চোখ খুলে অর্ক বুঝতে পারল না, কোথায় আছে। চারপাশে ধু ধু মরুভূমি। মাথার ওপরে দুটো সূর্য আগুন ঝরানো শুরু করেছে। ছোট্ট একটা খেজুর গাছ ছায়া দিচ্ছে শুধু। কোনোমতে উঠে বসল সে। স্পষ্ট মনে আছে, কাল রাতে নিজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের আরামদায়ক বিছানায় শুয়েছিল। এখানে কীভাবে এল, কিছুই বুঝতে পারছে না …
এটুকু পড়তে গিয়ে আমার মতো হয়ত আপনারও কল্পনায় ভেসে উঠছে ভিনগ্রহের কোনো মরুভূমির ছবি। শুধু আমি বা আপনি নন, পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই কিছু পড়তে গেলে কল্পনায় তার ছবি দেখতে পান। কিন্তু কেন এমন হয়? কীভাবেই-বা হয়?
মানুষকে অন্যসব প্রাণীর চেয়ে আলাদা করে তুলেছে মস্তিষ্ক। এর সাহায্যেই মানুষ প্রকৃতির জটিল অনেক রহস্যের উত্তর খুঁজে বের করেছে। জীবনকে করেছে সহজ। পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে উঁকি দিয়েছে অধরা মহাবিশ্বে। মানুষের মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। তবে এর ক্ষমতা কী পরিমাণ বিপুলভাবে বিস্তৃত, তা আমরা সবাই জানি।
মস্তিষ্কের জটিল কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটা হচ্ছে পড়া। অর্থহীন কিছু আঁকিবুঁকি দেখে সেখান থেকে তথ্য নিতে পারে মস্তিষ্ক। তথ্য দিতেও পারে একইভাবে। আর এই পড়া বা লেখার মাধ্যমে মস্তিষ্ক শাণিত হয়। যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করতে শেখে।
আমরা যখন কোনোকিছু পড়া শুরু করি, তখন একইসঙ্গে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কাজ করে। শুরুটা হয় বর্ণমালা শনাক্ত করা দিয়ে। এরপর বর্ণমালার বিন্যাস থেকে শব্দ শনাক্ত এবং অর্থ বোঝা। তারপর পুরো বাক্য বোঝার পর সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মস্তিষ্ক।
পড়ার সময় মধ্য মস্তিষ্কের সুপিরিয়র কলিকুলাস অংশটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। পরিবেশের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিভিন্ন তথ্যকে বোঝা সুপিরিয়র কলিকুলাসের কাজ। আমরা যখন দেখি বা শুনি, তখন এর মাধ্যমেই আমরা সেগুলো বুঝতে পারি। কোনোকিছু পড়ার পর তথ্য প্রক্রিয়ার সময় কল্পনায় তার ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজটি মস্তিষ্কের এই অংশটিই করে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের দেখার বিষয়টি শুধু পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া বা চোখের কাজ নয়। বরং এটা মস্তিষ্কের একটি ছবি তৈরি প্রক্রিয়া। কল্পনা বা স্বপ্নের সময় এ কারণেই আমরা কোনো কিছুকে জীবন্তভাবে দেখতে পারি। আমাদের মস্তিষ্কে ছবিটি তৈরি হয় এবং জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বইপড়ার সময় যে শুধু সুপিরিয়র কলিকুলাস কাজ করে, তা-ই নয়। কল্পনায় ছবি ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাংসপেশীরও পরিবর্তন ঘটে পড়ার সময়। এমনকি চরিত্রের সংলাপের সময় পরিবর্তন হয় ঠোঁট ও মুখের অঙ্গভঙ্গিও।
শেষ করার আগে বলি, মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশ কাজ করে পড়ার সময়। এজন্য মস্তিষ্ক শাণিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বই পড়া। তাই বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস করা উচিৎ।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস