মাছ পালন করা হয়। মাছগুলোর রং হয় সাধারণত সাদা, কালো, লাল, হলুদ, কমলা ও নীল। ১৯ শতকের শুরুর দিকে জাপানে এ মাছের প্রজনন শুরু হয়। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম  সাইপ্রিনাস রুব্রোফাস্কাস (Cyprinus rubrofuscus)। 

স্যামন মাছের গন্ধের অনুভূতি কুকুরের চেয়ে হাজার গুণ বেশি। এ মাছের জন্ম নদীতে। কিন্তু জন্মের পর স্যামনরা সাগরে চলে যায়। সাগরে যেতে যেতে পূর্ণবয়স্ক হয়। এরপর সেখান থেকে আবার নদীতে ফিরে বংশবৃদ্ধি করে। এভাবে নদী থেকে সাগরে যাতায়াত করতে করতে স্যামনদের জীবনাবসান ঘটে। এদের অনেক প্রজাতি আছে। গড়ে ওজন হয় ৪ থেকে ৩৬ কেজি পর্যন্ত। এরা ২ থেকে ৭ বছর বেঁচে থাকে। স্যামন মাছের বৈজ্ঞানিক নাম সালমো সালার (Salmo salar)।

পুরুষ সামুদ্রিক সি-হর্স গর্ভধারণ করে ও বাচ্চা দেয়। এরা একসঙ্গে গড়ে ১ হাজার বাচ্চা দেয়। কিন্তু বেঁচে থাকে গড়ে মাত্র ৫টি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পুরুষ সি-হর্স বাচ্চা দেয়। সাধারণত সি-হর্সের বাচ্চা খেয়ে ফেলতে চায় বিভিন্ন শিকারী প্রাণী। পুরুষ সি-হর্সের বাচ্চা জন্মদানের অন্যতম কারণ এটা। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে এ প্রজাতি সংরক্ষিত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম হিপ্পোক্যাম্পাস কুডা (Hippocampus kuda)।

একটি হাঙরের জীবনকালে প্রায় ৩০ হাজার দাঁত জন্মায়। তবে একসঙ্গে সব দাঁত ওঠে না। এদের প্রায় ৫ থেকে ১৫ সারি দাঁতের পাটি থাকে। গড়ে প্রায় প্রতি সপ্তায় হাঙর একটি দাঁত হারায়। এরা প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর বাঁচে। বর্তমানের হাঙরের প্রায় ২২৫টি প্রজাতি রয়েছে। হাঙর সাধারণত ঘন্টায় ৮ কিলোমিটার বেগে চলাফেরা করে। তবে শিকার ধরার সময় এদের গতি বেড়ে হয় ঘন্টায় ১৯ কিলোমিটার। হাঙরের বৈজ্ঞানিক নাম সেলাচিমোর্ফা (Selachimorpha)।

মাছেরাও কথা বলতে পারে। তবে আমাদের মতো চিৎকার করে কথা বলে না। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, মাছেরা একে অপরের ভাষা বুঝতে পারে। এরা সাধারণত যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে শব্দ, রং ও গতি। 

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি বা ব্লু হোয়েল। এটি অবশ্য মাছ নয়, বরং স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা বাচ্চা উৎপাদন করে এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়। ওজন প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কেজি। লম্বায় প্রায় ৯৮ ফুট হতে পারে। এরা এত বড় যে এদের হৃৎপিণ্ডের ওজন একটি গাড়ির সমান। হৃৎপিণ্ডের ধমনীর ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষ সাতার কাটতে পারে। নীল তিমির মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ৭ কেজি। নীল তিমির বৈজ্ঞানিক নাম বালেনোপ্টেরা মাস্কুলাস (Balaenoptera musculus)।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, ফান কিডস লাইভ ডট কম